০১:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাবনায় শেষ সময়ে পেঁয়াজের চারা রোপণে ব্যস্ত কৃষক

পাবনা জেলার অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল পেঁয়াজের চারা রোপণের শেষ সময়ে তীব্র শৈতপ্রবাহ অপেক্ষা করে চাষিরা মাঠে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। চলতি মৌসুমে পাবনা জেলায় ৪৪ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমিতে চারা পেঁয়াজ রোপণের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করেছে কৃষি বিভাগ।

আজ মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) পর্যন্ত ৪১ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চারা রোপণ করা হয়েছে। পাবনা কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, গত বছর প্রাকৃতিক কারণে পেঁয়াজের ফলন কম হওয়ায় চাষিরা ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। ফলে অনেক চাষীই পেঁয়াজ আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। তবে এবার বাজারে পেঁয়াজের চড়া দাম থাকায় আবারও পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকেছেন চাষরিা। পেঁয়াজের চারা রোপণের শেষ সময়ে তীব্র শৈতপ্রবাহ অপেক্ষা করে চাষিরা মাঠে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

কৃষি অফিস জানায়, বর্তমানে বাজারে কন্দ (মুলকাটা) পেঁয়াজে পাওয়া যাচ্ছে। এই পেঁয়াজে কৃষক লাভবান হয়েছেন। গতকাল পর্যন্ত ৬ হাজার ৮শ ৭ হেক্টর জমির পেঁয়াজ তোলা হয়েছে, বাকি আছে ১ হজার ৭৭৩ হেক্টর জমি। ফেব্রুয়ারি মাসে কন্দ পেঁয়াজ তোলা শেষ হবে। কৃষি কর্মকর্তা ইদ্রিস আলি জানান, পাবনায় এবার (২০২৩- ২৪ অর্থ বছরে) ৪৪ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমিতে চারাপেঁয়াজ রোপণের লক্ষমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ৪১ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমি। বাকী জমিতে চলতি মাসের শেষ নাগাদ আবাদ হয়ে যাবে।

তিনি আরো জানান, পাবনা জেলায় পেঁয়াজের বেশি আবাদ হয় সুজানগর, সাঁথিয়া, পাবনা সদর, ও বেড়া উপজেলায়। সুজানগর আবাদ লক্ষমাত্রা ১৭ হাজার ৭শ হেক্টর, সাঁথিয়ায় ১৭ হাজার ৪৯০ হেক্টর, বেড়ায় ১৫ হাজার ৫শ হেক্টর এবং পাবনা সদরে ১৪ হাজার ৫শ ১১ হেক্টর। আবাদকৃত চারা ঁেপয়াজ বাজারে আসবে এপ্রিলের প্রথম দিকে।

চাষিরা জানান, গত বছরে ভরা মৌসুমে পেঁয়াজের দাম ভালো ছিল না। তবে পেঁয়াজের বাজার অসময়ে চড়া হওয়ায় তারা খুশি। ফলে বৈরি আবহাওয়া ও তীব্র শীত অপেক্ষা করে এবার পেঁয়াজের চাষাবাদ করা হচ্ছে। এ বছর পেঁয়াজ চাষে বিঘা প্রতি ছয়-সাত হাজার টাকা খরচ বেড়েছে। জমি চাষ, বীজ বপন, চারা রোপণ ও পরিচর্যা, সার, কীটনাশকসহ প্রতি বিঘা পেঁয়াজ চাষে ৩২ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে প্রতি বিঘায় ৫৫ থেকে ৬৫ মণ ফলন পাওয়া যাবে বলে চাষিদের প্রত্যাশা।

পাবনার সাঁথিয়া, সুজানগর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সী ১৫ থেকে ২০ জন মিলে দলবদ্ধভাবে চারা রোপণ করছেন। একজন লোহার ছোট লাঙল দিয়ে সারি টানছেন। আরেকজন সারিতে পেঁয়াজের চারা রোপণ করছেন।

কৃষক আব্দুস সাত্তার সবুজ বাংলাকে জানান, তিনি ৪ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চারা রোপণ করছেন। বিঘাপ্রতি তাঁর খরচ পড়ছে প্রায় ৩৭ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ মণ ফলনের প্রত্যাশা করছেন তিনি।

সাঁথিয়া উপজেলার ঘুঘুদহ বিল পাড়ে কৃষক তোরাব খাঁ জানান, গেল বছর ভরা মৌসুমে লোকসানে পেঁয়াজ বিক্রি করে হতাশ হয়েছিলেন কৃষকরা। তবে শেষ সময়ে ভাল দামে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। অসময়ে ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর পেঁয়াজের আবাদে ঝুকছেন কৃষকরা। যদিও এ বছর বিঘাপ্রতি পেঁয়াজ আবাদে ৬ হাজার টাকার বেশি খরচ হচ্ছে।

এব্যাপারে পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহকারি পরিচালক ড. জামাল উদ্দিন সবুজ বাংলাকে জানান, জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত পেঁয়াজের চারা রোপণ চলবে। শেষ সময়ে পেঁয়াজের চড়া দাম থাকায় চাষিরা এ ফসল চাষে ঝুঁকেছেন। এবার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে তিনি আশা করছেন। তিনি আরো জানান, চলতি অর্থবছরে ৫শ জন কৃষককে প্রণোদনার সার-বীজ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া কৃষি বিভাগ কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করছে।

 

 

 

 

স/মিফা

জনপ্রিয় সংবাদ

পাবনায় শেষ সময়ে পেঁয়াজের চারা রোপণে ব্যস্ত কৃষক

আপডেট সময় : ০৫:১২:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৪

পাবনা জেলার অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল পেঁয়াজের চারা রোপণের শেষ সময়ে তীব্র শৈতপ্রবাহ অপেক্ষা করে চাষিরা মাঠে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। চলতি মৌসুমে পাবনা জেলায় ৪৪ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমিতে চারা পেঁয়াজ রোপণের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করেছে কৃষি বিভাগ।

আজ মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) পর্যন্ত ৪১ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চারা রোপণ করা হয়েছে। পাবনা কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, গত বছর প্রাকৃতিক কারণে পেঁয়াজের ফলন কম হওয়ায় চাষিরা ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। ফলে অনেক চাষীই পেঁয়াজ আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। তবে এবার বাজারে পেঁয়াজের চড়া দাম থাকায় আবারও পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকেছেন চাষরিা। পেঁয়াজের চারা রোপণের শেষ সময়ে তীব্র শৈতপ্রবাহ অপেক্ষা করে চাষিরা মাঠে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

কৃষি অফিস জানায়, বর্তমানে বাজারে কন্দ (মুলকাটা) পেঁয়াজে পাওয়া যাচ্ছে। এই পেঁয়াজে কৃষক লাভবান হয়েছেন। গতকাল পর্যন্ত ৬ হাজার ৮শ ৭ হেক্টর জমির পেঁয়াজ তোলা হয়েছে, বাকি আছে ১ হজার ৭৭৩ হেক্টর জমি। ফেব্রুয়ারি মাসে কন্দ পেঁয়াজ তোলা শেষ হবে। কৃষি কর্মকর্তা ইদ্রিস আলি জানান, পাবনায় এবার (২০২৩- ২৪ অর্থ বছরে) ৪৪ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমিতে চারাপেঁয়াজ রোপণের লক্ষমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ৪১ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমি। বাকী জমিতে চলতি মাসের শেষ নাগাদ আবাদ হয়ে যাবে।

তিনি আরো জানান, পাবনা জেলায় পেঁয়াজের বেশি আবাদ হয় সুজানগর, সাঁথিয়া, পাবনা সদর, ও বেড়া উপজেলায়। সুজানগর আবাদ লক্ষমাত্রা ১৭ হাজার ৭শ হেক্টর, সাঁথিয়ায় ১৭ হাজার ৪৯০ হেক্টর, বেড়ায় ১৫ হাজার ৫শ হেক্টর এবং পাবনা সদরে ১৪ হাজার ৫শ ১১ হেক্টর। আবাদকৃত চারা ঁেপয়াজ বাজারে আসবে এপ্রিলের প্রথম দিকে।

চাষিরা জানান, গত বছরে ভরা মৌসুমে পেঁয়াজের দাম ভালো ছিল না। তবে পেঁয়াজের বাজার অসময়ে চড়া হওয়ায় তারা খুশি। ফলে বৈরি আবহাওয়া ও তীব্র শীত অপেক্ষা করে এবার পেঁয়াজের চাষাবাদ করা হচ্ছে। এ বছর পেঁয়াজ চাষে বিঘা প্রতি ছয়-সাত হাজার টাকা খরচ বেড়েছে। জমি চাষ, বীজ বপন, চারা রোপণ ও পরিচর্যা, সার, কীটনাশকসহ প্রতি বিঘা পেঁয়াজ চাষে ৩২ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে প্রতি বিঘায় ৫৫ থেকে ৬৫ মণ ফলন পাওয়া যাবে বলে চাষিদের প্রত্যাশা।

পাবনার সাঁথিয়া, সুজানগর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সী ১৫ থেকে ২০ জন মিলে দলবদ্ধভাবে চারা রোপণ করছেন। একজন লোহার ছোট লাঙল দিয়ে সারি টানছেন। আরেকজন সারিতে পেঁয়াজের চারা রোপণ করছেন।

কৃষক আব্দুস সাত্তার সবুজ বাংলাকে জানান, তিনি ৪ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চারা রোপণ করছেন। বিঘাপ্রতি তাঁর খরচ পড়ছে প্রায় ৩৭ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ মণ ফলনের প্রত্যাশা করছেন তিনি।

সাঁথিয়া উপজেলার ঘুঘুদহ বিল পাড়ে কৃষক তোরাব খাঁ জানান, গেল বছর ভরা মৌসুমে লোকসানে পেঁয়াজ বিক্রি করে হতাশ হয়েছিলেন কৃষকরা। তবে শেষ সময়ে ভাল দামে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। অসময়ে ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর পেঁয়াজের আবাদে ঝুকছেন কৃষকরা। যদিও এ বছর বিঘাপ্রতি পেঁয়াজ আবাদে ৬ হাজার টাকার বেশি খরচ হচ্ছে।

এব্যাপারে পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহকারি পরিচালক ড. জামাল উদ্দিন সবুজ বাংলাকে জানান, জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত পেঁয়াজের চারা রোপণ চলবে। শেষ সময়ে পেঁয়াজের চড়া দাম থাকায় চাষিরা এ ফসল চাষে ঝুঁকেছেন। এবার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে তিনি আশা করছেন। তিনি আরো জানান, চলতি অর্থবছরে ৫শ জন কৃষককে প্রণোদনার সার-বীজ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া কৃষি বিভাগ কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করছে।

 

 

 

 

স/মিফা