০৮:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তারের জঞ্জালে বাড়ছে ঝুঁকি

  • বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে অলিগলি সবখানে অগোছালোভাবে ঝুলছে তার
  • স্যাটেলাইট টিভির ক্যাবল, ইন্টারনেট ও টেলিফোনের তারী ঝুলছে
  • ব্রডব্যান্ড লাইন ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ
  • ক্যাবল নেটওয়ার্ক ১৫ থেকে ২০ শতাংশ
  • অন্যান্য তার রয়েছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ

রাজধানী ঢাকা শুধু মানুষের নগরীই নয় পরিণত হয়েছে তারের নগরীতেও। মহাখালী কিংবা মিরপুর, উত্তরা হোক অথবা বাড্ডা রাজধানীর সব এলাকাতেই বৈদ্যুতিক ও সড়কবাতির খুঁটিতে ঝুলতে দেখা যায় কালো তারের জঞ্জাল। কোথাও কোথাও তারের এই জট ফুটপাত পর্যন্ত নেমে এসে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে মানুষের চলার পথে। তারের এসব জট শুধু যে প্রতিবন্ধকতা-সৌন্দর্যহানি ঘটাচ্ছে তা একই সাথে বাড়াচ্ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও। সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষেরও কোন সমন্বিত পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। কখনো কখনো হঠাৎ করে উচ্ছেদ অভিযানের নামে তার কেটে দেওয়া হয়। এতে স্থানীয় ইন্টারনেট সেবা ও কেবল টিভি ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ঘুরে-ফিরে আবার সেই সাধারণ মানুষকেই ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বাংলানেট টেকনোলজিস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী জুবায়ের আলমাহমুদ হোসাইন এ প্রসঙ্গে বলেন, মূলত প্রত্যেক অপারেটরই নিজস্ব ফাইবার টেনে আলাদা আলাদা সেবা দিচ্ছে। ফলে একই এলাকায় একাধিক লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান আলাদা ক্যাবল ঝুলিয়ে রাখছে। এতে অযথা জঞ্জালের সৃষ্টি হচ্ছে।
রাজধানীর বাড্ডা, নদ্দা ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের খুঁটিতে জড়িয়ে আছে কালো তারের স্তুপ। এসব এলাকায় বেশির ভাগ ফুটপাতে মাথার ওপরে ঝুলতে দেখা যায় তারের কুণ্ডলি। কোথাও কোথাও তারের জটলা নেমে এসেছে কাঁধ সমান উচ্চতায়, কোথাও আবার কোমরের নিচে। হেঁটে যেতে হলে হাত দিয়ে তার সরিয়ে চলতে হয়। কোনো কোনো জায়গায় ঝুঁকে বা পাশ কাটিয়ে পথ পার হতে হয়। বিশেষ করে বাড্ডা থেকে শুরু করে বসুন্ধরা পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে টেলিফোন, বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেটের খুঁটিতে অসংখ্য তার ঝুলছে। এগুলো অনেকটা ঝোঁপের মতো হয়ে খুঁটির গায়ে লেগে আছে। নদ্দা এলাকার ভাসমান দোকানি হাফিজুল্লাহ বলেন, আমরা প্রায়ই দেখি কেউ না কেউ এসে এই তারগুলো বেঁধে দেয়, কিন্তু কয়েকদিন পর আবার নিচে নেমে আসে। অনেক সময় কাটা বা ছেঁড়া তার রাস্তায় পড়ে থাকে, পথচারীরা পা দিয়ে সরিয়ে দেয়। ছোট্ট বাচ্চা কিংবা বয়স্ক মানুষদের জন্য এটি বড় ঝুঁকি। একই এলকায় চলাচলকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সোহেল আহমেদ বলেন, রাতে টিউশনি থেকে ফেরার সময় কয়েকবার গলির মাথায় ঝুলন্ত তারে আটকে গেছি। অনেক সময় তো চোখেই পড়ে না, হঠাৎ মাথায় লেগে যায়। এটি খুব বিপজ্জনক। উত্তরা, খিলক্ষেত ও বিমানবন্দর এলাকায়ও চোখে পড়ে একই দৃশ্য। রাস্তার প্রতিটি বিদ্যুতের খুঁটিই যেন একেকটি তারের জঙ্গল। উত্তরার ৩, ৫ ও ৭ নম্বর সেক্টরের রাস্তায় ঘুরে দেখা যায়, একটি খুঁটিতে ২৫টি পর্যন্ত আলাদা তার ঝুলছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সিটি কর্পোরেশন কিংবা বিদ্যুত বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে হঠাৎ অভিযান পরিচালনা করে ঝুলন্ত তার অপসারণ করা হয়। তবে এতে দীর্ঘমেয়াদি কোনো সুফল আসে না। উল্টো হঠাৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ঘুরেফিরে সাধারণ মানুষেরই ভোগান্তি বাড়ে। স্থানীয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, অফিস চলাকালে হঠাৎ ইন্টারনেট চলে যাওয়ায় পুরো কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ক্লায়েন্টের সঙ্গে মিটিং বাতিল করতে হয়েছে, অফিসের অন্যান্য সহকর্মীর সঙ্গে কাজের সমন্বয়ও করা যায়নি। হঠাৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে পুরো দিনের পরিকল্পনা নষ্ট হয়ে যায়। আরেকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তানভীর হোসেন বলেন, গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্ট এবং অনলাইন অর্ডার নেওয়ার সময় হঠাৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আমাদের পুরো দলকে অচল করে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতি তৈরি করে আমরা শুধু নিজেদের ক্ষতি করছি না, গ্রাহককেও সমস্যায় ফেলছি। আগাম নোটিশ ছাড়া এমনভাবে হঠাৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলে তার জন্য ভোগান্তিতে পড়তে হয় বেশি।
এ সমস্যা সমাধানের পথ ‘অ্যাকটিভ শেয়ারিং’ ব্যবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে সরকারের কাছে ‘অ্যাকটিভ শেয়ারিং’ নীতি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছেন ইন্টারনেট সেবাদাতারা। এই নীতির মাধ্যমে একটি ভবনে একটিই তার বরাদ্দ থাকবে; যেটি সব আইএসপিকে ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে। এতে খুঁটিতে তারের চাপ কমবে, ঝুলন্ত কেবল কমবে এবং নগরের সৌন্দর্য রক্ষা পাবে। জঞ্জাল কমাতে হঠাৎ তার কেটে দেওয়ার চেয়ে প্রকৃত সমস্যার সমাধান জরুরি বলে মনে করছেন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি মোহাম্মদ আমিনুল হাকিম। তিনি বলেন, রাজধানীতে ঝুলন্ত তারের জট নিরসনে অ্যাকটিভ শেয়ারিং নীতি প্রয়োজন৷ কারণ, ওয়্যারলেস প্রযুক্তি উচ্চ ব্যান্ডউইথ অ্যাপ্লিকেশনের জন্য যথাযথ সমাধান নয়। বর্তমানে যে ধরনের ডেটা ব্যবহার হয়, বিশেষ করে ভিডিও স্ট্রিমিং, ক্লাউড সার্ভিস বা হাই-ব্যান্ডউইথ অ্যাপ্লিকেশন এগুলোতে ফাইবার অপটিকই একমাত্র নির্ভরযোগ্য সমাধান। তাই তার সম্পূর্ণ তুলে ফেলা সম্ভব নয়। তবে আমরা স্বীকার করি এটি একটি বড় সমস্যা। বাংলানেট টেকনোলজিস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী জুবায়ের আলমাহমুদ হোসাইন মনে করেন, ক্যাবল শেয়ারিং ব্যবস্থা চালু করা গেলে অন্তত প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে আলাদা আলাদা করে তার টানতে হবে না। একই অবকাঠামো ব্যবহার করে একাধিক অপারেটর সেবা দিতে পারলে খরচ কমবে এবং গ্রাহকরাও মানসম্মত সেবা পাবেন। ক্যাবল পরিবর্তনের প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, কিছু কিছু অপারেটর পুরোনো তার রিপ্লেস না করেই নতুনটা দেয়। তবে এলাকাভিত্তিক সেবাদানকারীদের মধ্যে সবাই এমনটি করে না। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। বিদ্যুৎ কিংবা অন্য সেবাগুলোর মতো ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্রেও সরকারি সহযোগিতা দরকার। আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল স্থাপনে অনুমোদন ও সহায়তা দিলে আমরা সহজেই সেগুলো ব্যবহার করতে পারব। একই সঙ্গে বিটিসিএলের আন্ডারগ্রাউন্ড অবকাঠামোও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য উন্মুক্ত করা যেতে পারে। এতে সবার জন্যই সুফল আসবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। রাজধানীজুড়ে তারের জঞ্জাল নিরসনে নতুন নীতিমালায় নেটওয়ার্ক শেয়ারিং উন্মুক্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শফিউল আজম পারভেজ। তিনি বলেন, সরকার নতুন লাইসেন্সিং গাইডলাইন ও পলিসি অনুমোদন করেছে। সেই ভিত্তিতে আমরা নতুন গাইডলাইন তৈরির কাজ হাতে নিয়েছি, যা এখন চলমান। ঢাকায় ঝুলন্ত তার অপসারণে বিটিআরসির পাশাপাশি অন্যান্য সরকারি সংস্থার অংশগ্রহণ প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই কাজ শুধু বিটিআরসির নয়। এর সঙ্গে সিটি করপোরেশন, রোডস অ্যান্ড হাইওয়েজ, বিদ্যুৎ বিভাগসহ অনেক সংস্থা যুক্ত। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো যদি একযোগে কাজ করে, তাহলে এ জঞ্জাল দূর করা সম্ভব হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

তারের জঞ্জালে বাড়ছে ঝুঁকি

আপডেট সময় : ০৭:১৮:৪১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫
  • বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে অলিগলি সবখানে অগোছালোভাবে ঝুলছে তার
  • স্যাটেলাইট টিভির ক্যাবল, ইন্টারনেট ও টেলিফোনের তারী ঝুলছে
  • ব্রডব্যান্ড লাইন ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ
  • ক্যাবল নেটওয়ার্ক ১৫ থেকে ২০ শতাংশ
  • অন্যান্য তার রয়েছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ

রাজধানী ঢাকা শুধু মানুষের নগরীই নয় পরিণত হয়েছে তারের নগরীতেও। মহাখালী কিংবা মিরপুর, উত্তরা হোক অথবা বাড্ডা রাজধানীর সব এলাকাতেই বৈদ্যুতিক ও সড়কবাতির খুঁটিতে ঝুলতে দেখা যায় কালো তারের জঞ্জাল। কোথাও কোথাও তারের এই জট ফুটপাত পর্যন্ত নেমে এসে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে মানুষের চলার পথে। তারের এসব জট শুধু যে প্রতিবন্ধকতা-সৌন্দর্যহানি ঘটাচ্ছে তা একই সাথে বাড়াচ্ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও। সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষেরও কোন সমন্বিত পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। কখনো কখনো হঠাৎ করে উচ্ছেদ অভিযানের নামে তার কেটে দেওয়া হয়। এতে স্থানীয় ইন্টারনেট সেবা ও কেবল টিভি ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ঘুরে-ফিরে আবার সেই সাধারণ মানুষকেই ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বাংলানেট টেকনোলজিস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী জুবায়ের আলমাহমুদ হোসাইন এ প্রসঙ্গে বলেন, মূলত প্রত্যেক অপারেটরই নিজস্ব ফাইবার টেনে আলাদা আলাদা সেবা দিচ্ছে। ফলে একই এলাকায় একাধিক লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান আলাদা ক্যাবল ঝুলিয়ে রাখছে। এতে অযথা জঞ্জালের সৃষ্টি হচ্ছে।
রাজধানীর বাড্ডা, নদ্দা ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের খুঁটিতে জড়িয়ে আছে কালো তারের স্তুপ। এসব এলাকায় বেশির ভাগ ফুটপাতে মাথার ওপরে ঝুলতে দেখা যায় তারের কুণ্ডলি। কোথাও কোথাও তারের জটলা নেমে এসেছে কাঁধ সমান উচ্চতায়, কোথাও আবার কোমরের নিচে। হেঁটে যেতে হলে হাত দিয়ে তার সরিয়ে চলতে হয়। কোনো কোনো জায়গায় ঝুঁকে বা পাশ কাটিয়ে পথ পার হতে হয়। বিশেষ করে বাড্ডা থেকে শুরু করে বসুন্ধরা পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে টেলিফোন, বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেটের খুঁটিতে অসংখ্য তার ঝুলছে। এগুলো অনেকটা ঝোঁপের মতো হয়ে খুঁটির গায়ে লেগে আছে। নদ্দা এলাকার ভাসমান দোকানি হাফিজুল্লাহ বলেন, আমরা প্রায়ই দেখি কেউ না কেউ এসে এই তারগুলো বেঁধে দেয়, কিন্তু কয়েকদিন পর আবার নিচে নেমে আসে। অনেক সময় কাটা বা ছেঁড়া তার রাস্তায় পড়ে থাকে, পথচারীরা পা দিয়ে সরিয়ে দেয়। ছোট্ট বাচ্চা কিংবা বয়স্ক মানুষদের জন্য এটি বড় ঝুঁকি। একই এলকায় চলাচলকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সোহেল আহমেদ বলেন, রাতে টিউশনি থেকে ফেরার সময় কয়েকবার গলির মাথায় ঝুলন্ত তারে আটকে গেছি। অনেক সময় তো চোখেই পড়ে না, হঠাৎ মাথায় লেগে যায়। এটি খুব বিপজ্জনক। উত্তরা, খিলক্ষেত ও বিমানবন্দর এলাকায়ও চোখে পড়ে একই দৃশ্য। রাস্তার প্রতিটি বিদ্যুতের খুঁটিই যেন একেকটি তারের জঙ্গল। উত্তরার ৩, ৫ ও ৭ নম্বর সেক্টরের রাস্তায় ঘুরে দেখা যায়, একটি খুঁটিতে ২৫টি পর্যন্ত আলাদা তার ঝুলছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সিটি কর্পোরেশন কিংবা বিদ্যুত বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে হঠাৎ অভিযান পরিচালনা করে ঝুলন্ত তার অপসারণ করা হয়। তবে এতে দীর্ঘমেয়াদি কোনো সুফল আসে না। উল্টো হঠাৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ঘুরেফিরে সাধারণ মানুষেরই ভোগান্তি বাড়ে। স্থানীয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, অফিস চলাকালে হঠাৎ ইন্টারনেট চলে যাওয়ায় পুরো কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ক্লায়েন্টের সঙ্গে মিটিং বাতিল করতে হয়েছে, অফিসের অন্যান্য সহকর্মীর সঙ্গে কাজের সমন্বয়ও করা যায়নি। হঠাৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে পুরো দিনের পরিকল্পনা নষ্ট হয়ে যায়। আরেকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তানভীর হোসেন বলেন, গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্ট এবং অনলাইন অর্ডার নেওয়ার সময় হঠাৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আমাদের পুরো দলকে অচল করে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতি তৈরি করে আমরা শুধু নিজেদের ক্ষতি করছি না, গ্রাহককেও সমস্যায় ফেলছি। আগাম নোটিশ ছাড়া এমনভাবে হঠাৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলে তার জন্য ভোগান্তিতে পড়তে হয় বেশি।
এ সমস্যা সমাধানের পথ ‘অ্যাকটিভ শেয়ারিং’ ব্যবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে সরকারের কাছে ‘অ্যাকটিভ শেয়ারিং’ নীতি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছেন ইন্টারনেট সেবাদাতারা। এই নীতির মাধ্যমে একটি ভবনে একটিই তার বরাদ্দ থাকবে; যেটি সব আইএসপিকে ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে। এতে খুঁটিতে তারের চাপ কমবে, ঝুলন্ত কেবল কমবে এবং নগরের সৌন্দর্য রক্ষা পাবে। জঞ্জাল কমাতে হঠাৎ তার কেটে দেওয়ার চেয়ে প্রকৃত সমস্যার সমাধান জরুরি বলে মনে করছেন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি মোহাম্মদ আমিনুল হাকিম। তিনি বলেন, রাজধানীতে ঝুলন্ত তারের জট নিরসনে অ্যাকটিভ শেয়ারিং নীতি প্রয়োজন৷ কারণ, ওয়্যারলেস প্রযুক্তি উচ্চ ব্যান্ডউইথ অ্যাপ্লিকেশনের জন্য যথাযথ সমাধান নয়। বর্তমানে যে ধরনের ডেটা ব্যবহার হয়, বিশেষ করে ভিডিও স্ট্রিমিং, ক্লাউড সার্ভিস বা হাই-ব্যান্ডউইথ অ্যাপ্লিকেশন এগুলোতে ফাইবার অপটিকই একমাত্র নির্ভরযোগ্য সমাধান। তাই তার সম্পূর্ণ তুলে ফেলা সম্ভব নয়। তবে আমরা স্বীকার করি এটি একটি বড় সমস্যা। বাংলানেট টেকনোলজিস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী জুবায়ের আলমাহমুদ হোসাইন মনে করেন, ক্যাবল শেয়ারিং ব্যবস্থা চালু করা গেলে অন্তত প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে আলাদা আলাদা করে তার টানতে হবে না। একই অবকাঠামো ব্যবহার করে একাধিক অপারেটর সেবা দিতে পারলে খরচ কমবে এবং গ্রাহকরাও মানসম্মত সেবা পাবেন। ক্যাবল পরিবর্তনের প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, কিছু কিছু অপারেটর পুরোনো তার রিপ্লেস না করেই নতুনটা দেয়। তবে এলাকাভিত্তিক সেবাদানকারীদের মধ্যে সবাই এমনটি করে না। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। বিদ্যুৎ কিংবা অন্য সেবাগুলোর মতো ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্রেও সরকারি সহযোগিতা দরকার। আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল স্থাপনে অনুমোদন ও সহায়তা দিলে আমরা সহজেই সেগুলো ব্যবহার করতে পারব। একই সঙ্গে বিটিসিএলের আন্ডারগ্রাউন্ড অবকাঠামোও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য উন্মুক্ত করা যেতে পারে। এতে সবার জন্যই সুফল আসবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। রাজধানীজুড়ে তারের জঞ্জাল নিরসনে নতুন নীতিমালায় নেটওয়ার্ক শেয়ারিং উন্মুক্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শফিউল আজম পারভেজ। তিনি বলেন, সরকার নতুন লাইসেন্সিং গাইডলাইন ও পলিসি অনুমোদন করেছে। সেই ভিত্তিতে আমরা নতুন গাইডলাইন তৈরির কাজ হাতে নিয়েছি, যা এখন চলমান। ঢাকায় ঝুলন্ত তার অপসারণে বিটিআরসির পাশাপাশি অন্যান্য সরকারি সংস্থার অংশগ্রহণ প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই কাজ শুধু বিটিআরসির নয়। এর সঙ্গে সিটি করপোরেশন, রোডস অ্যান্ড হাইওয়েজ, বিদ্যুৎ বিভাগসহ অনেক সংস্থা যুক্ত। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো যদি একযোগে কাজ করে, তাহলে এ জঞ্জাল দূর করা সম্ভব হবে।