- ডিজিটাল রূপান্তরসহ পাঁচটি মূল বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব
- ডিজিটাল ডাকটিকিটের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ট্র্যাকিং প্ল্যাটফর্ম গঠনের নির্দেশনা
- লাইসেন্সবিহীন ব্যবসা পরিচালনায় ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বিধান
বাংলাদেশ ডাক আইনকে আধুনিক সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, প্রযুক্তিনির্ভর ও নাগরিকবান্ধব রূপ দিতে সরকার ‘ডাকসেবা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ নামে একটি নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে, যা ১৮৯৮ সালের পুরনো পোস্ট অফিস অ্যাক্টকে প্রতিস্থাপন করবে। বাংলাদেশ ডাক আইন হালনাগাদ ও সংশোধন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে নিয়োজিত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সরকারি ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, বাংলাদেশ ডাকের ডিজিটাল রূপান্তর, আধুনিক ঠিকানা ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন সহ যেকোনো ধরনের মাইগ্রেশন জনিত ঠিকানা ব্যবস্থাপনা, ব্যক্তিগত উপাত্তের নিরাপত্তা ও প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা জোরদার করার উপর গুরুত্ব তৈরিতে বাংলাদেশ ডাক আইন হালনাগাদ ও সংশোধন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আইনটিকে সম্পূর্ণ নতুন রূপ দেয়া হচ্ছে যা ‘‘ডাকসেবা অধ্যাদেশ, ২০২৫’’ নামে অভিহিত হবে এবং যা পূর্ববর্তী ‘‘পোস্ট অফিস অ্যাক্ট ১৮৯৮’’ প্রতিস্থাপন করবে। আমরা মনে করি সংশোধনীসমূহের মধ্যে কয়েকটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আসছে। গত মঙ্গলবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে ডিজিটাল রূপান্তর, আধুনিক ঠিকানা ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত মাইগ্রেশন সংক্রান্ত ঠিকানা সংরক্ষণ, ব্যক্তিগত উপাত্তের নিরাপত্তা ও প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা বৃদ্ধি এই পাঁচটি মূল বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
নতুন অধ্যাদেশে যুগান্তকারী পরিবর্তনের মূল দিকগুলো- আধুনিক নিয়ন্ত্রক কাঠামো: বাংলাদেশ ডাকের অধীনে একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ‘নিয়ন্ত্রণ শাখা’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা বাণিজ্যিক ডাক ও কুরিয়ার অপারেটরদের লাইসেন্স প্রদান, নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা তদারকি করবে। লাইসেন্সবিহীন ব্যবসা পরিচালনায় সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে। ডিজিটাল রূপান্তর ও উপাত্ত সুরক্ষা: নতুন আইনে ডিজিটাল ডাকটিকিট (ঊ-ংঃধসঢ়রহম) চালুর পাশাপাশি একটি কেন্দ্রীয় ট্র্যাকিং প্ল্যাটফর্ম গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে সব অপারেটরের সেবার আন্তঃপরিচালন নিশ্চিত হয়। ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার জন্য ‘পারসোনাল ডাটা প্রোটেকশন অর্ডিন্যান্স, ২০২৫’-এর নীতিমালা অনুসরণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বাংলাদেশ ডাকের প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা বৃদ্ধি: ডাকসেবাকে জরুরি সেবা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, ফলে জাতীয় সংকটকালে ডাকযান ও কর্মীদের অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া চিফ কন্ট্রোলার অফ স্ট্যাম্পস দফতর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও নিরাপত্তা: সীমান্ত অতিক্রমকারী সকল পার্সেলের জন্য ইলেকট্রনিক অগ্রিম তথ্য (ঊঅউ) এবং কণঈ যাচাইকরণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যাতে অবৈধ লেনদেন বা অপব্যবহার প্রতিরোধ সম্ভব হয়। ডিজিটাল আর্থিক সেবা: ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক ও ডাক জীবন বীমা-কে রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টিযুক্ত “অধিকারী ডাকসেবা” হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যা দেশের সাধারণ মানুষের সঞ্চয় ও বীমা ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। প্রবাসী ভোটারদের জন্য পোস্টাল ব্যালট: নতুন অধ্যাদেশে প্রবাসী ও অনিবাসী ভোটারদের জন্য পোস্টাল ব্যালট সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে, যা গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের সুযোগ আরও প্রসারিত করবে। ঠিকানা আর্কাইভিং ও জলবায়ু অভিযোজন: নাগরিকদের ঠিকানা ডিজিটালভাবে সংরক্ষণ ও জিও-ফেন্সিং সুবিধা যুক্ত করার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন, নদীভাঙন বা স্থানচ্যুতিজনিত পরিস্থিতিতেও স্থায়ীভাবে ঠিকানা পুনঃপ্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ওয়েবসাইটে অধ্যাদেশটির খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে সাধারণ জনগণ আগামী ৪ নভেম্বর পর্যন্ত মতামত দিতে পারবেন। এছাড়া আগামী ৩০ অক্টোবর সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে জিপিওতে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। সবার মতামত ও অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি আধুনিক, নিরাপদ ও সময়োপযোগী ডাকসেবা অধ্যাদেশ প্রণয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।






















