মামুন হোসেন ভান্ডারিয়া (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার তেলিখালী ইউনিয়ন ও মঠবাড়িয়ার সিমান্ত উপজেলায় অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র কাঠের মসজিদ। উপজেলার উদয়তারা বুড়িরচর গ্রামের মৌলভি মমিন উদ্দিন আকন ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে মসজিদটি নির্মাণ করেন। তাঁর নাম যুক্ত করে মসজিদের নাম রাখা হয়েছে মমিন মসজিদ। তিনি হাজি শরীয়তুল্লাহর অধস্তন পুরুষ পীর বাদশা মিয়ার অনুসারী ছিলেন। তবে সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি বলে স্থানীয়ভাবে মসজিদটি ‘কাঠ মসজিদ’ নামে পরিচিত। ইউনেসকোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য ৩০টি শিল্পসমৃদ্ধ মসজিদের অন্যতম এটি।
মৌলভি মমিন উদ্দিন আকনের পরিবারের দাবি, এ ধরনের মসজিদ বহু আগে ভারতের কাশ্মীরে একটি ছিল। ১৮৮৫ সালের ভূমিকম্পে তা বিধ্বস্ত হওয়ার পর মমিন মসজিদ দক্ষিণ এশিয়ায় সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি একমাত্র নিদর্শন।
মমিন উদ্দিন আকনের নাতি যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ ‘মমিন মসজিদ : স্মৃতি বিস্মৃতির কথা’ গ্রন্থে মসজিদের ইতিহাস তুলে
ধরেছেন। অপূর্ব কারু কাজমন্ডিত কাঠ মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯১৩ সালে। ২২ জন মিস্ত্রির সাত বছরের শ্রমে ১৯২০ সালে তা শেষ হয়। পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার হরকুমার নাথ ছিলেন তাঁদের প্রধান কারিগর। মমিন উদ্দিন আকন তাঁকে মাসিক ৪০ টাকা বেতনে নিয়োগ দিয়েছিলেন। মমিন উদ্দিন আকন নিজেই মিস্ত্রিদের কাজের তদারকি করতেন এবং কারু কাজগুলো সূক্ষ¥মভাবে পরীক্ষা করে দেখতেন। মমিন মসজিদ তৈরিতে ব্যবহার করা হয় লোহাকাঠ ও সেগুনকাঠ। কাঠগুলো মিয়ানমার, ত্রিপুরা ও আসাম থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। মসজিদের কাঠামো তৈরিতে লোহার পেরেক ব্যবহার করা হয়নি।
দৈর্ঘ্যে তা ২৪ ফুট এবং প্রস্থে ১৮ ফুট। চৌচালা টিন শেড দিয়ে পাটাতন তৈরি করা হয়েছে। আলো-বাতাস প্রবেশের জন্য পাটাতনের মধ্যে
তৈরি করা হয়েছে আরেকটি দোচালা টিনের ছাউনি। মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দুটি করে এবং পূর্ব ও পশ্চিমে চারটি করে মোট ১২টি
জানালা রয়েছে। একমাত্র প্রবেশ দ্বারে আছে দুটি খাম্বাবিশিষ্ট দরজা, যাতে মসজিদ নির্মাণের চমৎকার শিল্পকর্ম ফুটে উঠেছে। প্রবেশদ্বারের ওপরের বাঁ দিকে আরবি হরফে ইসলামের চার খলিফার নাম ও ডানদিকে মহানবী (সা.)-এর পবিত্র নাম অলংকৃত করা হয়েছে। মাঝখানের অংশে লেখা হয়েছে কালিমায়ে তাওহিদ। কাঠের বেড়ার মধ্যে আকর্ষণীয় কারু কাজ বিধৃত হয়েছে। সে কারুকাজের মটিফে ঠাঁই পেয়েছে জ্যামিতিক বিন্যাসে ক্ষুদ্রাকার ফোকর, বরফি, ফুলদানি, স্টাইলিশ কলিসহ ডাঁটা, নাস্তালিক ক্যালিগ্রাফি প্রভৃতি। শত বছরের কাঠের তৈরী মসজিদটি আজও অতুলনীয় । ২০০৩ সালের ১৭ এপ্রিল সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর পুরাকীর্তি আইন অনুযায়ী মমিন মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করে। ২০০৮ সালে খুলনা জাদুঘরের
তত্ত্বাবধানে মমিন মসজিদ প্রথমবারের মতো সংস্কার করা হয়। এ মসজিদটিকে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র কাঠের মসজিদ হিসেবে পরিচিত।






















