যেখানে ছেলেমেয়েদের উচ্ছ্বাসে মুখরিত হওয়ার কথা, সেখানে শুধু শোনা যায় গরু-ছাগলের ঘন্টার শব্দ। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সহর উদ্দিন সরকার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ যেন পরিণত হয়েছে গবাদিপশুর চারণভূমিতে। অথচ এই মাঠেই প্রতিদিন খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকার কথা শিক্ষার্থীদের। কিন্তু এখন সেখানে ঘুরে বেড়ায় গরু, ছাগল; আর শিক্ষার্থীদের স্কুলজীবন চলছে এক ধরনের বঞ্চনার মধ্যে।
১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ও ২০১৮ সালে জাতীয়করণ হওয়া এ বিদ্যালয়ের ৯ একরের বেশি কৃষিজ ও বাণিজ্যিক সম্পত্তি রয়েছে, যা থেকে প্রতিবছর আয় হয় প্রায় অর্ধকোটি টাকা। কিন্তু সেই আয়ের প্রতিফলন কোথাও নেই বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো কিংবা শিক্ষার পরিবেশে।

এর মধ্যেই দেখা যায় আরও বিস্ময়কর চিত্র—বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণিকক্ষ সংস্কার করে সেখানে বসবাস করছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইমরান আলী। শিক্ষার্থীরা যেখানে পাঠগ্রহণ করবে, সেখানে পাতা বিছানা, আলমারি, বাসন-কোসন। এ যেন স্কুল নয়, কারও ব্যক্তিগত সংসার!
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিদ্যালয়ে নিয়মিত শ্রেণি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। খেলাধুলার জন্য যেটুকু জায়গা থাকা উচিত, তাও নেই। গবাদিপশুর বিষ্ঠার দুর্গন্ধে চলাফেরা করাই কষ্টকর হয়ে পড়েছে তাদের জন্য।
অভিভাবকরাও ক্ষুব্ধ। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। অষ্টম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন বাবদ জনপ্রতি ৫৫ টাকা, এসএসসি ফরম পূরণের সময় ২ হাজার টাকা করে কোচিং ফি আদায় করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়দের ভাষ্য, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রধান শিক্ষক ইমরান আলী সবকিছু নিজের মতো করে চালাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের সঠিক হিসাব নেই। সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে অর্থ তোলা হচ্ছে বেসরকারি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে—এমন গুরুতর অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইমরান আলী বলেন, “দূর থেকে এসেছি, একটি রুম মুসাফির হিসেবে ব্যবহার করছি—এটা অপরাধ নয়। আমি সরকারি চাকরি করি, একটি টাকাও আত্মসাৎ করার ইচ্ছে নেই।”
তবে বিষয়টিকে হালকাভাবে নিচ্ছেন না শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা। রংপুর অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা উপপরিচালক রোকসানা বেগম বলেন, “বিদ্যালয়ের রুমে বসবাসের সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিদ্যালয়ের মাঠে গরু-ছাগলের অবাধ বিচরণ, শ্রেণিকক্ষে বসবাস—এসব চিত্র যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার কোথায় কোথায় ফাঁক। আর প্রশ্ন রেখে যায়—শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কি এমন অনিয়মের ভারে চেপে যাবে?
এমআর/সবা






















