আগাম ফুলকপি চাষে খ্যাত নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় এবারও বাম্পার ফলনের আনন্দে মুখর কৃষকেরা। মৌসুমের শুরুতেই ক্ষেতজুড়ে সবুজে ছাওয়া ফুলকপি বাগান এখন যেন কৃষকের পরিশ্রম ও সাফল্যের প্রতিচ্ছবি। ভালো দাম ও চাহিদায় কৃষকের মুখে ফুটেছে তৃপ্তির হাসি।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতি কেজি ফুলকপি বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১০০ টাকা দরে, যা আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এতে কৃষকেরা লাভের মুখ দেখছেন এবং অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত আলুচাষের ঘাটতি পুষিয়ে নিচ্ছেন।
কিশোরগঞ্জ ইউনিয়নের নিতাই পানিয়াল পুকুর কবিরাজপাড়া গ্রামের কৃষক মশিয়ার রহমান বলেন, “৩০ শতাংশ জমিতে ফুলকপি চাষে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকার কপি বিক্রি করেছি, আরও ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার বিক্রির আশা করছি।”
আরেক চাষি, কিশোরগঞ্জ সদরের বাজডুমরিয়া গ্রামের এনামুল হক বলেন, “আমরা বর্ষার ঝুঁকি নিয়ে নিজেরাই চারা উৎপাদন করি। প্রতি বিঘায় খরচ বাদে প্রায় এক লাখ টাকা আয় হয়। স্থানীয় বাজার ছাড়াও রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় ফুলকপি পাঠাই।”
কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম জানান, “স্বল্প সময়ে কম খরচে আগাম ফুলকপি চাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষকেরা এখন এতে আগ্রহী হচ্ছেন। চলতি মওসুমে উপজেলার ৮৫০ হেক্টর জমিতে ফুলকপি ও অন্যান্য সবজির চাষ হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের রোগবালাই দমন ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”
এদিকে নীলফামারী সদরের লক্ষীচাপ ইউনিয়নের দুবাছুরী এলাকাজুড়ে এখন সবুজের সমারোহ। মাঠজুড়ে ফুলকপি ও বাধাকপির বাগান যেন এক সম্ভাবনার দৃশ্যপট। স্থানীয় কৃষকেরা জানান, এক বিঘা জমিতে চাষে খরচ হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা, আর আগাম বাজারে তুলতে পারলে আয় হয় ৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আতিক আহমেদ বলেন, “আগাম জাতের ফুলকপি ও বাধাকপি চাষে কৃষকদের ব্যাপক উৎসাহ দিচ্ছি। মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ ও সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। এ বছর ৭০ হেক্টরে ফুলকপি ও ৩০ হেক্টরে বাধাকপি চাষ হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “আগাম সবজি উৎপাদনের এই উদ্যোগ শুধু কৃষকদের আয়ের নতুন দিগন্তই খুলছে না, দেশের সবজি উৎপাদনেও যোগ করছে নতুন সম্ভাবনা।”
ভালো দাম, অনুকূল আবহাওয়া ও সরকারি সহায়তায় নীলফামারীর কৃষকেরা তাই আশাবাদী—আগাম ফুলকপি চাষ এবারও এনে দেবে সাফল্যের নতুন গল্প।
এমআর/সবা





















