০৮:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নওগাঁ বদলগাছীর ঐতিহ্যের নিদর্শন হলুদ বিহারমন্দির

নওগাঁর বদলগাছী ঐতিহ্যের নিদর্শন হলুদ বিহার মন্দির। হলুদ বিহার নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। এটি উপজেলার বিলাশবাড়ী ইউনিয়নের হলুদ বিহার গ্রামে অবস্থিত। হলুদ বিহার গ্রামে মূলতঃ চারটি ঢিবি থাকলেও বর্তমানে কেবল ১০০ ফুট ব্যাসের একটি মাত্র ঢিবি রয়েছে। হলুদ বিহার গ্রামটি স্থানীয়ভাবে দ্বীপগঞ্জ নামেও পরিচিত। ঢিবিগুলোও বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়ানো, বেশ কিছু স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ দেখে ধারণা করা হয়ে থাকে, এই স্থানটিতে পূর্বে বৌদ্ধদের বসতি ছিল। ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের পাশাপাশি হলুদ বিহারে ও দেশের বিভিন্ন এলকা থেকে পর্যটকগন  দেখার জন্য আসে। এছাড়া ও এখানে শিক্ষা সফরে দেশি বিদেশি শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পর্যটকরা আসেন। বিহারটিকে সংস্কার করে এর ইতিহাস যথাযথ ভাবে সংরক্ষণ করার দাবি এই এলাকার মানুষের।
বিহারটির চতুর দিকে বাউন্ডারী ওয়াল নেই। এ কারণে গরু-ছাগল অনায়াসে প্রবেশ করে, এতে বিহারের সৌন্দর্য খারাপ হয়ে পড়েছে। এবং অন্য দিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহকালে জানাযায় নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার বিলাশবাড়ী ইউনিয়নের নিভৃতপল্লী হলুদ বিহার গ্রামের এক প্রান্তে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এই দ্বীপ। ইতিহাস ও প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন এই দ্বীপে নজর পরলেই দর্শকরা আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। আসলে এটি একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষ এটি ছিল এক সময় গাছ গাছড়া ঝোড় জঙ্গলে পরিপূর্ণ উচু একটি দ্বীপ। দ্বীপের মাথায় ছিল একটি বড়ই গাছ, যার নিচে ছিল একটি গভীর কূপ। দ্বীপটি মাথায় পাটকূপ সম্পর্কে এই এলাকাবাসীর সকলেরই জানা শুনা রয়েছে। দ্বীপের ঝোড় জঙ্গল গাছপালা কেটে ফেলার আগেই কূপটি ভরাট হয়ে যায়। পরবর্তীতে দ্বীপটি সংস্কারকালে এই কূপের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। আশে পাশের লোকজন দ্বীপের চতুর ধারে মাটি কেটে বাড়ি ঘর নির্মাণ করেন। মাটি কাটার এক পর্যায়ে দ্বীপের পূর্ব দিকে ইটের সিঁড়ি বের হয়। তখন এলাকার মানুষদের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। তার পরেই এই দ্বীপটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে নেয়া হয়। হলুদ বিহার গ্রামে ছিল অনেকগুলো বিক্ষিপ্ত ঢিবি তাতে ছড়িয়ে ছিটিয়েছিল পুরনো ইট, ভাঙ্গা মৃৎ শিল্পের বিভিন্ন নিদর্শন। এথেকেই এখানে বৌদ্ধ বসতির প্রমান মিলে।
১৯৭৬ খ্রীঃ এই দ্বীপটি সংরক্ষিত করা হয়। ১৯৮৪ খ্রীঃ বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ প্রথম বারের মতো খনন কাজ শুরু করেন। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয়  বার খননকালে দ্বীপের অভ্যন্তরে ১টি মন্দির আবিষ্কৃত হয়। এটি খননকালে বেশ কিছু প্রাচীন নিদর্শন সামগ্রী যেমন  মানুষের মূর্তি সম্বলিত ভাঙ্গা পোড়া মাটির ফলক, পাথর সামগ্রী ও মূর্তির স্তম্ভ মূল অলংকারের ঢালাই ছাচ এবং চুর্ণ যন্ত্র উদ্ধার করা হয়। প্রশাসনিক উদাসীনতা ও সংরক্ষণের অভাবে এই প্রাচীনতম নিদর্শন আজ প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। এ বিষয়ে হলুদবিহার গ্রামের শাহিনুর ইসলাম, রোস্তম আলী, বলরামপুর গ্রামের নাজমুল সহ আরও অনেকে জানান বিহারটির চতুরদিকে দ্রুত বাউন্ডারি, সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়াসহ সংস্কার ও সংরক্ষনের  প্রয়োজন।

নওগাঁ বদলগাছীর ঐতিহ্যের নিদর্শন হলুদ বিহারমন্দির

আপডেট সময় : ০২:০৪:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
নওগাঁর বদলগাছী ঐতিহ্যের নিদর্শন হলুদ বিহার মন্দির। হলুদ বিহার নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। এটি উপজেলার বিলাশবাড়ী ইউনিয়নের হলুদ বিহার গ্রামে অবস্থিত। হলুদ বিহার গ্রামে মূলতঃ চারটি ঢিবি থাকলেও বর্তমানে কেবল ১০০ ফুট ব্যাসের একটি মাত্র ঢিবি রয়েছে। হলুদ বিহার গ্রামটি স্থানীয়ভাবে দ্বীপগঞ্জ নামেও পরিচিত। ঢিবিগুলোও বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়ানো, বেশ কিছু স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ দেখে ধারণা করা হয়ে থাকে, এই স্থানটিতে পূর্বে বৌদ্ধদের বসতি ছিল। ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের পাশাপাশি হলুদ বিহারে ও দেশের বিভিন্ন এলকা থেকে পর্যটকগন  দেখার জন্য আসে। এছাড়া ও এখানে শিক্ষা সফরে দেশি বিদেশি শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পর্যটকরা আসেন। বিহারটিকে সংস্কার করে এর ইতিহাস যথাযথ ভাবে সংরক্ষণ করার দাবি এই এলাকার মানুষের।
বিহারটির চতুর দিকে বাউন্ডারী ওয়াল নেই। এ কারণে গরু-ছাগল অনায়াসে প্রবেশ করে, এতে বিহারের সৌন্দর্য খারাপ হয়ে পড়েছে। এবং অন্য দিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহকালে জানাযায় নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার বিলাশবাড়ী ইউনিয়নের নিভৃতপল্লী হলুদ বিহার গ্রামের এক প্রান্তে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এই দ্বীপ। ইতিহাস ও প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন এই দ্বীপে নজর পরলেই দর্শকরা আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। আসলে এটি একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষ এটি ছিল এক সময় গাছ গাছড়া ঝোড় জঙ্গলে পরিপূর্ণ উচু একটি দ্বীপ। দ্বীপের মাথায় ছিল একটি বড়ই গাছ, যার নিচে ছিল একটি গভীর কূপ। দ্বীপটি মাথায় পাটকূপ সম্পর্কে এই এলাকাবাসীর সকলেরই জানা শুনা রয়েছে। দ্বীপের ঝোড় জঙ্গল গাছপালা কেটে ফেলার আগেই কূপটি ভরাট হয়ে যায়। পরবর্তীতে দ্বীপটি সংস্কারকালে এই কূপের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। আশে পাশের লোকজন দ্বীপের চতুর ধারে মাটি কেটে বাড়ি ঘর নির্মাণ করেন। মাটি কাটার এক পর্যায়ে দ্বীপের পূর্ব দিকে ইটের সিঁড়ি বের হয়। তখন এলাকার মানুষদের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। তার পরেই এই দ্বীপটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে নেয়া হয়। হলুদ বিহার গ্রামে ছিল অনেকগুলো বিক্ষিপ্ত ঢিবি তাতে ছড়িয়ে ছিটিয়েছিল পুরনো ইট, ভাঙ্গা মৃৎ শিল্পের বিভিন্ন নিদর্শন। এথেকেই এখানে বৌদ্ধ বসতির প্রমান মিলে।
১৯৭৬ খ্রীঃ এই দ্বীপটি সংরক্ষিত করা হয়। ১৯৮৪ খ্রীঃ বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ প্রথম বারের মতো খনন কাজ শুরু করেন। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয়  বার খননকালে দ্বীপের অভ্যন্তরে ১টি মন্দির আবিষ্কৃত হয়। এটি খননকালে বেশ কিছু প্রাচীন নিদর্শন সামগ্রী যেমন  মানুষের মূর্তি সম্বলিত ভাঙ্গা পোড়া মাটির ফলক, পাথর সামগ্রী ও মূর্তির স্তম্ভ মূল অলংকারের ঢালাই ছাচ এবং চুর্ণ যন্ত্র উদ্ধার করা হয়। প্রশাসনিক উদাসীনতা ও সংরক্ষণের অভাবে এই প্রাচীনতম নিদর্শন আজ প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। এ বিষয়ে হলুদবিহার গ্রামের শাহিনুর ইসলাম, রোস্তম আলী, বলরামপুর গ্রামের নাজমুল সহ আরও অনেকে জানান বিহারটির চতুরদিকে দ্রুত বাউন্ডারি, সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়াসহ সংস্কার ও সংরক্ষনের  প্রয়োজন।