০১:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুড়িগ্রামে অটোরিকশা পেয়ে এখন স্বাবলম্বী ভিক্ষুক বামন দম্পতি

  • সবুজ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৭:৫০:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩
  • 139
এক সময় ভিক্ষাবৃত্তি করেই জীবন চলতো বামন দম্পতি আবদার-আদুরী। তবে এতে লেগেই থাকতো অভাব-অনটন। অসুস্থতার কারণে নিয়মিতভাবে সেটিও করতে পারতেন না তারা।
কিন্তু তাদের সেই কস্টের জীবন বদলে দিয়েছে একটি অটোরিকশা। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার প্রশাসনের উদ্যোগে সমাজসেবা অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের সহায়তায় দেয়া ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ভাড়া দিয়ে এখন স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে তাদের সংসারে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের শিবরাম গ্রামের বাসিন্দা আবদার আলী ও অরেচা বেগম (আদুরী) পরের জায়গায় বাস করেন। জীবিকার অবলম্বন ছিল ভিক্ষাবৃত্তি। বিষয়টি জানতে পেরে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার রাসেদুল হাসান তাদের পুণর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এগিয়ে আসে জেলা প্রশাসনও। সবার সম্মিলিত চেষ্টায় একমাস আগে ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা ব্যয়ে এই দম্পতিকে কিনে দেয়া হয় একটি অটোরিকশা। এখন সেটির ভাড়া থেকে অর্জিত অর্থে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে তাদের সংসারে।
আবদার আলী বলেন, বয়স বেড়ে যাওয়ায় শরীরে নানা ধরণের রোগ দেখা দিয়েছে। ঠিকমত হাঁটতে পারেননা। ভিক্ষা করাও কঠিন হয়ে গিয়েছিল। অটোরিকশা পেয়ে দারুণ উপকার হয়েছে। এখন দু’মুঠো ভাত খাওয়ার জন্য আর চিন্তা করতে হয় না।
আদুরী বলেন, ‘আগোততো ভিক্ষা করছিলাম। এলা গাড়ি পাচি, এটা দিয়া চলছি।’
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  (ইউএনও) রাসেদুল হাসান জানান, বামন দম্পতি দু’জনই বয়স্ক, কাজ করতে পারেন না। ভিক্ষাবৃত্তিতে ছিল। শারীরিক কারণে সেটাও করতে পারছিলনা। উপজেলা প্রশাসন জেলা প্রশাসন ও অন্যদের সহযোগিতায় অটোরিকশা কিনে দেয়া হয়েছে। যার আয়ে তাদের সংসার ভালোই চলছে।’
আবদার হোসেনের উচ্চতা সাড়ে ৩ ফুট, বয়স (৭২)। আর আনুমানিক সোয়া ৩ ফুট উচ্চতার আদুরীর বয়স ৬৫ বছর। তারা দুু’জন বাস করেন সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের শিবরাম গ্রামে। ১৩ বছর আগে ঘর বাঁধেন এই বামন দম্পতি। তারপর থেকে সুখ-দু:খ ভাগাভাগি করে চলছেন একসাথে। বাস করার মতো ছিলনা একটি ঘর। এ অবস্থায় কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)  আমিন আল পারভেজের উদ্যোগে প্রায় ১ লাখ টাকা ব্যয়ে সাবেক মনিব কাজী মিজানুর রহমানের জায়গায় তাদের সম্মতিতে দু’কক্ষ বিশিষ্ট একটি দো’চালা টিনের ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়।
আবদার হোসেন বলেন, ৩৩ বছর আগে তিনি ভাগ্যের সন্ধানে সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়ন থেকে চলে আসেন কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের কাজী মিজানুর রহমানের বাড়িতে। সহায় সম্পদ না থাকায় থেকে গেছেন এখানে। তাদের বাড়িতেই কৃষিকাজে নিয়োজিত ছিলেন দীর্ঘ সময়। একটি বিয়েও করেছিলেন তিনি। স্ত্রীর নাম রেজিয়া। ২ বছর ঘর করার পর ঘটে বিচ্ছেদ। ৩ বছর পর আবার বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম আরজিনা। ২ মাস ঘর করার পর সেও তালাক দিয়ে চলে যায়। খর্বকায় মানুষ বলে স্ত্রী টেকেনা- বলে মন্তব্য করে গ্রামের মানুষ। শেষ পর্যন্ত ২০১০ সালে রংপুরের পীরগঞ্জের মধুপুর গ্রামের বামন কন্যা অরেচাকে তৃতীয় স্ত্রী রূপে গ্রহণ করেন আবদার।
জনপ্রিয় সংবাদ

কুড়িগ্রামে অটোরিকশা পেয়ে এখন স্বাবলম্বী ভিক্ষুক বামন দম্পতি

আপডেট সময় : ০৭:৫০:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩
এক সময় ভিক্ষাবৃত্তি করেই জীবন চলতো বামন দম্পতি আবদার-আদুরী। তবে এতে লেগেই থাকতো অভাব-অনটন। অসুস্থতার কারণে নিয়মিতভাবে সেটিও করতে পারতেন না তারা।
কিন্তু তাদের সেই কস্টের জীবন বদলে দিয়েছে একটি অটোরিকশা। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার প্রশাসনের উদ্যোগে সমাজসেবা অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের সহায়তায় দেয়া ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ভাড়া দিয়ে এখন স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে তাদের সংসারে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের শিবরাম গ্রামের বাসিন্দা আবদার আলী ও অরেচা বেগম (আদুরী) পরের জায়গায় বাস করেন। জীবিকার অবলম্বন ছিল ভিক্ষাবৃত্তি। বিষয়টি জানতে পেরে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার রাসেদুল হাসান তাদের পুণর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এগিয়ে আসে জেলা প্রশাসনও। সবার সম্মিলিত চেষ্টায় একমাস আগে ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা ব্যয়ে এই দম্পতিকে কিনে দেয়া হয় একটি অটোরিকশা। এখন সেটির ভাড়া থেকে অর্জিত অর্থে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে তাদের সংসারে।
আবদার আলী বলেন, বয়স বেড়ে যাওয়ায় শরীরে নানা ধরণের রোগ দেখা দিয়েছে। ঠিকমত হাঁটতে পারেননা। ভিক্ষা করাও কঠিন হয়ে গিয়েছিল। অটোরিকশা পেয়ে দারুণ উপকার হয়েছে। এখন দু’মুঠো ভাত খাওয়ার জন্য আর চিন্তা করতে হয় না।
আদুরী বলেন, ‘আগোততো ভিক্ষা করছিলাম। এলা গাড়ি পাচি, এটা দিয়া চলছি।’
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  (ইউএনও) রাসেদুল হাসান জানান, বামন দম্পতি দু’জনই বয়স্ক, কাজ করতে পারেন না। ভিক্ষাবৃত্তিতে ছিল। শারীরিক কারণে সেটাও করতে পারছিলনা। উপজেলা প্রশাসন জেলা প্রশাসন ও অন্যদের সহযোগিতায় অটোরিকশা কিনে দেয়া হয়েছে। যার আয়ে তাদের সংসার ভালোই চলছে।’
আবদার হোসেনের উচ্চতা সাড়ে ৩ ফুট, বয়স (৭২)। আর আনুমানিক সোয়া ৩ ফুট উচ্চতার আদুরীর বয়স ৬৫ বছর। তারা দুু’জন বাস করেন সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের শিবরাম গ্রামে। ১৩ বছর আগে ঘর বাঁধেন এই বামন দম্পতি। তারপর থেকে সুখ-দু:খ ভাগাভাগি করে চলছেন একসাথে। বাস করার মতো ছিলনা একটি ঘর। এ অবস্থায় কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)  আমিন আল পারভেজের উদ্যোগে প্রায় ১ লাখ টাকা ব্যয়ে সাবেক মনিব কাজী মিজানুর রহমানের জায়গায় তাদের সম্মতিতে দু’কক্ষ বিশিষ্ট একটি দো’চালা টিনের ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়।
আবদার হোসেন বলেন, ৩৩ বছর আগে তিনি ভাগ্যের সন্ধানে সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়ন থেকে চলে আসেন কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের কাজী মিজানুর রহমানের বাড়িতে। সহায় সম্পদ না থাকায় থেকে গেছেন এখানে। তাদের বাড়িতেই কৃষিকাজে নিয়োজিত ছিলেন দীর্ঘ সময়। একটি বিয়েও করেছিলেন তিনি। স্ত্রীর নাম রেজিয়া। ২ বছর ঘর করার পর ঘটে বিচ্ছেদ। ৩ বছর পর আবার বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম আরজিনা। ২ মাস ঘর করার পর সেও তালাক দিয়ে চলে যায়। খর্বকায় মানুষ বলে স্ত্রী টেকেনা- বলে মন্তব্য করে গ্রামের মানুষ। শেষ পর্যন্ত ২০১০ সালে রংপুরের পীরগঞ্জের মধুপুর গ্রামের বামন কন্যা অরেচাকে তৃতীয় স্ত্রী রূপে গ্রহণ করেন আবদার।