ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী দাদনা খাল এখন মৃতপ্রায়। একসময় এই খালের স্বচ্ছ পানিতে ভেসে চলত নৌকা, কৃষকরা ব্যবহার করত সেচের কাজে। এখন খালটি পরিণত হয়েছে ময়লা-আবর্জনায় ভরা এক নালায়। দখল, দূষণ ও অব্যবস্থাপনার কারণে এর অস্তিত্বই এখন হুমকির মুখে।
খালের দুই পাড় দখল করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা। কেউ বানিয়েছে দোকান, কেউ ঘরবাড়ি। আবার কেউ খালকে বানিয়েছে ময়লার ভাগাড়। প্লাস্টিক, বাজারের বর্জ্য, এমনকি খোলা টয়লেটের ময়লাও সরাসরি ফেলা হচ্ছে খালে। ফলে খালের পানি নষ্ট হয়ে সৃষ্টি হয়েছে মারাত্মক দুর্গন্ধ।
খালের পাশেই রয়েছে একটি ফাজিল মাদরাসা। শিক্ষার্থীরা দুর্গন্ধের কারণে ক্লাসে বসতে পারেন না। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত তিন দশক ধরে খালটির কোনো সংস্কার হয়নি। বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে আশপাশের বাড়িঘর ডুবে যায়।
গত মাসে পৌর কর্তৃপক্ষ প্রায় ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে কিছু ময়লা অপসারণ করলেও অল্প সময়ের মধ্যেই আগের অবস্থায় ফিরে গেছে খালটি। খালের প্রবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এ দূষিত পানি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি এবং জলবাহিত রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি শতভাগ।
ঐতিহাসিকভাবে খালটির উৎপত্তি হয়েছে নোয়াখালীর কবিরহাটের ছোট ফেনী নদীর শাখা থেকে। সেনবাগ হয়ে খালটি প্রবেশ করেছে দাগনভূঞা উপজেলায়। পৌরসভা ও আশপাশের এলাকা মিলিয়ে প্রায় ১৯ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে দাদনা খাল। এর মধ্যে প্রায় ১৩ কিলোমিটার অংশ দাগনভূঞা উপজেলার অভ্যন্তরে।
দাগনভূঞা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, খালগুলো খনন করা হলে প্রায় ৯৫৫ হেক্টর জমিতে আবাদ সম্ভব হবে। মৌসুমভেদে আউশ, আমন ও বোরো ধানসহ রবি ফসলের উৎপাদন বাড়বে, যা থেকে বছরে প্রায় ৪০৫ কোটি টাকার ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে। বর্তমানে খাল খনন না হওয়ায় প্রতিবছর কৃষকরা প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, “এই খালগুলো সংস্কার না করলে দাগনভূঞা কৃষিতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম জানিয়েছেন, চলতি মাসেই খাল দখলমুক্ত ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে। তিনি বলেন, “খালের প্রবাহ পুনরুদ্ধারে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে।”
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, “বর্তমানে ফেনীতে খাল খননের কোনো প্রকল্প নেই। তবে দাগনভূঞার দাদনা খালসহ গুরুত্বপূর্ণ খালগুলোর সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু করা হবে।”
স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, দাগনভূঞার প্রাণ বলা হতো যে দাদনা খালকে, সেটিকে বাঁচাতে এখনই ব্যবস্থা না নিলে একদিন মানচিত্র থেকেই হারিয়ে যাবে ঐতিহ্যের এই খাল।
এমআর/সবা




















