০৭:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাতক্ষীরায় আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে বাঁশ ও বেত শিল্প

  • সবুজ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১০:৪৪:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৩
  • 217

মীর খায়রুল আলম, সাতক্ষীরা

আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামবাংলার বাঁশ ও বেত শিল্প এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। এ কারণে গ্রামের হাটবাজারগুলোতে বাঁশের তৈরি শিল্প আগের মতো আর চোখে পড়ে না। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত থাকা পরিবারগুলো এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
বাঁশ শিল্প বাঙালি সংস্কৃতির একটি বড় অংশ বাঁশ দিয়ে ঘরের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করা হতো। আর এসব জিনিসপত্রের কদরও ছিলো ভালো। অপ্রতুলতা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং পরিকল্পিত উদ্যোগের অভাবে বিলুপ্ত হতে চলেছে। বর্তমান বাজারে প্লাস্টিক পণ্য সামগ্রীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়েছে এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাঁশ শিল্পের কারিগররা তাদের পূর্ব পুরুষের এ পেশা আকঁড়ে ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেও হিমশিম খাচ্ছেন। দিন দিন বিভিন্ন জিনিসপত্রের মূল্য যে ভাবে বাড়ছে তাতে এই শিল্প ধরে রাখতে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে শিল্পের সাথে জড়িতদের। একসময় ঋষি সম্প্রদায়ের পূর্বপুরুষ থেকে শুরু করে প্রায় অধিকাংশ মানুষ বেত দিয়ে ধান মাপার পালা, ধামা, কুলা, ঝুঁড়ি, খাড়া, মোরা, পুরা, দাড়িপাল্লা, ঝাঁপি, ফুলদানি, ফুলের ডালি, খাবার ঘরের ডাইনিং টেবিল, চেয়ার, টেবিল, সোফা সেট, খাট, ঢোল সহ বিভিন্ন সামগ্রী বানাতেন। কিন্তু উপকরণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় সঠিক দাম না পেয়ে বাধ্য হয়েই ঋষি সম্প্রদায়ের লোকেরা কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করেছেন অনেকে। পুরুষদের পাশাপাশি সংসারের কাজ শেষ করে নারী কারিগররাই বাঁশ দিয়ে এই সব পণ্য বেশি তৈরি করে থাকেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বাঁশ ও বেত দ্বারা এই সব পণ্য তৈরি করে থাকেন। বর্তমানে বেত তেমন সহজ লভ্য না হওয়ায় বাঁশ দিয়েই বেশি এই সব চিরচেনা পণ্য তৈরি করছেন এই কারিগররা। জীবিকা নির্বাহের তাগিদে আজ অনেক পরিবারই বাপ-দাদার এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশার দিকে ঝুঁঁকছেন।

স্থানীয় কারিগরদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্যের আর কদর নেই বললেই চলে। ঐতিহ্য হারাতে বসেছে এই শিল্পটি। গ্রামীণ জনপদের মানুষ গৃহস্থালি, কৃষি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে এমনকি অফিস-আদালত সহ সবখানেই ব্যবহার করত বাঁশ ও বেতের তৈরি সরঞ্জামাদি। বর্তমানে সময়ের বিবর্তনে বদলে গেছে সবকিছুই। বাঁশ ও বেতের পরিবর্তে প্লস্টিক সামগ্রী কম টাকায় পাওয়া যায় এই শিল্প হুমকির মুখে পড়েছে। সাতক্ষীরা জেলার বাজারগুলোতে একসময় বাঁশ ও বেতের সামগ্রীর জৌলুস থাকলেও ধীরে ধীরে তা হারিয়ে যেতে বসেছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে এ পেশার মানুষরা পেশা বদল ও মৌসুমী কারিগর হিসাবে কাজ করছেন।
সাতক্ষীরার দেবহাটার কোঁড়া দাশ পাড়ার গৌর দাশ, গুনা দাশ, তপন দাশ সহ অনেকে বাপ দাদার পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় জীবিকা নির্বাহ করতে শুরু করেছেন। তারা জানা কেউ মাছের ব্যবসা, কেউ সেলুনের কাজ করে সংসার নির্বাহ করছেন। বাঁশ ও বেতের জোগান কম হওয়ায় উচ্চমূল্য দিয়ে তা কিনতে হয়। আবার সারাদিনে কাজ করে খরচ বাদ দিয়ে খুব বেশি লাভ আসে না। এতে ভিন্ন উপায় খুঁজতে হয়েছে তাদের। যার ফলে পেশা বদলের সাথে এই শিল্প থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিতে শুরু করেছেন তাদের মত অনেকেই।

শ্রীরামপুর গ্রামের শীব নারায়ন চন্দ্র জানান, আগের দিনের তুলনায় বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র কম বিক্রি হয়। কারন এগুলো টেকসহ কম এবং পচনশীল। অন্যদিকে বিকল্প হিসাবে প্লাস্টিক কোম্পানিগুলো তাদের সুবিধা অনুযায়ী বিভিন্ন সামগ্রী তৈরী করছেন। এতে করে কম টাকায় এসব সামগ্রী পেয়ে অনেকে ওই দিকে ঝুঁকছেন। তবে প্লাস্টিকের সামগ্রী পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ নয়। অন্যদিকে বাঁশ ও বেতের সামগ্রী প্রাকৃতিক উপায় থেকে সংগ্রহ হওয়ায় শতভাগ নিরাপদ। তিনি আরো বলেন বর্তমানে আমরা পুঁজি সংকটে আছি। যদি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমাদের পাশে দাঁড়ায় আমরা এই পেশাকে আরো এগিয়ে নিতে পারব।

জনপ্রিয় সংবাদ

২৪৬৭ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনল ডিএনসিসি

সাতক্ষীরায় আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে বাঁশ ও বেত শিল্প

আপডেট সময় : ১০:৪৪:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৩

মীর খায়রুল আলম, সাতক্ষীরা

আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামবাংলার বাঁশ ও বেত শিল্প এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। এ কারণে গ্রামের হাটবাজারগুলোতে বাঁশের তৈরি শিল্প আগের মতো আর চোখে পড়ে না। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত থাকা পরিবারগুলো এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
বাঁশ শিল্প বাঙালি সংস্কৃতির একটি বড় অংশ বাঁশ দিয়ে ঘরের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করা হতো। আর এসব জিনিসপত্রের কদরও ছিলো ভালো। অপ্রতুলতা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং পরিকল্পিত উদ্যোগের অভাবে বিলুপ্ত হতে চলেছে। বর্তমান বাজারে প্লাস্টিক পণ্য সামগ্রীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়েছে এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাঁশ শিল্পের কারিগররা তাদের পূর্ব পুরুষের এ পেশা আকঁড়ে ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেও হিমশিম খাচ্ছেন। দিন দিন বিভিন্ন জিনিসপত্রের মূল্য যে ভাবে বাড়ছে তাতে এই শিল্প ধরে রাখতে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে শিল্পের সাথে জড়িতদের। একসময় ঋষি সম্প্রদায়ের পূর্বপুরুষ থেকে শুরু করে প্রায় অধিকাংশ মানুষ বেত দিয়ে ধান মাপার পালা, ধামা, কুলা, ঝুঁড়ি, খাড়া, মোরা, পুরা, দাড়িপাল্লা, ঝাঁপি, ফুলদানি, ফুলের ডালি, খাবার ঘরের ডাইনিং টেবিল, চেয়ার, টেবিল, সোফা সেট, খাট, ঢোল সহ বিভিন্ন সামগ্রী বানাতেন। কিন্তু উপকরণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় সঠিক দাম না পেয়ে বাধ্য হয়েই ঋষি সম্প্রদায়ের লোকেরা কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করেছেন অনেকে। পুরুষদের পাশাপাশি সংসারের কাজ শেষ করে নারী কারিগররাই বাঁশ দিয়ে এই সব পণ্য বেশি তৈরি করে থাকেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বাঁশ ও বেত দ্বারা এই সব পণ্য তৈরি করে থাকেন। বর্তমানে বেত তেমন সহজ লভ্য না হওয়ায় বাঁশ দিয়েই বেশি এই সব চিরচেনা পণ্য তৈরি করছেন এই কারিগররা। জীবিকা নির্বাহের তাগিদে আজ অনেক পরিবারই বাপ-দাদার এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশার দিকে ঝুঁঁকছেন।

স্থানীয় কারিগরদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্যের আর কদর নেই বললেই চলে। ঐতিহ্য হারাতে বসেছে এই শিল্পটি। গ্রামীণ জনপদের মানুষ গৃহস্থালি, কৃষি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে এমনকি অফিস-আদালত সহ সবখানেই ব্যবহার করত বাঁশ ও বেতের তৈরি সরঞ্জামাদি। বর্তমানে সময়ের বিবর্তনে বদলে গেছে সবকিছুই। বাঁশ ও বেতের পরিবর্তে প্লস্টিক সামগ্রী কম টাকায় পাওয়া যায় এই শিল্প হুমকির মুখে পড়েছে। সাতক্ষীরা জেলার বাজারগুলোতে একসময় বাঁশ ও বেতের সামগ্রীর জৌলুস থাকলেও ধীরে ধীরে তা হারিয়ে যেতে বসেছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে এ পেশার মানুষরা পেশা বদল ও মৌসুমী কারিগর হিসাবে কাজ করছেন।
সাতক্ষীরার দেবহাটার কোঁড়া দাশ পাড়ার গৌর দাশ, গুনা দাশ, তপন দাশ সহ অনেকে বাপ দাদার পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় জীবিকা নির্বাহ করতে শুরু করেছেন। তারা জানা কেউ মাছের ব্যবসা, কেউ সেলুনের কাজ করে সংসার নির্বাহ করছেন। বাঁশ ও বেতের জোগান কম হওয়ায় উচ্চমূল্য দিয়ে তা কিনতে হয়। আবার সারাদিনে কাজ করে খরচ বাদ দিয়ে খুব বেশি লাভ আসে না। এতে ভিন্ন উপায় খুঁজতে হয়েছে তাদের। যার ফলে পেশা বদলের সাথে এই শিল্প থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিতে শুরু করেছেন তাদের মত অনেকেই।

শ্রীরামপুর গ্রামের শীব নারায়ন চন্দ্র জানান, আগের দিনের তুলনায় বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র কম বিক্রি হয়। কারন এগুলো টেকসহ কম এবং পচনশীল। অন্যদিকে বিকল্প হিসাবে প্লাস্টিক কোম্পানিগুলো তাদের সুবিধা অনুযায়ী বিভিন্ন সামগ্রী তৈরী করছেন। এতে করে কম টাকায় এসব সামগ্রী পেয়ে অনেকে ওই দিকে ঝুঁকছেন। তবে প্লাস্টিকের সামগ্রী পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ নয়। অন্যদিকে বাঁশ ও বেতের সামগ্রী প্রাকৃতিক উপায় থেকে সংগ্রহ হওয়ায় শতভাগ নিরাপদ। তিনি আরো বলেন বর্তমানে আমরা পুঁজি সংকটে আছি। যদি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমাদের পাশে দাঁড়ায় আমরা এই পেশাকে আরো এগিয়ে নিতে পারব।