০৫:১৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বানারীপাড়ার চম্পা যৌতুকের বলি

বরিশালের বানারীপাড়ার সদর ইউনিয়নের  ব্রাক্ষ্মণকাঠি গ্রামে ভালোবাসার সংসার ভেঙে যৌতুকের বলি হলো চম্পা(২৩) নামের এক গৃহবধু। স্বামী সুমনের  যৌতুকের দাবিতে শশুরবাড়ি থেকে অর্থ না পাওয়ায় গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে।  তথ্য সূত্রে, ঘটনার পর থেকে তার স্বামী সুমন বেপারী ও দুই বছরের মেয়ে তানহাকে নিয়ে নিরুদ্দেশ রয়েছে।
গত রোববার (১৪ই জানুয়ারি)  রাত ১১টায় বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চম্পার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার মৃত্যুরহস্য জানতে আজ সোমবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। ময়না তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পরে ওই দিন বাদ আসর জানাজা শেষে উপজেলার মহিষাপোতা গ্রামের নিজ বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
এ ব্যপারে  নিহত চম্পার মা রেবা বেগম বানারীপাড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। চম্পার বাবা-মার অভিযোগ, সুমন বেপারী তার ব্রাক্ষ্মণকাঠি গ্রামে সম্প্রতি ৬ শতক সম্পত্তি ক্রয় করেন। ওই সম্পত্তি ক্রয় করতে গিয়ে সে ঋনগ্রস্থ হয়ে পড়ায় তা পরিশোধের জন্য স্ত্রী চম্পাকে বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে বলেন। দরিদ্র বাবা-মা গ্রাম্য সমিতি থেকে ঋন নিয়ে জামাতাকে ১৫ হাজার টাকা দেন। এতে সুমন সন্তষ্ট না হয়ে স্ত্রীর কাছে আরও টাকা দাবি করেন। এ নিয়ে তাদের সংসারে কলহ সৃষ্টি হয়। সুমন টাকার দাবিতে গালাগালসহ স্ত্রীকে নানাভাবে মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন করে। ফলে গত ৮/৯দিন পূর্বে চম্পা শিশু কন্যাকে নিয়ে বানারীপাড়া পৌর শহরের এক নম্বর ওয়ার্ডে নূর আলী মহাজনের মাঠে  পিতা ধান চালের ব্যবসায়ী আনোয়ার মল্লিকের বাড়িতে এসে ওঠেন।
ঘটনার দিন ১৪ জানুয়ারি রবিবার সন্ধ্যায় সুমন শশুর বাড়ি থেকে স্ত্রীকে নিয়ে যেতে চাইলে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এসময় সুমন স্ত্রী চম্পাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও মারধর করতে তেড়ে গেলে শশুর-শাশুড়ি তাকে থামান। পরে সুমন তার বাড়ি ফিরে যান। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে চম্পা তার দুই বছরের শিশু কন্যা তানহাকে নিয়ে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ব্রাক্ষ্মণকাঠি গ্রামে স্বামীর বাড়ি ফিরে যান। সেখানে যাওয়ার পরে তাদের মধ্যে পুনরায় ঝগড়াঝাটি হয়। ওই দিন রাত ১০টার দিকে চম্পাকে অচেতন অবস্থায় তার শাশুড়িসহ প্রতিবেশীরা বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। চম্পার শশুর তৈয়ব আলী বেপারী ও শাশুড়ি আলেয়া বেগমের দাবি ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে চম্পা আত্মহত্যা করেছে।
অপরদিকে চম্পার পরিবারের দাবি তাকে মারধর করে হত্যার পরে ঘরের আড়ার সঙ্গে মরদেহ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে প্রচারনা চালানো হচ্ছে। এদিকে আদুরে কন্যা চম্পাকে হারিয়ে তার পরিবারে বইছে শোকের ছায়া। বাবা-মাসহ স্বজনদের আহাজারিতে হাসপাতালের আঙ্গিনা ও এলাকার পরিবেশে শোকে বিচলিত হয়ে ওঠে।
এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাইনুল ইসলাম সবুজ বাংলাকে বলেন,চম্পার মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মামলা নেওয়া হয়েছে । ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জনপ্রিয় সংবাদ

সোনারগাঁয়ে অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করায় গুড়িয়ে দেয়া হয় দু’টি প্রতিষ্ঠান, একটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

বানারীপাড়ার চম্পা যৌতুকের বলি

আপডেট সময় : ১০:২৫:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৪
বরিশালের বানারীপাড়ার সদর ইউনিয়নের  ব্রাক্ষ্মণকাঠি গ্রামে ভালোবাসার সংসার ভেঙে যৌতুকের বলি হলো চম্পা(২৩) নামের এক গৃহবধু। স্বামী সুমনের  যৌতুকের দাবিতে শশুরবাড়ি থেকে অর্থ না পাওয়ায় গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে।  তথ্য সূত্রে, ঘটনার পর থেকে তার স্বামী সুমন বেপারী ও দুই বছরের মেয়ে তানহাকে নিয়ে নিরুদ্দেশ রয়েছে।
গত রোববার (১৪ই জানুয়ারি)  রাত ১১টায় বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চম্পার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার মৃত্যুরহস্য জানতে আজ সোমবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। ময়না তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পরে ওই দিন বাদ আসর জানাজা শেষে উপজেলার মহিষাপোতা গ্রামের নিজ বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
এ ব্যপারে  নিহত চম্পার মা রেবা বেগম বানারীপাড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। চম্পার বাবা-মার অভিযোগ, সুমন বেপারী তার ব্রাক্ষ্মণকাঠি গ্রামে সম্প্রতি ৬ শতক সম্পত্তি ক্রয় করেন। ওই সম্পত্তি ক্রয় করতে গিয়ে সে ঋনগ্রস্থ হয়ে পড়ায় তা পরিশোধের জন্য স্ত্রী চম্পাকে বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে বলেন। দরিদ্র বাবা-মা গ্রাম্য সমিতি থেকে ঋন নিয়ে জামাতাকে ১৫ হাজার টাকা দেন। এতে সুমন সন্তষ্ট না হয়ে স্ত্রীর কাছে আরও টাকা দাবি করেন। এ নিয়ে তাদের সংসারে কলহ সৃষ্টি হয়। সুমন টাকার দাবিতে গালাগালসহ স্ত্রীকে নানাভাবে মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন করে। ফলে গত ৮/৯দিন পূর্বে চম্পা শিশু কন্যাকে নিয়ে বানারীপাড়া পৌর শহরের এক নম্বর ওয়ার্ডে নূর আলী মহাজনের মাঠে  পিতা ধান চালের ব্যবসায়ী আনোয়ার মল্লিকের বাড়িতে এসে ওঠেন।
ঘটনার দিন ১৪ জানুয়ারি রবিবার সন্ধ্যায় সুমন শশুর বাড়ি থেকে স্ত্রীকে নিয়ে যেতে চাইলে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এসময় সুমন স্ত্রী চম্পাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও মারধর করতে তেড়ে গেলে শশুর-শাশুড়ি তাকে থামান। পরে সুমন তার বাড়ি ফিরে যান। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে চম্পা তার দুই বছরের শিশু কন্যা তানহাকে নিয়ে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ব্রাক্ষ্মণকাঠি গ্রামে স্বামীর বাড়ি ফিরে যান। সেখানে যাওয়ার পরে তাদের মধ্যে পুনরায় ঝগড়াঝাটি হয়। ওই দিন রাত ১০টার দিকে চম্পাকে অচেতন অবস্থায় তার শাশুড়িসহ প্রতিবেশীরা বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। চম্পার শশুর তৈয়ব আলী বেপারী ও শাশুড়ি আলেয়া বেগমের দাবি ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে চম্পা আত্মহত্যা করেছে।
অপরদিকে চম্পার পরিবারের দাবি তাকে মারধর করে হত্যার পরে ঘরের আড়ার সঙ্গে মরদেহ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে প্রচারনা চালানো হচ্ছে। এদিকে আদুরে কন্যা চম্পাকে হারিয়ে তার পরিবারে বইছে শোকের ছায়া। বাবা-মাসহ স্বজনদের আহাজারিতে হাসপাতালের আঙ্গিনা ও এলাকার পরিবেশে শোকে বিচলিত হয়ে ওঠে।
এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাইনুল ইসলাম সবুজ বাংলাকে বলেন,চম্পার মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মামলা নেওয়া হয়েছে । ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।