চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বটতলী ইউনিয়নের বৈরাইয়া গ্রামে রাত-দিন চলছে তিন ফসলি জমির মাটি কাটা। শীতকাল শুরু হলেই ইটভাটার মালিকরা মাটি কাটার এই মহোৎসবে মেতে ওঠে। প্রশাসনকে ঘুমে রেখে কৃষিজমির এসব মাটি যাচ্ছে এমবিএম ব্রিক ফিল্ড এবং কে বি ডব্লিউ ব্রিক ফিল্ড নামের দুটি ইটভাটায়।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গভীর রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন বটতলী পরিবিল ও দক্ষিণের বিল থেকে ৯টি এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে ট্রাকভর্তি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এমবিএম এবং কে বি ডব্লিউ ব্রিক ফিল্ডে। এসব মাটি পরিবহনের কাজে নিয়োজিত রয়েছে অন্তত ১০০ ট্রাক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুটি ইটভাটার মধ্যে এমবিএম ব্রিক ফিল্ডের মালিক শামসুল আলম। স্থানীয় এই প্রভাবশালী ব্যক্তির ইটভাটার অনুমোদন এখনও হয়নি। সেটি রয়েছে পরিবেশ অধিদফতরের কাঠগড়ায়। প্রবল ক্ষমতাশালী এই ব্যক্তি পরিবেশ আইনের কোনো তোয়াক্কাই করে না। শীত এলেই শুরু করে দেয় মাটি কাটার মহোৎসব। অভিযুক্ত অপর ইটভাটা কে বি ডব্লিউ ব্রিক ফিল্ডের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা সাংবাদিক ও প্রশাসনকে সিস্টেম করে রেখেছি। মাটি না কাটলে ইট কীভাবে বানাব? এর বাইরে আর কিছু বলতে পারব না।
সরেজমিন দেখা যায়, মাটি কাটার ফলে কোথাও কোথাও ফসলি জমি পুকুর সমান গভীর হয়ে আছে। ট্রাক আসা-যাওয়ার ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে গ্রামীণ বিভিন্ন সড়ক। এই দুই ব্রিক ফিল্ডের কারণে সরকারের কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাস্তা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এসব রাস্তায় চলাচলের সময় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, যেসব জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে সেসব জমি তো বটেই তার পাশের জমিগুলোতেও আগামী কয়েক বছর ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হবে না। আমরা এই দুই ইটভাটা মালিকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি। প্রশাসনও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইশতিয়াক ইমন সবুজ বাংলাকে বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। খবর নিয়ে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তিন ফসলি জমির মাটি কাটার বিষয়ে জানার জন্য ব্রিক ফিল্ড কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, এমবিএম ব্রিক ফিল্ডের মালিক শামসুল আলম ৪ নং বটতলী ইউনিয়নের হলদিয়া পাড়া এলাকার বাসিন্দা। ইটভাটা করলেও সে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেয়নি। তার ভাটার কারণে শুধু পরিবেশের ক্ষতিই হচ্ছে না, ধ্বংস হচ্ছে স্থানীয় পুরো কৃষি ব্যবস্থা। গত ৫ বছরে নির্বিচারে মাটি কাটায় অনেক কৃষিজমি এখন খাল-বিল-পুকুরে পরিণত হয়েছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে অবৈধ এই ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করেন তৎকালীন চট্টগ্রাম জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুরাইয়া ইয়াছমিন। সে সময় পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেওয়ার জন্য ৩ মাসের সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।




















