০৭:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তি নিয়ে উদ্বেগ নেই : অর্থ প্রতিমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়া নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই বলে জানিয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান। আইএমএফ নতুন করে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব আয় বাড়ানো, সুদহারের বিষয় নিয়ে পরামর্শ দিয়েছে। জলবায়ু ও দুর্যোগ মোকাবিলার পরামর্শ অনুসরণ করে চলতি বছরেই কাজ শুরু করবে সরকার। গতকাল বুধবার ঢাকায় সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।

 

 

গত ২৪ এপ্রিল থেকে টানা ১৫ দিন আইএমএফ প্রতিনিধিদল সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করে। তার সারমর্ম নিয়ে অর্থ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আজ বৈঠক করে ঢাকায় সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদল। আইএমএফ প্রতিনিধিদল অর্থ প্রতিমন্ত্রীর কাছে ঋণের শর্ত ও সংস্কারের কতটা অগ্রগতি এবং আরও কতটা করতে হবে সেই সুপারিশের মূল বিষয়গুলো তুলে ধরেন।

 

করের হার বা আওতা বাড়ানোর যে আলোচনা আছে, তাতে মানুষের কষ্ট বাড়বে কি? সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, শর্ত পূরণ করতে গিয়ে মানুষের জন্য ভোগান্তি হয় এমন কোনো পদক্ষেপ নেবে না বাংলাদেশ।

 

 

আইএমএফের প্রতিনিধিদলের সফর নিয়ে এদিন কথা বলেন অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদারও। তিনি জানান, ১০টির (শর্তের) মধ্যে বাংলাদেশ কেন একটি পূরণ করতে পারেনি তার সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পেরেছে বাংলাদেশ পক্ষ। সবকিছু ঠিক থাকলে আসছে জুনে রিজার্ভে যোগ হতে পারে তৃতীয় কিস্তির টাকা।

 

 

আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি শুরুর পর দুই কিস্তিতে ১০০ কোটি ডলারের বেশি পেয়েছে বাংলাদেশ। এবারের সফরে ঋণ পেতে বেঁধে দেওয়া শর্ত ও সংস্কার কতটা পূরণ হয়েছে সেসব বিষয় খতিয়ে দেখেছে আইএমএফের বিশেষজ্ঞ দল। মোটা দাগে বাজেটের আকার, রাজস্ব আয়, যৌক্তিক ভর্তুকি নির্ধারণ ও নিট রিজার্ভ নিয়ে নতুন করে লক্ষ্যমাত্রা ও সুপারিশ দিয়েছে এই প্রতিনিধিদল।

 

 

বাংলাদেশ পক্ষ বলছে, রিজার্ভ ছাড়া যেহেতু শর্তের অন্যান্য দিক পূরণ করা হয়েছে তাই ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়া নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। যদি এই রিভিউ মিশনের মূল্যায়নের পরিপ্রেক্ষিতে তৃতীয় কিস্তি ছাড় করে আইএমএফ, তাহলে সেটির পরিমাণ সব মিলিয়ে ৬৮ কোটি ডলার হতে পারে।

 

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের বৈঠকে আইএমএফের কর্মকর্তারা নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারার কারণ জানতে চেয়েছেন। এছাড়া প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায় না হওয়া, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসা, সুদের হার ও মুদ্রা বিনিময় হার এখনো পুরোপুরি বাজারভিত্তিক না হওয়ার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনতে বিভিন্ন ধরনের কর ছাড় সুবিধায় কাটছাঁট করা, ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনা, জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন মিশন কর্মকর্তারা।

 

 

 

চলতি মে মাসের শেষ দিকে কিংবা আগামী জুনের শুরুতে তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করতে পারে আইএমএফ। বাংলাদেশের জন্য অনুমোদন করা ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত পূরণের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে আইএমএফের প্রতিনিধিদল ঢাকায় তাদের মিশন পরিচালনা করে। আইএমএফের এবারের ১০ সদস্যের মিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংস্থাটির গবেষণা শাখার উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও। এর আগের মিশনে তিনি ডেপুটি চিফ হিসেবে ছিলেন। গত ২৪ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে আইএমএফের এবারের মিশন শুরু হয়। এরপর মিশনের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, পেট্রোবাংলা, বিপিসিসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠক হয় বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী ও গবেষণা সংস্থার সঙ্গেও। মিশন শেষে সংস্থাটির কর্মকর্তারা আইএমএফ পরিষদের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে। এর ভিত্তিতে আইএমএফের পরিষদ তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

 

 

 

গত বছরের জানুয়ারিতে ঋণ অনুমোদনের সময় আইএমএফ বাংলাদেশকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারের নিট রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল। যদিও দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের সময় এ লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করে দেয় সংস্থাটি। তবে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুসারেও রিজার্ভ সংরক্ষণে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। এ বছরের মার্চে ১৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলারের নিট রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ করা যায়নি। কিউপিসির অন্তর্ভুক্ত প্রাইমারি ব্যালান্স ও এক্সটার্নাল পেমেন্টস অ্যারিয়ার্স সংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পেরেছে বাংলাদেশ।

জনপ্রিয় সংবাদ

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গেল তিন বছরে ১৫ হাজার টন ই-বর্জ্য আমদানি

আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তি নিয়ে উদ্বেগ নেই : অর্থ প্রতিমন্ত্রী

আপডেট সময় : ০৭:০৬:১৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়া নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই বলে জানিয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান। আইএমএফ নতুন করে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব আয় বাড়ানো, সুদহারের বিষয় নিয়ে পরামর্শ দিয়েছে। জলবায়ু ও দুর্যোগ মোকাবিলার পরামর্শ অনুসরণ করে চলতি বছরেই কাজ শুরু করবে সরকার। গতকাল বুধবার ঢাকায় সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।

 

 

গত ২৪ এপ্রিল থেকে টানা ১৫ দিন আইএমএফ প্রতিনিধিদল সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করে। তার সারমর্ম নিয়ে অর্থ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আজ বৈঠক করে ঢাকায় সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদল। আইএমএফ প্রতিনিধিদল অর্থ প্রতিমন্ত্রীর কাছে ঋণের শর্ত ও সংস্কারের কতটা অগ্রগতি এবং আরও কতটা করতে হবে সেই সুপারিশের মূল বিষয়গুলো তুলে ধরেন।

 

করের হার বা আওতা বাড়ানোর যে আলোচনা আছে, তাতে মানুষের কষ্ট বাড়বে কি? সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, শর্ত পূরণ করতে গিয়ে মানুষের জন্য ভোগান্তি হয় এমন কোনো পদক্ষেপ নেবে না বাংলাদেশ।

 

 

আইএমএফের প্রতিনিধিদলের সফর নিয়ে এদিন কথা বলেন অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদারও। তিনি জানান, ১০টির (শর্তের) মধ্যে বাংলাদেশ কেন একটি পূরণ করতে পারেনি তার সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পেরেছে বাংলাদেশ পক্ষ। সবকিছু ঠিক থাকলে আসছে জুনে রিজার্ভে যোগ হতে পারে তৃতীয় কিস্তির টাকা।

 

 

আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি শুরুর পর দুই কিস্তিতে ১০০ কোটি ডলারের বেশি পেয়েছে বাংলাদেশ। এবারের সফরে ঋণ পেতে বেঁধে দেওয়া শর্ত ও সংস্কার কতটা পূরণ হয়েছে সেসব বিষয় খতিয়ে দেখেছে আইএমএফের বিশেষজ্ঞ দল। মোটা দাগে বাজেটের আকার, রাজস্ব আয়, যৌক্তিক ভর্তুকি নির্ধারণ ও নিট রিজার্ভ নিয়ে নতুন করে লক্ষ্যমাত্রা ও সুপারিশ দিয়েছে এই প্রতিনিধিদল।

 

 

বাংলাদেশ পক্ষ বলছে, রিজার্ভ ছাড়া যেহেতু শর্তের অন্যান্য দিক পূরণ করা হয়েছে তাই ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়া নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। যদি এই রিভিউ মিশনের মূল্যায়নের পরিপ্রেক্ষিতে তৃতীয় কিস্তি ছাড় করে আইএমএফ, তাহলে সেটির পরিমাণ সব মিলিয়ে ৬৮ কোটি ডলার হতে পারে।

 

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের বৈঠকে আইএমএফের কর্মকর্তারা নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারার কারণ জানতে চেয়েছেন। এছাড়া প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায় না হওয়া, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসা, সুদের হার ও মুদ্রা বিনিময় হার এখনো পুরোপুরি বাজারভিত্তিক না হওয়ার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনতে বিভিন্ন ধরনের কর ছাড় সুবিধায় কাটছাঁট করা, ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনা, জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন মিশন কর্মকর্তারা।

 

 

 

চলতি মে মাসের শেষ দিকে কিংবা আগামী জুনের শুরুতে তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করতে পারে আইএমএফ। বাংলাদেশের জন্য অনুমোদন করা ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত পূরণের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে আইএমএফের প্রতিনিধিদল ঢাকায় তাদের মিশন পরিচালনা করে। আইএমএফের এবারের ১০ সদস্যের মিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংস্থাটির গবেষণা শাখার উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও। এর আগের মিশনে তিনি ডেপুটি চিফ হিসেবে ছিলেন। গত ২৪ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে আইএমএফের এবারের মিশন শুরু হয়। এরপর মিশনের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, পেট্রোবাংলা, বিপিসিসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠক হয় বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী ও গবেষণা সংস্থার সঙ্গেও। মিশন শেষে সংস্থাটির কর্মকর্তারা আইএমএফ পরিষদের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে। এর ভিত্তিতে আইএমএফের পরিষদ তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

 

 

 

গত বছরের জানুয়ারিতে ঋণ অনুমোদনের সময় আইএমএফ বাংলাদেশকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারের নিট রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল। যদিও দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের সময় এ লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করে দেয় সংস্থাটি। তবে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুসারেও রিজার্ভ সংরক্ষণে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। এ বছরের মার্চে ১৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলারের নিট রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ করা যায়নি। কিউপিসির অন্তর্ভুক্ত প্রাইমারি ব্যালান্স ও এক্সটার্নাল পেমেন্টস অ্যারিয়ার্স সংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পেরেছে বাংলাদেশ।