দুই বছরে ৬৩ টি নাশকতামুলক অগ্নিকান্ডের ঘটনা, দুইটি সশস্ত্র গ্রুপ প্রত্যাবাসনের বিরুদ্ধে
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিবদমান একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে সংঘাতে লিপ্ত হচ্ছে। সাথে সাথে এক গ্রুপ অন্যগ্রুপের ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগের মতো হীন মানসিকতায় ক্যাম্পে বসবাস করছে। ২০২১ সালের জানুয়ারী থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই মাসে রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে ২২২ টি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। এসব অগ্নিকা-ের মধ্যে ৬৩ টি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে নাশকতামুলক বা ইচ্ছে করেই আগুন দেয়া। অন্যসব অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে ক্যাম্পে বসবাসরতদের অসচেতনতা থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। কক্সবাজার জেলায় ৩৩ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইতিমধ্যে বার লাখের বেশী রোহিঙ্গা গাদাগাদি করে বসবাস করছে। একটির পাশে একটি ছোট ঘর বানিয়ে ক্যাম্পগুলোতে তাদের বসবাস। কোন কারণে কোন ঘরে আগুন ধরে গেলে পাশের ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়তে খুব বেশী সময় লাগে না। মুহুর্তের মধ্যেই আগুনে শত শত ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন, ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গারা। অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনের দমকল বাহিনীর সদস্যরা রাস্তার কারণে সহজে পৌঁছাতে পারেন না ঘটনাস্থলে। অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগে বেশী। তাই ক্যাম্পের দায়িত্বরত প্রশাসন ক্যাম্পে যাতে অগ্নিকা-ের সূত্রপাত হতে না পারে, তার জন্য প্রতিনিয়ত কড়া নজরদারিসহ রোহিঙ্গাদের সচেতন করার লক্ষ্যে কাজ করছেন বলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন। কক্সবাজার জেলা ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনের কর্তব্যরত কর্মকর্তা জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি ঘরের সাথে অন্য একটি ঘর লাগানো। রাস্তা গুলো একবারেই সরু। যে রাস্তা রয়েছে, তাতে দুইজন মানুষ এক সাথে হাঁটতে কষ্ট হয়। ক্যাম্প গুলোকে এখনো রাস্তা প্রশস্ত করে করার মতো জমিও নেই। ১২ লাখ মানুষের বসবাস মানে একটি বিশাল উদ্যোগের বিষয়। তাই অগ্নিকা-ের ঘটনা থেকে বাঁচতে তাদের নিজেদেরকে সচেতন হতে হবে। অন্যথায় ক্যাম্পে বসবাসরতদের দুর্ভোগ পোহাতে হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন এই কর্মকর্তা।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম জানান, অন্যসব মামলার মতো রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সব ধরনের হত্যাসহ যে কোন অপরাধের মামলা থানায় নেয়া হয়। আসামী গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করে বিচার প্রক্রিয়ায় আনা হয়। ক্যাম্পে শান্তি শৃংখলা বজায় রাখতে নিরাপত্তা চৌকি বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ ও র্যাবের টহল টীম নিয়মিত মনিটরিং করছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অপরাধীরা যাতে ক্যাম্পের ভিতরে অপরাধ সংঘটিত করতে না পারে, সেই ব্যাপারে পুলিশের কড়া নজরদারি রাখা হয়েছে। অস্ত্রধারীরা আশেপাশের পাহাড়ে অবস্থান করে ঝটিকা হামলা করছে প্রতিপক্ষের উপর। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আশারাখি, শীঘ্রই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে। সরকারের পক্ষ থেকে রশন, ফুড কার্ডসহ সব ধরনের সুযোগ – সুবিধা দেয়ার পরও অপরাধীরা নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসরতদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য বেশ আগ্রহী হয়ে কাজ করেছিল। তবে রোহিঙ্গাদের উগ্রপন্থী সংগঠন আরসা ও নবী হোসেন গ্রুপ প্রত্যাবাসনের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়ে উঠায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় সশস্ত্রভাবে। মুহিবুল্লাহ”র প্রত্যাবাসন ঠেকাতে ক্যাম্পে নাশকতামুলক অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে আরসা ও নবী হোসেন বাহিনীর পক্ষ থেকে। নিহত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ গ্রুপ এখনো রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন তথা ফেরত পাঠাতে ক্যাম্পে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। রোহিঙ্গা নেতা নিহত মুহিবুল্লাহ”র সদস্যদের পক্ষে কথা বলায় আরসা ও নবী হোসেন বাহিনী ক্যাম্পের ১৪ জন মাঝি ও সাব মাঝিকে হত্যা করেছে। এসব মাঝি ও সাব মাঝি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পক্ষে কথা বলার অভিযোগে হত্যার শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। আরসা ও নবী হোসেন বাহিনী রোহিঙ্গারা তাদের নিজ ভূমিতে ফেরত যাক, তা কোন ভাবেই চায় না। এই দুইটি সশস্ত্র বাহিনীর সাথে মিয়ানমার জান্তা বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থার সাথে হটলাইন রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। মায়ানমারের জান্তা বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সাথে গোপন যোগাযোগ রক্ষা করে আরসা ও নবী হোসেন গ্রুপ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে বেশ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এমন অভিযোগ করেছেন অনেক রোহিঙ্গারা। তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অধিকাংশ রোহিঙ্গারা এখনো তাদের জন্মস্থান মায়ানমারে ফিরে যেতে বেশ আগ্রহী এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া কবে নাগাদ শুরু হবে, আদৌ রোহিঙ্গারা তাদের পৈত্রিক ভিটে Ñ বাড়ীতে যেতে পারবে কী না তা নিয়ে প্রত্যাবাসন প্রত্যাশী রোহিঙ্গাদের মধ্যে নানা ধরনের প্রশ্ন মনেরর ভিতর ঘুরপাক করছে।























