০৭:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি : সহজ ডটকমের কর্মকর্তাসহ গ্রেপ্তার ৯

 

 

ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির অভিযোগে টিকিট বিক্রির দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানি সহজ ডটকমের অফিস সহকারীসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তাদের গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর কমলাপুর ও সবুজবাগ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল শুক্রবার র‌্যাব-৩ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

র‌্যাব জানায়, কারসাজি করে দেশব্যাপী ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্রের অন্যতম হোতা ও বাংলাদেশ রেলওয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান সহজ ডটকমের অফিস সহকারী মিজান ঢালী ও অপারেটর এবং দুজনসহ টিকিট কালোবাজারি চক্রের ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে অবৈধভাবে সংগ্রহ করা ট্রেনের টিকিট উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেনÑ মিজান ঢালী, মো. সোহেল ঢালী, মো. সুমন, মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. শাহজালাল হোসেন, মো. রাসেল, মো. জয়নাল আবেদীন, মো. সবুর হাওলাদার ও নিউটন বিশ্বাস।
র‌্যাব জানায়, দেশব্যাপী ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি ঢালী সিন্ডিকেটের হোতা মিজানের নেতৃত্বে চক্রটি সংঘবদ্ধভাবে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রায় সব ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে আসছিল। মিজান দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়ের টিকিট বুকিংয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। ২০০৩ সালে সে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান ডেফোডিল-এর কমলাপুর রেলস্টেশন শাখায় পিয়ন হিসেবে যোগ দেয়।

পরবর্তীতে বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিট বুকিংয়ে সিএনএসডটবিডি’র সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলে, অভিজ্ঞ কর্মী হিসেবে তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল রাখা হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালে রেলওয়ে টিকিটের চুক্তি সহজ ডটকমকে দেওয়া হলে সেখানেও মিজানের চাকরি বহাল থাকে। দীর্ঘদিন টিকিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যুক্ত থাকায় দেশব্যাপী বিভিন্ন স্টেশনের সহজ ডটকমের অফিসে এবং বড় বড় রেলওয়ে স্টেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে তার পরিচিতি বৃদ্ধি পায়। পরিচয়ের সূত্র ধরে সে বিভিন্ন স্টেশনে থাকা সহজ ডটকমের সদস্য, টিকিট কাউন্টার ও অন্যান্য কালোবাজারি চক্রের সদস্যদের সমন্বয়ে বিভিন্ন কারসাজির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টিকিট বিক্রি করত। সহজ ডটকমের কমলাপুর রেলস্টেশন সার্ভার রুমের সার্ভার অপারেটর গ্রেপ্তারকৃত নিউটন বিশ্বাস, স্টেশন রিপ্রেজেন্টেটিভ সবুর হাওলাদারসহ এবং পলাতক আব্দুল মোত্তালিব, আশিকুর রহমানসহ আরো কয়েকজন উক্ত টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত।

র‌্যাব আরও জানায়, ঈদ, পূজা, সাপ্তাহিক ছুটিসহ বিশেষ ছুটির দিনকে উপলক্ষ করে গ্রেপ্তারকৃত মিজান ও সোহেল বিভিন্ন কারসাজির মাধ্যমে সাধারণ সময়ের তুলনায় অধিক সংখ্যক টিকিট সংগ্রহ করত। মিজান ও সোহেল প্রতি বছর ঈদ মৌসুমে দেশব্যাপী বিভিন্ন স্টেশনের সহজ ডটকমের কর্মচারী ও টিকিট কাউন্টারম্যানদের মাধ্যমে আনুমানিক প্রায় ২-৩ হাজার রেলওয়ের টিকিট কালোবাজারির মাধ্যমে বিক্রি করত। তারা আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরে আগের চাইতেও অধিক সংখ্যক টিকিট সংগ্রহের জন্য পরিকল্পনা করছিল বলে জানা যায়।

র‌্যাব জানায়, টিকিট বিক্রয়ের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে ৫০ ভাগ সহজ ডটকম ও রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট কাউন্টারম্যানরা পেতো এবং বাকি ৫০ ভাগ সিন্ডিকেটের হোতা মিজান, সোহেলসহ বাকি বিক্রয়কারী সহযোগীদের মাঝে ভাগাভাগি হতো। এই অর্থ কখনো তারা নগদ হাতে-হাতে বুঝিয়ে দিত আবার কখনো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করতো বলে জানা গেছে।

র‌্যাব জানায়, সিন্ডিকেটের প্রত্যেক সদস্য অবৈধভাবে ট্রেনের টিকিট বিক্রি করে প্রতি মাসে ২০/২৫ হাজার টাকা উপার্জন করত। এভাবেই পরস্পরের যোগসাজশে চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে দেশব্যাপী ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে আসছিল।

জনপ্রিয় সংবাদ

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় রুমিন ফারহানাসহ ৯ নেতা বহিষ্কার

ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি : সহজ ডটকমের কর্মকর্তাসহ গ্রেপ্তার ৯

আপডেট সময় : ০৭:১০:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ মার্চ ২০২৪

 

 

ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির অভিযোগে টিকিট বিক্রির দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানি সহজ ডটকমের অফিস সহকারীসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তাদের গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর কমলাপুর ও সবুজবাগ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল শুক্রবার র‌্যাব-৩ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

র‌্যাব জানায়, কারসাজি করে দেশব্যাপী ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্রের অন্যতম হোতা ও বাংলাদেশ রেলওয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান সহজ ডটকমের অফিস সহকারী মিজান ঢালী ও অপারেটর এবং দুজনসহ টিকিট কালোবাজারি চক্রের ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে অবৈধভাবে সংগ্রহ করা ট্রেনের টিকিট উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেনÑ মিজান ঢালী, মো. সোহেল ঢালী, মো. সুমন, মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. শাহজালাল হোসেন, মো. রাসেল, মো. জয়নাল আবেদীন, মো. সবুর হাওলাদার ও নিউটন বিশ্বাস।
র‌্যাব জানায়, দেশব্যাপী ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি ঢালী সিন্ডিকেটের হোতা মিজানের নেতৃত্বে চক্রটি সংঘবদ্ধভাবে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রায় সব ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে আসছিল। মিজান দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়ের টিকিট বুকিংয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। ২০০৩ সালে সে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান ডেফোডিল-এর কমলাপুর রেলস্টেশন শাখায় পিয়ন হিসেবে যোগ দেয়।

পরবর্তীতে বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিট বুকিংয়ে সিএনএসডটবিডি’র সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলে, অভিজ্ঞ কর্মী হিসেবে তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল রাখা হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালে রেলওয়ে টিকিটের চুক্তি সহজ ডটকমকে দেওয়া হলে সেখানেও মিজানের চাকরি বহাল থাকে। দীর্ঘদিন টিকিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যুক্ত থাকায় দেশব্যাপী বিভিন্ন স্টেশনের সহজ ডটকমের অফিসে এবং বড় বড় রেলওয়ে স্টেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে তার পরিচিতি বৃদ্ধি পায়। পরিচয়ের সূত্র ধরে সে বিভিন্ন স্টেশনে থাকা সহজ ডটকমের সদস্য, টিকিট কাউন্টার ও অন্যান্য কালোবাজারি চক্রের সদস্যদের সমন্বয়ে বিভিন্ন কারসাজির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টিকিট বিক্রি করত। সহজ ডটকমের কমলাপুর রেলস্টেশন সার্ভার রুমের সার্ভার অপারেটর গ্রেপ্তারকৃত নিউটন বিশ্বাস, স্টেশন রিপ্রেজেন্টেটিভ সবুর হাওলাদারসহ এবং পলাতক আব্দুল মোত্তালিব, আশিকুর রহমানসহ আরো কয়েকজন উক্ত টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত।

র‌্যাব আরও জানায়, ঈদ, পূজা, সাপ্তাহিক ছুটিসহ বিশেষ ছুটির দিনকে উপলক্ষ করে গ্রেপ্তারকৃত মিজান ও সোহেল বিভিন্ন কারসাজির মাধ্যমে সাধারণ সময়ের তুলনায় অধিক সংখ্যক টিকিট সংগ্রহ করত। মিজান ও সোহেল প্রতি বছর ঈদ মৌসুমে দেশব্যাপী বিভিন্ন স্টেশনের সহজ ডটকমের কর্মচারী ও টিকিট কাউন্টারম্যানদের মাধ্যমে আনুমানিক প্রায় ২-৩ হাজার রেলওয়ের টিকিট কালোবাজারির মাধ্যমে বিক্রি করত। তারা আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরে আগের চাইতেও অধিক সংখ্যক টিকিট সংগ্রহের জন্য পরিকল্পনা করছিল বলে জানা যায়।

র‌্যাব জানায়, টিকিট বিক্রয়ের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে ৫০ ভাগ সহজ ডটকম ও রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট কাউন্টারম্যানরা পেতো এবং বাকি ৫০ ভাগ সিন্ডিকেটের হোতা মিজান, সোহেলসহ বাকি বিক্রয়কারী সহযোগীদের মাঝে ভাগাভাগি হতো। এই অর্থ কখনো তারা নগদ হাতে-হাতে বুঝিয়ে দিত আবার কখনো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করতো বলে জানা গেছে।

র‌্যাব জানায়, সিন্ডিকেটের প্রত্যেক সদস্য অবৈধভাবে ট্রেনের টিকিট বিক্রি করে প্রতি মাসে ২০/২৫ হাজার টাকা উপার্জন করত। এভাবেই পরস্পরের যোগসাজশে চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে দেশব্যাপী ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে আসছিল।