নেত্রকোনা প্রতিনিধি
প্রকৃতির সব কিছুই আজ দূষণের আওতায় চলে এসেছে শুধু মানুষের বেঠিক আচরণের কারণে। সভ্যতা আজ চরমে জ্ঞান, বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিতে কিন্তু প্রকৃতির উপর মানুষের জুলুম দূষণের অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা, মানুষেরাই আমাদের পৃথিবীকে বাস যোগ্যহীন করে তুলছি। আর এর জন্য অসচেতনতা ও দায়িত্বহীনতাই দায়ী। বায়ু, পানি, শব্দ ও মাটি দূষণের জন্য আমাদের ভুল কাজ দায়ী। এদের প্রতি আমাদের মানবিক আচরণ করলেই দূষণের অভিশাপ থেকে বাঁচতে পারব অন্যথা আমাদের জীবনের অস্তিত্বের প্রশ্ন রয়েছে। অপঁচনশীল পলিথিন ব্যাগ সরকারের নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে বাজারে রাজ করছে। বহু অভিযান চালিয়েও এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। জরিপে দেখা গিয়েছে মানুষের স্বভাব ও দায়িত্বহীনতাই এর জন্য দায়ী। মনোহারি কিংবা সবজি দোকানীদের দু ধরনের ব্যাগ ব্যবহার করতে দেখা যায়। একটি হলো কাপড়ের অন্যটি হলো পলিথিন ব্যাগ। অভিযানে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন না হলেও একেবারে ভেস্তে যায়নি। এক্ষেত্রে আরও একটু নজরদারির প্রয়োজন দাবি রাখে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমাদের স্বভাব পরিবর্তন না হলে এ অভিশাপ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না। এগুলো ব্যবহারের পর পুড়িয়ে ফেললেও কিছুটা বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। অন্যদিকে রয়েছে প্যাকেটজাত খাদ্য সংরক্ষণের জন্য অপঁচনশীল পলিথিনের ব্যবহার যা পরিবেশের জন্য একই রকম বিপর্যয়ের কারণ। এ ক্ষেত্রে পুড়ানো ছাড়া নিয়ন্ত্রণের প্রশ্ন অবান্তর। পঁচনশীল প্যাকেট উদ্ভাবনের মাধ্যমে এর বিকল্প ধারা অব্যাহত রাখা যেতে পারে। সুতরাং আচরণ ও স্বভাব পরিবর্তন না করলে শুধুই আইন প্রয়োগে কোন সুফল বয়ে আনবে না। আমরা জানি অপঁচনশীল পলিথিন মাটিতে না পঁচার কারণে গাছ বেড়ে উঠতে পারে না এবং মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়। শহরের ড্রেনেজ সিস্টেম কে ব্যহত করে পরিবেশের দূষণ করে। পিলিথিন পুড়ালেও কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস সৃষ্টি বায়ু দূষণের কারণ। পলিথিনে খাবার সংরক্ষণে রেখে, সে খাবার গ্রহণে মরণব্যাধি ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, পলিথিনে গরম খাবার ঢালার সঙ্গে সঙ্গে বিসফেলন তৈরি হয় যা থাইরয়েড হরমোনকে বাধাগ্রস্ত করে। ফলে লিভার ও কিডনি বিকল হতে পারে। বিসলেন এর প্রভাবে রক্ত সঞ্চালনে নারীর ভ্রুণে পৌঁছলে ভ্রূণ নষ্ট, বন্ধ্যাত্ব ও নবজাত শিশু বিকলাঙ্গ হতে পারে। ফ্রিজে সংরক্ষণে রেখে খেলেও একই ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। এত ক্ষতিকর হওয়া সত্ত্বেও হোটেল, রেস্তোরাঁয়, সপিং মহল, বিপণন কেন্দ্র সর্বত্রই ছয়লাপ। এখন সময়ের দাবি এর একটা বিকল্প বিহিত করা। গণসচেতনতার মাধ্যমে সর্বসাধারণকে সজাগ করে তোলতে হবে তাহলে এর থেকে মুক্তির সম্ভাবনার রয়েছে।
পলিথিন পরিবেশের ক্ষতিকর বিবেচনা করে ২০০২ সালে বাংলাদেশে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-৯৫ এর পরিপ্রেক্ষিতে পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন এবং পরিবহন আইনতঃ দণ্ডনীয় অপরাধ। আইনের ২৫ ধারায় বলা হয়েছে,যদি কেউ নিষিদ্ধ পলিথিন সামগ্রী উৎপাদন করে, তাহলে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা অথবা ১০ বছর কারাদণ্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারে। আইনের চোখকে ফাঁকি দেয়া যেতে পারে কিন্তু বিবেককে নয়। সুতরাং আইনের নজরদারি সহ জনসচেতনতা এর প্রতিরোধে জোর দাবি রাখে।


























