➣কেন্দ্রের নির্দেশের সাড়া দেননি কেউ
➣কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের পর শাস্তির সিদ্ধান্ত
➣ব্যর্থ হচ্ছে উন্মুক্ত নির্বাচনের কৌশল
➣ভোটার টানতে নতুন কর্মসূচি
উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মস্ত্রীদের স্বজনরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা আমলে নেননি কেউ। গত সোমবার ১ম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে ৩ জন ছাড়া আর কোথাও কেউ মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। এ ছাড়াও নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করার উদ্দেশ্যে দলের পক্ষে থেকে প্রার্থিতা উন্মুক্ত করা হলেও অন্তত বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে অন্তত ২৫ জন। দলের কড়া বার্তার পরও এসব পদক্ষেপে বিব্রত দলটির নীতি নির্ধারণী ফোরাম সদস্যরা। এমন পরিস্থিতিতে করণীয় ঠিক করতে আগামী ৩০ এপ্রিল বৈঠকে বসবে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি। এদিকে জাতীয় নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচনে ভোটার টানতেও মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১ম ধাপের নির্বাচনে অন্তত ১৫টি স্থানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনরা। এছাড়াও পরবর্তী ধাপগুলোতে অর্ধশতাধিক মন্ত্রী-এমপির স্বজন নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন। এছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাহার না করায়, হাতিয়ায় চেয়ারম্যান পদে নোয়াখালী-৬ আসনের এমপি মোহাম্মদ আলীর ছেলে আশিক আলী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ার পথে। এ উপজেলায় জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী মুশফিকুর রহমানকে আর্থিক সুবিধার মাধ্যমে ভোট থেকে সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়াও নাটোরের সিংড়ায় মনোনয়নপত্র দাখিল করতে গিয়ে অপহরণের শিকার দেলোয়ার হোসেন পাশা একক প্রার্থী হিসেবে বিনা ভোটে জয়ী হতে যাচ্ছেন। প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবীব রুবেলই ছিলেন তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগারের চাচাতো ভাইয়ের ছেলে সহিদুল ইসলাম। নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী আয়েশা ফেরদৌস মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন।
এদিকে দলীয় সূত্রে জানা যায়, দলের নির্দেশনার পর এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনরা নির্বাচনের মাঠে থাকায় বিব্রত দলের নীতি নির্ধারণী ফোরামের নেতারা। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগামী ৩০ এপ্রিল বৈঠক করবে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি। তবে স্বজনদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করাতে না পারার কারণ হিসেবে এমপি-মন্ত্রীরা বিভিন্ন ধরনের অযুহাত দেখিয়েছেন। দলের সাংগঠনিক দ¦ায়িত্বশীলরা যোগাযোগ করলে অধিকাংশ স্বজনদের পক্ষে কথা বলেছেন। আবার অনেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আশ^াস দিলেও শেষ মুহূর্তে তা করেননি। আবার যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারাও দলের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতা। ফলে তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের শাস্তি হতে পারে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের কেন্দ্রীয় এক নেতা দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, অল্প কিছু জায়গায় আত্মীয়স্বজনদের প্রার্থী করা হয়েছে এটা সত্য। তবে সবজায়গায় কম-বেশি মাইম্যানকে প্রার্থী করেছেন এমপিরা। এখন শুধু আত্মীয়দের সমর্থন দেওয়ার জন্য তো শাস্তি দেওয়া যায় না। যাদের অভিযুক্ত করা হচ্ছে তাদের অনেকে স্থানীয় রাজনীতিতে দীর্ঘদিন সক্রিয়। তাহলে এমপি বা মন্ত্রীর আত্মীয় হওয়া তো দোষের না।
দলের অপর একটি সূত্র বলছে, সারা দেশে আত্মীয়স্বজন এবং মাইম্যান কারা কারা প্রার্থী হয়েছে তাদের তালিকা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক চূড়ান্ত করছেন। এই তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পরপরই তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হবে। তবে কি ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে তা চূড়ান্ত করবেন দলের সভাপতি।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে ৩০ এপ্রিল কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে কথা হবে। সেদিন পরবর্তী করণীয় নিয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।
ভোটার টানতে কর্মসূচি : গতকাল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জনগণকে উপজেলা নির্বাচনে ভোট প্রয়োগে উৎসাহিত করতে প্রচারপত্র বিলির ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির উদ্যোগে এ প্রচারপত্র বিলি করা হবে। ভোটাধিকার প্রয়োগে দেশবাসীকে উৎসাহিত করতে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত ভোটের পক্ষে প্রচারপত্র বিতরণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
কাদের বলেন, উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে আমাদের নেত্রী সবাইকে ভোটের মাধ্যমে সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। ভোট দিয়ে আপনার নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন। আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে জনগণই সব ক্ষমতার উৎস। ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগের হাতকে শক্তিশালী করুন। আপনার পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নিন। ভোট দিয়ে গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত করুন। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকসহ অন্যান্য সামাজিক অপরাধ প্রতিহত করুন।


























