- নরসিংদীর দুর্গম চরাঞ্চলে আধিপত্যের লড়াই
- বিপুল সংখ্যত অস্ত্র-গোলাবারুদসহ গ্রেপ্তার ৮
দীর্ঘ এক যুগ পেরিয়ে গেলেও এখনও শেষ হয়নি নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত মেধাবী শিক্ষার্থী তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম। তবে র্যাব বলছে, আলোচিত এ মামলার তদন্ত কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই এর চার্জশিট দেওয়া হবে। এ জন্য সবাইকে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। এছাড়া নরসিংদীর দুর্গম চরাঞ্চলে দীর্ঘ দিনে ধরে সশস্ত্র গ্রুপের আধিপত্যের লড়াই চলে আসছিল। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযানে গেলে সন্ত্রাসী হামলাও শিকার হতেন। সেই দুর্গম এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে বিপুল সংখ্যক দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও গোরাবারুদ উদ্ধারসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন।
তিনি জানান, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় র্যাব-১১ এর বিশেষ অভিযানে বিপুল সংখ্যক দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ ও ম্যাগাজিনসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা হলেন- মো. শফিক মিয়া (৩২), মো. মোস্তফা (৩৮), জাহিদ হাসান (১৭), আয়নাল হক (৩৮), মহিউদ্দিন হৃদয় (২২), মো. বাচ্চু মিয়া (৬২), কালু মিয়া (৬৯) ও মো. বাছেদ (৪০)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২টি বিদেশি পিস্তল, ৬টি দেশি বন্দুক, ১টি দুইনলা বন্দুক, ২টি এলজি, ৫টি পাইপগান, ৩টি ম্যাগাজিন ও ৮২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা, হত্যা চেষ্টা মামলা এবং অন্যান্য ফৌজদারি মামলা রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরেই চরাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। চরাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ও অবৈধ প্রভাব বিস্তারের জন্য এসব অস্ত্র মজুদ করে রাখা হয়েছিল বলে দাবি করেছে র্যাব।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার সায়দাবাদসহ বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের প্রধান ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। নদীবেষ্টিত দুর্গম এলাকা হওয়ায় অপরাধীরা সহজেই আত্মগোপনে যেতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালালে প্রায়ই সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হতে হয়। তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই এলাকায় একাধিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যার মধ্যে রয়েছে গত ২২ এপ্রিল আলোকবালি এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একজন নিহত, ২০ জুলাই সংঘর্ষে নারী নিহত এবং গত সপ্তাহে দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত ও একজন আহত হয়েছেন।
র্যাব-১১ অধিনায়ক বলেন, এই অভিযানে চরাঞ্চলের অস্ত্রধারীদের একটি সংঘবদ্ধ নেটওয়ার্ক চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। উদ্ধারকৃত অস্ত্রগুলো দেশের নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি তৈরি করতে পারত। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে রায়পুরা থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করা হয়েছে।
এদিকে এক যুগ আগে নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রমের অগ্রগতি কী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এখনও তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান এবং আমাদের অনেক ডেভেলপমেন্টও আছে। আমরা শিগগির এটার তদন্ত প্রতিবেদন দিয়ে দেব। তবে অবশ্যই তদন্ত শেষে বিস্তারিতভাবে জানানো হবে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
এর আগে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক মাসের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা মামলায় ছয়জনের গ্রেপ্তার ন্যায়বিচারের জন্য আশা জাগিয়েছিল নিহতের পরিবারে। তবে অন্তর্র্বর্তী সরকারের এক বছর পেরিয়ে গেলেও আলোচিত এ হত্যা মামলার তদন্ত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা র্যাব। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ত্বকী হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিলে আরও সময় চেয়ে নারায়ণগঞ্জের আদালতে আবেদন করে র্যাব। এর প্রেক্ষিতে আদালত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপক রঞ্জন মজুমদারকে দ্রুত অভিযোগপত্র দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিবারের সঙ্গে আমাদেরও যোগাযোগ হচ্ছে। তদন্ত দীর্ঘদিনের একটা… এখন হুট করে চাইলেই…তদন্তটা তদন্তের মতো যেন সুন্দরভাবে শেষ হয় এবং এটার যেন একটা ভালো রেজাল্ট আসে আমরা সেটাই সবাই কামনা করি। শিগগির তা দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ…।
উল্লেখ্য, নারায়ণঞ্জের সাংস্কৃতিক ও নাগরিক আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক শিল্পী রফিউর রাব্বির বড় ছেলে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। ২০১৩ সালের ৬ মার্চ এই কিশোর শহরের শায়েস্তা খাঁ সড়কের বাসা থেকে বেরিয়ে স্থানীয় একটি পাঠাগারে যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হয়। পরদিন তার এ লেভেল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়, যেখানে দেখা যায় ত্বকী সারা বিশ্বে পদার্থবিজ্ঞানে ৩০০ নম্বরের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৯৭ পেয়েছিলেন। ওই বছরের ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়। তবে দীর্ঘ ১২ বছরেও এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি, তদন্ত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্রও দাখিল করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা র্যাব।
ত্বকীর পরিবার বরাবরই অভিযোগ করে আসছিলেন, প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সদস্যরা জড়িত থাকায় আওয়ামী লীগের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে। তবে ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আলোচিত এই হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ছয় জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।






















