১২:২৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লাগেজভ্যান প্রকল্পে ৩৫৮ কোটির ক্ষতি

  • রেলের সাবেক ডিজিসহ ৬ জনের নামে দুদকের মামলা
  • ২০২৩ সালে ১২৫টি লাগেজ ভ্যান কিনেছিল রেলওয়ে
  • পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের অভাবে এখন তা নিষ্ক্রিয়

 

রেলওয়ের লাগেজ ভ্যান প্রকল্পের নামে রাষ্ট্রের ৩৫৮ কোটি টাকার ক্ষতিসাধনের অভিযোগে সংস্থাটির সাবেক ডিজি শামসুজ্জামানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল রবিবার দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস)- বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সংস্থাটির উপ-সহকারী পরিচালক হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে এই মামলা করেন। এজাহার সূত্রে জানা যায়, পণ্য পরিবহন বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০২৩ সালে ৩৫৮ কোটি টাকায় ১২৫টি লাগেজ ভ্যান কিনেছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। তবে যথাযথ পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের অভাবে এগুলো এখন প্রায় নিষ্ক্রিয় অবস্থায় পড়ে আছে। ঢাকঢোল পিটিয়ে উদ্বোধন করা হলেও লক্ষ্য অনুযায়ী আয় তো বাড়েনি, বরং কমেছে। লাগেজ ভ্যানগুলো মূলত পণ্য, লাগেজ ও দ্রুত নষ্ট হয়-এমন দ্রব্য পরিবহনের জন্য কেনা হয়েছিল। এ ঘটনায় রেলের সাবেক ডিজি শামসুজ্জামান, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান, হারুন অর রশীদ, প্রকল্প পরিচালক আব্দুল মতিন চৌধুরীসহ ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগে গত আগস্ট মাসে ‘পড়ে আছে ৩৫৮ কোটি টাকার লাগেজ ভ্যান, বেসরকারি খাতে ছাড়ার চিন্তা রেলওয়ের’- শিরোনামে টিবিএসে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। অন্যদিকে, একটি পারিবারিক কবরস্থানকে সরকারি কাগজে কলমে ‘সামাজিক কবরস্থান’ হিসেবে দেখিয়ে ঘুরিয়ে-ফিরিয় ৮টি প্রকল্প নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কবির হোসেনের বিরুদ্ধে। কবরস্থানের উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৪ লাখ টাকা। ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার রামভদ্রপুর ইউনিয়নের নিজ আশাবট গ্রামে। জানা গেছে, সেটি স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর পারিবারিক কবরস্থান। ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কবির হোসেন সরদারের ইচ্ছায় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে। স্থানীয় সরকার সচিবকে সন্তুষ্ট রাখতে কবির হোসেন কাজটি করেছেন। নথিপত্র ঘেটে দেখা গেছে, গত ১৮ মে জেলা পরিষদের তৎকালীন প্রশাসক ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার জিয়া আহমেদ সুমনের সভাপতিত্বে একটি সভা হয়। সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে পাওয়া ৯০ লাখ টাকার বিপরীতে ৩৭টি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর মধ্যে ১০টি প্রকল্প নেওয়া হয় ফুলপুর উপজেলায়। যার ৯টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে রামভদ্রপুর ইউনিয়নের নিজ আশাবট গ্রামে। প্রতিটি প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩ লাখ টাকা। প্রকল্পের তালিকায় এক নম্বরে রয়েছে নিজ আশাবট গ্রামের হাজি শমসের আলী সাহেবের কবরস্থান উন্নয়ন। শমসের আলী স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর দাদা। ৪ নম্বর প্রকল্প নিজ আশাবট গ্রামের সামাজিক কবরস্থানে সীমানাপ্রাচীর টাইলসকরণ। তালিকার ৮, ২১, ২৪, ২৫, ২৭ ও ৩২ নম্বর প্রকল্পও একই কবরস্থান ঘিরে। এসব প্রকল্পে সুপেয় পানির অবকাঠামোর টাইলস ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, সুপেয় পানির অবকাঠামো নির্মাণ, সীমানাপ্রাচীর, নালা নির্মাণ ইত্যাদির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি কম্বল কেনার একটি কার্যাদেশ দেন কবির হোসেন। জেলার ১৩টি উপজেলার দুস্থ, অসহায় ও গরিব মানুষের জন্য প্রায় ৪৯ লাখ ৯৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ১২ হাজার কম্বল সরবরাহের জন্য নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মেসার্স হাওলাদার এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশ অনুযায়ী সাত দিনের মধ্যে উপসহকারী প্রকৌশলীর কাছে কম্বল সরবরাহের কথা। জেলা পরিষদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কম্বল বুঝে পায়নি। এছাড়া জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার তাহমিনা আক্তার। তার সই জাল করে প্রায় ১ কোটি ১৩ লাখ টাকার প্রকল্প গ্রহণের কার্যবিবরণী তৈরির অভিযোগ রয়েছে কবির হোসেন সরদারের বিরুদ্ধে। মো. কবির হোসেন সরদারের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ক্ষুব্ধ তার অধীনে কাজ করা কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। এক কবরস্থানের জন্য আট প্রকল্প গ্রহণ, কম্বল বিতরণে অনিয়ম, জেলা পরিষদের প্রশাসকের সই জালিয়াতিসহ মো. কবির হোসেনের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ তুলেছেন জেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ২৬ অক্টোবর স্থানীয় সরকার বিভাগে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। এরপর গত ২৭ অক্টোবর কবির হোসেনকে ময়মনসিংহ থেকে পটুয়াখালী জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ২ নভেম্বর নতুন আদেশে কবির হোসেনকে নেত্রকোনা জেলা পরিষদে বদলি করা হয়। কবির হোসেন সরদারের বিরুদ্ধে বিতর্ক নতুন নয়। ২০১৩ সালে সাভারের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে দুই ভাইয়ের নামে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় অবস্থিত একটি পোশাক কারখানার শেয়ার কিনে সেটি দখলের অভিযোগ ওঠে। উত্তরার একটি ফ্ল্যাটে ১১ মাস বসবাস করেও ভাড়া পরিশোধ না করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। দুই অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ২০১৫ সালে কবির হোসেন সরদারকে বিভাগীয় শাস্তি হিসেবে বেতন কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল (দুই ধাপ অবনমিত)। ফুলপুর উপজেলার রামভদ্রপুর ইউনিয়নের নিজ আশাবট গ্রামের বাসিন্দারা জানান, কবরস্থানটি এই গ্রামের সামাজিক কবরস্থান নয়। এটি স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর পারিবারিক কবরস্থান। সচিবের বাড়ির সামনে কবরস্থানটিতে সচিবের পরিবারের বাইরে অন্য কেউ ব্যবহার করেন না। তাই পুরাতন একটি সাইনবোর্ডে পারিবারিক কবরস্থান লেখা রয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী বলেন, আমি কখনো কবরস্থানে প্রকল্প দিতে বলিনি। ওখানে জনগণের জন্য পানির ব্যবস্থা ও একটি পাঞ্জেখানা মসজিদের (যে মসজিদে জুমা ছাড়া অন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ হয়) জন্য বলেছিলাম। আমি এখন এটি বাদ দিতে বলেছি। ইতোমধ্যে কবির হোসেনকে বদলি করা হয়েছে। এ বিষয়ে কবির হোসেন বলেন, নোটিশের যথাযথ জবাবও দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প সব আমি একা করি না। মাসিক সভায় অনুমোদন করে মন্ত্রণালয় হয়ে আসে। কোনো সমস্যা থাকলে আমরা অনেক সময় প্রকল্প পরিবর্তন করি।

জনপ্রিয় সংবাদ

সপরিবারে হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন তারেক রহমান

লাগেজভ্যান প্রকল্পে ৩৫৮ কোটির ক্ষতি

আপডেট সময় : ০৭:১৯:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
  • রেলের সাবেক ডিজিসহ ৬ জনের নামে দুদকের মামলা
  • ২০২৩ সালে ১২৫টি লাগেজ ভ্যান কিনেছিল রেলওয়ে
  • পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের অভাবে এখন তা নিষ্ক্রিয়

 

রেলওয়ের লাগেজ ভ্যান প্রকল্পের নামে রাষ্ট্রের ৩৫৮ কোটি টাকার ক্ষতিসাধনের অভিযোগে সংস্থাটির সাবেক ডিজি শামসুজ্জামানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল রবিবার দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস)- বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সংস্থাটির উপ-সহকারী পরিচালক হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে এই মামলা করেন। এজাহার সূত্রে জানা যায়, পণ্য পরিবহন বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০২৩ সালে ৩৫৮ কোটি টাকায় ১২৫টি লাগেজ ভ্যান কিনেছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। তবে যথাযথ পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের অভাবে এগুলো এখন প্রায় নিষ্ক্রিয় অবস্থায় পড়ে আছে। ঢাকঢোল পিটিয়ে উদ্বোধন করা হলেও লক্ষ্য অনুযায়ী আয় তো বাড়েনি, বরং কমেছে। লাগেজ ভ্যানগুলো মূলত পণ্য, লাগেজ ও দ্রুত নষ্ট হয়-এমন দ্রব্য পরিবহনের জন্য কেনা হয়েছিল। এ ঘটনায় রেলের সাবেক ডিজি শামসুজ্জামান, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান, হারুন অর রশীদ, প্রকল্প পরিচালক আব্দুল মতিন চৌধুরীসহ ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগে গত আগস্ট মাসে ‘পড়ে আছে ৩৫৮ কোটি টাকার লাগেজ ভ্যান, বেসরকারি খাতে ছাড়ার চিন্তা রেলওয়ের’- শিরোনামে টিবিএসে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। অন্যদিকে, একটি পারিবারিক কবরস্থানকে সরকারি কাগজে কলমে ‘সামাজিক কবরস্থান’ হিসেবে দেখিয়ে ঘুরিয়ে-ফিরিয় ৮টি প্রকল্প নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কবির হোসেনের বিরুদ্ধে। কবরস্থানের উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৪ লাখ টাকা। ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার রামভদ্রপুর ইউনিয়নের নিজ আশাবট গ্রামে। জানা গেছে, সেটি স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর পারিবারিক কবরস্থান। ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কবির হোসেন সরদারের ইচ্ছায় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে। স্থানীয় সরকার সচিবকে সন্তুষ্ট রাখতে কবির হোসেন কাজটি করেছেন। নথিপত্র ঘেটে দেখা গেছে, গত ১৮ মে জেলা পরিষদের তৎকালীন প্রশাসক ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার জিয়া আহমেদ সুমনের সভাপতিত্বে একটি সভা হয়। সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে পাওয়া ৯০ লাখ টাকার বিপরীতে ৩৭টি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর মধ্যে ১০টি প্রকল্প নেওয়া হয় ফুলপুর উপজেলায়। যার ৯টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে রামভদ্রপুর ইউনিয়নের নিজ আশাবট গ্রামে। প্রতিটি প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩ লাখ টাকা। প্রকল্পের তালিকায় এক নম্বরে রয়েছে নিজ আশাবট গ্রামের হাজি শমসের আলী সাহেবের কবরস্থান উন্নয়ন। শমসের আলী স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর দাদা। ৪ নম্বর প্রকল্প নিজ আশাবট গ্রামের সামাজিক কবরস্থানে সীমানাপ্রাচীর টাইলসকরণ। তালিকার ৮, ২১, ২৪, ২৫, ২৭ ও ৩২ নম্বর প্রকল্পও একই কবরস্থান ঘিরে। এসব প্রকল্পে সুপেয় পানির অবকাঠামোর টাইলস ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, সুপেয় পানির অবকাঠামো নির্মাণ, সীমানাপ্রাচীর, নালা নির্মাণ ইত্যাদির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি কম্বল কেনার একটি কার্যাদেশ দেন কবির হোসেন। জেলার ১৩টি উপজেলার দুস্থ, অসহায় ও গরিব মানুষের জন্য প্রায় ৪৯ লাখ ৯৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ১২ হাজার কম্বল সরবরাহের জন্য নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মেসার্স হাওলাদার এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশ অনুযায়ী সাত দিনের মধ্যে উপসহকারী প্রকৌশলীর কাছে কম্বল সরবরাহের কথা। জেলা পরিষদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কম্বল বুঝে পায়নি। এছাড়া জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার তাহমিনা আক্তার। তার সই জাল করে প্রায় ১ কোটি ১৩ লাখ টাকার প্রকল্প গ্রহণের কার্যবিবরণী তৈরির অভিযোগ রয়েছে কবির হোসেন সরদারের বিরুদ্ধে। মো. কবির হোসেন সরদারের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ক্ষুব্ধ তার অধীনে কাজ করা কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। এক কবরস্থানের জন্য আট প্রকল্প গ্রহণ, কম্বল বিতরণে অনিয়ম, জেলা পরিষদের প্রশাসকের সই জালিয়াতিসহ মো. কবির হোসেনের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ তুলেছেন জেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ২৬ অক্টোবর স্থানীয় সরকার বিভাগে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। এরপর গত ২৭ অক্টোবর কবির হোসেনকে ময়মনসিংহ থেকে পটুয়াখালী জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ২ নভেম্বর নতুন আদেশে কবির হোসেনকে নেত্রকোনা জেলা পরিষদে বদলি করা হয়। কবির হোসেন সরদারের বিরুদ্ধে বিতর্ক নতুন নয়। ২০১৩ সালে সাভারের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে দুই ভাইয়ের নামে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় অবস্থিত একটি পোশাক কারখানার শেয়ার কিনে সেটি দখলের অভিযোগ ওঠে। উত্তরার একটি ফ্ল্যাটে ১১ মাস বসবাস করেও ভাড়া পরিশোধ না করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। দুই অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ২০১৫ সালে কবির হোসেন সরদারকে বিভাগীয় শাস্তি হিসেবে বেতন কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল (দুই ধাপ অবনমিত)। ফুলপুর উপজেলার রামভদ্রপুর ইউনিয়নের নিজ আশাবট গ্রামের বাসিন্দারা জানান, কবরস্থানটি এই গ্রামের সামাজিক কবরস্থান নয়। এটি স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর পারিবারিক কবরস্থান। সচিবের বাড়ির সামনে কবরস্থানটিতে সচিবের পরিবারের বাইরে অন্য কেউ ব্যবহার করেন না। তাই পুরাতন একটি সাইনবোর্ডে পারিবারিক কবরস্থান লেখা রয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী বলেন, আমি কখনো কবরস্থানে প্রকল্প দিতে বলিনি। ওখানে জনগণের জন্য পানির ব্যবস্থা ও একটি পাঞ্জেখানা মসজিদের (যে মসজিদে জুমা ছাড়া অন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ হয়) জন্য বলেছিলাম। আমি এখন এটি বাদ দিতে বলেছি। ইতোমধ্যে কবির হোসেনকে বদলি করা হয়েছে। এ বিষয়ে কবির হোসেন বলেন, নোটিশের যথাযথ জবাবও দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প সব আমি একা করি না। মাসিক সভায় অনুমোদন করে মন্ত্রণালয় হয়ে আসে। কোনো সমস্যা থাকলে আমরা অনেক সময় প্রকল্প পরিবর্তন করি।