▶উন্নয়ন ও সংস্কার কাজে হারিয়ে যাচ্ছে পার্ক-উদ্যান
▶সৌন্দর্যবর্ধনে বাদ পড়ছে সড়কে বড়গাছ
এপ্রিল মাসজুড়ে তাপপ্রবাহে নাভিশ্বাস উঠেছে রাজধানীবাসীর। ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে তাপমাত্রা। এ সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল রাজধানীতে গাছের অপ্রতুলতা। বিশেষ করে কর্মজীবী ও শ্রমজীবী মানুষ সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন। এ সময় গাছগাছালির শীতল ছায়া একটু জিড়িয়ে নিবেন তেমন সুযোগ নেই কংক্রিটে ঘেরা শহরজুড়ে। রাজাধানীর দুই সিটি কর্পোরেশন বিগত কয়েক বছরে লক্ষাধিক গাছ লাগানোর দাবি করলেও, তা কতটা পরিকল্পিত ছিল প্রশ্ন রয়েছে। কারণ উন্নয়ন ও সংস্কারের নামে রাজধানীর পার্কগুলো বিলীন হচ্ছে, আবার কোথাও সৌন্দর্যবর্ধনের নামে অপ্রয়জোনীয় গাছ রোপণ করা হয়েছে।
গবেষণা বলছে, ঢাকার মতো জনবহুল শহরে ২০ শতাংশ বনভূমি থাকা উচিত হলেও, আছে মাত্র ২ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী এনভায়রনমেন্টাল চ্যালেঞ্জ-এ প্রকাশিত ‘ঢাকা নগরের সবুজ এলাকার বর্তমান অবস্থা ও ঐতিহাসিক পরিবর্তন’ শিরোনামের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়, ১৯৮৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ে ঢাকায় ৫৬ শতাংশ গাছপালা কমে গেছে। পরের বছরগুলোয় ঢাকায় গাছপালা নতুন করে বাড়েনি; বরং আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের গবেষণা বলছে, এখন ঢাকার মাত্র ২ শতাংশ এলাকায় বনভূমি রয়েছে। আর এর ৭০ শতাংশই রয়েছে মিরপুর ও এর আশপাশের এলাকায়।
এমতাবস্থায়ও পরিকল্পিত সবুজায়নে ফিরতে পারছে না সিটি কর্পোরেশন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অদিদপ্তরগুলো। উপরন্তু উন্নয়ন ও সংস্কারের নামে নষ্ট হচ্ছে একটির পর একটি পার্ক। রাজধানীর ফার্মগেটে আনোয়ারা পার্কটি ছিল, সেখাানে এখন মেট্রোরেলের নির্মাণ সামগ্রী রাখা হয়েছে। এই পার্কে একটি প্লাজা তৈরির পরিকল্পনা মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের। কিন্তু একসময় এটি ছিল সবুজ গাছগাছালি ঘেরা।
কারওয়ান বাজারের সামনে অবস্থিত পান্থকুঞ্জ পার্ক একসময় খুব জনপ্রিয় ছিল। বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এই পার্কে ঘুরতে আসত। এরই মধ্যে এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প নির্মাণের জন্য পার্কের অনেক গাছ কাটা হয়েছে। গুলিস্তানের ওসমানি উদ্যানেরও বেহাল দশা। উন্নয়নের নামে নানা কর্মকাণ্ড করেও পার্কটির আগের চেহারা আর ফেরানো যায়নি। ২৪ একর জায়াগাজুড়ে উদ্যানটিতে ছিল একসময় বিভিন্ন প্রজাতির গাছগাছালি।
রাজধানীর ব্যস্ততম বনানী ওভারপাস টু এয়ারপোর্ট সড়কের দুইপাশে ছিল কৃষ্ণচূড়া, রাঁধাচূড়া এবং অন্যান্য নানান জাতের গাছ। সেসব গাছ কেটে সৌন্দর্য বর্ধনের নামে বিদেশ থেকে আমদানি করা বনসাই গাছ লাগানো হয়েছে। এখানেই শেষ নয় রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন পার্ক ও মাঠগুলোতেও নেই পরিকল্পিত সবুজায়ন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) ২০২৩ সালের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ঢাকার সবুজ এলাকা সবচেয়ে বেশি কমেছে। ১৯৯৫ সালে ঢাকা শহরে সবুজ এলাকা ও ফাঁকা জায়গা ছিল ৫২ বর্গ কিলোমিটারে বেশি। পরের পাঁচ বছরে এটি বেড়ে ৬০ বর্গকিলোমিটার ছাড়িয়েছিল। কিন্তু এরপর কমতে থাকে। ২০১৫ সালে ঢাকা শহরে দুই সিটি কর্পোরেশন নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলো ছাড়া সবুজ এলাকা ও ফাঁকা জায়গা ছিল ৫৩ দশমিক ১১ বর্গ কিলোমিটার। ২০২৩ সালে তা কমে ২৯ দশমিক ৮৫ বর্গকিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্স (বিআইপি)-এর প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, সংশ্লিষ্ট যারা তারা পার্ক-মাঠগুলো সংরক্ষণ করার ব্যপারে সচেতন না। তারা গুরুত্ব দিচ্ছে অবকাঠামোতে কিন্তু সবুজায়ন গুরুত্ব হারাচ্ছে। এই পার্কগুলো আমাদের ফুসফুস। এগুলো শুধু রক্ষা করা নয় পরিকল্পতি সবুজায়ন করতে হবে। আমাদের দেশীয় গাছ লাগাতে হবে যেগুলো তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে, ছায়া দেয়। ডিভাইডারে বড় গাছের সঙ্গে আমরা দীর্ঘদিন সহবস্থান করছি। ডিভাইডারে বড় গাছ লাগিয়ে কিভাবে সবুজায়ন বাড়ানো যায় সেভাবে পরিকল্পনা সাজাতে হবে। সিটি কর্পোরেশন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট যারা আছে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে।























