০৮:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অনলাইন প্রতারণায় গোটা পরিবার

* পাচার ৩৪ কোটি টাকা, সিআইডির মামলা
* ইমো হ্যাক করে প্রতারণায় গ্রেপ্তার ১২
* স্ত্রীকে হত্যায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড
* দেশজুড়ে পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ১৬৩২

দীর্ঘদিন ধরে অনলাইন প্রতারণার মাধ্যমে অপকর্ম চালিয়ে আসছিল একটি পরিবারের সব সদস্য। চক্রটি অনলাইন প্রতারণা ও জুয়া এবং হুন্ডি কার্যক্রমের মাধ্যমে ৩৪ কোটি টাকার পাচার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন অপকর্মে ওই পরিবারের ভাইবোন, মা ও ভগ্নিপতি নেতৃত্ব দিতেন। এ ঘটনায় মানিলন্ডারিং আইনে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামালা দায়ের করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এদিকে নাটোরে ইমো হ্যাক করে প্রতারণার দায়ে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অপরদিকে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে যৌতুকের দাবিতে সোনিয়া আক্তার নামে এক নারীকে হত্যার দায়ে তার স্বামী মো. সোহেল রানার মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৬৩২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশ, সিআইডি ও আদালত সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সিআইডি জানায়, দীর্ঘদিন ধরে অনলাইন প্রতারণার মাধ্যমে অপকর্ম চালিয়ে আসছিল একটি পরিবারের সব সদস্য। চক্রটি অনলাইন প্রতারণা ও জুয়া এবং হুন্ডি কার্যক্রমের মাধ্যমে ৩৪ কোটি টাকার পাচার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন অপকর্মে ওই পরিবারের ভাইবোন, মা ও ভগ্নিপতি নেতৃত্ব দিতেন। এ ঘটনায় মানিলন্ডারিং আইনে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামালা দায়ের করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল বৃহস্পতিবার সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় নয়জনের নামে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মামলায় আরও সাত-আটজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন- আরিফুল ইসলাম রিফাত, মো. ইমরান হোসেন, মো. নুরে আলম, মোছা. লিলি আক্তার, মোছা. রিমি আক্তার, রুমি আক্তার, আব্দুল কাদির জিলানী, মুহা. নেয়ামতুল্লাহ ও মো. রিয়াদ।
জসীম উদ্দিন খান জানান, একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলত। প্রথমে ক্ষুদ্র কিছু কাজের বিনিময়ে অল্প অর্থ দিয়ে ভুক্তভোগীদের আস্থা অর্জন করত। পরে বড় প্রজেক্টের অজুহাতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত। প্রতারণার পাশাপাশি চক্রটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দরিদ্র ও অশিক্ষিত মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে তাদের অজ্ঞাতে ভুয়া ব্যাংক ও মোবাইল আর্থিক সেবার হিসাব খুলত। এসব হিসাব ব্যবহার করা হতো অনলাইন প্রতারণা, হুন্ডি ও জুয়ার অর্থ লেনদেনে।
তিনি জানান, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে ঘুষ-দুর্নীতির টাকাও হুন্ডি ও ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করে আসছিল। তারা বিভিন্ন ভুয়া হিসাব ও পরিবারের সদস্যদের নামে ছোট ছোট লেনদেনের মাধ্যমে অর্থের প্রকৃত উৎস গোপন রাখত। পরবর্তীতে এসব অর্থ ডিজিটাল হুন্ডি ও ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে বিদেশে পাঠানো হতো। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শেষে সিআইডি নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করে।
বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অভিযুক্তদের মধ্যে মূল হোতা একই পরিবারের কয়েকজন সদস্য। আরিফুল ইসলাম রিফাত, তার মা লিলি আক্তার, দুই বোন রিমি আক্তার ও রুমি আক্তার এবং এক বোন রুমির স্বামী আব্দুল কাদির জিলানী চক্রটির নেতৃত্ব দিতেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- মো. ইমরান হোসেন, মো. নুরে আলম, মুহা. নেয়ামতুল্লাহ ও মো. রিয়াদ। বর্তমানে ঘটনাটির তদন্ত পরিচালনা করছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদ্ঘাটন ও অন্য সদস্যদের শনাক্তে তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে, নাটোরের লালপুরে ইমো প্রতারণায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। এ সময় তাদের কাছে থেকে ২০টি মোবাইল জব্দ করা হয়। গত ৮ অক্টোবর দিবাগত রাতে উপজেলার বিলমারিয়া ও দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এরা হলেন- আলতাফ হোসেনের ছেলে নাজমুল হোসাইন, শাহজাহান আলীর ছেলে ওবায়দুর আলী, আজগর মণ্ডলের ছেলে এখলাছ মণ্ডল, তসলিম আলীর ছেলে রাজু আহমেদ, আব্দুল মালেকের ছেলেমারুফ হোসেন, মোসাব্বর হোসেনের ছেলে আরিফুল ইসলাম, ফজলুর রহমানের ছেলে রাসেল আহমে, জটু সরদারের ছেলে রুবেল সরদার, বাবলু সরকারের ছেলে সোহাগ আলী, শরিফুল ইসলামের ছেলে মুন আহমেদ, নাজির প্রামাণিকের ছেলে টুটুল আলী ও জামুরল খানদারের ছেলে আহমেদ আলী সাব্বির।
নাটোর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুল্লাহ হাসিব বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
অপরদিকে আদালত সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকায় যৌতুকের দাবিতে সোনিয়া আক্তার নামে এক নারীকে হত্যার দায়ে তার স্বামী মো. সোহেল রানার মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান এই রায় দেন। দণ্ডের পাশাপাশি তাকে ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এরশাদ আলম জর্জ এ তথ্য জানান। এছাড়াও অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় শিউলী বেগম এবং মাজেদা বেগম নামে দুই আসামিকে খালাসের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
রায়ে বিচারক উল্লেখ করেন, আসামির স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে অর্থদণ্ডের টাকা ভুক্তভোগীর পরিবারকে দিতে ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেন। রায় ঘোষণার সময় দণ্ডিত সোহেল রানা পলাতক ছিলেন। আসামি পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৩ সালে সোহেল রানার সঙ্গে সোনিয়া আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য সোনিয়াকে মারধর করতো তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। সোনিয়ার বাবা মো. চান মিয়া ৯০ হাজার টাকা যৌতুক দেন। এরপর আরও ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করে সোনিয়াকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে তার স্বামীর পরিবার। ২০১৬ সালের ১৭ জুলাই রাত ৩টা থেকে সকাল ৮টার মধ্যে সোহেল রানা অন্য আসামিদের সহযোগিতায় সোনিয়াকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। ওই ঘটনায় ১৮ জুলাই মিয়া চান কামরাঙ্গীরচর থানায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে একই থানার পুলিশ পরিদর্শক শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের ওই বছরের ২৬ অক্টোবর তিন জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০১৮ সালের ৩ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। মামলার বিচার চলাকালে আদালত মোট ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
এদিকে, দেশজুড়ে বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ১ হাজার ৬৩২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো পুলিশ সদর দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে বিশেষ অভিযান চালিয়ে মামলা ও ওয়ারেন্টমূলে ১ হাজার ১২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি এই সময়ে অন্যান্য অপরাধে আরও ৫১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও অভিযানে একটি দেশীয় তৈরি ওয়ান শুটার গান ছাড়াও ২ রাউন্ড কার্তুজ, ২টি তরবারি, একটি রামদা, ৪টি চাপাতি, ৩টি কিরিচ ও একটি ছুরি জব্দ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।

জনপ্রিয় সংবাদ

অনলাইন প্রতারণায় গোটা পরিবার

আপডেট সময় : ০৭:৩৮:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫

* পাচার ৩৪ কোটি টাকা, সিআইডির মামলা
* ইমো হ্যাক করে প্রতারণায় গ্রেপ্তার ১২
* স্ত্রীকে হত্যায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড
* দেশজুড়ে পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ১৬৩২

দীর্ঘদিন ধরে অনলাইন প্রতারণার মাধ্যমে অপকর্ম চালিয়ে আসছিল একটি পরিবারের সব সদস্য। চক্রটি অনলাইন প্রতারণা ও জুয়া এবং হুন্ডি কার্যক্রমের মাধ্যমে ৩৪ কোটি টাকার পাচার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন অপকর্মে ওই পরিবারের ভাইবোন, মা ও ভগ্নিপতি নেতৃত্ব দিতেন। এ ঘটনায় মানিলন্ডারিং আইনে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামালা দায়ের করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এদিকে নাটোরে ইমো হ্যাক করে প্রতারণার দায়ে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অপরদিকে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে যৌতুকের দাবিতে সোনিয়া আক্তার নামে এক নারীকে হত্যার দায়ে তার স্বামী মো. সোহেল রানার মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৬৩২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশ, সিআইডি ও আদালত সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সিআইডি জানায়, দীর্ঘদিন ধরে অনলাইন প্রতারণার মাধ্যমে অপকর্ম চালিয়ে আসছিল একটি পরিবারের সব সদস্য। চক্রটি অনলাইন প্রতারণা ও জুয়া এবং হুন্ডি কার্যক্রমের মাধ্যমে ৩৪ কোটি টাকার পাচার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন অপকর্মে ওই পরিবারের ভাইবোন, মা ও ভগ্নিপতি নেতৃত্ব দিতেন। এ ঘটনায় মানিলন্ডারিং আইনে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামালা দায়ের করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল বৃহস্পতিবার সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় নয়জনের নামে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মামলায় আরও সাত-আটজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন- আরিফুল ইসলাম রিফাত, মো. ইমরান হোসেন, মো. নুরে আলম, মোছা. লিলি আক্তার, মোছা. রিমি আক্তার, রুমি আক্তার, আব্দুল কাদির জিলানী, মুহা. নেয়ামতুল্লাহ ও মো. রিয়াদ।
জসীম উদ্দিন খান জানান, একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলত। প্রথমে ক্ষুদ্র কিছু কাজের বিনিময়ে অল্প অর্থ দিয়ে ভুক্তভোগীদের আস্থা অর্জন করত। পরে বড় প্রজেক্টের অজুহাতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত। প্রতারণার পাশাপাশি চক্রটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দরিদ্র ও অশিক্ষিত মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে তাদের অজ্ঞাতে ভুয়া ব্যাংক ও মোবাইল আর্থিক সেবার হিসাব খুলত। এসব হিসাব ব্যবহার করা হতো অনলাইন প্রতারণা, হুন্ডি ও জুয়ার অর্থ লেনদেনে।
তিনি জানান, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে ঘুষ-দুর্নীতির টাকাও হুন্ডি ও ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করে আসছিল। তারা বিভিন্ন ভুয়া হিসাব ও পরিবারের সদস্যদের নামে ছোট ছোট লেনদেনের মাধ্যমে অর্থের প্রকৃত উৎস গোপন রাখত। পরবর্তীতে এসব অর্থ ডিজিটাল হুন্ডি ও ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে বিদেশে পাঠানো হতো। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শেষে সিআইডি নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করে।
বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অভিযুক্তদের মধ্যে মূল হোতা একই পরিবারের কয়েকজন সদস্য। আরিফুল ইসলাম রিফাত, তার মা লিলি আক্তার, দুই বোন রিমি আক্তার ও রুমি আক্তার এবং এক বোন রুমির স্বামী আব্দুল কাদির জিলানী চক্রটির নেতৃত্ব দিতেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- মো. ইমরান হোসেন, মো. নুরে আলম, মুহা. নেয়ামতুল্লাহ ও মো. রিয়াদ। বর্তমানে ঘটনাটির তদন্ত পরিচালনা করছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদ্ঘাটন ও অন্য সদস্যদের শনাক্তে তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে, নাটোরের লালপুরে ইমো প্রতারণায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। এ সময় তাদের কাছে থেকে ২০টি মোবাইল জব্দ করা হয়। গত ৮ অক্টোবর দিবাগত রাতে উপজেলার বিলমারিয়া ও দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এরা হলেন- আলতাফ হোসেনের ছেলে নাজমুল হোসাইন, শাহজাহান আলীর ছেলে ওবায়দুর আলী, আজগর মণ্ডলের ছেলে এখলাছ মণ্ডল, তসলিম আলীর ছেলে রাজু আহমেদ, আব্দুল মালেকের ছেলেমারুফ হোসেন, মোসাব্বর হোসেনের ছেলে আরিফুল ইসলাম, ফজলুর রহমানের ছেলে রাসেল আহমে, জটু সরদারের ছেলে রুবেল সরদার, বাবলু সরকারের ছেলে সোহাগ আলী, শরিফুল ইসলামের ছেলে মুন আহমেদ, নাজির প্রামাণিকের ছেলে টুটুল আলী ও জামুরল খানদারের ছেলে আহমেদ আলী সাব্বির।
নাটোর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুল্লাহ হাসিব বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
অপরদিকে আদালত সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকায় যৌতুকের দাবিতে সোনিয়া আক্তার নামে এক নারীকে হত্যার দায়ে তার স্বামী মো. সোহেল রানার মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান এই রায় দেন। দণ্ডের পাশাপাশি তাকে ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এরশাদ আলম জর্জ এ তথ্য জানান। এছাড়াও অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় শিউলী বেগম এবং মাজেদা বেগম নামে দুই আসামিকে খালাসের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
রায়ে বিচারক উল্লেখ করেন, আসামির স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে অর্থদণ্ডের টাকা ভুক্তভোগীর পরিবারকে দিতে ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেন। রায় ঘোষণার সময় দণ্ডিত সোহেল রানা পলাতক ছিলেন। আসামি পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৩ সালে সোহেল রানার সঙ্গে সোনিয়া আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য সোনিয়াকে মারধর করতো তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। সোনিয়ার বাবা মো. চান মিয়া ৯০ হাজার টাকা যৌতুক দেন। এরপর আরও ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করে সোনিয়াকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে তার স্বামীর পরিবার। ২০১৬ সালের ১৭ জুলাই রাত ৩টা থেকে সকাল ৮টার মধ্যে সোহেল রানা অন্য আসামিদের সহযোগিতায় সোনিয়াকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। ওই ঘটনায় ১৮ জুলাই মিয়া চান কামরাঙ্গীরচর থানায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে একই থানার পুলিশ পরিদর্শক শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের ওই বছরের ২৬ অক্টোবর তিন জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০১৮ সালের ৩ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। মামলার বিচার চলাকালে আদালত মোট ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
এদিকে, দেশজুড়ে বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ১ হাজার ৬৩২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো পুলিশ সদর দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে বিশেষ অভিযান চালিয়ে মামলা ও ওয়ারেন্টমূলে ১ হাজার ১২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি এই সময়ে অন্যান্য অপরাধে আরও ৫১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও অভিযানে একটি দেশীয় তৈরি ওয়ান শুটার গান ছাড়াও ২ রাউন্ড কার্তুজ, ২টি তরবারি, একটি রামদা, ৪টি চাপাতি, ৩টি কিরিচ ও একটি ছুরি জব্দ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।