ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার মল্লিকবাড়ীর হাটে জিলাপী বিক্রি করে আনন্দ রায়ের বছরে আয় লাখ টাকার উপরে। আনন্দ রায়ের লাল জিলাপী এলাকায় উৎপাদিত আঁখের গুড় দিয়ে তৈরি হয় বলে সুনাম ছড়িয়ে গেছে চতুর দিকে। বর্তমানে হাটের দিনে তার ওই দোকানে লাল জিলাপী খেতে বহু দুর দুরান্ত থেকে মানুষজনও আসছে।
দোকানি আনন্দ রায় জানান, দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে তিনি নিজেই জিলাপী তৈরি করে আসছেন। ১৬ বছর নিজের এলাকা শনিবার মল্লিকবাড়ীর হাটে জিলাপী তৈরি করে মানুষজনদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। মূলত তিনি ঢাকার ধামরাই এলাকায় মিষ্টির দোকানে কাজ করতেন। সেখানকার এক ওস্তাদের কাছ থেকে জিলাপী তৈরির কাজটি রপ্ত করেন।
আনন্দ রায় আরও জানান, শুধুমাত্র মল্লিকবাড়ীর হাটেই জিলাপী বিক্রি করেন তিনি। এছাড়া এলাকায় মেলা, খেলা ও ওয়াজ মাহফিলে জিলাপীর দোকান করে থাকেন। হাটে আগত মানুষজনই মূলত তার বেশির ভাগ কাস্টমার। প্রতি হাটে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার জিলাপী বিক্রি করতে পারেন তিনি। এ থেকে তার দুই থেকে ৩ হাজার টাকা লাভ আসে। হাটে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দোকান করেন আনন্দ রায়।
তিনি জানান, আঁখের গুড় দিয়ে জিলাপী তৈরি হয় বলে মানুষজন এখানকার জিলাপী খায় বেশি। মানুষ এই জিলাপী খুব পছন্দ করেন।
আনন্দ রায় জানান, জিলাপী বিক্রি করে তিনি জায়গা জমি কিনেছেন। এক ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছেন এবং আরেক ছেলে জিলাপী তৈরিতে তাকে সহযোগিতা করে থাকেন।
আনন্দ রায়ের ছেলে স্বপন রায় বলেন, জিলাপী তৈরিতে আটা, গুড়, হাইডোজ, সোডা ও তেলের প্রয়োজন হয়। প্রথমে গরম তেলে জিলাপী ভাজা হয়। পরে ৪ থেকে ৫ মিনিট তেলে ভাজার পর যখন বাদামী একটি রঙ আসে তখন ভাজা জিলাপী কড়াই থেকে তুলে শিরায় ডুবিয়ে রাখা হয়। পরে জিলাপীর ভেতরে শিরা ঢুকে গেলে সেখান থেকে আবার তুলে থালায় ভাঁজ করে সাজিয়ে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়।
স্বপন আরও বলেন, গত ৭ বছর ধরে তার বাবা আনন্দ রায়ের কাছ থেকে জিলাপী তৈরির কাজ শিখেছেন। আগে তার বাবা জিলাপী ভাঁজতেন এবং তিনি বিক্রি করতেন। এখন তার বাবা বিক্রি করছেন আর তিনি ভাঁজার কাজ করছেন।
তিনি আরও জানান, হাটের দিন বাবার সাথে দোকান করা ছাড়াও তিনি একটি কারখানায় চাকরি করছেন।
দোকানে আগত ভোক্তারা জানান, প্রায় একশো বছর ধরে মল্লিকবাড়ী বাজারের লাল জিলাপীর সুনাম রয়েছে। আঁখের গুড় দিয়ে এই লাল জিলাপী তৈরি হয় বলে অন্য এলাকার জিলাপীর চেয়ে এখানকার জিলাপীর স্বাদে ভিন্নতা রয়েছে।
দোকানি আনন্দ রায় জানান, প্রতি হাটের দিন বাজারের ইজারাদারকে একশো টাকা খাজনা দিতে হয়। এছাড়া আর কোনো খরচ নেই। হাটের দিন জিলাপী বিক্রি ছাড়াও তিনি কৃষি কাজ করে থাকেন। মূলত কৃষি কাজের ফাঁকে এই ব্যবসাটি করে থাকেন তিনি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ও হাটের দিনে মল্লিকবাড়ী বাজারে জিলাপী বিক্রি করে অনেক টাকা আয় করেছেন। মূলত এটি তার বাড়তি আয়। এতেকরে তার ব্যাপক আর্থিক সফলতার পাশাপাশি সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে। মল্লিকবাড়ী হাটে আনন্দ রায় ছাড়াও আরও ৪ থেকে ৫টি আঁখের গুড় দিয়ে তৈরি লাল জিলাপীর দোকান করতে দেখা গেছে দোকানিদের।


























