সংবাদ সম্মেলনে কোচ পিটার বাটলারকে পাশে বসিয়ে সেই চিরচেনা আফঈদা খন্দকার। আত্মবিশ্বাসী। কথাবার্তায় পরিণত। কথা বলায় জড়তা যেন অনেকটাই কেটে গেছে। দিনে দিনে যেন আরো সাবলীল হচ্ছেন বাংলাদেশ নারী দলের অধিনায়ক। দলকে এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে তোলার পর আফঈদাদের চোখ অস্ট্রেলিয়ায়। আগামী দিনগুলোতে চূড়ান্ত পর্বের জন্যই প্রস্তুতি নেবে বাংলাদেশ জাতীয় দল।
সিনিয়রদের দলের অধিনায়ক হলেও শুধু বয়সের সীমারেখায় এখনও তিনি খেলতে পারেন অনায়াসে জাতীয় অনূর্ধ্ব-২০ দলে। তাইতো ১১ জুলাই বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় শুরু হতে যাওয়া অনূর্ধ্ব-২০ দলে যথারীতি অধিনায়ক আফঈদা। এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বের চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক স্বাভাবিকভাবেই দক্ষিণ এশিয়ার বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টের শিরোপাও নিজেদের কাছে রাখতে চাইবেন। সংবাদ সম্মেলনে এসেও তেমনটাই জানালেন তিনি।
এবারের সাফে অংশ নিচ্ছে না অন্যতম ফেবারিট ভারত। ভারতীয় অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল দল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ না করার পেছনে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কারণ জানায়নি, তবে তাদের অংশ না নেওয়ার জন্য ‘অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনা’, ‘কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা উদ্বেগ’সহ নানা গুঞ্জন রয়েছে। যদিও অল ইন্ডিয়ান ফুটবল ফেডারেশন বলেছে তারা ‘অংশগ্ৰহণ থেকে সরে এসেছে ‘ কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেয়নি।
মাত্র চার দল নিয়ে হবে এবারের নারী সাফ। অংশ নেবে নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ। রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে হবে খেলা। সর্বোচ্চ পয়েন্ট পাওয়া দলটি হবে চ্যাম্পিয়ন। ১১ জুলাই উদ্বোধনী ম্যাচে বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কার।
মিয়ানমারে সর্বশেষ এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের এই দল থেকে বয়সভিত্তিক দলে সুযোগ পেয়েছেন ৮ ফুটবলার-আফঈদা খন্দকার, মোসাম্মৎ সাগরিকা, মুনকি আক্তার, স্বপ্না রানী, স্বর্ণা রানী মন্ডল, জয়নব বিবি রিতা, মিলি আক্তার ও উমহেলা মারমা।
নতুন কিছু প্রতিভাবান ফুটবলার রয়েছে বর্তমান অনূর্ধ্ব-২০ দলে। এদের মধ্যে নবিরন খাতুন, সুরমা জান্নাত, কানন রানী বাহাদুর, অয়ন্ত বালা মাহাতো, পূজা দাস আলাদাভাবে নজর কাড়তে পারেন।
প্রথমবারের মতো বয়সভিত্তিক দলের দায়িত্বে কোচ পিটার বাটলার। এই টুর্নামেন্ট নিয়েও দারুণ আশাবাদী তিনি। বাফুফে ভবনে বুধবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এই মেয়েরা সবাই দায়িত্ববান। এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে দুর্দান্ত খেলেছে। তাদেরই বেশিরভাগ এখানে খেলবে। ৭ জন ফুটবলার এই দলে খেলার যোগ্য। মেয়েরা প্রস্তুত। গত কিছু দিন ওরা দারুণ অনুশীলন করেছেন। আশা করি এখানে আমরা ভালো কিছুই উপহার দেব।’
তিনি যোগ করেন, ‘আমরা হয়তো এই টুর্নামেন্টে আন্ডারডগ, কিন্তু আমাদের একটা পরিকল্পনা আছে।’ তিনি বলেন, মেয়েরা গত কয়েক মাস ট্যাকটিক্যালি ও ডিসিপ্লিনের জায়গায় দারুণ উন্নতি করেছে, যা তাদের শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ করে দেবে।
আফঈদা, সাগরিকাদের ওপর দারুণ আস্থা রয়েছে পিটার বাটলারের। তিনি বলেন, ‘আমাদের মেয়েদের ফুটবল খেলার ধরণ সত্যি প্রচুর লোকের বিস্মিত করেছে। এদের ওপর আমার গভীর আস্থা রয়েছে, যেটা এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে সফল হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।’
প্রতিপক্ষ সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা নেই বাটলারের, ‘আমি নেপাল, ভুটানের খেলা খুব বেশি দেখিনি। তবে প্রতিপক্ষকে সমীহ করছি। পরিস্থিতি অনুসারে আমরা কৌশল পরিবর্তন করবো ম্যাচে।’
এশিয়া কাপে বাংলাদেশকে চূড়ান্ত পর্বে ওঠার কৃতিত্ব পুরোটাই দিয়েছেন নারী ফুটবলারদের, ‘আমাদের পথ ছিল উত্থান পতনের। কিন্তু মেয়েরা না থাকলে আজ এই জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব হতো না।’
অধিনায়ক আফঈদা সাফল্য পেয়েছেন এশিয়ান কাপে। ২০২৩ সালেও অনূর্ধ্ব- ২০ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। এবার ঘরের মাটিতেও শিরোপা উঁচিয়ে ধরতে চান, ‘এশিয়ান কাপ কোয়ালিফাইয়ার করার পর আমরা যদিও এই দলের সঙ্গে অনুশীলন করার বেশি সময় পাইনি। যে কদিন অনুশীলন করেছি কোচ আমাদের যেভাবে বলেছেন সেভাবে অনুশীলনের চেষ্টা করেছি। ২০২৩ সালে এই টুর্নামেন্টে আমরা চ্যাম্পিয়ন। এখানে ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা কাউকে ছোট করে দেখার উপায় নেই। ওরাও ভালো খেলে। তবে আমরাও ম্যাচ বাই ম্যাচ জিতে সর্বোচ্চ পয়েন্ট পেতে। যেন চ্যাম্পিয়ন হতে পারি আমরাই।’


























