নিয়োগ বানিজ্য, কলেজের এমপিও শিক্ষকের বেনবেইজ পরিবর্তন, কলেজের জমি ক্রয়, মাটি ভরাট ও শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি নয়-ছয় করে কোটিপতি বনে গেছেন শেরপুর নিজাম উদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষ মো. সাইদুল ইসলাম সাইদ। ইতিমধ্যে তিনি এসব অনিয়মের মাধ্যমে কোটি টাকার মালিক বনে গিয়ে শহরের করেছন বাড়ি এবং বেশ কিছু জমিও ক্রয় করেছেন। সম্প্রতি অধ্যক্ষের এসব নানা অপকর্ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন স্থানীয় মো. হাসান নামের ব্যক্তি। কিন্তু ওই সব অভিযোগ বিষয়ে আজও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ওই লিখিত অভিযোগে জানাগেছে, ২০১১ সালে শেরপুর সদর উপজেলার পাকুরিয়া ইউনিয়নের বটতলী বাজার সংলগ্ন এলাকায় কলেজটি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর ২০১৮ সালে তিনি ওই কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পায়। এরপর থকেই তিনি কলেজের নিয়োগ বানিজ্য, শিক্ষকদের বেনবেইজ পরিবর্তন, কলেজের নামে জমি ক্রয় ও মাটি ভরাটের কাজ করে, উপবৃত্তির টাকা নিজস্ব লোকের মোবাইল নাম্বার দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করে আসছে। কলেজের এমপিও হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন শিক্ষক-কর্মচারীর কাছ থেকে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছন ওই প্রভাবশালী অধ্যক্ষ। জেলার প্রভাবশালী ও শীর্ষ ব্যাক্তি তার আত্মীয় হওয়ায় তিনি এসব কাজ দূর্দান্ত প্রতাপের সাথে করে যাচ্ছেন বলে সূত্র জানায়। তার বিরুদ্ধে কলেজের কোন শিক্ষক-কর্মচারী মুখ খুললেই তার উপর নেমে আসে নানা হুমকি-ধমকি। এমনকি চাকরি থেকে বাদ দেওয়ার হুমকি। ফলে অনেক শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করলেও কেউ মুখ খুলছেন না। অভিযোগ রয়েছে, ২০১১ সালে কলেজ প্রতিষ্ঠা এবং তার অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান ২০১৮ সালে। এই ৭ বছরে অধ্যক্ষ ছিলো আরো ৭ জন। অথচ তিনি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ দেখিয়ে নানা অনিয়ম করে যাচ্ছে। এছাড়া তিনি কলেজের বিভিন্ন শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা উত্তোলনের জন্য অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবকের মোবাইল নাম্বারের স্থলে একই কলেজের একাধিক শিক্ষকের মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে সেই উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে কলেজের উপকারভোগী উপবৃত্তির শিক্ষার্থী জুবায়ের যাহার রেজিস্ট্রেশন আইডি নং (১৭১০২৬৩৪৩৩) এবং বিকাশ নাম্বার (০১৭৪৫০১৮৭৪) দেয়া হয়েছে কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক হুমায়ুন কবির এর নাম্বার। একই কলেজের শিক্ষার্থী আফরিনা আক্তার রেজিস্ট্রেশন আইডি নং (১৫১০১৮৭৩৭৯) এবং বিকাশ মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়েছে (০১৯২১৫৫৭৩২৬) কলেজের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মনিরুজ্জামান এর। ওই মনিরুজ্জামানের ব্যবহৃত আরেকটি বিকাশ মোবাইল নাম্বার (০১৯৮৪১৩৫৯৯৬) ব্যবহার করা হয়েছে কলেজের শাহীন আলম নামের এক শিক্ষার্থীর। যার রেজিস্ট্রেশন আইডি নাম্বার (১৫১০১৯০১১)। এরকম অসংখ্য শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা উত্তোলনের জন্য কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীদের মোবাইল নাম্বার দেয়া হইছে এবং ওইসব টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ সাইদুল ইসলাম সাঈদ। ওই লিখিত অভিযোগে আরো জানা গেছে, অভিযুক্ত অধ্যক্ষের নামে ও বেনামে বিভিন্ন স্থানে জমি ক্রয় করেছেন এরমধ্যে কলেজের কাছে চৈতন্যখেলা বাজার এলাকায় বিআরএস ৩৪৮ নং দাগে ৫০ শতক বিআরএস ১৭৯ নং দাগে আড়াইশত বিআরএস ১৮৯ নং দাগের ৬ শত, বিআরএস ২৪৪০ নং দাগ ও খতিয়ান ১০০৫ এর ৬ শতক, বিআরএস ২৪৪০ নং দাগ ও খতিয়ান ১০৫ নং এর ৫ শতক জমির খোঁজ পাওয়া গেছে। এছাড়া তার আত্মীয়-স্বজনদের নামে অসংখ্য জমি রয়েছে বলে অভিযোগ জানানো হয়। শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকার তোলার জন্য বিভিন্ন শিক্ষক ও কর্মচারীর মোবাইল নাম্বার দেয়ার বিষয়ে ওই কলেজের শিক্ষক হুমায়ুন কবির জানান, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা উত্তোলনের জন্য আমার নাম্বার দেয়া হয়েছে তা আমার জানা নেই। তবে যে ছাত্রের বিকাশ নাম্বারে আমার নাম্বার দেয়া হয়েছে তাকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন যদি এমন হয় তবে নাম্বার পরিবর্তন করে দিবো। আমার নাম্বারে আজ পর্যন্ত কোন বিকাশের টাকা আসেনি। একই বিষয়ে কলেজের অফিস সহকারী মনিরুজ্জামান জানায়, যে মেয়ের নামে এই নাম্বার দেওয়া হয়েছে তাকেই জিজ্ঞেস করেন সে টাকা পাইছে কিনা। এছাড়া এ বিষয়ে তিনি আর কোন কিছু বলতে রাজি হয়নি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম সাঈদ জানায়, আমি কোন দুর্নীতি বা অনিয়ম করিনি। এছাড়া তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ দাবি করেই বলেন, প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষের বিষয়ে ডিসি অফিস এবং জেলা শিক্ষা অফিস পরিদর্শন করে দেখেছেন কিভাবে প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হয়েছি। এসব হয়েছে এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী। তিনি এ প্রতিবেদককে অফিসে এসে কাগজপত্র দেখার জন্য এবং চা খাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।


























