০৯:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মিয়ানমার থেকে ফেরা ১৭৩ বাংলাদেশি কার ?

  • সবুজ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৪:৫৩:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
  • 135

দীর্ঘদিন আটক থাকার পর মিয়ানমার থেকে দেশে ফেরত এসেছেন ১৭৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক। তারা সবাই ছিলেন সে দেশের কারাগারে বন্দী। যে জাহাজে এসেছেন বাংলাদেশিরা সেই জাহাজেই বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ থেকে ফেরত যাবেন এখানে পালিয়ে আসা ২৮৫ জন মিয়ানমার বিজিপি সদস্য।

 

মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল সকালে রাখাইন রাজ্যের সিটওয়ে বন্দর থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের নিয়ে রওনা হয়ে মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ চিন ডুইন গতকাল বুধবার বেলা দেড়টার দিকে জাহাজটি কক্সবাজার বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে পৌঁছায়।

 

মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর এএসএম সায়েম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘যাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে তারা বিভিন্ন সময় মিয়ানমারে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আটক হয়েছিল। যাচাই বাছাই শেষে বাংলাদেশের নাগরিক বলে নিশ্চিত হওয়ার পরই তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে।’

 

সোমবার প্রধানমন্ত্রীর থাইল্যান্ড সফর নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানিয়েছিলেন, গতকাল আটকেপড়া বাংলাদেশিদের নিয়ে জাহাজটি দেশে পৌঁছালে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বিজিপি সদস্যদের ওই জাহাজেই তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

 

এই ফেরত আসা ১৭৩ জনের মধ্যে ১৪৪ জন বাংলাদেশি নাগরিক বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বন্দি ছিলেন মিয়ানমারের কারাগারে।

 

মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনের বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, মিয়ানমার থেকে ফেরত পাঠানো ওই ১৭৩ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নাগরিক কক্সবাজার জেলার। তাদের মধ্যে ১২৯ জনের বাড়িই কক্সবাজারে।

 

বাকিদের মধ্যে ৩০ জন বান্দরবানের, ৭ জন রাঙামাটির এবং খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, নরসিংদী ও নীলফামারী জেলার রয়েছে একজন করে।

 

এদিকে নিখোঁজ প্রিয়জন ফিরছে জেনে তাদের কাছে পেতে সকাল থেকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ’র ঘাট এলাকায় অপেক্ষার প্রহর গুনছেন বাবা-মা-ভাই-বোনসহ স্বজনরা।

 

টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের খারাংখালী এলাকার বাসিন্দা ছেনেয়ারা বেগম বলেন, ১২ বছর আগে আমার ভাই খোরশেদ আলম (৩০) নিখোঁজ হন। গতকাল খবর পেয়েছি মিয়ানমার কারাগার থেকে অনেক বাংলাদশিকে আনা হচ্ছে। তাই ভাইয়ের জন্য অপেক্ষায় আছি। ছেলের জন্য কাঁদতে কাঁদতে শোকে আমার মা মারা গেছেন।

 

উখিয়ার পালংখালী মধ্যম ফারির বিল এলাকার ফরিদা খাতুন বলেন, আমার ছেলে আরফাত হোসন (২০) সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক ছিল। দালালের খপ্পরে পড়ে ১৪ মাস আগে মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা বলে ঘর থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। ৯ মাস পরে তার চিঠি পেয়ে নিশ্চিত হয়েছি সে মিয়ানমারের কারাগারে রয়েছে। নিকট আত্নীয়ের মাধ্যমে খবর পেয়েছি মিয়ানমার থেকে তাদের আনা হচ্ছে। আমি এখনো নিশ্চিত না যে, সেখানে আমার ছেলে আছে কিনা। তারপরও ছেলেকে পাওয়ার একবুক আশা নিয়ে এসেছি।

 

একই কথা বললেন পালংখালী গ্রামের বাসিন্দা সাবেকুন্নাহার, হাজেরা খাতুন ও কক্সবাজার শহরের নুনিয়ার ছড়ার জমিলা, উখিয়ার বদি বলম শাহ আলম, টেকনাফ বাহারছড়া ইউনিয়নের হাজমপাড়ার নুরুল ইসলাম।

 

মিয়ানমারের বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, এই ১৭৩ জনের মধ্যে ১৪৪ জন বাংলাদেশি দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ছিলেন। তাদের সবার সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে আগেই।

 

বাকি ২৯ জনের সাজার মেয়াদ শেষ না হলেও এই ফেরত পাঠানোর উদ্যোগের সময় তাদেরকে বিশেষ ক্ষমার আওতায় আনা হয়। বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আগে তাদেরকে রাখা হয় সিটওয়ের কারাগারে। বুধবার সবার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তোলা হয়েছিল দেশটির নৌ বাহিনীর জাহাজে।

 

মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর এ এস এম সায়েম বলেন, ‘সবার আগে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ যাচাই বাছাই করে দেখেছে আটককৃত ঐসব নাগরিকরা বাংলাদেশের বৈধ নাগরিক কী না। সেটি নিশ্চিত হওয়ার পরই ফেরত পাঠানোর এই প্রক্রিয়া শুরু হয়।’

 

মিয়ানমারে কেন আটক হয়েছিল বাংলাদেশিরা : মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় পৌনে তিনশ কিলোমিটার। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সময় ওই বাংলাদেশিরা এই সীমানা পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে মিয়ানমারে প্রবেশ করেছিল বলে জানাচ্ছে মিয়ানমারের বাংলাদেশ দূতাবাস।
দূতাবাস কর্মকর্তা সায়েম বলেন, ‘বাংলাদেশের যে সব নাগরিক মিয়ানমারে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে তাদের কারো কাছে কোন ধরনের ডকুমেন্টস ছিল না। যখন আমাদেরকে বিভিন্ন জায়গা থেকে জানানো হলো তারা বাংলাদেশের নাগরিক, তখন আমরা যাচাই বাছাই শুরু করলাম।’

 

দূতাবাস বলছে, এই বাংলাদেশিদের সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কেউ মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে অন্য কোথাও যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কেউ কেউ আবার সে দেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের পর দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছিলেন।

 

বিভিন্ন সময় আটক হওয়া ব্যক্তিদের দেশটির আইন অনুযায়ী সাজাও দেন মিয়ানমারের আদালত। আদালতের দেওয়া সাজার মেয়াদ ১৪৪ জনের শেষ হয়।
সায়েম জানান, বাকি ২৯ জনের মেয়াদ শেষ না হলেও বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়ার পর বিশেষ বিবেচনায় তাদের ক্ষমা করা হয়, যাতে তারা নিজ দেশে ফেরত যেতে পারেন।

 

 

এরপর মিয়ানমারের বাংলাদেশ দূতাবাস দেশটির সরকারের সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক করে তাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে। সেখান থেকে একে একে ১৭৩ জনের তালিকা তৈরি করে কঠোর নিরাপত্তার মাধ্যমে তাদের মিয়ানমার নৌ বাহিনীর জাহাজে তোলা হয়।

 

শুক্রবারের মধ্যে ফিরবে মিয়ানমারের ২৮৮ সেনা-বিজিপি সদস্য : মিয়ানমারে চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ২৮৮ জন বিজিপি, সেনা, ইমিগ্রেশন ও অন্যান্য সদস্যদের দেশটিতে প্রত্যাবাসন আজ সম্পন্ন হবে। তবে প্রয়োজন হলে শুক্রবারও তাদের প্রত্যাবাসন করা হবে।
গতকাল বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

 

এতে বলা হয়, কক্সবাজারে বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম আয়োজন করা হয়েছে। মিয়ানমারের জাহাজ চিন ডুইন এসেছে এবং মিয়ানমারের সেনা ও অন্যদের নিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করবে।

 

জাহাজে করে আগত মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা আজ বিজিবির নাইক্ষ্যংছড়ি ক্যাম্পে অবস্থানরত বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বিজিপি ও অন্যান্য সদস্যদের দ্রুত শনাক্তকরণ ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টেশন সম্পন্ন করবে। সেখানে বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমার দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে জাহাজে করে আগত বিজিপি সদস্যদের কাছে আশ্রয় প্রাপ্তদের হস্তান্তর করা হবে।

 

মিয়ানমারে নাগরিকদের ফেরতের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একাধিক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের আলোকে প্রত্যাবাসন করা হচ্ছে।
চলতি বছরে এ পর্যন্ত ছয়শতাধিক আশ্রয়প্রার্থী মিয়ানমারের বিজিপি ও সামরিক বাহিনীর সদস্যকে মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় ও প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রাথমিক শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতার শঙ্কা

মিয়ানমার থেকে ফেরা ১৭৩ বাংলাদেশি কার ?

আপডেট সময় : ০৪:৫৩:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

দীর্ঘদিন আটক থাকার পর মিয়ানমার থেকে দেশে ফেরত এসেছেন ১৭৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক। তারা সবাই ছিলেন সে দেশের কারাগারে বন্দী। যে জাহাজে এসেছেন বাংলাদেশিরা সেই জাহাজেই বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ থেকে ফেরত যাবেন এখানে পালিয়ে আসা ২৮৫ জন মিয়ানমার বিজিপি সদস্য।

 

মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল সকালে রাখাইন রাজ্যের সিটওয়ে বন্দর থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের নিয়ে রওনা হয়ে মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ চিন ডুইন গতকাল বুধবার বেলা দেড়টার দিকে জাহাজটি কক্সবাজার বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে পৌঁছায়।

 

মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর এএসএম সায়েম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘যাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে তারা বিভিন্ন সময় মিয়ানমারে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আটক হয়েছিল। যাচাই বাছাই শেষে বাংলাদেশের নাগরিক বলে নিশ্চিত হওয়ার পরই তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে।’

 

সোমবার প্রধানমন্ত্রীর থাইল্যান্ড সফর নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানিয়েছিলেন, গতকাল আটকেপড়া বাংলাদেশিদের নিয়ে জাহাজটি দেশে পৌঁছালে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বিজিপি সদস্যদের ওই জাহাজেই তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

 

এই ফেরত আসা ১৭৩ জনের মধ্যে ১৪৪ জন বাংলাদেশি নাগরিক বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বন্দি ছিলেন মিয়ানমারের কারাগারে।

 

মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনের বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, মিয়ানমার থেকে ফেরত পাঠানো ওই ১৭৩ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নাগরিক কক্সবাজার জেলার। তাদের মধ্যে ১২৯ জনের বাড়িই কক্সবাজারে।

 

বাকিদের মধ্যে ৩০ জন বান্দরবানের, ৭ জন রাঙামাটির এবং খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, নরসিংদী ও নীলফামারী জেলার রয়েছে একজন করে।

 

এদিকে নিখোঁজ প্রিয়জন ফিরছে জেনে তাদের কাছে পেতে সকাল থেকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ’র ঘাট এলাকায় অপেক্ষার প্রহর গুনছেন বাবা-মা-ভাই-বোনসহ স্বজনরা।

 

টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের খারাংখালী এলাকার বাসিন্দা ছেনেয়ারা বেগম বলেন, ১২ বছর আগে আমার ভাই খোরশেদ আলম (৩০) নিখোঁজ হন। গতকাল খবর পেয়েছি মিয়ানমার কারাগার থেকে অনেক বাংলাদশিকে আনা হচ্ছে। তাই ভাইয়ের জন্য অপেক্ষায় আছি। ছেলের জন্য কাঁদতে কাঁদতে শোকে আমার মা মারা গেছেন।

 

উখিয়ার পালংখালী মধ্যম ফারির বিল এলাকার ফরিদা খাতুন বলেন, আমার ছেলে আরফাত হোসন (২০) সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক ছিল। দালালের খপ্পরে পড়ে ১৪ মাস আগে মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা বলে ঘর থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। ৯ মাস পরে তার চিঠি পেয়ে নিশ্চিত হয়েছি সে মিয়ানমারের কারাগারে রয়েছে। নিকট আত্নীয়ের মাধ্যমে খবর পেয়েছি মিয়ানমার থেকে তাদের আনা হচ্ছে। আমি এখনো নিশ্চিত না যে, সেখানে আমার ছেলে আছে কিনা। তারপরও ছেলেকে পাওয়ার একবুক আশা নিয়ে এসেছি।

 

একই কথা বললেন পালংখালী গ্রামের বাসিন্দা সাবেকুন্নাহার, হাজেরা খাতুন ও কক্সবাজার শহরের নুনিয়ার ছড়ার জমিলা, উখিয়ার বদি বলম শাহ আলম, টেকনাফ বাহারছড়া ইউনিয়নের হাজমপাড়ার নুরুল ইসলাম।

 

মিয়ানমারের বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, এই ১৭৩ জনের মধ্যে ১৪৪ জন বাংলাদেশি দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ছিলেন। তাদের সবার সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে আগেই।

 

বাকি ২৯ জনের সাজার মেয়াদ শেষ না হলেও এই ফেরত পাঠানোর উদ্যোগের সময় তাদেরকে বিশেষ ক্ষমার আওতায় আনা হয়। বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আগে তাদেরকে রাখা হয় সিটওয়ের কারাগারে। বুধবার সবার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তোলা হয়েছিল দেশটির নৌ বাহিনীর জাহাজে।

 

মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর এ এস এম সায়েম বলেন, ‘সবার আগে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ যাচাই বাছাই করে দেখেছে আটককৃত ঐসব নাগরিকরা বাংলাদেশের বৈধ নাগরিক কী না। সেটি নিশ্চিত হওয়ার পরই ফেরত পাঠানোর এই প্রক্রিয়া শুরু হয়।’

 

মিয়ানমারে কেন আটক হয়েছিল বাংলাদেশিরা : মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় পৌনে তিনশ কিলোমিটার। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সময় ওই বাংলাদেশিরা এই সীমানা পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে মিয়ানমারে প্রবেশ করেছিল বলে জানাচ্ছে মিয়ানমারের বাংলাদেশ দূতাবাস।
দূতাবাস কর্মকর্তা সায়েম বলেন, ‘বাংলাদেশের যে সব নাগরিক মিয়ানমারে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে তাদের কারো কাছে কোন ধরনের ডকুমেন্টস ছিল না। যখন আমাদেরকে বিভিন্ন জায়গা থেকে জানানো হলো তারা বাংলাদেশের নাগরিক, তখন আমরা যাচাই বাছাই শুরু করলাম।’

 

দূতাবাস বলছে, এই বাংলাদেশিদের সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কেউ মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে অন্য কোথাও যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কেউ কেউ আবার সে দেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের পর দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছিলেন।

 

বিভিন্ন সময় আটক হওয়া ব্যক্তিদের দেশটির আইন অনুযায়ী সাজাও দেন মিয়ানমারের আদালত। আদালতের দেওয়া সাজার মেয়াদ ১৪৪ জনের শেষ হয়।
সায়েম জানান, বাকি ২৯ জনের মেয়াদ শেষ না হলেও বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়ার পর বিশেষ বিবেচনায় তাদের ক্ষমা করা হয়, যাতে তারা নিজ দেশে ফেরত যেতে পারেন।

 

 

এরপর মিয়ানমারের বাংলাদেশ দূতাবাস দেশটির সরকারের সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক করে তাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে। সেখান থেকে একে একে ১৭৩ জনের তালিকা তৈরি করে কঠোর নিরাপত্তার মাধ্যমে তাদের মিয়ানমার নৌ বাহিনীর জাহাজে তোলা হয়।

 

শুক্রবারের মধ্যে ফিরবে মিয়ানমারের ২৮৮ সেনা-বিজিপি সদস্য : মিয়ানমারে চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ২৮৮ জন বিজিপি, সেনা, ইমিগ্রেশন ও অন্যান্য সদস্যদের দেশটিতে প্রত্যাবাসন আজ সম্পন্ন হবে। তবে প্রয়োজন হলে শুক্রবারও তাদের প্রত্যাবাসন করা হবে।
গতকাল বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

 

এতে বলা হয়, কক্সবাজারে বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম আয়োজন করা হয়েছে। মিয়ানমারের জাহাজ চিন ডুইন এসেছে এবং মিয়ানমারের সেনা ও অন্যদের নিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করবে।

 

জাহাজে করে আগত মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা আজ বিজিবির নাইক্ষ্যংছড়ি ক্যাম্পে অবস্থানরত বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বিজিপি ও অন্যান্য সদস্যদের দ্রুত শনাক্তকরণ ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টেশন সম্পন্ন করবে। সেখানে বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমার দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে জাহাজে করে আগত বিজিপি সদস্যদের কাছে আশ্রয় প্রাপ্তদের হস্তান্তর করা হবে।

 

মিয়ানমারে নাগরিকদের ফেরতের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একাধিক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের আলোকে প্রত্যাবাসন করা হচ্ছে।
চলতি বছরে এ পর্যন্ত ছয়শতাধিক আশ্রয়প্রার্থী মিয়ানমারের বিজিপি ও সামরিক বাহিনীর সদস্যকে মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় ও প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।