➤ স্থানীয় কোন্দল নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে
➤ স্বজনদের সরে যেতে কঠোর বার্তা
➤ অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বজায়ে তৎপর দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ফলে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের সমমনা দলগুলো নির্বাচন অংশ না নিলেও নির্বাচন তুলনামূলক গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করতে সফল হয় দলটির নীতি-নির্ধারণী ফোরাম। এর ধারাবাহিকতায় উপজেলা নির্বাচনেও প্রার্থিতা উন্মুক্ত করেছে দলটি। তবে সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচনেও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের। আর বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরাম। অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তৎপরতাও বাড়িয়েছে দলটির সংগঠনিক দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বেশিরভাগ উপজেলায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাঠে নেমেছেন। তবে এখানে স্থানীয় রাজনৈতিক কোন্দল নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে। বিশেষ করে অধিকাংশ উপজেলায় এমপি-মন্ত্রীরা তাদের মাইম্যান ও স্বজনদের নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন ও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সমর্থন দিচ্ছেন। এই অবস্থায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃনমূল আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘাত ও সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীদের অপহরণসহ মারধরের ঘটনা ঘটেছে।
যদিও ঈদের দিন দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, উপজেলা নির্বাচনে কোনো কারচুপি করা হবে না। দলীয় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করা হবে না, মন্ত্রী-এমপিরা এবং আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের নিজের প্রার্থীকে যদি জিতিয়ে আনার জন্য কোনো রকম অবৈধ উপায় অবলম্বন করেন বা কারচুপি করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এর আগে গত ১০ ফেব্রয়ারি গণভবনে দলের বিশেষ বর্ধিত সভায় শেখ হাসিনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যেসব নেতারা প্রার্থী হতে চান তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে সাধারণ মানুষের জন্য কতটুকু কাজ করেছেন, কারা করতে পারেননি, সেটাও যাচাই-বাছাই হয়ে যাবে। জনগণের কাছে কার গ্রহণযোগ্যতা, সেটাই দেখব। কোনো রকম সংঘাত চাই না। যিনি এর সঙ্গে জড়িত থাকবেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে ১ম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়নপত্র পর্বের সময়ই সংঘাত ও সহিংসতার বিষয়টি সামনে আসে। নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের আপন শ্যালক লুৎফুল হাবীব রুবেলের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশাকে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা এমপিদের হস্তক্ষেপের অভিযোগ ওঠে। এরপর বেশ কিছু উপজেলায় একাধিকবার সতর্ক করে দেওয়ার পরেও আওয়ামী লীগের বিরোধ কমেনি। বরং ঈদের আগে ও পরে বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে হতাহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধ ও সংঘর্ষ আরো প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। তাই দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বিরোধ ও সংঘর্ষ এড়ানোকে প্রধান টার্গেট হিসেবে নিয়েছেন। একই সঙ্গে গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন করতে দলীয় এমপি-মন্ত্রীদের প্রভাব ঠেকাতে দিচ্ছেন হুশিয়ারি।
দলের পক্ষ থেকে স্বজনদের সরিয়ে নিতে বার্তা দেওয়া হয় এমপি-মন্ত্রীদের। এছাড়াও উপজেলা নির্বাচনের মধ্যে কোনো ইউনিটের কামটি গঠন ও সম্মেলন করা যাবে না বলেও জানানো হয়। এরপর বেশ কয়েকবার সতর্ক করেও বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১ম ধাপে অন্তত ১৫ জন এমপি-মন্ত্রীর স্বজন মনোনয়ন জমা দেন। তাদের মধ্যে প্রতিমন্ত্রী পলকের শ্যালক ব্যতীত কেউই কেন্দ্রের নির্দেশে সাড়া দেয়নি। বিষয়টি নিয়ে বিব্রত দলের নীতি-নির্ধারণী ফোরামের সদস্যরাও। দলের একাধিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা জানান, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা না মানার বিষয়টি নিয়ে আগামী ৩০ এপ্রিল দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হবে।
সবশেষ গত বুধবার দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় নির্দেশনা না মানলে সময়মতো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করেন। তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচনে প্রথম পর্যায়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় পেরিয়ে গেছে। এদের মধ্যে অনেকেই বলেছেন যে, আমরা বিষয়টি আরো আগে অবহিত হলে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হতো। তারপরও কেউ কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন, কেউ কেউ করেননি। নির্বাচন কমিশনের সময়সীমা শেষ হয়ে গেলেও কেউ ইচ্ছা করলে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারেন। এই বিষয়টা চূড়ান্ত হতে নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এখানে কেউ অমান্য করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে দলে, সময়মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশনের বিষয়টি আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দল যার যার কর্মকাণ্ড বিবেচনায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশলে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নিয়ে থাকে। চূড়ান্ত পর্যায়ে যারা প্রত্যাহার করবে না, এ ব্যাপারে দলের সিদ্ধান্ত সময়মতো নেওয়া হবে।
এবিষয়ে কথা বলা হলে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজ্জাম্মেল হক বলেন, কিছু জায়গায় সমস্যা হতে পারে। তবে পরিবেশ যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায় আমরা সেদিকে লক্ষ্য রাখছি। কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেওয়া হচ্ছে। কিছু কিছু উপজেলায় দলের নেতাদের আমরা সতর্কও করছি।
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে ৩০ এপ্রিল কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে কথা হবে। সেদিন পরবর্তী করণীয় নিয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।




















