- শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় রায়ের তারিখ আজ ঘোষণা
- আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তা জোরদার
- রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি
- কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ‘লকডাউন’ কর্মসূচি
- নাশকতা ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
১৩ নভেম্বরকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সতর্ক রয়েছে। জনমনে ভীতি সৃষ্টির চেষ্টা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে-মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বারাষ্ট্র উপদেষ্টা
আমরা নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা বোধ করছি না। নিরাপত্তার কোনো অভাব বোধ করছি না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে-গাজী এম এইচ তামীম, প্রসিকিউটর, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঘোষিত ১৩ নভেম্বরের লকডাউন নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই: মো. শফিকুল ইসলাম, গোয়েন্দা প্রধান, ঢাকা মহানগর পুলিশ
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী মামলার রায় কবে দেয়া হবে তা জানানো হবে আজ বৃহস্পতিবার। এইদিন সারাদেশে ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সরকার কর্তৃক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা দল আওয়ামী লীগ। কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে দলটি ঝটিকা মিছিল বের করছে। আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে তারা তাদের কর্মসূচি সফল করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। এদিকে, গত দুই-তিনদিনে ঢাকাসহ সারাদেশে ককটেল বিস্ফোরণ ও গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটছে। এ অবস্থায় ঢাকা ও আশেপাশের জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি সেখানেও বিজিবি মোতায়েন করা হচ্ছে। এছাড়া রাজধানীতে বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন, যাত্রী ও পথচারীদের তল্লাশি করা হচ্ছে।
ঢাকার পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি অভিযানও জোরদার করা হয়েছে।’ চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ ‘সন্ত্রাসী, অস্ত্রধারীদের’ দেখামাত্র সাব মেশিনগান দিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গত ১ অক্টোবর থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত পুলিশ আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের ৫৫২ জন নেতাকর্মীকে প্রেপ্তার করেছে। ঢাকার পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানান, ১ নভেম্বর থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত ১৫টি স্থানে ১৭টি ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে এবং শেষ দুই দিনে ৯টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ২৪ ঘণ্টায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় ১৭টি মামলা হয়েছে এবং এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে ৪৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। বিশেষ করে মোহাম্মদপুরে সেন্ট যোসেফ স্কুলে ককটেল হামলার পর অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা উদ্বেগে আছেন। আর ঢাকায় গির্জায় ককটেল হামলার পর ধর্মীয় উপসনালয়ে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। অন্যদিকে সোমবার ময়মনসিংহে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসে আগুন দেয়া হলে চালক আগুনে পুড়ে নিহত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা গত ৩১ অক্টোবর থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে চারশোর বেশি ঝটিকা মিছিল করেছে। এরমধ্যে ২ ও ৩ নভেম্বর তারা ৪৫টি ঝটিকা মিছিল করেছেন। তাদের দাবি, এক সপ্তাহে সারাদেশে তাদের কমপক্ষে পাঁচ হাজার নেতা-কর্মী আটক হয়েছেন। আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা তাদের কর্মসূচি সফল করার জন্য ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় রয়েছে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স দাবি করেছেন করেছেন, গণহত্যাকারী, গণশত্রুতে পরিণত হওয়া পলাতক আওয়ামী লীগ ও তার নেত্রী শেখ হাসিনা এখন দেশে আগুন সন্ত্রাস শুরু করেছে। তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়, দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। এই শেখ হাসিনাই বলেছিলেন যারা আগুন সন্ত্রাস করে তাদেরকে ধরে আগুনে ফেলে দিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, দেশে তো একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষ ভয়ের মধ্যে আছে। এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য। যারা সবাই মিলে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করলো এখন সবাই সেই আওয়ামী লীগের ভোট পাওয়ার জন্য তাদের পিছনে ছুটছে। আওয়ামী লীগ ছিলো রাজনৈতিক দলগুলোর কমন শত্রু। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম বলেন, ‘‘আমরা নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা বোধ করছি না। আমরা নিরাপত্তার কোনো অভাব বোধ করছি না। এই মামলায় শেখ হাসিনাসহ মোট তিনজন আসামি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-এই দুইজনই পলাতক আছেন। আর সাবেক আইজিপি গ্রেপ্তার আছেন। সাবেক আইজিপি পরে নিজে দোষ স্বীকার করে রাজস্বাক্ষী হয়েছেন। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঘোষিত ১৩ নভেম্বরের লকডাউন নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মো. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, যারা ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি বা অপতৎপরতা চালানোর চেষ্টা করছে, তাদের আইনের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করে দমন করা হবে।গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। মো. শফিকুল ইসলামবলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা বিভিন্ন উসকানি ও নির্দেশনা দিচ্ছে, তাদের বিষয়ে ডিবি সতর্ক রয়েছে। আমরা দেখছি, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন উসকানি ও নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে, তবে রাজপথে তাদের দেখা যায় না। এমনকি একজন নিরীহ রিকশাওয়ালাকে ৫০০ টাকা দিয়ে স্লোগান দিতে বলা হয়েছে, পরে সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ওই রিকশাচালকের কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড নেই। এভাবে সাধারণ মানুষকে ব্যবহার করে বিভ্রান্তি তৈরি করার চেষ্টা চলছে, যা ডিবি কঠোরভাবে দমন করছে। তিনি আরও বলেন, আইনের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করে এই ধরনের অপতৎপরতা দমন করা হবে। নাগরিকদের অনুরোধ করছি, কেউ যেন গুজবে কান না দেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতা করেন। রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। অপরদিকে নাশকতা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর অবস্থানে রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। স্বারাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে জোর দিয়ে বলেছেন, ‘১৩ নভেম্বরকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সতর্ক রয়েছে। জনমনে ভীতি সৃষ্টির চেষ্টা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সরকারি কড়াকড়ি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী ও ঘিরে থাকা এলাকায় অতিরিক্ত চেকপোস্ট, নাম-ঠিকানা যাচাই, সিসিটিভি মনিটরিং এবং সন্দেহজনক যানবাহন-সমাগমে বিশেষ নজরদারি জোরদার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। ইতোমধ্যে রাজধানীতে ১২ প্লাটুন এবং গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে এক প্লাটুন করে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠে থাকবে সেনাবাহিনীও। ১৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ ধর্মভিত্তিক আটটি দলও।

রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ১৩ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) ঢাকায় লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে রাজধানী ও এর আশপাশ এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ এবং যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনার মতো অপতৎপরতা রোধে ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে এই বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল সকালে বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীসহ ঢাকায় ১২ প্লাটুন ও আশপাশের জেলায় দুই প্লাটুনসহ মোট ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনার আগ পর্যন্ত বিজিবি মোতায়েন থাকবে বলে জানা গেছে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ঢাকায় ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর আগেই গত দুদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও চোরাগোপ্তা ককটেল বিস্ফোরণ হচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে সড়কে যানবাহন চলাচলে। অন্য সাধারণ দিনের তুলনায় আজ বুধবার ঢাকার সড়কগুলোতে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল কিছুটা কম। গত দুদিন গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও চোরাগোপ্তা ককটেল বিস্ফোরণে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। যদিও এসব নাশকতা ঠেকাতে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। তবে এ অবস্থায় অনেকে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বের হওয়া এড়িয়ে চলছেন। তবে অনেকটা স্বাভাবিক রয়েছে মোটরসাইকেল, রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল। অন্য সময়ের মতো ভিআইপি সড়কে আজও রিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। সড়কে বাস চলাচলও স্বাভাবিক।






















