০৭:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কিন্ডারগার্টেনের দখলে প্রাথমিক শিক্ষা, সরকারি বিদ্যালয়ে কমছে শিক্ষার্থী

কোমলমতি শিশুদের মেধা বিকাশে প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। শিক্ষার ভিত্তি মজবুত না হলে ভবিষ্যতের শিক্ষাজীবনও দুর্বল হয়ে পড়ে। অথচ সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক স্তরেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। বিপরীতে, বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন ও মাদ্রাসাভিত্তিক প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিভাবকদের আগ্রহ বাড়ছে।

মনোমুগ্ধকর ভবন, প্রশিক্ষিত শিক্ষক এবং সরকারি চাকরির নিশ্চয়তা থাকা সত্ত্বেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি প্রবণতা কমছে। অভিভাবকরা ভবনের সৌন্দর্য বা সরকারি ব্যবস্থার কথা না ভেবে সন্তানের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কিন্ডারগার্টেনে ঝুঁকছেন। ফলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী সংকটে পড়ছে।

রংপুর নগরী ও সদর উপজেলায় পিটিআইয়ের একটি বিদ্যালয়সহ মোট ১২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। পুরো রংপুর জেলায় রয়েছে ১ হাজার ৪৫৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। জেলা ভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী রংপুর বিভাগে আট জেলায় মোট ৯ হাজার ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪ হাজার ৩৬৫টি।

অভিভাবকদের অভিযোগ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার অব্যবস্থা, মানহীন পাঠদান, শিক্ষকদের উদাসীনতা, পর্যাপ্ত মনিটরিংয়ের অভাব এবং অবকাঠামোগত সংকটের কারণে তারা সন্তানদের সেখানে ভর্তি করাতে অনাগ্রহী। তাদের আশঙ্কা, এসব সমস্যার সমাধান না হলে আগামী বছরগুলোতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি আরও আশঙ্কাজনক হারে কমে যাবে।

অন্যদিকে রংপুর মহানগরী ও সদরসহ আট উপজেলায় প্রায় আড়াই হাজারের বেশি কিন্ডারগার্টেন ও মাদ্রাসাভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। পাড়া-মহল্লায় নতুন নতুন কিন্ডারগার্টেন ও মাদ্রাসা স্থাপনের প্রবণতাও বাড়ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান বাসাবাড়ি ভাড়া নিয়ে পরিচালিত হলেও কিছু নিজস্ব ভবনে কার্যক্রম চালাচ্ছে। রংপুরে বর্তমানে অন্তত ১৩০টি কিন্ডারগার্টেন তালিকাভুক্ত রয়েছে।

নগরজুড়ে পত্রিকা, হ্যান্ডবিল ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রচারণা চলছে। তুলনামূলকভাবে সচ্ছল অভিভাবকরাই বেশি সন্তানদের এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাচ্ছেন। ফলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মূলত দরিদ্র ও অসচ্ছল পরিবারের শিশুরাই ভর্তি হচ্ছে।

কামালকাছনা এলাকার সফিয়ার রহমান, গুপ্তপাড়ার হারুন অর রশিদ ও শোভা রানী বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনার মান সন্তোষজনক না হওয়ায় তারা সন্তানদের ভালো শিক্ষার জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে বাধ্য হচ্ছেন। তারা প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জেলা-উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।

এ বিষয়ে রংপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, “যেসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান দুর্বল, সেখানে শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে—এটা সত্য। তবে আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা করা হচ্ছে।” তিনি আরও জানান, জেলায় ১ হাজার ৪৫৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিপরীতে অসংখ্য কিন্ডারগার্টেন ও মডেল মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে। ব্যস্ত অভিভাবকরা বাসার কাছাকাছি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই সন্তানদের ভর্তি করতে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন।

শু/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

সারা দেশে খালেদা জিয়ার গায়েবানা জানাজা

কিন্ডারগার্টেনের দখলে প্রাথমিক শিক্ষা, সরকারি বিদ্যালয়ে কমছে শিক্ষার্থী

আপডেট সময় : ০৩:১১:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫

কোমলমতি শিশুদের মেধা বিকাশে প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। শিক্ষার ভিত্তি মজবুত না হলে ভবিষ্যতের শিক্ষাজীবনও দুর্বল হয়ে পড়ে। অথচ সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক স্তরেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। বিপরীতে, বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন ও মাদ্রাসাভিত্তিক প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিভাবকদের আগ্রহ বাড়ছে।

মনোমুগ্ধকর ভবন, প্রশিক্ষিত শিক্ষক এবং সরকারি চাকরির নিশ্চয়তা থাকা সত্ত্বেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি প্রবণতা কমছে। অভিভাবকরা ভবনের সৌন্দর্য বা সরকারি ব্যবস্থার কথা না ভেবে সন্তানের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কিন্ডারগার্টেনে ঝুঁকছেন। ফলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী সংকটে পড়ছে।

রংপুর নগরী ও সদর উপজেলায় পিটিআইয়ের একটি বিদ্যালয়সহ মোট ১২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। পুরো রংপুর জেলায় রয়েছে ১ হাজার ৪৫৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। জেলা ভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী রংপুর বিভাগে আট জেলায় মোট ৯ হাজার ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪ হাজার ৩৬৫টি।

অভিভাবকদের অভিযোগ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার অব্যবস্থা, মানহীন পাঠদান, শিক্ষকদের উদাসীনতা, পর্যাপ্ত মনিটরিংয়ের অভাব এবং অবকাঠামোগত সংকটের কারণে তারা সন্তানদের সেখানে ভর্তি করাতে অনাগ্রহী। তাদের আশঙ্কা, এসব সমস্যার সমাধান না হলে আগামী বছরগুলোতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি আরও আশঙ্কাজনক হারে কমে যাবে।

অন্যদিকে রংপুর মহানগরী ও সদরসহ আট উপজেলায় প্রায় আড়াই হাজারের বেশি কিন্ডারগার্টেন ও মাদ্রাসাভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। পাড়া-মহল্লায় নতুন নতুন কিন্ডারগার্টেন ও মাদ্রাসা স্থাপনের প্রবণতাও বাড়ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান বাসাবাড়ি ভাড়া নিয়ে পরিচালিত হলেও কিছু নিজস্ব ভবনে কার্যক্রম চালাচ্ছে। রংপুরে বর্তমানে অন্তত ১৩০টি কিন্ডারগার্টেন তালিকাভুক্ত রয়েছে।

নগরজুড়ে পত্রিকা, হ্যান্ডবিল ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রচারণা চলছে। তুলনামূলকভাবে সচ্ছল অভিভাবকরাই বেশি সন্তানদের এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাচ্ছেন। ফলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মূলত দরিদ্র ও অসচ্ছল পরিবারের শিশুরাই ভর্তি হচ্ছে।

কামালকাছনা এলাকার সফিয়ার রহমান, গুপ্তপাড়ার হারুন অর রশিদ ও শোভা রানী বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনার মান সন্তোষজনক না হওয়ায় তারা সন্তানদের ভালো শিক্ষার জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে বাধ্য হচ্ছেন। তারা প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জেলা-উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।

এ বিষয়ে রংপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, “যেসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান দুর্বল, সেখানে শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে—এটা সত্য। তবে আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা করা হচ্ছে।” তিনি আরও জানান, জেলায় ১ হাজার ৪৫৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিপরীতে অসংখ্য কিন্ডারগার্টেন ও মডেল মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে। ব্যস্ত অভিভাবকরা বাসার কাছাকাছি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই সন্তানদের ভর্তি করতে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন।

শু/সবা