১১:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পিক-আপ ভ্যান আটক

সোনারগাঁয়ে শিক্ষক ও দপ্তরীর সহায়তায় স্কুলের মালামাল বিক্রির অভিযোগ

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রাতের আঁধারে নিয়মবহির্ভূতভাবে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালামাল বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার রাতে উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের পঞ্চমীঘাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মালামাল ভর্তি তিনটি পিক-আপ ভ্যান আটক করে স্থানীয় এলাকাবাসী।

ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে সোনারগাঁ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান মাসুদ মোল্লার জিম্মায় জব্দকৃত মালামাল রেখে চলে আসে।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের পুরোনো লোহার বেঞ্চ, ফ্যান ও অন্যান্য আসবাবপত্র উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে না জানিয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূঁইয়ার নির্দেশে প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম ও দপ্তরী সুমন দাসের মাধ্যমে স্থানীয় ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী মহসীনের কাছে বিক্রি করা হয়। পরে ব্যবসায়ী মহসীন রাতের অন্ধকারে তিনটি পিক-আপ ভ্যানে মালামাল তুলতে গেলে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। তারা গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র দেখতে চাইলে মহসীন পালিয়ে যায়।

স্থানীয়রা বিদ্যালয়ে গিয়ে সহকারী শিক্ষক মো. বাতেন মিয়াসহ কয়েকজন শিক্ষককে দেখতে পান।বিদ্যালয় বন্ধ থাকা অবস্থায় রাতে মালামাল বিক্রির কারণ জানতে চাইলে শিক্ষকরা বলেন, ম্যানেজিং কমিটির মিটিংয়ের মাধ্যমে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং বাকিতে বিক্রি করায় রশিদ দেয়া হয়নি।এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্কুলের সভাপতির নির্দেশনায় প্রধান শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে সংবাদ মাধ্যমেও একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। প্রশাসনিক দূর্বলতার কারণেই আজ এই বিদ্যালয়ের দূর্ণীতিবাজ শিক্ষক ও কমিটির লোকেরা এতো বড় চুরির ঘটনা ঘটানোর দুঃসাহস পেয়েছে।

তাই স্থানীয়দের দাবি, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্পদ নিয়ে এমন অনিয়ম যেন আর না হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা তৌকির আহমেদ ও সাহেদ হাসান বলেন, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক মিলে নিজেদের সম্পত্তি মনে করে যা খুশি তাই করছে। রাতের অন্ধকারে পিক-আপ ভর্তি করে মালামাল নেয়ার সময় আমরা বাঁধা দিলে তারা কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। এখন তারা ভুয়া রশিদ তৈরি করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, নতুন ভবন নির্মাণের পর পুরোনো বেঞ্চ ও ফ্যান বিক্রির জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল এবং বিক্রিত মালামালের রশিদ রয়েছে। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই মালামাল বিক্রি করা হয়। স্থানীয় একটি মহল আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তবে তিনি স্বীকার করেন, বিক্রির আগে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি জানানো হয়নি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সভাপতির নির্দেশেই মালামাল বিক্রি করা হয়েছে। বিক্রির রশিদ আমাদের কাছে রয়েছে, আমি কুমিল্লায় থাকায় তখন দিতে পারিনি। তবে দরপত্র ছাড়াই বিক্রি করা সঠিক হয়নি, এটা স্বীকার করছি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো.দেলোয়ার হোসেন জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে, বিক্রির প্রক্রিয়ায় নিয়ম ভঙ্গ হয়েছে। তদন্ত চলছে, প্রয়োজনীয় নথি পর্যালোচনা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। বর্তমানে মালামাল স্থানীয় ইউপি সদস্যের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

সোনারগাঁয়ে অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করায় গুড়িয়ে দেয়া হয় দু’টি প্রতিষ্ঠান, একটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

পিক-আপ ভ্যান আটক

সোনারগাঁয়ে শিক্ষক ও দপ্তরীর সহায়তায় স্কুলের মালামাল বিক্রির অভিযোগ

আপডেট সময় : ০৬:৫৫:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রাতের আঁধারে নিয়মবহির্ভূতভাবে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালামাল বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার রাতে উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের পঞ্চমীঘাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মালামাল ভর্তি তিনটি পিক-আপ ভ্যান আটক করে স্থানীয় এলাকাবাসী।

ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে সোনারগাঁ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান মাসুদ মোল্লার জিম্মায় জব্দকৃত মালামাল রেখে চলে আসে।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের পুরোনো লোহার বেঞ্চ, ফ্যান ও অন্যান্য আসবাবপত্র উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে না জানিয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূঁইয়ার নির্দেশে প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম ও দপ্তরী সুমন দাসের মাধ্যমে স্থানীয় ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী মহসীনের কাছে বিক্রি করা হয়। পরে ব্যবসায়ী মহসীন রাতের অন্ধকারে তিনটি পিক-আপ ভ্যানে মালামাল তুলতে গেলে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। তারা গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র দেখতে চাইলে মহসীন পালিয়ে যায়।

স্থানীয়রা বিদ্যালয়ে গিয়ে সহকারী শিক্ষক মো. বাতেন মিয়াসহ কয়েকজন শিক্ষককে দেখতে পান।বিদ্যালয় বন্ধ থাকা অবস্থায় রাতে মালামাল বিক্রির কারণ জানতে চাইলে শিক্ষকরা বলেন, ম্যানেজিং কমিটির মিটিংয়ের মাধ্যমে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং বাকিতে বিক্রি করায় রশিদ দেয়া হয়নি।এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্কুলের সভাপতির নির্দেশনায় প্রধান শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে সংবাদ মাধ্যমেও একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। প্রশাসনিক দূর্বলতার কারণেই আজ এই বিদ্যালয়ের দূর্ণীতিবাজ শিক্ষক ও কমিটির লোকেরা এতো বড় চুরির ঘটনা ঘটানোর দুঃসাহস পেয়েছে।

তাই স্থানীয়দের দাবি, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্পদ নিয়ে এমন অনিয়ম যেন আর না হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা তৌকির আহমেদ ও সাহেদ হাসান বলেন, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক মিলে নিজেদের সম্পত্তি মনে করে যা খুশি তাই করছে। রাতের অন্ধকারে পিক-আপ ভর্তি করে মালামাল নেয়ার সময় আমরা বাঁধা দিলে তারা কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। এখন তারা ভুয়া রশিদ তৈরি করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, নতুন ভবন নির্মাণের পর পুরোনো বেঞ্চ ও ফ্যান বিক্রির জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল এবং বিক্রিত মালামালের রশিদ রয়েছে। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই মালামাল বিক্রি করা হয়। স্থানীয় একটি মহল আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তবে তিনি স্বীকার করেন, বিক্রির আগে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি জানানো হয়নি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সভাপতির নির্দেশেই মালামাল বিক্রি করা হয়েছে। বিক্রির রশিদ আমাদের কাছে রয়েছে, আমি কুমিল্লায় থাকায় তখন দিতে পারিনি। তবে দরপত্র ছাড়াই বিক্রি করা সঠিক হয়নি, এটা স্বীকার করছি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো.দেলোয়ার হোসেন জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে, বিক্রির প্রক্রিয়ায় নিয়ম ভঙ্গ হয়েছে। তদন্ত চলছে, প্রয়োজনীয় নথি পর্যালোচনা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। বর্তমানে মালামাল স্থানীয় ইউপি সদস্যের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।

এমআর/সবা