আজ ১০ অক্টোবর, শুক্রবার—ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বড়াইল ইউনিয়নের খারঘর গ্রামে পালিত হলো ‘খারঘর গণহত্যা দিবস’। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকাররা মিলে চালিয়েছিল ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ। শান্তিপূর্ণ খারঘর গ্রামে তারা একদিনেই ৪৩ জন নিরীহ মুসলিম গ্রামবাসীকে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে ২৩ জনকে গণকবরে দাফন করা হয়, যা আজও ইতিহাসের এক মর্মান্তিক সাক্ষ্য হয়ে আছে।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় খারঘর ছিল একটি নিরপদ আশ্রয়স্থল। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এই গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষরা স্বস্তিতে বসবাস করছিলেন। কিন্তু ১০ অক্টোবর সকালবেলা পাক বাহিনীর অতর্কিত হামলায় সবকিছু বদলে যায়। নির্বিচারে গুলি চালানো হয়, ঘরবাড়ি লুট ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়, ধর্ষণের ঘটনাও ঘটে। যারা সেদিন প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন, তারা আজও সেই ভয়াল স্মৃতি বয়ে বেড়ান চোখে জল আর বুকে রক্তক্ষরণ নিয়ে।
খারঘর গণহত্যা দিবস উপলক্ষে খারঘর শহিদ স্মৃতি সংরক্ষণ ও বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে আয়োজন করা হয় নানা কর্মসূচির। কুরআন খতম, দোয়া মাহফিল, মিলাদ, গার্ড অব অনার প্রদান এবং শহিদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
খারঘর শহিদ স্মৃতি সংরক্ষণ ও বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি কাজী ইমরুল কবীর সুমনের সভাপতিত্বে আয়োজনে অংশ নেন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। কাজী ইমরুল কবীর সুমন দীর্ঘদিন ধরে খারঘর গণহত্যার স্মৃতি সংরক্ষণে কাজ করছেন। তার প্রচেষ্টায় খারঘরে নির্মিত হয়েছে ‘৭১ শহিদ স্মৃতি সৌধ’ এবং গণকবর কেন্দ্রিক মসজিদ-মাদরাসা।
এই দিনে “খারঘর গণহত্যা দিবস উপলক্ষে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।”
একই দিনে পাগলা নদীতে পোনা মাছ অবমুক্তকরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) খালিদ বিন মনসুর। তিনি রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউস, পাঙ্গাস, কার্পু, স্বরপুটি ও তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন মাছের পোনা অবমুক্ত করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
এই আয়োজন ঘিরে খারঘরে সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশ। বহু মানুষের অংশগ্রহণে দিনটি যেন আবারও ফিরে আনে ১৯৭১ সালের সেই বিভীষিকাময় সকালকে। শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে উচ্চারিত হয় একটি বার্তা—এই শহিদদের ভুলিনি, ভুলব না।
খারঘর গণহত্যা একটি গ্রামের ইতিহাস নয়, এটি পুরো জাতির মুক্তিযুদ্ধকালীন বেদনার এক অন্তঃস্থ চিহ্ন। শহিদদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানাতে হলে ইতিহাসকে জানতে হবে, বাঁচিয়ে রাখতে হবে সত্য, এবং নতুন প্রজন্মকে সেই চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
এমআর/সবা