০৭:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বেসরকারি খাতে নাগরিকের তথ্যভাণ্ডার তুলে দেয়া সংবিধান পরিপন্থি

বেসরকারি খাতে নাগরিকের তথ্যভাণ্ডার তুলে দেওয়া সংবিধান পরিপন্থি। সংবিধানে নাগরিকের তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। অথচ বাস্তাবতা হলো সরকার নাগরিকের তথ্য সুরক্ষার বদলে বেসরকারি খাতে তথ্য তুলে দেয়া আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা সংবিধান পরিপন্থি। যারা এই ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবেন তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

আজ শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক আয়োজিত নাগরিকদের ব্যক্তিদের তথ্য বেসরকারি খাতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা।

সংবাদ সম্মেলনে সিপিবির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, বিটিআরসি এধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। নাগরিকদের তথ্যের নিরাপত্তা সংবিধানে বলা হয়েছে। যেখানে নাগরিকদের তথ্য ও সুরক্ষার জন্য আলাদা বিধি-বিধান আইনের প্রয়োজন সেখানে নতুন করে তথ্য সুরক্ষার বদলে বেসরকারি খাতে নাগরিকদের তথ্য তুলে দেয়া আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। যারা এই ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবেন তাদেরকেও আগামীতে বিচারের আওতায় আনা হবে।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর জোহা বলেন, এর মাধ্যমে নাগরিকদের অর্থের নিরাপত্তা সাথে সাথে ভূমি এবং তার সম্পদের নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি করবে। বিশ্বের কোন দেশেই নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য বেসরকারি খাতে দেয়ার নজির নেই।

সুপ্রিম কোর্টের সেনারা আইনজীবী এবং সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট ইসরাত হাসান বলেন, গত ২০ মার্চ মহামান্য হাইকোর্ট থেকে এ ব্যাপারে একটি রোল নিশি জারি করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে বেসরকারি খাতে নাগরিকের তথ্যভাণ্ডার তৈরী করা কেন অবৈধ হবে না? আদালত এবং সংবিধান অনুযায়ী এবং আন্তর্জাতিক মানব অধিকার এক অনুযায়ী নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য বেসরকারি হাতে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মূল প্রবন্ধে সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংবিধানের ৪৩ এর (খ) ধারায় নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নিশ্চিত করার কথা বলা রয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে সরকারের নেয়া শপথ অনুযায়ী সংবিধান রক্ষা করা তথা নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ও নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক। প্রযুক্তি দুনিয়ায় গ্লোবাল ভিলেজে নাগরিকের তথ্য এমনিতেই বর্তমানে হুমকির মুখে।

গত বছর থেকে আমরা লক্ষ্য করছি সরকারি সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে জন্ম নিবন্ধনকারীসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান নাগরিকের তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। যখন আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে লক্ষ্য করি পাঁচ কোটি নাগরিকের তথ্য ভেসে বেড়াচ্ছে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি নিজেরাই যখন নাগরিকের ব্যক্তিত্ব তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না সেই সময় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যভাণ্ডার গড়তে দেয়া সম্পূর্ণভাবে সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হবে বলে আমরা মনে করছি। সেই সাথে নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আমরা মনে করি। বর্তমানে প্রায় ১৯ কোটি ২৬ লক্ষ সক্রিয় সিম এর তথ্য এম এন ও অপারেটর নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে কেবলমাত্র তথ্য যাচাইয়ের জন্য ৫ টাকা চার্জ দিয়ে থাকে। কিন্তু আমরা গণমাধ্যম এবং অপারেটরদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি এই তথ্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে তাদের গুনতে তে হবে ১০ টাকা। দিনশেষে এই অতিরিক্ত অর্থ গ্রাহকদের কাছ থেকেই আদায় করা হবে। আর এর মাধ্যমে গ্রাহকদের আরেক দফা খরচ বৃদ্ধি করা হচ্ছে পাশাপাশি অ-নিরাপত্তার দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। আমরা ইতিমধ্যেই জানতে পারলাম গত ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ বিটিআরসি থেকে অপারেটর থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে ১৪ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখের মধ্যে তথ্যভাণ্ডার তৈরির অগ্রগতি জানাতে হবে। যদিও এখন পর্যন্ত অপারেটররা তথ্যভাণ্ডার তৈরি করেনি।

আমরা আরো লক্ষ করলাম যে তথ্য ভান্ডার বেসরকারি খাতে না দেয়ার জন্য সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবুবক্কর সিদ্দিক, সহসভাপতি লায়ন সাব্বির আহমেদ হাজরা, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিলা, জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজু, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সংগঠনের শেখ ফরিদ প্রমুখ।

জনপ্রিয় সংবাদ

খাগড়াছড়ি ২৯৮ নং আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেন ১০ জন প্রার্থী

বেসরকারি খাতে নাগরিকের তথ্যভাণ্ডার তুলে দেয়া সংবিধান পরিপন্থি

আপডেট সময় : ০৭:০৪:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

বেসরকারি খাতে নাগরিকের তথ্যভাণ্ডার তুলে দেওয়া সংবিধান পরিপন্থি। সংবিধানে নাগরিকের তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। অথচ বাস্তাবতা হলো সরকার নাগরিকের তথ্য সুরক্ষার বদলে বেসরকারি খাতে তথ্য তুলে দেয়া আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা সংবিধান পরিপন্থি। যারা এই ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবেন তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

আজ শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক আয়োজিত নাগরিকদের ব্যক্তিদের তথ্য বেসরকারি খাতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা।

সংবাদ সম্মেলনে সিপিবির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, বিটিআরসি এধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। নাগরিকদের তথ্যের নিরাপত্তা সংবিধানে বলা হয়েছে। যেখানে নাগরিকদের তথ্য ও সুরক্ষার জন্য আলাদা বিধি-বিধান আইনের প্রয়োজন সেখানে নতুন করে তথ্য সুরক্ষার বদলে বেসরকারি খাতে নাগরিকদের তথ্য তুলে দেয়া আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। যারা এই ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবেন তাদেরকেও আগামীতে বিচারের আওতায় আনা হবে।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর জোহা বলেন, এর মাধ্যমে নাগরিকদের অর্থের নিরাপত্তা সাথে সাথে ভূমি এবং তার সম্পদের নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি করবে। বিশ্বের কোন দেশেই নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য বেসরকারি খাতে দেয়ার নজির নেই।

সুপ্রিম কোর্টের সেনারা আইনজীবী এবং সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট ইসরাত হাসান বলেন, গত ২০ মার্চ মহামান্য হাইকোর্ট থেকে এ ব্যাপারে একটি রোল নিশি জারি করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে বেসরকারি খাতে নাগরিকের তথ্যভাণ্ডার তৈরী করা কেন অবৈধ হবে না? আদালত এবং সংবিধান অনুযায়ী এবং আন্তর্জাতিক মানব অধিকার এক অনুযায়ী নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য বেসরকারি হাতে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মূল প্রবন্ধে সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংবিধানের ৪৩ এর (খ) ধারায় নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নিশ্চিত করার কথা বলা রয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে সরকারের নেয়া শপথ অনুযায়ী সংবিধান রক্ষা করা তথা নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ও নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক। প্রযুক্তি দুনিয়ায় গ্লোবাল ভিলেজে নাগরিকের তথ্য এমনিতেই বর্তমানে হুমকির মুখে।

গত বছর থেকে আমরা লক্ষ্য করছি সরকারি সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে জন্ম নিবন্ধনকারীসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান নাগরিকের তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। যখন আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে লক্ষ্য করি পাঁচ কোটি নাগরিকের তথ্য ভেসে বেড়াচ্ছে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি নিজেরাই যখন নাগরিকের ব্যক্তিত্ব তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না সেই সময় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যভাণ্ডার গড়তে দেয়া সম্পূর্ণভাবে সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হবে বলে আমরা মনে করছি। সেই সাথে নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আমরা মনে করি। বর্তমানে প্রায় ১৯ কোটি ২৬ লক্ষ সক্রিয় সিম এর তথ্য এম এন ও অপারেটর নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে কেবলমাত্র তথ্য যাচাইয়ের জন্য ৫ টাকা চার্জ দিয়ে থাকে। কিন্তু আমরা গণমাধ্যম এবং অপারেটরদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি এই তথ্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে তাদের গুনতে তে হবে ১০ টাকা। দিনশেষে এই অতিরিক্ত অর্থ গ্রাহকদের কাছ থেকেই আদায় করা হবে। আর এর মাধ্যমে গ্রাহকদের আরেক দফা খরচ বৃদ্ধি করা হচ্ছে পাশাপাশি অ-নিরাপত্তার দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। আমরা ইতিমধ্যেই জানতে পারলাম গত ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ বিটিআরসি থেকে অপারেটর থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে ১৪ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখের মধ্যে তথ্যভাণ্ডার তৈরির অগ্রগতি জানাতে হবে। যদিও এখন পর্যন্ত অপারেটররা তথ্যভাণ্ডার তৈরি করেনি।

আমরা আরো লক্ষ করলাম যে তথ্য ভান্ডার বেসরকারি খাতে না দেয়ার জন্য সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবুবক্কর সিদ্দিক, সহসভাপতি লায়ন সাব্বির আহমেদ হাজরা, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিলা, জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজু, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সংগঠনের শেখ ফরিদ প্রমুখ।