মামুন হোসেন ভাণ্ডারিয়া (পিরোজপুর): সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, পিরোজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়া- কাঠাঁলিয়া আসনের সাবেক এমপি ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের ইন্তেকালে ভাণ্ডারিয়া উপজেলায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এমনকি হাজার হাজার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক মুহুর্তের মধ্যে তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়েছে এবং সবাই তার জন্য দোয়া করছেন। তিনি ভাণ্ডারিয়ার কৃতি সন্তান হওয়ায় এ উপজেলাবাসীর মাঝে শোক বিরাজ করছে। সদ্য প্রায়ত ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা যান। রাজধানীর বারিধারা জামে মসজিদে তার প্রথম জানাজা
অনুষ্ঠিত হবে। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বাদ জোহর দ্বিতীয় জানাজা, এরপর আজিমপুর কবরস্থানে মা-বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে বলে জানা গেছে।
তিনি নির্ভীক সাংবাদিক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার জ্যেষ্ঠপুত্র ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ১৯৪০ সালের জানুয়ারি মাসে পিরোজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়া উপজেলার পূর্ব ভাণ্ডারিয়া মিয়া বাড়ী জন্মগ্রহণ করেন। তার আপন ছোট ভাই সাবেক মন্ত্রী, জাতিয় পার্টি জেপির চেয়ারম্যান,পিরোজপুর-২ (ভাণ্ডারিয়া-কাউখালী-নেছারাবাদ) আসনের বর্তমান সাংসদ আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। ১৯৬৯ সালে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বাবার আকস্মিক মৃত্যুর পর দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদনার
গুরুদায়িত্ব তিনি পালন করেন। পরে ১৯৭৩ সালে ইত্তেফাকের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি হন। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করে ব্যারিস্টারি পড়তে লন্ডন যান এবং মিডল টেম্পল-ইন এ ভর্তি হন। সেখান থেকে ফিরে এসে ১৯৬৫ সালে তিনি হাইকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন। যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের লন্ডন প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি কমনওয়েলথ প্রেস ইনস্টিটিউটেরও একজন সদস্য ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া-কাঁঠালিয়া আসন থেকে নির্বাচিত হন।
সংসদে তিনি নিবর্তনমূলক যেকোনো আইন পাসের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
ব্যক্তি স্বাধীনতার পরিপন্থী রাষ্ট্রপতির ৫০ নম্বর আদেশ জারির সময় তিনি বিরোধিতা করেন। পরবর্তীকালে সরকার আদেশটি রদ করে। ১৯৭৫ সালে সংবিধানের মৌলিক চরিত্র পরিবর্তন করে বাকশাল শাসন প্রবর্তন হলে প্রতিবাদ স্বরূপ সংসদ সদস্য পদ থেকে তিনি ইস্তফা দেন। রাজনীতি ও অর্থনৈতিক ব্যাপারে উদার ও স্বাধীন মতামত রাখার জন্য তিনি ‘নিউ নেশন’ নামে একটি ইংরেজি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করেন, যা পরবর্তীকালে দৈনিক পত্রিকায় রূপান্তরিত হয়। ব্যারিস্টার
মইনুল হোসেনের লেখা একাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ‘বাংলাদেশ : বাস্তবতা ও প্রত্যাশা’, ‘গণতন্ত্রের সাফল্য চাহিয়াছি’, ‘ঘুরে দাঁড়াতে হবে’, ‘আমার জীবন আমাদের স্বাধীনতা’, ‘বাংলাদেশ : কি চেয়েছি, কি পেয়েছি’, ‘অবিস্মরণীয় মানিক মিয়া’ প্রভৃতি।






















