০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হুন্ডিতে বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

◉হুন্ডি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা উদ্যোগ ফলশূন্য
◉ ব্যাংকের চেয়ে সহজ হুন্ডিতে লেনদেন, প্রবাসীদের আগ্রহ বাড়ছে
◉ হুন্ডিতে ডলারপ্রতি ৫-৭ টাকা বেশি পাচ্ছেন প্রবাসীরা
◉ ভারতীয় একটি চক্রের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানো হয়

◼ বৈধ চ্যানেল ব্যবহারে উৎসাহিত করতে বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা জরুরিÑ অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান, ফেলো, সিপিডি
◼হুন্ডির কারবার ঠেকাতে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে মামুন রশীদ, অর্থনীতি বিশ্লেষক

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগ আসে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স থেকে। তবে হুন্ডির করালগ্রাসে রেমিট্যান্সে বারবার ছন্দপতন ঘটে। হুন্ডি ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক নানা উদ্যোগ নিলেও কার্যত ফল শূন্য।
হুন্ডি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নানা সুবিধা পাওয়ায় প্রবাসী কর্মীরা হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে বেশি আগ্রহী। বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে পাঁচ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী রেমিট্যান্স বাড়ছে না।

বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য মতে, দেড় কোটি বাংলাদেশি কাজ নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আছেন। যদিও প্রবাসীদের সংখ্যা নিয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে। প্রবাসে আমাদের বিপুল শ্রমশক্তি থাকলেও মিলছে না কাক্সিক্ষত রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়।
প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী বিদেশে পাড়ি জমালেও সেই তুলনায় রেমিট্যান্স উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি। বিএমইটির তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালে প্রায় ২ লাখ ১৭ হাজার নতুন অভিবাসী বিদেশে যান। আর ২০২১ সালে দেশে রেমিট্যান্স আসে প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে নতুন অভিবাসীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় তিন গুণ। অথচ ২০২২ সালে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ২১ বিলিয়ন ডলার। আবার ২০২২ সালে নতুন অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ১১ লাখের বেশি। কিন্তু সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। বছর শেষে সব মিলিয়ে ২১ থেকে ২২ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
এছাড়া ব্যাংক বা মানি এক্সচেঞ্জ হাউস মূলত কর্মস্থল থেকে দূরে হওয়ায় অর্থ পাঠাতে তাদের ছুটি নিতে হয়। এতে যাতায়াত খরচও হয়। ফলে ব্যাংক বা মানি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে গেলে তাদের আর্থিক ক্ষতি হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান ছুটি নিলে মজুরি কেটে রাখে। অন্যদিকে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের নেটওয়ার্ক দুর্গম অঞ্চলেও বিস্তৃত। তারা অভিবাসীদের স্বল্প সময়ে ও খরচে দেশে টাকা পাঠানোর নিশ্চয়তা দেয়।
প্রবাসীদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হুন্ডি ব্যবসায়ীরা অভিবাসীদের নানাভাবে প্রলুব্ধ করেন। এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হুন্ডি ঠেকাতে সরকারের যথেষ্ট পদক্ষেপ নেই। অর্থ পাচার ও দেশের ব্যাংকিং খাতে নানা অনিয়ম দুর্নীতি, একাধিক ব্যাংকের একীভূতকরণে প্রবাসীরা আস্থা সংকটে ভুগছেন।

নর্থ সাউথ বিশ^বিদ্যালয়ের একটি সংস্থার জরিপে অভিবাসীরা বলেন, সরকার আমাদের বৈধ পথে টাকা পাঠাতে বলে, অথচ পত্রপত্রিকা খুললে দেখি প্রচুর অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে। আমাদের থেকে বারবার দেশপ্রেম আশা করে সরকার। এছাড়া দেশ ও দেশের অর্থনীতি নিয়ে অভিবাসীদের পরিষ্কার কোনো ধারণা নেই। অথচ এই ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে সরকারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
নর্থ সাউথের ওই গবেষণায় উঠে এসেছে, বছরের পর বছর দেশে নিয়মিত রেমিট্যান্স পাঠানো প্রবাসীদের জন্য উৎসাহমূলক তেমন কিছুই নেই। গবেষণায় বলা হয়, হুন্ডি ব্যবসায়ীদের অনেকেই ভারতীয়, যারা বাংলাদেশে নিয়মিত টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করে দেন। তারা অভিবাসী শ্রমিকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে স্বল্প খরচে দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। বিভিন্ন উপলক্ষে তারা শ্রমিকদের আর্থিক উপহার দেন। এই ভারতীয় ব্যবসায়ীদের নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বিস্তৃত।

এদিকে সরকার গত বছর বৈধভাবে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানোর জন্য ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া শুরু করেছে। এতে রেমিট্যান্স বাড়লেও তা আশানুরূপ নয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকিংয়ের চেয়ে খোলাবাজারে ডলারের রেট অনেক বেশি। ফলে প্রবাসীদের হুন্ডিতে টাকা পাঠাতে আগ্রহ বাড়ছে। প্রবাসী আয়ের যে হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার তাতে প্রতি ডলারের বিনিময়ে ব্যাংক থেকে খোলাবাজারে ৪-৬ টাকা বেশি পাওয়া যায়। ফলে আগে যারা বৈধ চ্যানেল ব্যবহার করে টাকা পাঠাতেন, তারা এখন হুন্ডির পথ বেছে নিয়েছেন।
তাদের মতে, কিছু প্রবাসীর বৈধ কাগজপত্র থাকে না। ফলে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠানো সম্ভব হয় না। তারা হুন্ডিতে টাকা পাঠাতে বাধ্য হন। তাছাড়া প্রবাসীদের একটা বড় অংশ অল্প শিক্ষিত। ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করা কিংবা টাকা পাঠাতে তাদের আগ্রহ কম থাকে। বিপরীতে হুন্ডিতে টাকা পাঠানো সহজ। যার মাধ্যমে টাকা পাঠানো হয়, তিনি সরাসরি ওই দেশের মুদ্রা নিয়ে দেশে টাকা দেন। এতে কোনো ঝামেলাই হয় না।
সৌদি আরব প্রবাসী আবু জাফর বলেন, প্রথম দিকে ব্যাংকে টাকা পাঠাতাম। কিন্তু হিসাব করে দেখলাম হুন্ডিতে টাকা পাঠালে ৫-৭ হাজার টাকা বেশি লাভ হয়। তাই কয়েকমাস ধরে এভাবে টাকা পাঠাচ্ছি।
ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক মামুন রশীদ হুন্ডি ঠেকাতে সরকারকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোকে আরও তৎপরতা দেখাতে হবে। এ কাজে বিশ্বব্যাংকেরও সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। হুন্ডিকে চতুরভাবে উৎসাহিত করার কাজে যুক্ত কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংক বা তাদের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা থাকতে পারে।

এদিকে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, যারা দেশে রেমিট্যান্স পাঠায়, তাদেরকে বৈধ চ্যানেল ব্যবহারে উৎসাহিত করতে বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা জরুরি। বৈদেশিক মুদ্রার বাজারের সাম্প্রতিক অস্থিরতার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ডলারের বিনিময় হারের ক্ষেত্রে বৈধ ও অবৈধ চ্যানেলের মধ্যে ব্যবধান ২-৩ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়।

সভ্য ও মার্জিত সমাজ গঠনে সুশিক্ষিত জাতি গড়ে তুলতে হবে- মোতাহার হোসেন পাটওয়ারী

হুন্ডিতে বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

আপডেট সময় : ০৭:১২:৪২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ মে ২০২৪

◉হুন্ডি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা উদ্যোগ ফলশূন্য
◉ ব্যাংকের চেয়ে সহজ হুন্ডিতে লেনদেন, প্রবাসীদের আগ্রহ বাড়ছে
◉ হুন্ডিতে ডলারপ্রতি ৫-৭ টাকা বেশি পাচ্ছেন প্রবাসীরা
◉ ভারতীয় একটি চক্রের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানো হয়

◼ বৈধ চ্যানেল ব্যবহারে উৎসাহিত করতে বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা জরুরিÑ অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান, ফেলো, সিপিডি
◼হুন্ডির কারবার ঠেকাতে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে মামুন রশীদ, অর্থনীতি বিশ্লেষক

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগ আসে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স থেকে। তবে হুন্ডির করালগ্রাসে রেমিট্যান্সে বারবার ছন্দপতন ঘটে। হুন্ডি ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক নানা উদ্যোগ নিলেও কার্যত ফল শূন্য।
হুন্ডি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নানা সুবিধা পাওয়ায় প্রবাসী কর্মীরা হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে বেশি আগ্রহী। বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে পাঁচ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী রেমিট্যান্স বাড়ছে না।

বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য মতে, দেড় কোটি বাংলাদেশি কাজ নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আছেন। যদিও প্রবাসীদের সংখ্যা নিয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে। প্রবাসে আমাদের বিপুল শ্রমশক্তি থাকলেও মিলছে না কাক্সিক্ষত রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়।
প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী বিদেশে পাড়ি জমালেও সেই তুলনায় রেমিট্যান্স উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি। বিএমইটির তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালে প্রায় ২ লাখ ১৭ হাজার নতুন অভিবাসী বিদেশে যান। আর ২০২১ সালে দেশে রেমিট্যান্স আসে প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে নতুন অভিবাসীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় তিন গুণ। অথচ ২০২২ সালে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ২১ বিলিয়ন ডলার। আবার ২০২২ সালে নতুন অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ১১ লাখের বেশি। কিন্তু সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। বছর শেষে সব মিলিয়ে ২১ থেকে ২২ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
এছাড়া ব্যাংক বা মানি এক্সচেঞ্জ হাউস মূলত কর্মস্থল থেকে দূরে হওয়ায় অর্থ পাঠাতে তাদের ছুটি নিতে হয়। এতে যাতায়াত খরচও হয়। ফলে ব্যাংক বা মানি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে গেলে তাদের আর্থিক ক্ষতি হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান ছুটি নিলে মজুরি কেটে রাখে। অন্যদিকে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের নেটওয়ার্ক দুর্গম অঞ্চলেও বিস্তৃত। তারা অভিবাসীদের স্বল্প সময়ে ও খরচে দেশে টাকা পাঠানোর নিশ্চয়তা দেয়।
প্রবাসীদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হুন্ডি ব্যবসায়ীরা অভিবাসীদের নানাভাবে প্রলুব্ধ করেন। এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হুন্ডি ঠেকাতে সরকারের যথেষ্ট পদক্ষেপ নেই। অর্থ পাচার ও দেশের ব্যাংকিং খাতে নানা অনিয়ম দুর্নীতি, একাধিক ব্যাংকের একীভূতকরণে প্রবাসীরা আস্থা সংকটে ভুগছেন।

নর্থ সাউথ বিশ^বিদ্যালয়ের একটি সংস্থার জরিপে অভিবাসীরা বলেন, সরকার আমাদের বৈধ পথে টাকা পাঠাতে বলে, অথচ পত্রপত্রিকা খুললে দেখি প্রচুর অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে। আমাদের থেকে বারবার দেশপ্রেম আশা করে সরকার। এছাড়া দেশ ও দেশের অর্থনীতি নিয়ে অভিবাসীদের পরিষ্কার কোনো ধারণা নেই। অথচ এই ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে সরকারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
নর্থ সাউথের ওই গবেষণায় উঠে এসেছে, বছরের পর বছর দেশে নিয়মিত রেমিট্যান্স পাঠানো প্রবাসীদের জন্য উৎসাহমূলক তেমন কিছুই নেই। গবেষণায় বলা হয়, হুন্ডি ব্যবসায়ীদের অনেকেই ভারতীয়, যারা বাংলাদেশে নিয়মিত টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করে দেন। তারা অভিবাসী শ্রমিকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে স্বল্প খরচে দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। বিভিন্ন উপলক্ষে তারা শ্রমিকদের আর্থিক উপহার দেন। এই ভারতীয় ব্যবসায়ীদের নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বিস্তৃত।

এদিকে সরকার গত বছর বৈধভাবে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানোর জন্য ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া শুরু করেছে। এতে রেমিট্যান্স বাড়লেও তা আশানুরূপ নয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকিংয়ের চেয়ে খোলাবাজারে ডলারের রেট অনেক বেশি। ফলে প্রবাসীদের হুন্ডিতে টাকা পাঠাতে আগ্রহ বাড়ছে। প্রবাসী আয়ের যে হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার তাতে প্রতি ডলারের বিনিময়ে ব্যাংক থেকে খোলাবাজারে ৪-৬ টাকা বেশি পাওয়া যায়। ফলে আগে যারা বৈধ চ্যানেল ব্যবহার করে টাকা পাঠাতেন, তারা এখন হুন্ডির পথ বেছে নিয়েছেন।
তাদের মতে, কিছু প্রবাসীর বৈধ কাগজপত্র থাকে না। ফলে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠানো সম্ভব হয় না। তারা হুন্ডিতে টাকা পাঠাতে বাধ্য হন। তাছাড়া প্রবাসীদের একটা বড় অংশ অল্প শিক্ষিত। ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করা কিংবা টাকা পাঠাতে তাদের আগ্রহ কম থাকে। বিপরীতে হুন্ডিতে টাকা পাঠানো সহজ। যার মাধ্যমে টাকা পাঠানো হয়, তিনি সরাসরি ওই দেশের মুদ্রা নিয়ে দেশে টাকা দেন। এতে কোনো ঝামেলাই হয় না।
সৌদি আরব প্রবাসী আবু জাফর বলেন, প্রথম দিকে ব্যাংকে টাকা পাঠাতাম। কিন্তু হিসাব করে দেখলাম হুন্ডিতে টাকা পাঠালে ৫-৭ হাজার টাকা বেশি লাভ হয়। তাই কয়েকমাস ধরে এভাবে টাকা পাঠাচ্ছি।
ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক মামুন রশীদ হুন্ডি ঠেকাতে সরকারকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোকে আরও তৎপরতা দেখাতে হবে। এ কাজে বিশ্বব্যাংকেরও সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। হুন্ডিকে চতুরভাবে উৎসাহিত করার কাজে যুক্ত কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংক বা তাদের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা থাকতে পারে।

এদিকে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, যারা দেশে রেমিট্যান্স পাঠায়, তাদেরকে বৈধ চ্যানেল ব্যবহারে উৎসাহিত করতে বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা জরুরি। বৈদেশিক মুদ্রার বাজারের সাম্প্রতিক অস্থিরতার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ডলারের বিনিময় হারের ক্ষেত্রে বৈধ ও অবৈধ চ্যানেলের মধ্যে ব্যবধান ২-৩ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়।