০৬:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চবির হল ডাইনিং, ক্যান্টিন-দোকানে পঁচা খাবার

শিক্ষার্থীদের ক্ষোভে ঝুলিয়েছে তালা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এ. এফ. রহমান হল ডাইনিং ক্যান্টিন ও ক্যান্টিনের পাশের আলম মিয়ার দোকানের ফ্রিজ থেকে পঁচা-বাসি খাবার উদ্ধার করে প্রতিবাদ করে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বন্ধ ঘোষণা করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে তালা।

শনিবার (৯ আগস্ট) ক্যান্টিন ও দোকান পরিদর্শন করে বিকাল ৪টার দিকে তালা ঝুলিয়ে দিলে বন্ধ ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিসহ এ.এফ.রহমান হল ও আলাওল হলের হাউজ টিউটরবৃন্দ।

এদিন শিক্ষার্থীরা এ.এফ. রহমান হল ডাইনিংয়ের ফ্রিজ থেকে অনেকগুলো নষ্ট ডিম, মাছের নষ্ট ডিম ও সিগারেটের প্যাকেট উদ্ধার করে এবং আলম মিয়ার দোকানের ফ্রিজ থেকে বাসি মাংসের তরকারি, ঝোল, খিচুড়ি ও উদ্ধার করে। ক্যান্টিন থেকে অস্বাস্থ্যকর খাবার ও তেল উদ্ধার করে। এসময় শিক্ষার্থীরা প্রক্টরিয়াল বডিসহ আলাওল হল এবং এ.এফ রহমান হলের হাউজ টিউটরদের উক্ত দোকান ও ক্যান্টিনের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও নোংরা থালাবাসন দেখায়।

এসময় সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম বলেন, আলাওল ও এ এফ রহমান হলের ক্যান্টিন আর আলমের দোকানে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর খাবার আমাদেরকে খাওয়ায়। তারা পঁচা-বাসি খাবারগুলো ফ্রিজ-আপ করে সেগুলো ২-৩দিন পরে আমাদেরকে খাওয়ায়। এর পাশাপাশি তারা খাবারে কৃত্রিম রং মিশিয়ে খাবারে কালার আনার চেষ্টা করে যাতে শিক্ষার্থীরা কালারে আকৃষ্ট হয়ে খাবারগুলো গ্রহণ করে। যার ফলে আমাদের নিয়মিত পেটের পীড়া হচ্ছে।

 

রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল আওয়াল বলেন, ” এখানে খাবারের পরিচ্ছন্নতা ও খাবারের মান কোনোকিছুই ঠিক নাই। এটা শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের সমস্যা। আজকে আমাদের একজন খাবারের মান নিয়ে বলার কারণে দোকানের মালিক তাকে বলেছে ‘খাইলে খান না খাইলে চলে যান’। এটা আমাদেরকে হিট করেছে। আমাদের হলগুলোতে অনেক সমস্যা। আমরা চাই আজকেই আমাদের দাবি আদায় হবে। আমরা চাই হলগুলো প্রকৃতার্থেই হল হয়ে উঠবে”।

রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত হোসেন মিলন বলেন, ” আমি একদিন সকালে আলম ভাইয়ের দোকানে গেলে দেখি আলম ভাই টেবিল পরিষ্কার করে হাত পরিষ্কার না করে ঐ হাতেই পরোটা বানানো শুরু করে। আমি এ অবস্থা দেখে উঠে চলে আসি। আজকে সকালে যখন ক্যাফেটেরিয়ায় যখন খেতে গেছি ওখানেও একটা ছেলে টেবিল পরিষ্কার করে হাত না ধুয়ে ঐ হাতেই পরোটা বানানো শুরু করে।”

এ.এফ রহমান হলের ডাইনিং ম্যানেজার জয়নাল আবেদিন বলেন, ” আমি গতকাল ৪০০ ডিম নিয়ে এসেছি। ডিম সিদ্ধ করার পর ছিলে যেগুলো নষ্ট পাই সেগুলো আলাদা করে রাখি যার কাছ থেকে এনেছি তাকে দেখানোর জন্য”।

দোকানদার আলম মিয়া বলেন, “আমার এখানে যে খাবারগুলো পেয়েছে তারমধ্যে মোরগটি ছিল একজন শিক্ষার্থী রেখেছিল আরো ১০-১২দিন আগে। সে নিয়ে যাবে বলেছিল, নেয়নি। আর আমার এখানে যেগুলো পেয়েছে এগুলো আর কখনো হবেনা। এগুলো পরিষ্কার করে ফেলব”

এ ব্যাপারে এ.এফ. রহমান হলের হাউজ টিউটর মোহাম্মদ মোর্শেদুল হক বলেন, আমি তো দেখলাম তারা হাইজিন মেইনটেইন করে দোকান চালাচ্ছে না। এখানে ক্যান্টিনে এবং দোকানে খুবই বাজে অবস্থা দেখলাম। খাবারদাবারগুলো পরিত্যক্ত খাবারের মতো এবং খাবারদাবারগুলো যেখানে রাখা হয় এগুলো খুবই আন-হাইজিন অবস্থায় রাখা।”
তিনি আরো বলেন, “আমি ক্যান্টিন ও দোকানের মালিককে জিজ্ঞেস করেছি তারা সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি। তাদেরকে হল ডাইনিং আর ক্যান্টিনও একই অবস্থা। ছাত্রদের স্বার্থ ও দাবির প্রেক্ষিতে আজকে থেকে ক্যান্টিন ও দোকান বন্ধ থাকবে। ”

এ বিষয়ে সহকারী প্রক্টর নুরুল হামিদ বলেন, “আমরা এসে খাবার এর বাজে অবস্থা দেখেছি এবং শিক্ষার্থীরা যে খাবারের এত বাজে অবস্থা থাকার পরও মব সৃষ্টি করেনি সেটির ব্যাপারে আমি সাধুবাদ জানাই। কারণ আগের সময় দেখেছি খাবার এই বাজে অবস্থার কারণে মব হয়েছিল। আমরা হল কর্তৃপক্ষ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলবো এবং এই দোকান ও ক্যান্টিন বন্ধ থাকবে।”

এসময় শিক্ষার্থীরা তাদের ১৩টি দাবি পেশ করে। দাবিগুলো হলো, পরিচ্ছন্নতা ও হাইজিন নিশ্চিত করা, ফিল্টার সহ সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা, মালিকদের অব্যহতি দেওয়া, দোকান ও ক্যান্টিনগুলোতে সম্পূর্ন রং করা এবং ফ্যান লাগানো, বাচ্চাদের কাজে না রাখা, নতুন টেবিল চেয়ার দেওয়া, নিয়মিত পরিচর্যা করা, চারপাশের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা, কর্মচারীদের আচরণবিধি ঠিক করা, দুইটি নতুন মুদি দোকান ও খাবার দোকান স্থাপন করা, পুরাতন থাকা বাটি পরিবর্তন করা, পর্যাপ্ত লাইটিং রাখা ও সবগুলো দোকানে পরিচ্ছন্ন বেসিন এর ব্যবস্থা করা।

জনপ্রিয় সংবাদ

জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিলো এলডিপি ও এনসিপি

চবির হল ডাইনিং, ক্যান্টিন-দোকানে পঁচা খাবার

আপডেট সময় : ০৮:১৯:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ অগাস্ট ২০২৫

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এ. এফ. রহমান হল ডাইনিং ক্যান্টিন ও ক্যান্টিনের পাশের আলম মিয়ার দোকানের ফ্রিজ থেকে পঁচা-বাসি খাবার উদ্ধার করে প্রতিবাদ করে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বন্ধ ঘোষণা করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে তালা।

শনিবার (৯ আগস্ট) ক্যান্টিন ও দোকান পরিদর্শন করে বিকাল ৪টার দিকে তালা ঝুলিয়ে দিলে বন্ধ ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিসহ এ.এফ.রহমান হল ও আলাওল হলের হাউজ টিউটরবৃন্দ।

এদিন শিক্ষার্থীরা এ.এফ. রহমান হল ডাইনিংয়ের ফ্রিজ থেকে অনেকগুলো নষ্ট ডিম, মাছের নষ্ট ডিম ও সিগারেটের প্যাকেট উদ্ধার করে এবং আলম মিয়ার দোকানের ফ্রিজ থেকে বাসি মাংসের তরকারি, ঝোল, খিচুড়ি ও উদ্ধার করে। ক্যান্টিন থেকে অস্বাস্থ্যকর খাবার ও তেল উদ্ধার করে। এসময় শিক্ষার্থীরা প্রক্টরিয়াল বডিসহ আলাওল হল এবং এ.এফ রহমান হলের হাউজ টিউটরদের উক্ত দোকান ও ক্যান্টিনের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও নোংরা থালাবাসন দেখায়।

এসময় সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম বলেন, আলাওল ও এ এফ রহমান হলের ক্যান্টিন আর আলমের দোকানে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর খাবার আমাদেরকে খাওয়ায়। তারা পঁচা-বাসি খাবারগুলো ফ্রিজ-আপ করে সেগুলো ২-৩দিন পরে আমাদেরকে খাওয়ায়। এর পাশাপাশি তারা খাবারে কৃত্রিম রং মিশিয়ে খাবারে কালার আনার চেষ্টা করে যাতে শিক্ষার্থীরা কালারে আকৃষ্ট হয়ে খাবারগুলো গ্রহণ করে। যার ফলে আমাদের নিয়মিত পেটের পীড়া হচ্ছে।

 

রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল আওয়াল বলেন, ” এখানে খাবারের পরিচ্ছন্নতা ও খাবারের মান কোনোকিছুই ঠিক নাই। এটা শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের সমস্যা। আজকে আমাদের একজন খাবারের মান নিয়ে বলার কারণে দোকানের মালিক তাকে বলেছে ‘খাইলে খান না খাইলে চলে যান’। এটা আমাদেরকে হিট করেছে। আমাদের হলগুলোতে অনেক সমস্যা। আমরা চাই আজকেই আমাদের দাবি আদায় হবে। আমরা চাই হলগুলো প্রকৃতার্থেই হল হয়ে উঠবে”।

রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত হোসেন মিলন বলেন, ” আমি একদিন সকালে আলম ভাইয়ের দোকানে গেলে দেখি আলম ভাই টেবিল পরিষ্কার করে হাত পরিষ্কার না করে ঐ হাতেই পরোটা বানানো শুরু করে। আমি এ অবস্থা দেখে উঠে চলে আসি। আজকে সকালে যখন ক্যাফেটেরিয়ায় যখন খেতে গেছি ওখানেও একটা ছেলে টেবিল পরিষ্কার করে হাত না ধুয়ে ঐ হাতেই পরোটা বানানো শুরু করে।”

এ.এফ রহমান হলের ডাইনিং ম্যানেজার জয়নাল আবেদিন বলেন, ” আমি গতকাল ৪০০ ডিম নিয়ে এসেছি। ডিম সিদ্ধ করার পর ছিলে যেগুলো নষ্ট পাই সেগুলো আলাদা করে রাখি যার কাছ থেকে এনেছি তাকে দেখানোর জন্য”।

দোকানদার আলম মিয়া বলেন, “আমার এখানে যে খাবারগুলো পেয়েছে তারমধ্যে মোরগটি ছিল একজন শিক্ষার্থী রেখেছিল আরো ১০-১২দিন আগে। সে নিয়ে যাবে বলেছিল, নেয়নি। আর আমার এখানে যেগুলো পেয়েছে এগুলো আর কখনো হবেনা। এগুলো পরিষ্কার করে ফেলব”

এ ব্যাপারে এ.এফ. রহমান হলের হাউজ টিউটর মোহাম্মদ মোর্শেদুল হক বলেন, আমি তো দেখলাম তারা হাইজিন মেইনটেইন করে দোকান চালাচ্ছে না। এখানে ক্যান্টিনে এবং দোকানে খুবই বাজে অবস্থা দেখলাম। খাবারদাবারগুলো পরিত্যক্ত খাবারের মতো এবং খাবারদাবারগুলো যেখানে রাখা হয় এগুলো খুবই আন-হাইজিন অবস্থায় রাখা।”
তিনি আরো বলেন, “আমি ক্যান্টিন ও দোকানের মালিককে জিজ্ঞেস করেছি তারা সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি। তাদেরকে হল ডাইনিং আর ক্যান্টিনও একই অবস্থা। ছাত্রদের স্বার্থ ও দাবির প্রেক্ষিতে আজকে থেকে ক্যান্টিন ও দোকান বন্ধ থাকবে। ”

এ বিষয়ে সহকারী প্রক্টর নুরুল হামিদ বলেন, “আমরা এসে খাবার এর বাজে অবস্থা দেখেছি এবং শিক্ষার্থীরা যে খাবারের এত বাজে অবস্থা থাকার পরও মব সৃষ্টি করেনি সেটির ব্যাপারে আমি সাধুবাদ জানাই। কারণ আগের সময় দেখেছি খাবার এই বাজে অবস্থার কারণে মব হয়েছিল। আমরা হল কর্তৃপক্ষ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলবো এবং এই দোকান ও ক্যান্টিন বন্ধ থাকবে।”

এসময় শিক্ষার্থীরা তাদের ১৩টি দাবি পেশ করে। দাবিগুলো হলো, পরিচ্ছন্নতা ও হাইজিন নিশ্চিত করা, ফিল্টার সহ সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা, মালিকদের অব্যহতি দেওয়া, দোকান ও ক্যান্টিনগুলোতে সম্পূর্ন রং করা এবং ফ্যান লাগানো, বাচ্চাদের কাজে না রাখা, নতুন টেবিল চেয়ার দেওয়া, নিয়মিত পরিচর্যা করা, চারপাশের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা, কর্মচারীদের আচরণবিধি ঠিক করা, দুইটি নতুন মুদি দোকান ও খাবার দোকান স্থাপন করা, পুরাতন থাকা বাটি পরিবর্তন করা, পর্যাপ্ত লাইটিং রাখা ও সবগুলো দোকানে পরিচ্ছন্ন বেসিন এর ব্যবস্থা করা।