❖গাজায় ত্রাণ সরবরাহে বাধা বেআইনি : জাতিসংঘ
❖গাজায় স্কুলে হাজার পাউন্ড বোমা পাওয়ার দাবি
❖ শরণার্থী শিবিরে হামলায় শিশুসহ নিহত ১২
গাজায় ইসরায়েলি হামলা থেকে মানুষ, বাড়িঘর, প্রাণী, বেসামরিক অবকাঠামোসহ কোনো কিছুই রক্ষা পায়নি। এমনকি অনেক হাসপাতাল-ক্লিনিকও ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে অথবা সেবা দেওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এসবের মধ্যেই গাজার একটি ফার্টিলিটি ক্লিনিকে ইসরায়েলি গোলার আঘাতে অন্তত চার হাজার ভ্রূণ এবং এক হাজার শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর নমুনা ধ্বংস হয়েছে। এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ভূখণ্ড গাজা উপত্যকায় ত্রাণ সরবরাহে এখনো বিধিনিষেধ বজায় রেখেছে দখলাদার ইসরায়েল। তবে এ ধরনের বিধিনিষেধ বেআইনি বলে মনে করে জাতিসংঘ।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ডিসেম্বরে ইসরায়েলি হামলায় গাজার সবচেয়ে বড় ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন বা আইভিএফ সেন্টার আল-বাসমায় আঘাত হানে ইসরায়েলি বাহিনীর একটি গোলা। সেই হামলায় ক্লিনিকটিতে থাকা ভ্রূণ ও শুক্রাণু সংরক্ষণকারী পাঁচটি নাইট্রোজেন ট্যাংকের ঢাকনা ভেঙে যায়। ইসরায়েলি হামলার নাইট্রোজেন ট্যাংকের ঢাকনা ভেঙে যাওয়ার কারণে এর ভেতরের তাপমাত্রা আর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে এর ভেতরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে চার হাজারের বেশি ভ্রূণ এবং এক হাজারের বেশি শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর নমুনা ধ্বংস হয়। ইসরায়েলি এই হামলার ফলাফল সুদূরপ্রসারী। এই হামলা মূলত নিহত ফিলিস্তিনিদের অদৃশ্য সংখ্যা, যারা জীবন পাওয়ার আগেই ঝরে গেছে। একই সঙ্গে এই পাঁচ হাজার সম্ভাব্য ফিলিস্তিনি অঞ্চলটির হাজারো বন্ধ্যা দম্পতির আশার আলো হতে গিয়েও নিভে গেল।
১৯৯৭ সালে গাজায় প্রতিষ্ঠিত আল-বাসমা আইভিএফ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ও কেমব্রিজ থেকে নারী ও প্রসূতি বিদ্যার ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ নেওয়া বাহায়েলদি ঘালায়িনি বলেন, আমরা জানি যে, এই ৫০০০ হাজার জীবন, সম্ভাব্য জীবন (বন্ধ্যা দম্পতি) পিতামাতার অতীত ও ভবিষ্যতের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ফিলিস্তিনি বন্ধ্যা- যাদের শুক্রাণু-ডিম্বাণু সৃষ্টির সক্ষমতা নেই-দম্পতিদের অর্ধেকই জীবনে আর কোনো দিন সন্তান জন্মদানের জন্য গর্ভধারণ করতে পারবেন না।
এদিকে ডব্লিউসিকের ৭ ত্রাণকর্মীকে হত্যার রেশ না কাটতেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নতুন করে গাজায় ত্রাণ সরবরাহে বিধিনিষেধ জারি রাখার অভিযোগ সামনে এসেছে। গত মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তরের মুখপাত্র রাভিনা সামদাসানি বলেন, ইসরায়েল মানবিক সহায়তা প্রবেশ ও বিতরণে বেআইনি বিধিনিষেধ আরোপ করে চলেছে এবং বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। যারা মানবিক সহায়তা প্রদান করছে বা প্রদানের চেষ্টা করছে, তাদের ওপর কখনো আক্রমণ চালানো উচিত নয়। ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের দখলকৃত অংশে অবৈধ বসতি স্থাপন এবং এসব বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা বৃদ্ধির ঘটনায়ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
অন্যদিকে জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডাব্লিউএ গত মঙ্গলবার বলেছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান শহর খান ইউনিস থেকে ইসরায়েল সেনা প্রত্যাহার করার পর তারা স্কুলের ভেতরে অবিস্ফোরিত এক হাজার পাউন্ড বোমা খুঁজে পেয়েছে। গত সপ্তাহে ইসরায়েলি বাহিনীকে বিপর্যস্ত শহর থেকে প্রত্যাহার করার পর জাতিসংঘের সংস্থাগুলো খান ইউনিসে একটি ‘মূল্যায়ন মিশনের’ নেতৃত্ব দিয়েছে। ওই মিশনে ‘স্কুলের ভেতরে ও রাস্তায় এক হাজার পাউন্ড বোমাসহ অবিস্ফোরিত গোলাবারুদের উপস্থিতির কারণে নিরাপদে কাজ করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ’ পাওয়া যায়। হাজার হাজার অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষের স্বাস্থ্য, পানি, স্যানিটেশন, খাদ্যসহ জীবন রক্ষাকারী সহায়তার একটি পরিসীমা প্রয়োজন।
ইউএন মাইন অ্যাকশন সার্ভিসের প্রধান চার্লস বার্চ এই মাসের শুরুর দিকে এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমাদের অনুমান, গাজা ক্লিয়ারেন্স শুরু করতে আমাদের প্রায় ৪৫ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। গত মঙ্গলবার বিকালে গাজার মাগাজি এবং ইয়াবনা শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছে শিশুসহ অন্তত ১৮ জন। এছাড়া আরো অনেকে আহত হয়েছে। মধ্য গাজায় মাগাজি শরণার্থী শিবিরে নিহত হয়েছেন এগারো জন। ইসরায়েলের এই হামলার লক্ষ্য ছিলো ওই শিবিরের শিশুদের একটি খেলার মাঠ। অন্যদিকে বুধবার সকালে গাজার দক্ষিণে রাফাহ এলাকায় ইয়াবনা শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন সাতজন, এর মাঝে চারজনই শিশু। গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর থেকে ১০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি রাফাহ শহরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এসব হামলায় আহত ও নিহতদের আল-শিফা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আরো ৪৬ জন নিহত এবং ১১০ জন আহত হয়েছে। গত ৭ অক্টোবর থেকে অঞ্চলটিতে ৩৩ হাজার ৮৪৩ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। একই সময়ে আহত হয়েছে ৭৬ হাজার ৫৭৫ জন।
























