- ৭ মাসে হত্যা-ডাকাতিসহ ১০৪০ মামলা
- ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়েছে সাত মাসে ৩৩টি
- পুলিশ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে ১২টি
অপরাধ দমন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, মাদকবিরোধী অভিযান, সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডিএমপি নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে- উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ
৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজপথে আন্দোলন বেড়েছে। আর আন্দোলন দমাতে হিমশিম খেতে হয়েছে অন্তবর্তী সরকারকে । আর এসবের মধ্যেই রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বেড়েছে নানা অপরাধ। যার ফলে বেড়েছে মামলার জোট। গত ৭ মাসে শুধু রাজধানীর রমনা বিভাগেই হত্যা-ডাকাতিসহ প্রায় ১০৪০ মামলা হয়েছে। যার মধ্যে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়েছে সাত মাসে ৩৩টি। সব মিলিয়ে রমনা বিভাগের বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে জানুয়ারিতে ১৬৭টি, ফেব্রুয়ারিতে ১৩৮টি, মার্চে ১৬৪টি, এপ্রিলে ১৪০টি, মে মাসে ১৫৫টি, জুনে ১৫১টি ও জুলাইয়ে ১২৫টি। আর গ্রেফতার করা হয়েছে জানুয়ারিতে ৪৩০ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৪১৫ জন, মার্চে ৪৯৬ জন, এপ্রিলে ৪৮৬ জন, মে মাসে ৫১১ জন, জুনে ৩৫২ জন ও জুলাইয়ে ৪৯৪ জনকে। ডিএমপির তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে রমনা বিভাগের থানা এলাকায় নানান অপরাধে মোট এক হাজার ৪০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে মোট তিন হাজার ১৮৪ জনকে। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন, সচিবালয়, সুপ্রিম কোর্টসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের অবস্থান এই রমনা বিভাগে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আলম বলেন, আমরা তিনটা দিকে কাজ করি। একটা হচ্ছে প্রিভেনশন নিয়ে, যেমন: কোনো একটা ঘটনা যাতে না ঘটতে পারে। মানে ঘটনা ঘটার আগেই যাতে আমরা সমস্যাটা সমাধান করতে পারি, সেটার জন্য যতটুকু ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন সেই চেষ্টা করি। এটা আমাদের যে পেট্রোলিং ব্যবস্থা আছে, দিনের বেলা মোটরসাইকেলের মাধ্যমে পেট্রোলিং টিম আছে, ফুট পেট্রোলিং আছে, ফাঁড়িগুলো আছে; তারা আলাদা আলাদা করে কাজ করে। বিভিন্ন রকম চেকপোস্ট করা হয়। এগুলো হচ্ছে প্রিভেনটিভ। তিনি আরও জানান, আরেকটা হচ্ছে ডিটেক্টিভ। সেটা হচ্ছে কোনো একটা ঘটনা ঘটলে সেগুলো ডিটেকশনের জন্য আমরা কাজ করি। বলা যায় রমনা ডিভিশনে ঘটনা ঘটার প্রবণতাটা বেশি। আর সেগুলো ডিটেকশনের হার প্রায় শত ভাগ। এরপর আরেকটা হচ্ছে ইনভেস্টিগেশন এবং প্রসিকিউশন। প্রতি মাসেই যে মামলাগুলো হয় আমরা চেষ্টা করি তার থেকে বেশি যেনো খারিজ হয়। যাতে বেশি মামলা পেন্ডিং না থাকে। যে মামলাগুলো সেনসেটিভ সেগুলো আমরা পিবিআই, সিআইডি বা আমাদের যারা ডিবিতে আছে তাদের কাছে হস্তান্তর করি। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর বলেন, আসামি গ্রেফতার করা আমাদের নিয়মিত কাজ। অপরাধ দমনে আমাদের যে পেট্রোল টিম, নাইট পেট্রোল, ডে পেট্রোল সেগুলো জোরদার করা হয়েছে। আগে আমাদের চারটা পেট্রোল টিম ছিল, এখন ছয়টা পেট্রোল টিম কাজ করছে। আমাদের থানা এলাকায় অপরাধীরা যাতে বিচরণ করতে না পারে, তাদের গ্রেফতারের জন্য নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। এছাড়া যাদের নামে ওয়ারেন্ট আছে কিন্তু এখনো গ্রেফতারের আওতায় আসেনি, তাদের গ্রেফতারের আওতায় নিয়ে আসতে অভিযান চালাচ্ছি। সার্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। আমাদের এলাকায় অপরাধ করার প্রবণতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। ধানমন্ডি থানার ওসি ক্যশৈন্যু মারমা বলেন, প্রথমত আমরা টহল জোরদার করেছি। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ওপর ভিত্তি করে অভিযান চালাচ্ছি। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অভিযান থেকে শুরু করে যত ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা যায় সব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
ডিএমপির রমনা বিভাগে ডাকাতির ঘটনায় জানুয়ারি মাসে দুটি এবং ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে একটি করে মোট চারটি মামলা হয়। দস্যুতার ঘটনায় জানুয়ারিতে ছয়টি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে তিনটি করে, এপ্রিলে একটি, মে মাসে দুটি, জুনে একটি ও জুলাইয়ে চারটি মামলা হয়। খুনের অভিযোগে মামলা হয় জানুয়ারিতে চারটি, মার্চে একটি, মে মাসে তিনটি, জুনে সাতটি ও জুলাইয়ে দুটি। এছাড়া এসময়ে দ্রুত বিচার আইনে সাতটি ও দাঙ্গার অভিযোগে একটি মামলা করা হয়। নারী নির্যাতন মামলার তথ্যে বলা হয়- ধর্ষণের ঘটনায় জানুয়ারিতে চারটি, ফেব্রুয়ারিতে একটি, মার্চে তিনটি, এপ্রিলে চারটি, মে মাসে নয়টি এবং জুন ও জুলাইয়ে দুটি করে মামলা হয়। অন্যান্য নির্যাতনের মামলা হয়েছে সাত মাসে ৩৩টি। শিশু নির্যাতনের অভিযোগে জানুয়ারিতে চারটি, ফেব্রুয়ারিতে তিনটি, মার্চে চারটি, এপ্রিলে তিনটি, মে মাসে পাঁচটি, জুনে ছয়টি ও জুলাইয়ে ১০টি মামলা করা হয়। অপহরণের ঘটনায় মামলার সংখ্যা সব মিলিয়ে ১৯টি। অন্যান্য ঘটনায় জানুয়ারিতে ৫৫টি, ফেব্রুয়ারিতে ৬০টি, মার্চে ৬৯টি, এপ্রিলে ৫৬টি, মে মাসে ৫৫টি, জুনে ৩৪টি ও জুলাইয়ে ৩৭টি মামলা হয়েছে। একই সময়ে অস্ত্র আইনে ৩৮টি এবং বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে চারটি মামলা করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে জানুয়ারিতে ৪৯টি, ফেব্রুয়ারিতে ৪১টি, মার্চে ৩৮টি, এপ্রিলে ৪৬টি, মে মাসে ৩৭টি, জুনে ৩৮টি ও জুলাইয়ে ৩৭টি মামলা হয়েছে। সেই সঙ্গে চোরাচালানের ঘটনায় সাত মাসে সাতটি মামলা হয়েছে। ডিসি মাসুদ আলম বলেন, বিশেষ করে আমাদের রমনা ডিভিশনে শাহবাগ ও রমনা থানা এলাকায় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই) আছে। যেমন: বাংলাদেশ সচিবালয়, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন, জাতীয় প্রেস ক্লাব, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ এগুলোতে প্রায়ই ঘটনা থাকেই। আর আন্দোলনকারীরা মোটামুটি সারাদেশ থেকে এখানেই আসে। এই নন-অর্ডার সিচুয়েশন মেইনটেইন করতে করতেই আমাদের মোটামুটি অবস্থা খারাপ। প্রতিদিন আমরা দেখছি এসব এলাকায় ১০, ১২, ১৪টা পর্যন্ত গ্রুপ আন্দোলন করতে এসব এলাকায় আসে। বিভিন্ন ধরনের ইস্যু থাকে। আমরা এগুলো প্রথমে সমঝোতার চেষ্টা করি। তারপরও যদি সেটা সফল না হয় তখন সীমিত আকারে বলপ্রয়োগের চেষ্টা করি। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কড়া অবস্থানে থাকার কথা বলছে ডিএমপিও। এ নিয়ে কথা হলে ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ডিএমপি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। অপরাধ দমন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, মাদকবিরোধী অভিযান, সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডিএমপি নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। তালেবুর রহমান জানান, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে টহল দল নিয়মিত মাঠে কাজ করছে। উল্লেখ্য, গত বছরের ৮ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নিয়মিত একের পর আন্দোলন হচ্ছে এই বিভাগে। ঘটছে সড়ক অবরোধ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা। রমনা বিভাগের থানাগুলো হলো রমনা মডেল থানা, ধানমন্ডি মডেল থানা, শাহবাগ থানা, নিউমার্কেট থানা, হাজারীবাগ থানা ও কলাবাগান থানা।






















