শহীদ শরিফ ওসমান হাদি হত্যার বিচার প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকারের নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইনকিলাব মঞ্চের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মুখপাত্র ফাতিমা তাসনিম জুমা। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও স্থিতিশীলতা রক্ষার দায়িত্ব যদি নাগরিক সংগঠনকেই পালন করতে হয়, তবে জনগণের টাকায় এমন সরকার টিকিয়ে রাখার যৌক্তিকতা কোথায়?
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের পর ইনকিলাব মঞ্চের নেতা-কর্মী, সাধারণ শিক্ষার্থী ও সমর্থকরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি শাহবাগ মোড়ে এসে পৌঁছালে সেখানে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়।
শাহবাগে পৌঁছানোর পর অবরোধকারীরা সড়ক বন্ধ করে দিলে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় চত্বরে মুহুর্মুহু স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে পরিবেশ। স্লোগানগুলোর মধ্যে ছিল— নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার, দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা, এক হাদি লোকান্তরে, লক্ষ্য হাদি লড়াই করে, লীগ ধর, জেলে ভর।
সমাবেশে বক্তব্যের শুরুতেই শহীদ হাদির স্মৃতিচারণ করেন জুমা। তিনি বলেন, “যে ভাইয়ের কণ্ঠে আমরা রাজপথে স্লোগান শুনতাম, আজ তাকে কবরে রেখে এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলতে হচ্ছে। এটি পুরো ইনকিলাব টিমের জন্য অপূরণীয় শোক।”
তিনি আরও বলেন, “৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে দেশে অনেক নেতা তৈরি হয়েছে, কিন্তু ওসমান হাদি নিজেকে কখনো নেতা বলেননি। তিনি সবসময় নিজেকে ইনকিলাবের একজন ‘কর্মী’ হিসেবে পরিচয় দিতেন। নেতৃত্ব দাবি করা সহজ, কিন্তু এই কর্মীসত্তাই তাকে মানুষের নেতা বানিয়েছে। মৃত্যুর পরও তিনি আমাদের শক্তি, আমাদের স্লোগান, আমাদের লড়াই।”
বিচার প্রক্রিয়ায় অগ্রগতির অভাব তুলে ধরে তিনি প্রশাসন ও সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। জুমা বলেন, “হাদির মৃত্যুর পর খুনিদের অবস্থান, পলাতক না দেশে আছে— এ বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে কোনো স্পষ্ট তথ্য নেই। সেই দায়িত্বও আমাদের পালন করতে হচ্ছে। এমন একটি সরকারকে জনগণের টাকায় বসিয়ে রেখে লাভ কী?”
চলমান আন্দোলনকে ‘মব’ বা বিশৃঙ্খলা হিসেবে আখ্যা দেওয়ার অপচেষ্টার বিরুদ্ধেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি। জুমা বলেন, “একটি মহল আমাদের ন্যায্য বিচার দাবিকে মব বলে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। আমি প্রশ্ন করি— যদি মব করে ফাঁসি দেওয়া যায়, তাহলে আমরা যখন শহীদের খুনিদের বিচারের দাবি করি, সেটা মব হবে কেন? আমরা বিশৃঙ্খলা করতে আসিনি। ইনকিলাব মঞ্চের কোনো কর্মসূচিতে সহিংসতার রেকর্ড নেই।”
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন পেছানোর অজুহাতে সহিংসতার ভয় দেখানো হচ্ছে, যা মূলত বিচার প্রক্রিয়া আটকে রাখার কৌশল। “এটি শহীদের রক্তের ইনসাফের দাবিকে থামানোর চেষ্টা,” বলেন তিনি।
জুমা স্পষ্ট করে বলেন, “খুনি যত বড় শক্তিই হোক, তাকে বিচারের আওতায় আনতেই হবে। কেউ যদি বিশৃঙ্খলা করতে আসে, তাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার দায়িত্ব আপনাদের।”
তিনি দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা দেন, “শাহবাগ সাক্ষী থাকুক— যতক্ষণ পর্যন্ত শহীদ শরিফ ওসমান হাদি ভাইয়ের বিচার না হবে, আমরা রাজপথ ছাড়বো না। ইনসাফ না পাওয়া পর্যন্ত এখানেই থাকবো। এই বাংলার মাটিতেই বিচার হবে, আর সেই বিচার আদায় হবে শাহবাগ থেকেই।”
এর আগে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের জানান, বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ অবরোধ কর্মসূচি চলবে। প্রয়োজনে সেখানে রাত্রিযাপন ও অনশন কর্মসূচিও চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান তিনি।
শু/ সবা

























