১১:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রামের কুমিরা আবাসিক বিদ্যালয়ে দুই শিক্ষার্থীর পায়ে শিকল

অবাধ্য সন্তানদের শিক্ষা দিতে অভিভাবকরা ভয় দেখাতেন কুমিরা আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়ে, যেটি আগে পরিচিত ছিল ‘জেল স্কুল’ নামে। শিক্ষকদের কঠোর শাসনের পাশাপাশি পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে প্রয়োজনে পায়ে শিকল পরানো হতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই কঠোরতা অনেকটাই বদলেছে। তবে সম্প্রতি দুই শিক্ষার্থীর পায়ে শিকল পড়ানোর ঘটনা আবারও আলোচনায় এসেছে।

সীতাকুণ্ডের কুমিরা আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয় ১৯৩০-এর দশকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতা স্বর্গীয় জমিদার নিবারণ চন্দ্র দাশের জমি দানে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৩৮ সালে জহুরুল ইসলাম চৌধুরীর আর্থিক সহযোগিতায় বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ করা হয় এবং এখানে আবাসিক সুবিধা যুক্ত করা হয়। বিভিন্ন জেলা থেকে পরিবারের শাসন না মানা শিক্ষার্থীদের এখানে ভর্তি করা হত। ১৯৭০ সাল থেকে অবাধ্য ছাত্রদের পায়ে শিকল পরানো শুরু হয়।

যে দুই শিক্ষার্থীর পায়ে শিকল পড়ানো নিয়ে সম্প্রতি আলোচনা হয়েছে, তারা হলেন: মোহাম্মদ বিন আমিন (১২), ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী, এবং মো. নাঈম আহমদ সিরাহ (১৫), ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তারা ফেনীর বাসিন্দা। তারা জানিয়েছে, “এভাবে পায়ে শিকল পরে থাকতে ভালো লাগে না। বাবা-মা শিকল দিয়ে আটকে রাখতে বলেছেন, তাই স্কুলে শিকল পরিয়ে রাখা হয়েছে।”

নাঈম আহমদ সিরাহ-এর বাবা মো. নাছির আহম্মদ বলেন, “আমার ছেলে মো. নাঈম আহমদ সিরাহ, শ্রেণি ৮ম, রোল-১০৫, জেআইসি ব্লকে অবস্থানরত। সে কিছুটা নেশাগ্রস্ত ও মানসিকভাবে অস্থির। তাই সে যে কোনো সময় যে কোনো অঘটন ঘটাতে পারে। আমি অভিভাবক হিসেবে তাকে শিকলবন্দী করে রাখার জন্য ছাত্রাবাস কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি। এমতাবস্থায় যদি তার দ্বারা কোনো অঘটন ঘটে, তাহলে আমি কখনো কর্তৃপক্ষকে দায়ী করবো না। সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমার নিজের ওপর বর্তাবে। প্রশাসনের নিকট আমি জবাবদিহি থাকতে বাধ্য থাকব, স্যারেরা কখনো দায়ী হবেন না।”

কুমিরা আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা ছাত্রদের এভাবে পড়াশোনা করাতে চায় না। কিন্তু অভিভাবকদের লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে দুই শিক্ষার্থীকে পায়ে শিকল পরিয়ে রাখা হয়েছে।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আলী নেওয়াজ বলেন, “১৯৯৩ সালে যোগদানের আগে এই প্রতিষ্ঠানে অমনোযোগী, অবাধ্য ও স্কুল পলাতক ছেলেদের পায়ে শিকল পরিয়ে পাঠদান করা হতো। বর্তমানে সাধারণ নিয়মে এটি নেই। তবে অভিভাবকদের লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে দুই শিক্ষার্থীকে পায়ে শিকল পরিয়ে পড়ালেখা করানো হচ্ছে। তারা আগেও এই বিদ্যালয়ে পড়েছে। পড়ালেখায় মনোযোগ নেই, মোবাইল ও নানান নেশায় আসক্ত। কিছুদিন আগেও পালিয়ে গিয়েছিল। তাই অভিভাবকরা শিকল কিনে নিয়ে এসে লিখিতভাবে আবেদন করেছেন। আমরা বাধ্য হয়ে তাদের এভাবে পড়াচ্ছি।”

জনপ্রিয় সংবাদ

নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে সামান্তা শারমিনের নতুন বার্তা

চট্টগ্রামের কুমিরা আবাসিক বিদ্যালয়ে দুই শিক্ষার্থীর পায়ে শিকল

আপডেট সময় : ০৬:০৪:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫

অবাধ্য সন্তানদের শিক্ষা দিতে অভিভাবকরা ভয় দেখাতেন কুমিরা আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়ে, যেটি আগে পরিচিত ছিল ‘জেল স্কুল’ নামে। শিক্ষকদের কঠোর শাসনের পাশাপাশি পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে প্রয়োজনে পায়ে শিকল পরানো হতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই কঠোরতা অনেকটাই বদলেছে। তবে সম্প্রতি দুই শিক্ষার্থীর পায়ে শিকল পড়ানোর ঘটনা আবারও আলোচনায় এসেছে।

সীতাকুণ্ডের কুমিরা আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয় ১৯৩০-এর দশকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতা স্বর্গীয় জমিদার নিবারণ চন্দ্র দাশের জমি দানে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৩৮ সালে জহুরুল ইসলাম চৌধুরীর আর্থিক সহযোগিতায় বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ করা হয় এবং এখানে আবাসিক সুবিধা যুক্ত করা হয়। বিভিন্ন জেলা থেকে পরিবারের শাসন না মানা শিক্ষার্থীদের এখানে ভর্তি করা হত। ১৯৭০ সাল থেকে অবাধ্য ছাত্রদের পায়ে শিকল পরানো শুরু হয়।

যে দুই শিক্ষার্থীর পায়ে শিকল পড়ানো নিয়ে সম্প্রতি আলোচনা হয়েছে, তারা হলেন: মোহাম্মদ বিন আমিন (১২), ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী, এবং মো. নাঈম আহমদ সিরাহ (১৫), ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তারা ফেনীর বাসিন্দা। তারা জানিয়েছে, “এভাবে পায়ে শিকল পরে থাকতে ভালো লাগে না। বাবা-মা শিকল দিয়ে আটকে রাখতে বলেছেন, তাই স্কুলে শিকল পরিয়ে রাখা হয়েছে।”

নাঈম আহমদ সিরাহ-এর বাবা মো. নাছির আহম্মদ বলেন, “আমার ছেলে মো. নাঈম আহমদ সিরাহ, শ্রেণি ৮ম, রোল-১০৫, জেআইসি ব্লকে অবস্থানরত। সে কিছুটা নেশাগ্রস্ত ও মানসিকভাবে অস্থির। তাই সে যে কোনো সময় যে কোনো অঘটন ঘটাতে পারে। আমি অভিভাবক হিসেবে তাকে শিকলবন্দী করে রাখার জন্য ছাত্রাবাস কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি। এমতাবস্থায় যদি তার দ্বারা কোনো অঘটন ঘটে, তাহলে আমি কখনো কর্তৃপক্ষকে দায়ী করবো না। সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমার নিজের ওপর বর্তাবে। প্রশাসনের নিকট আমি জবাবদিহি থাকতে বাধ্য থাকব, স্যারেরা কখনো দায়ী হবেন না।”

কুমিরা আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা ছাত্রদের এভাবে পড়াশোনা করাতে চায় না। কিন্তু অভিভাবকদের লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে দুই শিক্ষার্থীকে পায়ে শিকল পরিয়ে রাখা হয়েছে।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আলী নেওয়াজ বলেন, “১৯৯৩ সালে যোগদানের আগে এই প্রতিষ্ঠানে অমনোযোগী, অবাধ্য ও স্কুল পলাতক ছেলেদের পায়ে শিকল পরিয়ে পাঠদান করা হতো। বর্তমানে সাধারণ নিয়মে এটি নেই। তবে অভিভাবকদের লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে দুই শিক্ষার্থীকে পায়ে শিকল পরিয়ে পড়ালেখা করানো হচ্ছে। তারা আগেও এই বিদ্যালয়ে পড়েছে। পড়ালেখায় মনোযোগ নেই, মোবাইল ও নানান নেশায় আসক্ত। কিছুদিন আগেও পালিয়ে গিয়েছিল। তাই অভিভাবকরা শিকল কিনে নিয়ে এসে লিখিতভাবে আবেদন করেছেন। আমরা বাধ্য হয়ে তাদের এভাবে পড়াচ্ছি।”