দক্ষিণ জনপদের নেছারাবাদ, নাজিরপুর, কচুয়া, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা রামপাল, র”পসা, ডুমুরিয়া উপজেলায় ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রতিদিনই বাড়ছে। এর প্রতিষেধক হিসেবে আইভি স্যালাইন, ডিএনএস, এইচএস ও এনএসএস নামের স্যালাইন উপজেলা তো দূরের কথা বিভাগীয় সদরেও পাওয়া যাচ্ছে না। চাহিদার তুলনায় খুলনার হেরাজ মার্কেটের মাত্র ২০ শতাংশ সরবরাহ হচ্ছে। ৭০ টাকার স্যালাইন দু’শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বেক্সিমকো, একমি, ওরিয়ন স্যালাইন সরবরাহ করতে পারছেন না। অপসো স্যালাইন লিমিটেড স্যালাইন উৎপাদনে হিমশিম খাচ্ছে।
সারাবছর ধরেই ডেঙ্গুর প্রকোপ চলছে। বর্ষা মৌমুমে একটু বেশি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশাপাশি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল, আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল, গাজী মেডিকেল, সিটি মেডিকেল ও ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে প্রতিদিনই রোগী ভর্তি হচ্ছে। শুধুমাত্র খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বছরের শুর” থেকে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ১শ’ ৬৭ জন রোগী ভর্তি হয়। এখানে ১০ জনের মৃত্যু হয। জেনারেল হাসপাতাওে চিকিৎসাধিন অবস্থায় দু’জনের মৃত্যু হয়। ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেওয়ার পওে স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে। খুলনা জেনারেল হাসপাতালে নরমাল স্যালাইন মজুদের কোটা শুণ্য। অন্যান্য স্যালাইন মজুদ রয়েছে।
হেলথ এন্ড হোপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডাঃ এমএইচ চৌধুরি জানান, চাহিদার তুলনায় স্যালাইন পাওযা যাচ্ছে না। ১’শ ব্যাগ স্যালাইনের চাহিদা দিলে ২০ ব্যাগ সরবরাহ হচ্ছে। খুমেকের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ নিয়াজ মুস্তাফি চৌধুরী তথ্য দিয়েছেন, রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। কিন্তু এ সরকারি হাসপাতালে নরমাল স্যালাইনের মজুদ নেই। উর্দ্ধতন কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ সুহাস রঞ্জন হালদার গণমাধ্যমকে জানান, ডেঙ্গু রোগী সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি তথ্য দেন ৫’শ শয্যার এ হাসপাতালে এখন প্রতিদিন দেড় হাজার রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। খুমেক হাসপাতালে গত ১১ সেপ্টেম্বর ১’শ ৩১ জন রোগী চিকিৎসা নেয়। খুলনা জেনারেল হাসপাতালের নিচ তলায় ডেঙ্গু কর্ণাওে তিন বেডের স্থলে এখন পাঁচ বেডেই রোগী।
অপসো স্যালাইন লিমিটিডের খুলনা সেলস অফিসের এরিয়া ম্যানেজার মোঃ রকিবুল হাসান বলেন, বরিশালের র”পাতলি উৎপাদন কেন্দ্র চাহিদা অনুযায়ী স্যালাইনের উৎপাদন করতে পারছে না। স্কয়ার, বেক্সিমকো, একমি ও ওরিয়ন গ্র”প স্যালাইন উৎপাদনে নেই। তিনি তথ্য দিয়েছেন খুলনার পাইকারি বাজারে সপ্তাহে দু’দিন সরবরাহ করা হয়। একদিনে দু’শ ব্যাগ সরবরাহ হলে মুহুর্তেও মধ্যে শেষ।
হেরাজ মার্কেটস্থ ব্লু ড্রাগ সেন্টারের মালিক অভিজিৎ রায় জানান, ডেঙ্গুর কারণে এর চাহিদা বেড়েছে। অপসো কতৃপক্ষ ১২ পিস সরবরাহ করে। একঘন্টার মধ্যেই মজুদ শেষ। রোগীর চাহিদা অনুযায়ী স্যালাইন সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী বলেন, আমাদের কাছে যেসব রোগী আসে তাদের অনেকেই বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে এখানে ভর্তি হচ্ছে। এসব রোগীর ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট করতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জটিলতা নির্ণয় করে আলাদা চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। শুধু সঠিক পরিমাণ স্যালাইন দেওয়া সম্ভব হলে ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট করা সম্ভব। শকে চলে যাওয়া রোগীকে রেফার না করে ওই হাসপাতালেই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। ডেঙ্গু জ্বর হলে আলাদা করে ডাব, পেঁপে পাতা, জুস, ড্রাগন ফল ও বেদানা খাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ডেঙ্গু রোগীর ফ্লুইড ব্যবস্থাপনা জর”রি। এ ক্ষেত্রে হৃদরোগী, লিভার সিরোসিস, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, কিডনি, ক্যান্সারের রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তাদের স্যালাইন নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। এসব রোগী হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা নিতে এলে পরবর্তী সময়ে তাদের ফুসফুস ও লিভারে পানি জমে যাচ্ছে। রোগীকে আর বাঁচানো যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু রোগীর ফ্লুইড ম্যানেজমেন্টের জন্য জেলা-উপজেলা হাসপাতালের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য ঢাকায় আনার প্রয়োজন নেই। অনলাইনের মাধ্যমে এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আর রোগী শ্রেণীকরণের জন্য আলাদা করে জোন নির্ধারণ করা যেতে পারে। যেমন জটিল বা গুর”তর অসুস্থ রোগীর রেড জোনে রেখে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ) র”বেদ আমিন বলেন, ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ ন্যাশনাল গাইডলাইন অনুসরণ করতে হবে। রোগ শনাক্তের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রোগীকে ফ্লুইড দিতে হবে। কোনো ধরনের রোগীকে কম থেকে বেশি, আবার কোনো কোনো রোগীকে বেশি থেকে কম পরিমাণের ফ্লুইড দিতে হবে। কোন উপসর্গে কী ধরনের চিকিৎসাব্যবস্থা নিতে হবে, কোন উপসর্গকে অ্যালার্মিং ধরে চিকিৎসা দিতে হবে, তা গাইডলাইনে বলা আছে। এ ছাড়া ‘ডেঙ্গু ড্রপস’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। অ্যাপের মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগীর ‘ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট’ করতে পারবেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। রোগীর কখন কী পরিমাণ ফ্লুইড প্রয়োজন, তা এই অ্যাপের মাধ্যমে জানা যাবে।
এদিকে, জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির আগষ্ট মাসের সভায় খুলনার সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সবিজুর রহমান বলেন, এবছর দেশে ডেঙ্গুরোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। সবাই সচেতন না হলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। এ রোগের জন্য দায়ী এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধ করতে হবে। খুলনা শহরে নির্মাণাধীন ভবনগুলোয় পরিষ্কার পানি জমে থাকতে দেখা যাচ্ছে। যেখানে এডিস মশা বংশ বিস্তার করতে পারে। তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গুজ¦র উপশমে ডাবের পানি পান করার কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেই।
দু’ ফার্মেসির জরিমানা
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুলনা জেলা কার্যালয়ের সূত্র জানান, গত ১৪ সেপ্টেম্বর নগরীর শান্তিধাম মোড়স্থ নিউ দীলিপ ফার্মেসিতে ৮৭ টাকার এনএস স্যালাইন ২০০ টাকায় বিক্রি করায় ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ভোক্তার সুত্র জানায়, এ প্রতিষ্ঠানে ওষুধের মোড়কে দাম কেটে বর্ধিত দাম বসানো এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ ফিজিশিয়ান’স স্যাম্পল বিক্রির উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ করা হয়।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুলনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ওয়ালিদ বিন হাবিব এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন।
শিরোনাম
স্যালাইন সংকটে দক্ষিণ জনপদ
-
সবুজ বাংলা - আপডেট সময় : ০৬:৩৭:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৩
- ।
- 107
জনপ্রিয় সংবাদ


























