০৪:১৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাধারণ মানুষকে দূরে রেখে আখেরে কেউ লাভবান হয় না

বাংলাদেশের বাইরে ষড়যন্ত্র, ভেতরে তৃণমূল পর্যায়ে নানা অসন্তোষ-উত্তেজনা। পত্র-পত্রিকায় দেশের এ ধরনের পরিস্থিতি প্রায়ই উঠে আসছে। তবু সরকার নির্বিকার থেকে রাষ্ট্র পরিচালনা করে যাচ্ছে। সরকারের দৃষ্টি ডানে-বামে-পেছনে নয়, সামনের দিকে। সরকারের এমন অবস্থা দেখে বিশ্লেষকমহলে কিছু নেতিবাচক মন্তব্য থাকলেও সরকার তা আমলে নিচ্ছে না। বরং সরকার প্রধান বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিবার নির্বাচনের সময় চক্রান্ত হয়, সেটা মোকাবিলা করে আমরা বেরিয়ে আসি। আমাদের তা ধরে রাখতে হবে।

বাংলাদেশের মানুষ রক্ত দিয়ে যে অধিকারগুলো আদায় করেছিল, সেটা আমরা সমুন্নত করতে পেরেছি। কিন্তু আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, জনগণকে সুন্দর ও উন্নত জীবন দিতে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগ দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবে।

১৭ মে (শুক্রবার) গণভবনে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের নেতারা শুভেচ্ছা জানাতে গেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। এদিকে, বিরোধীদলীয় বিভিন্ন সভা-সমাবেশে যেসব কথাবার্তা হচ্ছে, সেসব কথাবার্তা থেকে মনে হতে পারে, ‘সরকারের আয়ু হয়তো একটি রাতও কাটবে না। নতুন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে হয়তো নতুন সরকারও দেখা যাবে।’ এই আশা তাদের পূরণ হয়নি, সহসা পূরণের লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না।

এবার আসা যাক, গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন এবং চলতি মে মাস থেকে সাত ধাপের উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটে ভোটার উপস্থিতি আশাব্যঞ্জক মনে না হলেও সরকারের পক্ষে দেখানো হয়েছে ভিন্ন অজুহাত। জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিসহ অনেকগুলো দলের নির্বাচনে যোগ না দেওয়া এবং স্থানীয় নির্বাচনে ধানকাটা এবং বৈরী আবহাওয়াকে কম ভোটার ভোটকেন্দ্রে আসার মূল কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে অনেকেই ইসির এই যুক্তিকে খোঁড়া যুক্তি বলে মনে করছেন। অনেকেই মনে করেন, ভোটের প্রতি মানুষের আস্থা নেই। তাদের যুক্তি, যে নির্বাচনে ভোটের ফলাফল নির্বাচনের আগেই সাধারণ ভোটারদের কাছে জানাজানি হয়ে যায়, সে নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার কোনো যুক্তি খুঁজে পান না তারা। তাই যুক্তিসংগতভাবেই ভোটার উপস্থিতি কম হয়।

অন্যদিকে ভারত-চীন-রাশিয়ার বাংলাদেশ নিয়ে ষড়যন্ত্রের কথাও শোনা যায়। ইলেকশনের সময় যখন ঘনিয়ে আসে, বাংলাদেশে তখন যেন ষড়যন্ত্রের বান বয়ে যায়। বর্তমান সময় ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধে বিশ্ব রাজনীতির মানচিত্রই যেন পাল্টে যাচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে তিনটি ঘোষিত যুদ্ধ চলছে। একদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন; অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়া-সৌদি আরব। এসব যুদ্ধে শিশু-নারী- বৃদ্ধদের প্রাণহানি ঘটছে অসহায়ের মতো।

 

যদিও যুদ্ধ কখনো মানবকল্যাণে বা সভ্যতা রক্ষার কাজে সংঘটিত হয়নি। যুদ্ধ মানেই ধ্বংস। যুদ্ধ মানেই প্রাণহানি, রক্তপাত। মানবসভ্যতার সামনে দু-দুটি বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ স্মৃতি এখনো বিদ্যমান। তারপরও মানুষের রক্তে বুঝি শান্তির চেয়ে প্রাণ সংহারের উপাদানই বেশি। তাই তো মানবসভ্যতার শত্রু যুদ্ধই বুঝি মানুষকে শান্তির চেয়ে যুদ্ধের দিকেই টানে বেশি। নইলে কমনওয়েলথ, জাতিসংঘ স্থাপন করা হলো শুধু শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। কিন্তু যুদ্ধ ঠেকানো যাচ্ছে না। ফলে শান্তিময় একটি বিশ্ব প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব হয়ে উঠছে। প্রকৃত অর্থে বিশ্ব পরিমণ্ডল বা দেশের সংঘাতময় পরিস্থিতিতে আমরা যে যতই শান্তির জন্য চোখের পানি ফেলি, কিন্তু সময়কালে তাতে সাধারণ মানুষের স্বার্থের বিষয়টি বিবেচিত হয় না।

তাদের কথা ভাবাও না। সব সময় বিবেচনা করা হয়, কোন বন্দরে নাও ভেড়ালে ক্ষমতার আসন পক্ষে শক্ত হবে, স্থায়ী হবে। বিশেষ করে, আমাদের রাজনীতিবিদরা যে অহরহ সাধারণ মানুষের কথা বলেন, কার্যত তাদের কাছ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত তারা নেন না। বড় কোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে একসময় গণমানুষের কাছ থেকে মতামত গ্রহণ করা হতো। সেটাও আজ আর নেই। গণমানুষ এখন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় কোনো বিষয় নয়। যদিও শাশ্বত সত্য, দেশের সাধারণ মানুষকে দূরে রেখে আখেরে কেউ কখনো লাভবান হয় না। বিষয়টা আমাদের রাজনীতিবিদরা যত দ্রুত ভাববেন, তত দ্রুত লাভবান হবেন। রাজনীতিবিদ আরও দেশের আপামর সাধারণ জনগণের সেতুবন্ধনে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের আশা করা যেতে পারে।

 

উপসংহার : আমরা সেই প্রত্যাশা দূঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে আমাদের রাজনীতিবিদদের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কাজ করলে হবে না; জনগণের ইচ্ছাশক্তিকে সম্মান জানিয়ে রাজনীতি করলেই দেশে প্রকৃত কল্যাণ আসবে।

লেখক : ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, দৈনিক সবুজ বাংলা

জনপ্রিয় সংবাদ

একনেক সভায় ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকার ২২ প্রকল্প অনুমোদন

সাধারণ মানুষকে দূরে রেখে আখেরে কেউ লাভবান হয় না

আপডেট সময় : ০৬:১৪:১৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪

বাংলাদেশের বাইরে ষড়যন্ত্র, ভেতরে তৃণমূল পর্যায়ে নানা অসন্তোষ-উত্তেজনা। পত্র-পত্রিকায় দেশের এ ধরনের পরিস্থিতি প্রায়ই উঠে আসছে। তবু সরকার নির্বিকার থেকে রাষ্ট্র পরিচালনা করে যাচ্ছে। সরকারের দৃষ্টি ডানে-বামে-পেছনে নয়, সামনের দিকে। সরকারের এমন অবস্থা দেখে বিশ্লেষকমহলে কিছু নেতিবাচক মন্তব্য থাকলেও সরকার তা আমলে নিচ্ছে না। বরং সরকার প্রধান বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিবার নির্বাচনের সময় চক্রান্ত হয়, সেটা মোকাবিলা করে আমরা বেরিয়ে আসি। আমাদের তা ধরে রাখতে হবে।

বাংলাদেশের মানুষ রক্ত দিয়ে যে অধিকারগুলো আদায় করেছিল, সেটা আমরা সমুন্নত করতে পেরেছি। কিন্তু আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, জনগণকে সুন্দর ও উন্নত জীবন দিতে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগ দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবে।

১৭ মে (শুক্রবার) গণভবনে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের নেতারা শুভেচ্ছা জানাতে গেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। এদিকে, বিরোধীদলীয় বিভিন্ন সভা-সমাবেশে যেসব কথাবার্তা হচ্ছে, সেসব কথাবার্তা থেকে মনে হতে পারে, ‘সরকারের আয়ু হয়তো একটি রাতও কাটবে না। নতুন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে হয়তো নতুন সরকারও দেখা যাবে।’ এই আশা তাদের পূরণ হয়নি, সহসা পূরণের লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না।

এবার আসা যাক, গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন এবং চলতি মে মাস থেকে সাত ধাপের উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটে ভোটার উপস্থিতি আশাব্যঞ্জক মনে না হলেও সরকারের পক্ষে দেখানো হয়েছে ভিন্ন অজুহাত। জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিসহ অনেকগুলো দলের নির্বাচনে যোগ না দেওয়া এবং স্থানীয় নির্বাচনে ধানকাটা এবং বৈরী আবহাওয়াকে কম ভোটার ভোটকেন্দ্রে আসার মূল কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে অনেকেই ইসির এই যুক্তিকে খোঁড়া যুক্তি বলে মনে করছেন। অনেকেই মনে করেন, ভোটের প্রতি মানুষের আস্থা নেই। তাদের যুক্তি, যে নির্বাচনে ভোটের ফলাফল নির্বাচনের আগেই সাধারণ ভোটারদের কাছে জানাজানি হয়ে যায়, সে নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার কোনো যুক্তি খুঁজে পান না তারা। তাই যুক্তিসংগতভাবেই ভোটার উপস্থিতি কম হয়।

অন্যদিকে ভারত-চীন-রাশিয়ার বাংলাদেশ নিয়ে ষড়যন্ত্রের কথাও শোনা যায়। ইলেকশনের সময় যখন ঘনিয়ে আসে, বাংলাদেশে তখন যেন ষড়যন্ত্রের বান বয়ে যায়। বর্তমান সময় ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধে বিশ্ব রাজনীতির মানচিত্রই যেন পাল্টে যাচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে তিনটি ঘোষিত যুদ্ধ চলছে। একদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন; অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়া-সৌদি আরব। এসব যুদ্ধে শিশু-নারী- বৃদ্ধদের প্রাণহানি ঘটছে অসহায়ের মতো।

 

যদিও যুদ্ধ কখনো মানবকল্যাণে বা সভ্যতা রক্ষার কাজে সংঘটিত হয়নি। যুদ্ধ মানেই ধ্বংস। যুদ্ধ মানেই প্রাণহানি, রক্তপাত। মানবসভ্যতার সামনে দু-দুটি বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ স্মৃতি এখনো বিদ্যমান। তারপরও মানুষের রক্তে বুঝি শান্তির চেয়ে প্রাণ সংহারের উপাদানই বেশি। তাই তো মানবসভ্যতার শত্রু যুদ্ধই বুঝি মানুষকে শান্তির চেয়ে যুদ্ধের দিকেই টানে বেশি। নইলে কমনওয়েলথ, জাতিসংঘ স্থাপন করা হলো শুধু শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। কিন্তু যুদ্ধ ঠেকানো যাচ্ছে না। ফলে শান্তিময় একটি বিশ্ব প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব হয়ে উঠছে। প্রকৃত অর্থে বিশ্ব পরিমণ্ডল বা দেশের সংঘাতময় পরিস্থিতিতে আমরা যে যতই শান্তির জন্য চোখের পানি ফেলি, কিন্তু সময়কালে তাতে সাধারণ মানুষের স্বার্থের বিষয়টি বিবেচিত হয় না।

তাদের কথা ভাবাও না। সব সময় বিবেচনা করা হয়, কোন বন্দরে নাও ভেড়ালে ক্ষমতার আসন পক্ষে শক্ত হবে, স্থায়ী হবে। বিশেষ করে, আমাদের রাজনীতিবিদরা যে অহরহ সাধারণ মানুষের কথা বলেন, কার্যত তাদের কাছ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত তারা নেন না। বড় কোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে একসময় গণমানুষের কাছ থেকে মতামত গ্রহণ করা হতো। সেটাও আজ আর নেই। গণমানুষ এখন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় কোনো বিষয় নয়। যদিও শাশ্বত সত্য, দেশের সাধারণ মানুষকে দূরে রেখে আখেরে কেউ কখনো লাভবান হয় না। বিষয়টা আমাদের রাজনীতিবিদরা যত দ্রুত ভাববেন, তত দ্রুত লাভবান হবেন। রাজনীতিবিদ আরও দেশের আপামর সাধারণ জনগণের সেতুবন্ধনে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের আশা করা যেতে পারে।

 

উপসংহার : আমরা সেই প্রত্যাশা দূঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে আমাদের রাজনীতিবিদদের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কাজ করলে হবে না; জনগণের ইচ্ছাশক্তিকে সম্মান জানিয়ে রাজনীতি করলেই দেশে প্রকৃত কল্যাণ আসবে।

লেখক : ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, দৈনিক সবুজ বাংলা