১১:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সরকারি কেনাকাটায় আসছে নতুন চমক

  • ২০০৮ সালের বিদ্যমান পিপিআরে আসছে নতুন পিপিআর-২০২৫
  • নতুন খসড়ায় যুক্ত হয়েছে আরও ১২টি বিধি, বাতিল হলো ৭টি
  • ভেরিয়েশনের সীমা কমিয়ে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ নির্ধারিত

‘নতুন ক্রয় নীতিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক ও বিভাজনযোগ্য পণ্য জরুরি ক্রয়ের ক্ষেত্রে দরকষাকষির সুযোগও বাড়ানো হয়েছে। শৃঙ্খলাভঙ্গ বা অসদাচরণের ক্ষেত্রে কালো তালিকাভুক্ত ও সাময়িক স্থগিতাদেশের বিধান আরও কঠোর করা হয়েছে’
– শাহ ইয়ামিন-উল ইসলাম, পরিচালক, বিপিপিএ

বিগত সরকারের আমলে সরকারি কেনাকাটা নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। বালিশকাণ্ড, পর্দাকাণ্ড দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার অতীত অপকর্মগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বিতর্ক এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার সরকারি কেনাকাটায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এবার আসছে বড় ধরনের নতুন চমক। ২০০৮ সালের বিদ্যমান পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালার (পিপিআর) জায়গায় আসছে নতুন ‘পিপিআর-২০২৫’। নতুন খসড়ায় ৯৪টি সংশোধনের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে ১২টি নতুন বিধি। বাতিল হয়েছে ৭টি বিধি। এছাড়া সংযোজন হয়েছে ৪টি নতুন তফসিল, সংশোধন হয়েছে আরও ৮টি। পাশাপাশি ১৮টি উপধারা বাতিল করে মোট ১৫৩টি বিধি নিয়ে দাঁড়িয়েছে নতুন কাঠামো।
খসড়া বিধিমালার বিষয় সাংবাদিকদের অবহিত করতে গত বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে আইএমইডি সম্মেলন কক্ষে কর্মশালার আয়োজন করে বিপিপিএ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন- আইএমইডি সচিব মো. কামাল উদ্দিন। সভাপতিত্ব করেন বিপিপিএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব এস এম মঈন উদ্দীন আহম্মেদ। বিপিপিএর পরিচালক শাহ ইয়ামিন-উল ইসলাম খসড়া বিধিমালার মূল বিষয়গুলো সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেন। কর্মশালায় দেশের জাতীয় দৈনিক, টেলিভিশন, অনলাইন পোর্টাল ও সংবাদ সংস্থার ৫০ জনেরও বেশি সাংবাদিক অংশ নেন।
আইএমইডি সচিব বলেন, চলমান সরকারি ক্রয় সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করার উদ্দেশ্যেই এ কর্মশালা। এ সময় বিপিপিএ সিইও প্রস্তাবিত বিধিমালার যৌক্তিকতা ও প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।
বিপিপিএ বলছে, পুরো খসড়ায় ৯৪টি বিধি সংশোধন করা হয়েছে। নতুন করে ১২টি বিধান যুক্ত হয়েছে, বাতিল হয়েছে ৭টি বিধি এবং বাদ গেছে ১৮টি উপবিধি। এছাড়া ৪টি নতুন তফসিল সংযোজন এবং ৮টি সংশোধনের প্রস্তাব রয়েছে। ফলে সরকারি ক্রয় কাঠামো আরও বিস্তৃত ও সময়োপযোগী হয়ে উঠবে।
বিপিপিএ পরিচালক শাহ ইয়ামিন-উল ইসলাম বলেন, খসড়া বিধিমালায় উল্লেখযোগ্য সংস্কারের মধ্যে রয়েছে সব সরকারি ক্রয়ে ই-জিপি বাধ্যতামূলক করা। অনলাইনের বাইরে দরপত্র আহ্বান বা চুক্তি করার সুযোগ থাকবে না, তবে বিশেষ ক্ষেত্রে বিপিপিএর অনুমতি নিতে হবে। এছাড়া আগে প্রাক্কলিত মূল্যের সঙ্গে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পার্থক্যের সীমা ছিল, সেটি বাতিল করা হয়েছে। অতিরিক্ত কাজ বা সরবরাহের জন্য নতুন ধারা তৈরি করা হয়েছে এবং ভেরিয়েশনের সীমা কমিয়ে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নতুনভাবে ভৌত সেবা বা শ্রমঘন সেবাকে আলাদা ক্যাটাগরি হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে। ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তির পরিসর বিস্তৃত করা হয়েছে এবং প্রতিযোগিতা বাড়াতে বিপরীত নিলাম প্রক্রিয়া চালুর বিধান রাখা হয়েছে। নারী-মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্র ও নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা সংযোজনও অন্যতম পরিবর্তন। চুক্তি ব্যবস্থাপনায় যোগ হয়েছে কঠোরতা। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত মালিকানা বা উপকারভোগী মালিকের নাম প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকারি সম্পদ বিক্রি বা নিষ্পত্তির নতুন নিয়ম আনা হয়েছে। পাশাপাশি, চুক্তি বাতিলের আগে স্বতন্ত্র কমিটির সুপারিশ নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
শাহ ইয়ামিন-উল ইসলাম বলেন, নতুন ক্রয় নীতিতে দরকষাকষির সুযোগও বাড়ানো হয়েছে। ভৌত সেবা, আন্তর্জাতিক ক্রয়, বিভাজনযোগ্য পণ্য কিংবা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে জরুরি ক্রয়ের ক্ষেত্রে দরকষাকষির বিধান রাখা হয়েছে। শৃঙ্খলাভঙ্গ বা অসদাচরণের ক্ষেত্রে কালো তালিকাভুক্ত ও সাময়িক স্থগিতাদেশের বিধান আরও কঠোর করা হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

শীতে বাড়ছে রোগ-বালাই

সরকারি কেনাকাটায় আসছে নতুন চমক

আপডেট সময় : ০৭:৪৫:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ২০০৮ সালের বিদ্যমান পিপিআরে আসছে নতুন পিপিআর-২০২৫
  • নতুন খসড়ায় যুক্ত হয়েছে আরও ১২টি বিধি, বাতিল হলো ৭টি
  • ভেরিয়েশনের সীমা কমিয়ে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ নির্ধারিত

‘নতুন ক্রয় নীতিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক ও বিভাজনযোগ্য পণ্য জরুরি ক্রয়ের ক্ষেত্রে দরকষাকষির সুযোগও বাড়ানো হয়েছে। শৃঙ্খলাভঙ্গ বা অসদাচরণের ক্ষেত্রে কালো তালিকাভুক্ত ও সাময়িক স্থগিতাদেশের বিধান আরও কঠোর করা হয়েছে’
– শাহ ইয়ামিন-উল ইসলাম, পরিচালক, বিপিপিএ

বিগত সরকারের আমলে সরকারি কেনাকাটা নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। বালিশকাণ্ড, পর্দাকাণ্ড দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার অতীত অপকর্মগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বিতর্ক এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার সরকারি কেনাকাটায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এবার আসছে বড় ধরনের নতুন চমক। ২০০৮ সালের বিদ্যমান পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালার (পিপিআর) জায়গায় আসছে নতুন ‘পিপিআর-২০২৫’। নতুন খসড়ায় ৯৪টি সংশোধনের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে ১২টি নতুন বিধি। বাতিল হয়েছে ৭টি বিধি। এছাড়া সংযোজন হয়েছে ৪টি নতুন তফসিল, সংশোধন হয়েছে আরও ৮টি। পাশাপাশি ১৮টি উপধারা বাতিল করে মোট ১৫৩টি বিধি নিয়ে দাঁড়িয়েছে নতুন কাঠামো।
খসড়া বিধিমালার বিষয় সাংবাদিকদের অবহিত করতে গত বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে আইএমইডি সম্মেলন কক্ষে কর্মশালার আয়োজন করে বিপিপিএ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন- আইএমইডি সচিব মো. কামাল উদ্দিন। সভাপতিত্ব করেন বিপিপিএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব এস এম মঈন উদ্দীন আহম্মেদ। বিপিপিএর পরিচালক শাহ ইয়ামিন-উল ইসলাম খসড়া বিধিমালার মূল বিষয়গুলো সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেন। কর্মশালায় দেশের জাতীয় দৈনিক, টেলিভিশন, অনলাইন পোর্টাল ও সংবাদ সংস্থার ৫০ জনেরও বেশি সাংবাদিক অংশ নেন।
আইএমইডি সচিব বলেন, চলমান সরকারি ক্রয় সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করার উদ্দেশ্যেই এ কর্মশালা। এ সময় বিপিপিএ সিইও প্রস্তাবিত বিধিমালার যৌক্তিকতা ও প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।
বিপিপিএ বলছে, পুরো খসড়ায় ৯৪টি বিধি সংশোধন করা হয়েছে। নতুন করে ১২টি বিধান যুক্ত হয়েছে, বাতিল হয়েছে ৭টি বিধি এবং বাদ গেছে ১৮টি উপবিধি। এছাড়া ৪টি নতুন তফসিল সংযোজন এবং ৮টি সংশোধনের প্রস্তাব রয়েছে। ফলে সরকারি ক্রয় কাঠামো আরও বিস্তৃত ও সময়োপযোগী হয়ে উঠবে।
বিপিপিএ পরিচালক শাহ ইয়ামিন-উল ইসলাম বলেন, খসড়া বিধিমালায় উল্লেখযোগ্য সংস্কারের মধ্যে রয়েছে সব সরকারি ক্রয়ে ই-জিপি বাধ্যতামূলক করা। অনলাইনের বাইরে দরপত্র আহ্বান বা চুক্তি করার সুযোগ থাকবে না, তবে বিশেষ ক্ষেত্রে বিপিপিএর অনুমতি নিতে হবে। এছাড়া আগে প্রাক্কলিত মূল্যের সঙ্গে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পার্থক্যের সীমা ছিল, সেটি বাতিল করা হয়েছে। অতিরিক্ত কাজ বা সরবরাহের জন্য নতুন ধারা তৈরি করা হয়েছে এবং ভেরিয়েশনের সীমা কমিয়ে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নতুনভাবে ভৌত সেবা বা শ্রমঘন সেবাকে আলাদা ক্যাটাগরি হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে। ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তির পরিসর বিস্তৃত করা হয়েছে এবং প্রতিযোগিতা বাড়াতে বিপরীত নিলাম প্রক্রিয়া চালুর বিধান রাখা হয়েছে। নারী-মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্র ও নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা সংযোজনও অন্যতম পরিবর্তন। চুক্তি ব্যবস্থাপনায় যোগ হয়েছে কঠোরতা। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত মালিকানা বা উপকারভোগী মালিকের নাম প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকারি সম্পদ বিক্রি বা নিষ্পত্তির নতুন নিয়ম আনা হয়েছে। পাশাপাশি, চুক্তি বাতিলের আগে স্বতন্ত্র কমিটির সুপারিশ নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
শাহ ইয়ামিন-উল ইসলাম বলেন, নতুন ক্রয় নীতিতে দরকষাকষির সুযোগও বাড়ানো হয়েছে। ভৌত সেবা, আন্তর্জাতিক ক্রয়, বিভাজনযোগ্য পণ্য কিংবা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে জরুরি ক্রয়ের ক্ষেত্রে দরকষাকষির বিধান রাখা হয়েছে। শৃঙ্খলাভঙ্গ বা অসদাচরণের ক্ষেত্রে কালো তালিকাভুক্ত ও সাময়িক স্থগিতাদেশের বিধান আরও কঠোর করা হয়েছে।