০৭:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোন পথে বিএনপির রাজনীতি

◉ অব্যাহত ভোট বর্জনের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে নানা প্রশ্ন
◉ উপজেলায় ভোট করতে বহিষ্কার-শোকজ পরোয়া করছেন না তৃণমূল নেতাকর্মীরা
◉ স্থানীয় প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় নেতাদের বহিষ্কারে বাড়ছে গ্রুপিং ও হতাশা

◼ দল করতে হলে দলের শৃঙ্খলা মানতে হবেÑ রুহুল কবির রিজভী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, বিএনপি
◼ বিএনপি নির্বাচনে না আসায় আওয়ামী লীগও সংকটে ড. বদিউল আলম মজুমদার, সম্পাদক, সুজন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় চলমান চার দফায় আয়োজিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি। শুধু বর্জন নয়, দলের কেউ যাতে এই নির্বাচনে প্রার্থী না হয় সেজন্য কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি সাধারণ জনগণকে এই ভোট বর্জনের জন্য গণসংযোগ করছে দলটি। তবে অব্যাহতভাবে ভোট বর্জনের এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে দলের পাশাপাশি রাজনৈতিক সচেতন মহলে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝেও এ নিয়ে বিভেদ দেখা দিয়েছে। সেজন্য দলের শোকজ আর বহিষ্কারের মতো কঠোর সিদ্ধান্তকে পরোয়া না করে অনেকেই প্রার্থী হচ্ছেন উপজেলা নির্বাচনে। আর দলের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে প্রভাবশালী ও দীর্ঘদিনের জনপ্রিয় নেতাদেরকে একের পর এক বহিষ্কারের ঘটনায় সাধারণ নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশার পাশাপাশি গ্রুপিং তৈরি হচ্ছে। বিএনপির ভেতরে সৃষ্ট এই বিভেদকে কাজে লাগাতে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকেও নানা তৎপরতা চলছে বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় দলটির ভবিষ্যৎ রাজনীতি কোন দিকে যাচ্ছে তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে চরম হতাশা ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।

যদিও জাতীয় নির্বাচনের মতো চলমান উপজেলা নির্বাচন বর্জন এবং দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষাকারীদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে মনে করছে বিএনপির হাইকমান্ড। এ বিষয়ে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচন করার পরে আবার উপজেলা নির্বাচন করছেন। এ নির্বাচনও ডামি। বর্তমানে দেশের জনগণ ভোট দিতে পারে না। তাদের পছন্দের প্রতিনিধি বানাতে পারে না। দেশের গণতন্ত্রকামী কোনো দল এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, দল করতে হলে দলের শৃঙ্খলা মানতে হবে। দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন করবে না। দলের চেয়ে নির্বাচনই যদি বড় হয়, তাহলে তো তাদের আগে পদত্যাগ করা উচিত। আপনি দল করবেন, আবার দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না, এটা হতে পারে না।

দলীয় সূত্রমতে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় এ পর্যন্ত দলের ১৩৩ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। প্রথম ধাপে ৭২ জনের পর গত শনিবার আরও ৬১ জনকে বহিষ্কার করা হয়। তারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে ২৬ জন চেয়ারম্যান পদে, ১৯ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ১৬ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী। সূত্রমতে, তৃতীয় ধাপেও দলের বিপুলসংখ্যক নেতা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। তাদের নাম-পদবি প্রকাশ করে শিগগিরই সাংগঠনিক ব্যবস্থা ঘোষণা করা হবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দলীয় নির্দেশ লংঘনকারী নেতাদের বহিষ্কারের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে নির্বাচন বর্জনের আহবানও চালাচ্ছে বিএনপি, যাতে ভোটে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি কম হয়। বিরোধী দলের অংশগ্রহণবিহীন ক্ষমতাসীনদের এই ভোটের প্রেক্ষাপটে বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতাদের ধারণা, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো এবারের উপজেলা পরিষদের নির্বাচনেও সাধারণ মানুষ সাড়া দেবেন না। সে জন্য নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নেতাদের ব্যাপারে নীতিনির্ধারকরা এতটা কঠোর।

তবে বহিষ্কারের মতো কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েও বিএনপির নেতাদের উপজেলা নির্বাচন থেকে পুরোপুরি ফেরানো যাচ্ছে না। দলের অনিশ্চিত এই সিদ্ধান্ত না মেনে চলমান সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তি ও জয়ের আশায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন অনেকে। এরমধ্যে বহিষ্কার এড়াতে কেউ কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলেও বেশিরভাগই অনড় অবস্থানে থাকছেন।
দলটির নেতারা বলছেন, খুব কমসংখ্যক প্রার্থীকে বুঝিয়ে নির্বাচন থেকে ফেরানো যাচ্ছে। তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করার পাশাপাশি সাংগঠনিক ব্যবস্থাকেও আমলে নিচ্ছেন না।
জানা গেছে, প্রথম ধাপে প্রার্থীদের থামাতে বিএনপির নেতৃত্বের তৎপরতা তেমন একটা কাজে লাগেনি। বোঝানোর পর মাত্র ১৬ জন নেতা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। শেষ পর্যন্ত প্রথম ধাপে ৭২ জনকে বহিষ্কার করতে হয়। একইভাবে দ্বিতীয় ধাপে মাত্র ১২ জন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। এই ধাপের প্রার্থী হওয়া ৬১ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপেও বিএনপির নেতাদের অনেকে প্রার্থী হতে মাঠে তৎপর রয়েছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন বর্জনের অবস্থানে থাকা দলটির বহিষ্কারের সংখ্যা দীর্ঘ হবে। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে যারা ভোটে অংশ নিচ্ছেন, তাদের নিয়ে কাজ করছেন, বিএনপির এমন নেতাদের অনুমান, উপজেলা নির্বাচনের শেষ ধাপ পর্যন্ত বহিষ্কারের সংখ্যা দুই থেকে আড়াই শতে গিয়ে ঠেকতে পারে। যদিও দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় বহিষ্কারের এই সংখ্যাকে গুরুত্ব দিতে চাইছে না বিএনপির নেতৃত্ব। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কারণে কিছু নেতা বহিষ্কারের ফলে সাংগঠনিক ভিত্তি কিছুটা দুর্বল হতে পারে, যা দলকে উপেক্ষা করতে হচ্ছে সচেতনভাবে।
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, এবার কমবেশি ৪৮০ উপজেলা পরিষদে ৪ ধাপে ভোট হবে। প্রথম ধাপে ভোট হবে ৮ মে। এরপর ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে, ২৯ মে তৃতীয় ও আগামী ৫ জুন চতুর্থ ধাপের নির্বাচন হবে। ইতিমধ্যে সব ধাপের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।

সূত্রমতে, বিভিন্ন সময় দেশ চালানো দল বিএনপি এখন একটানা দেড়যুগ রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগ একটানা চার মেয়াদে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকলেও তাদের দুই মেয়াদে সম্পূর্ণ সংসদের বাইরে রয়েছে বিএনপি। এমনকি আওয়ামী লীগের অধীনে অনুষ্ঠিত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে দলটি। একইভাবে সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন নির্বাচনও বর্জন করছে বিএনপি। এ অবস্থায় দলটির ভবিষ্যৎ রাজনীতি কোন দিকে যাচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার ও রাজনীতি বিশ্লেষক, সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার সবুজ বাংলাকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে না আসলে তা আওয়ামী লীগের জন্যও সংকট। কারণ এই নির্বাচনটাকে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও অংশগ্রহণমূলক হিসেবে দেখাতে পারছে না। শুধু তাই নয়, এখন আওয়ামী লীগ-আওয়ামী লীগে যেভাবে মারামারি হচ্ছে, তাতে দলটি সংকটে আছে। তবে সবচেয়ে বড় সংকটে আছি আমরা নাগরিকরা। কারণ নির্বাচন ব্যবস্থা এখন নির্বাসনে গেছে। আমরাই বিপদে আছি। যে লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধারা জীবন দিয়েছিলেন তা থেকে আমরা যোজন যোজন দূরে আছি।
তিনি বলেন, বিএনপির কিছু লোক যে ভোটে দাঁড়াচ্ছে তাতে দলের কোনো ক্ষতি হবে না। আসলে এটা একটা দলীয় সিন্ডিকেট। একবার বহিষ্কার করে, আবার ফিরিয়ে আনা হয়। আসলে কোথাও নৈতিকতার ভিত্তি নেই তো, সেজন্য এই অবস্থা।

ভুয়া নথিপত্রে মিলছে ঋণ, সঠিকে জটিলতা

কোন পথে বিএনপির রাজনীতি

আপডেট সময় : ০৭:১০:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ মে ২০২৪

◉ অব্যাহত ভোট বর্জনের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে নানা প্রশ্ন
◉ উপজেলায় ভোট করতে বহিষ্কার-শোকজ পরোয়া করছেন না তৃণমূল নেতাকর্মীরা
◉ স্থানীয় প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় নেতাদের বহিষ্কারে বাড়ছে গ্রুপিং ও হতাশা

◼ দল করতে হলে দলের শৃঙ্খলা মানতে হবেÑ রুহুল কবির রিজভী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, বিএনপি
◼ বিএনপি নির্বাচনে না আসায় আওয়ামী লীগও সংকটে ড. বদিউল আলম মজুমদার, সম্পাদক, সুজন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় চলমান চার দফায় আয়োজিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি। শুধু বর্জন নয়, দলের কেউ যাতে এই নির্বাচনে প্রার্থী না হয় সেজন্য কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি সাধারণ জনগণকে এই ভোট বর্জনের জন্য গণসংযোগ করছে দলটি। তবে অব্যাহতভাবে ভোট বর্জনের এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে দলের পাশাপাশি রাজনৈতিক সচেতন মহলে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝেও এ নিয়ে বিভেদ দেখা দিয়েছে। সেজন্য দলের শোকজ আর বহিষ্কারের মতো কঠোর সিদ্ধান্তকে পরোয়া না করে অনেকেই প্রার্থী হচ্ছেন উপজেলা নির্বাচনে। আর দলের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে প্রভাবশালী ও দীর্ঘদিনের জনপ্রিয় নেতাদেরকে একের পর এক বহিষ্কারের ঘটনায় সাধারণ নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশার পাশাপাশি গ্রুপিং তৈরি হচ্ছে। বিএনপির ভেতরে সৃষ্ট এই বিভেদকে কাজে লাগাতে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকেও নানা তৎপরতা চলছে বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় দলটির ভবিষ্যৎ রাজনীতি কোন দিকে যাচ্ছে তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে চরম হতাশা ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।

যদিও জাতীয় নির্বাচনের মতো চলমান উপজেলা নির্বাচন বর্জন এবং দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষাকারীদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে মনে করছে বিএনপির হাইকমান্ড। এ বিষয়ে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচন করার পরে আবার উপজেলা নির্বাচন করছেন। এ নির্বাচনও ডামি। বর্তমানে দেশের জনগণ ভোট দিতে পারে না। তাদের পছন্দের প্রতিনিধি বানাতে পারে না। দেশের গণতন্ত্রকামী কোনো দল এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, দল করতে হলে দলের শৃঙ্খলা মানতে হবে। দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন করবে না। দলের চেয়ে নির্বাচনই যদি বড় হয়, তাহলে তো তাদের আগে পদত্যাগ করা উচিত। আপনি দল করবেন, আবার দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না, এটা হতে পারে না।

দলীয় সূত্রমতে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় এ পর্যন্ত দলের ১৩৩ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। প্রথম ধাপে ৭২ জনের পর গত শনিবার আরও ৬১ জনকে বহিষ্কার করা হয়। তারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে ২৬ জন চেয়ারম্যান পদে, ১৯ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ১৬ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী। সূত্রমতে, তৃতীয় ধাপেও দলের বিপুলসংখ্যক নেতা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। তাদের নাম-পদবি প্রকাশ করে শিগগিরই সাংগঠনিক ব্যবস্থা ঘোষণা করা হবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দলীয় নির্দেশ লংঘনকারী নেতাদের বহিষ্কারের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে নির্বাচন বর্জনের আহবানও চালাচ্ছে বিএনপি, যাতে ভোটে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি কম হয়। বিরোধী দলের অংশগ্রহণবিহীন ক্ষমতাসীনদের এই ভোটের প্রেক্ষাপটে বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতাদের ধারণা, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো এবারের উপজেলা পরিষদের নির্বাচনেও সাধারণ মানুষ সাড়া দেবেন না। সে জন্য নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নেতাদের ব্যাপারে নীতিনির্ধারকরা এতটা কঠোর।

তবে বহিষ্কারের মতো কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েও বিএনপির নেতাদের উপজেলা নির্বাচন থেকে পুরোপুরি ফেরানো যাচ্ছে না। দলের অনিশ্চিত এই সিদ্ধান্ত না মেনে চলমান সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তি ও জয়ের আশায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন অনেকে। এরমধ্যে বহিষ্কার এড়াতে কেউ কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলেও বেশিরভাগই অনড় অবস্থানে থাকছেন।
দলটির নেতারা বলছেন, খুব কমসংখ্যক প্রার্থীকে বুঝিয়ে নির্বাচন থেকে ফেরানো যাচ্ছে। তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করার পাশাপাশি সাংগঠনিক ব্যবস্থাকেও আমলে নিচ্ছেন না।
জানা গেছে, প্রথম ধাপে প্রার্থীদের থামাতে বিএনপির নেতৃত্বের তৎপরতা তেমন একটা কাজে লাগেনি। বোঝানোর পর মাত্র ১৬ জন নেতা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। শেষ পর্যন্ত প্রথম ধাপে ৭২ জনকে বহিষ্কার করতে হয়। একইভাবে দ্বিতীয় ধাপে মাত্র ১২ জন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। এই ধাপের প্রার্থী হওয়া ৬১ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপেও বিএনপির নেতাদের অনেকে প্রার্থী হতে মাঠে তৎপর রয়েছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন বর্জনের অবস্থানে থাকা দলটির বহিষ্কারের সংখ্যা দীর্ঘ হবে। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে যারা ভোটে অংশ নিচ্ছেন, তাদের নিয়ে কাজ করছেন, বিএনপির এমন নেতাদের অনুমান, উপজেলা নির্বাচনের শেষ ধাপ পর্যন্ত বহিষ্কারের সংখ্যা দুই থেকে আড়াই শতে গিয়ে ঠেকতে পারে। যদিও দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় বহিষ্কারের এই সংখ্যাকে গুরুত্ব দিতে চাইছে না বিএনপির নেতৃত্ব। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কারণে কিছু নেতা বহিষ্কারের ফলে সাংগঠনিক ভিত্তি কিছুটা দুর্বল হতে পারে, যা দলকে উপেক্ষা করতে হচ্ছে সচেতনভাবে।
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, এবার কমবেশি ৪৮০ উপজেলা পরিষদে ৪ ধাপে ভোট হবে। প্রথম ধাপে ভোট হবে ৮ মে। এরপর ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে, ২৯ মে তৃতীয় ও আগামী ৫ জুন চতুর্থ ধাপের নির্বাচন হবে। ইতিমধ্যে সব ধাপের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।

সূত্রমতে, বিভিন্ন সময় দেশ চালানো দল বিএনপি এখন একটানা দেড়যুগ রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগ একটানা চার মেয়াদে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকলেও তাদের দুই মেয়াদে সম্পূর্ণ সংসদের বাইরে রয়েছে বিএনপি। এমনকি আওয়ামী লীগের অধীনে অনুষ্ঠিত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে দলটি। একইভাবে সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন নির্বাচনও বর্জন করছে বিএনপি। এ অবস্থায় দলটির ভবিষ্যৎ রাজনীতি কোন দিকে যাচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার ও রাজনীতি বিশ্লেষক, সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার সবুজ বাংলাকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে না আসলে তা আওয়ামী লীগের জন্যও সংকট। কারণ এই নির্বাচনটাকে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও অংশগ্রহণমূলক হিসেবে দেখাতে পারছে না। শুধু তাই নয়, এখন আওয়ামী লীগ-আওয়ামী লীগে যেভাবে মারামারি হচ্ছে, তাতে দলটি সংকটে আছে। তবে সবচেয়ে বড় সংকটে আছি আমরা নাগরিকরা। কারণ নির্বাচন ব্যবস্থা এখন নির্বাসনে গেছে। আমরাই বিপদে আছি। যে লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধারা জীবন দিয়েছিলেন তা থেকে আমরা যোজন যোজন দূরে আছি।
তিনি বলেন, বিএনপির কিছু লোক যে ভোটে দাঁড়াচ্ছে তাতে দলের কোনো ক্ষতি হবে না। আসলে এটা একটা দলীয় সিন্ডিকেট। একবার বহিষ্কার করে, আবার ফিরিয়ে আনা হয়। আসলে কোথাও নৈতিকতার ভিত্তি নেই তো, সেজন্য এই অবস্থা।