০২:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘গ্রাহকশূন্য’ একীভ‚ত ৫ ব্যাংকের শাখা

  • প্রতিটি শাখায় সুনশান নীরবতা, হতাশ গ্রাহকরা
  • সরকারের অর্থছাড়ের অপেক্ষা

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হলেও সাধারণ গ্রাহক এখনো টাকা তুলতে পারছেন না। পাঁচ ব্যাংক একীভ‚ত করে তৈরি হওয়া এই নতুন ব্যাংকের শাখাগুলোতে আগের মতো ভিড় নেই, বরং দেখা যাচ্ছে এক ধরনের নীরবতা। গ্রাহকশূন্য হয়ে পড়েছে একীভ‚ত ৫ ব্যাংকের শাখাগুলো। বহুবার চেষ্টা করেও টাকা না পাওয়ায় অনেক গ্রাহকই শাখায় যাওয়া-আসা কমিয়ে দিয়েছেন। একই সঙ্গে সরকারের বরাদ্দ করা পর্যাপ্ত অর্থ শাখা পর্যায়ে এখনও না পৌঁছানোয় আমানতকারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা আরও বাড়ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন শাখায় ঘুরে দেখা গেছে, যে শাখাগুলো একসময় গ্রাহকের আনাগোনায় সরগরম থাকতো, এখন সেখানে হাতেগোনা কয়েকজন গ্রাহক দেখা যায়।
গেøাবাল ইসলামি ব্যাংকের নয়াপল্টন শাখায় গিয়ে দেখা যায়, কোনো গ্রাহক নেই। প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর দেখা মিললো দুজনের। তারা এসেছেন মাসিক ডিপিএসের টাকা জমা দিতে।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার পরিস্থিতিও একইরকম। এক্সিম ব্যাংকের গ্রাহক পলাশ বলেন, আমার পাঁচ বছর মেয়াদি ডিপিএস আছে। অনেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন শুনেছি। এখন ব্যাংকটি সরকারি মালিকানায় গেছে, তাই বিশ্বাস করি সরকারই আমাদের টাকা ফেরত দেবে। তাছাড়া এখন ডিপিএস ভাঙলে ঘোষিত প্যাকেজের সুবিধাও পাবো না।
এক্সিম ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় একসময় ভিড়ে সরগরম থাকতো, এখন অনেকটাই নীরব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শাখার এক কর্মকর্তারা জানান, ওপর থেকে নির্দেশনা না থাকায় গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে তারা কিছু বলতে পারছেন না।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকের এক শাখার ব্যবস্থাপক মো. তৌফিক। তিনি বলেন, জেনেছি বাজেট থেকে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। তবে সে টাকা এখনও শাখা পর্যায়ে আসেনি। লিখিত নির্দেশনা ছাড়া আমরা গ্রাহকদের টাকা দিতে পারবো না।
যদিও গ্রাহকের আস্থা ফিরিয়ে আনাই হবে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কাজ- এমন মন্তব্য করেন এ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।
গত মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি বলেন, সরকারি মালিকানায় একটি ইসলামি ব্যাংক চালু হওয়া দেশের জন্য ইতিবাচক বার্তা। ব্যাংকটি পূর্ণাঙ্গভাবে দাঁড় করাতে বেশ কিছু কারিগরি দল কাজ করছে। আমরা প্রথমেই আমানতকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে চাই।
তিনি জানান, পাঁচ ব্যাংককে আইনগতভাবে পূর্ণাঙ্গভাবে একীভ‚ত করা এবং ব্যাংকের ভিশন-মিশন চ‚ড়ান্ত করাই এখন প্রধান অগ্রাধিকার।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক, গেøাবাল ইসলামি ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক একীভ‚ত করে গঠিত হয়েছে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসি। নতুন ব্যাংকের মোট পরিশোধিত মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে সরকার, বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকা আসছে আমানতকারীদের শেয়ার থেকে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের অনুক‚লে বরাদ্দ করা ২০ হাজার কোটি টাকা এরই মধ্যে ব্যাংকের হিসাবে জমা হয়েছে। তবে এই অর্থ শাখা পর্যায়ে কবে পৌঁছাবে- তা স্পষ্ট নয়।
তবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের মূলধন গঠনে এখনো সরকার কোনো অর্থ ছাড় করেনি। প্রাথমিকভাবে সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হলেও সেই অর্থ দ্রæত পাওয়া যাবে- এমন নিশ্চয়তাও নেই। এতে করে ব্যাংকের কার্যক্রম শুরুর আগেই অংশী ব্যাংক ও আমানতকারীদের আস্থা দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রতিশ্রæত সহায়তা দ্রæত পেলে ব্যাংকটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। এর ফলে গ্রাহকদের মাঝে আস্থা ফিরে আসবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

সপরিবারে হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন তারেক রহমান

‘গ্রাহকশূন্য’ একীভ‚ত ৫ ব্যাংকের শাখা

আপডেট সময় : ০৭:১৩:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • প্রতিটি শাখায় সুনশান নীরবতা, হতাশ গ্রাহকরা
  • সরকারের অর্থছাড়ের অপেক্ষা

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হলেও সাধারণ গ্রাহক এখনো টাকা তুলতে পারছেন না। পাঁচ ব্যাংক একীভ‚ত করে তৈরি হওয়া এই নতুন ব্যাংকের শাখাগুলোতে আগের মতো ভিড় নেই, বরং দেখা যাচ্ছে এক ধরনের নীরবতা। গ্রাহকশূন্য হয়ে পড়েছে একীভ‚ত ৫ ব্যাংকের শাখাগুলো। বহুবার চেষ্টা করেও টাকা না পাওয়ায় অনেক গ্রাহকই শাখায় যাওয়া-আসা কমিয়ে দিয়েছেন। একই সঙ্গে সরকারের বরাদ্দ করা পর্যাপ্ত অর্থ শাখা পর্যায়ে এখনও না পৌঁছানোয় আমানতকারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা আরও বাড়ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন শাখায় ঘুরে দেখা গেছে, যে শাখাগুলো একসময় গ্রাহকের আনাগোনায় সরগরম থাকতো, এখন সেখানে হাতেগোনা কয়েকজন গ্রাহক দেখা যায়।
গেøাবাল ইসলামি ব্যাংকের নয়াপল্টন শাখায় গিয়ে দেখা যায়, কোনো গ্রাহক নেই। প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর দেখা মিললো দুজনের। তারা এসেছেন মাসিক ডিপিএসের টাকা জমা দিতে।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার পরিস্থিতিও একইরকম। এক্সিম ব্যাংকের গ্রাহক পলাশ বলেন, আমার পাঁচ বছর মেয়াদি ডিপিএস আছে। অনেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন শুনেছি। এখন ব্যাংকটি সরকারি মালিকানায় গেছে, তাই বিশ্বাস করি সরকারই আমাদের টাকা ফেরত দেবে। তাছাড়া এখন ডিপিএস ভাঙলে ঘোষিত প্যাকেজের সুবিধাও পাবো না।
এক্সিম ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় একসময় ভিড়ে সরগরম থাকতো, এখন অনেকটাই নীরব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শাখার এক কর্মকর্তারা জানান, ওপর থেকে নির্দেশনা না থাকায় গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে তারা কিছু বলতে পারছেন না।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকের এক শাখার ব্যবস্থাপক মো. তৌফিক। তিনি বলেন, জেনেছি বাজেট থেকে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। তবে সে টাকা এখনও শাখা পর্যায়ে আসেনি। লিখিত নির্দেশনা ছাড়া আমরা গ্রাহকদের টাকা দিতে পারবো না।
যদিও গ্রাহকের আস্থা ফিরিয়ে আনাই হবে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কাজ- এমন মন্তব্য করেন এ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।
গত মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি বলেন, সরকারি মালিকানায় একটি ইসলামি ব্যাংক চালু হওয়া দেশের জন্য ইতিবাচক বার্তা। ব্যাংকটি পূর্ণাঙ্গভাবে দাঁড় করাতে বেশ কিছু কারিগরি দল কাজ করছে। আমরা প্রথমেই আমানতকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে চাই।
তিনি জানান, পাঁচ ব্যাংককে আইনগতভাবে পূর্ণাঙ্গভাবে একীভ‚ত করা এবং ব্যাংকের ভিশন-মিশন চ‚ড়ান্ত করাই এখন প্রধান অগ্রাধিকার।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক, গেøাবাল ইসলামি ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক একীভ‚ত করে গঠিত হয়েছে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসি। নতুন ব্যাংকের মোট পরিশোধিত মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে সরকার, বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকা আসছে আমানতকারীদের শেয়ার থেকে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের অনুক‚লে বরাদ্দ করা ২০ হাজার কোটি টাকা এরই মধ্যে ব্যাংকের হিসাবে জমা হয়েছে। তবে এই অর্থ শাখা পর্যায়ে কবে পৌঁছাবে- তা স্পষ্ট নয়।
তবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের মূলধন গঠনে এখনো সরকার কোনো অর্থ ছাড় করেনি। প্রাথমিকভাবে সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হলেও সেই অর্থ দ্রæত পাওয়া যাবে- এমন নিশ্চয়তাও নেই। এতে করে ব্যাংকের কার্যক্রম শুরুর আগেই অংশী ব্যাংক ও আমানতকারীদের আস্থা দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রতিশ্রæত সহায়তা দ্রæত পেলে ব্যাংকটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। এর ফলে গ্রাহকদের মাঝে আস্থা ফিরে আসবে।