জ্বালানি খাতের বিতর্কিত মাফিয়া চক্রের ছত্রছায়ায় থাকা কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) আবারও দুর্নীতির কারণে আলোচনায়। বন্ধের দিনেও পদোন্নতি নিয়ে গোপন মিটিং আয়োজনসহ অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন কর্মকর্তা জড়িয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সহকারী প্রকৌশলী সৈয়দ মোর্শেদ উল্লাহর বিরুদ্ধে প্রায় ৭৫ লাখ টাকার গ্যাস বিল আত্মসাত, দলীয় প্রভাব খাটানো, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং চাকরি বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার যোগসাজশে এসব অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
দলীয় প্রভাব ও অঘোষিত রক্ষাকবচ
সৈয়দ মোর্শেদ উল্লাহ পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (২০১৪ সাল থেকে) এবং বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর লীগের দক্ষিণ জেলার সহ-সভাপতি। সরকারি চাকরিতে থেকে রাজনৈতিক পদে বহাল থাকা চাকরিবিধির সম্পূর্ণ পরিপন্থী হলেও কেজিডিসিএল তাকে বারবার রক্ষা করে এসেছে জানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে— দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন চৌধুরী ও বহুল আলোচিত এমপি বিচ্ছু সামছুর চাপ প্রয়োগ করে তার বয়সসীমা অতিক্রম করেও কেজিডিসিএলে চাকরি নিশ্চিত করেছিলেন।
৭৫ লাখ টাকার বিল আত্মসাতের অভিযোগ
উড ট্রিটিং প্ল্যান্ট (বিএফআইডিসি), কালুরঘাট— এই প্রতিষ্ঠানের জন্য এপ্রিল ২০১৯ থেকে অক্টোবর ২০২১ পর্যন্ত ৩১ মাসে প্রায় ৭৫ লাখ টাকার গ্যাস বিল মিটার টেম্পারিং করে ‘০’ রিডিং দেখিয়ে আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঘটনাটি কেজিডিসিএলের নজরে এলে পেট্রোবাংলাকে অবহিত না করে বরং তাকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। তার ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের দিয়ে কমিটি গঠন করে তদন্ত প্রভাবিত করার অভিযোগও উঠেছে।
প্রশাসন অসহায়, মাফিয়ার শক্তি অটুট
কিছুদিন আগে তাকে ফৌজদারহাটে বদলি করা হলেও তিনি যোগদান না করে বরং কর্তৃপক্ষকে বদলি আদেশ পরিবর্তন করাতে সক্ষম হন। এতে মোরশেদের প্রভাব কতটা শক্তিশালী তা স্পষ্ট বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।
অভিযোগ রয়েছে— দুদকের কর্মকর্তা শরীফ তার দুর্নীতির তদন্ত শুরু করলে তিনি জীবননাশের হুমকি পর্যন্ত দেন।
কেজিডিসিএলের অভ্যন্তরে তার বিরুদ্ধে ভয়াবহ প্রভাব বিস্তার রয়েছে, যেখানে সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পর্যন্ত আতঙ্কে থাকেন।
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটেও রক্ষা
অন্যদিকে সহকারী ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ফারুক আহমেদ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেখিয়ে চাকরি নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তার সনদ ভুয়া প্রমাণিত হলে কেজিডিসিএলের বোর্ড তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে নির্দেশ দিলেও প্রভাবশালী মন্ত্রী হাসান মাহমুদের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় সে সিদ্ধান্ত স্থগিত হয়ে যায়।
ফারুক আহমেদ বর্তমানে রাঙ্গুনিয়া যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ তার চাপের মুখে পদোন্নতি দিতে বাধ্য হচ্ছে।
শেষ প্রশ্ন: তাহলে সংস্কার কোথায়?
প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে প্রশ্ন উঠেছে—যদি এমন দুর্নীতিবাজ ও বিতর্কিত কর্মকর্তাদেরই পদোন্নতি দেওয়া হয়, তাহলে কেজিডিসিএলের বহুল প্রতীক্ষিত সংস্কার আসবে কীভাবে?
এমআর/সবা






















