➣ অপরিচ্ছন্ন নগরীর বিভিন্ন এলাকা
➣ অপরিকল্পিত স্থানে কনটেইনার ও এসটিএস
➣ প্রশিক্ষণ নেই আবর্জনা সংগ্রহকারী কর্মীদের
পুরান ঢাকার বাংলাবাজার মোড়ে অবস্থিত রাজধানীর প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল। স্কুলটির সামনেই রাখা হয়েছে সিটি করপোরেশনের ময়লার কনটেইনার, এটি ব্যবহার করা হয় অস্থায়ী ভাগাড় হিসেবে। আশপাশের এলাকা থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করে কনটেইনারে জমা করা হয়। ভাগাড়ের আর্বজনা থেকে সৃষ্ট দুর্গন্ধে পাশ দিয়ে যাওয়া দায়। প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা নাক চেপে প্রবেশ করেন স্কুলে।
এমন দৃশ্য শুধু ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের সমনেই নয় রাজধানীজুড়ে অপরিকল্পিতভাবে যেখানে-সেখানে রাখা হয়েছে ময়লার কনটেইনার। এছাড়াও রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস)গুলোও প্রায়ই দেখা যায় অপরিকল্পিত জায়গা যেমন- হাসপাতাল, পার্ক, স্কুল কিংবা ব্যস্ত রাস্তার আশপাশে অবস্থিত। এছাড়াও বিভিন্ন সড়ক ও মোড়ের পাশেও গড়ে উঠেছে ময়লার ভাগাড়, যা অপসারণে গুরুত্ব নেই সিটি করপোরেশন বা স্থানীয় কাউন্সিলর কারও। রাস্তার পাশে, খালের পাশে, ফ্লাইওভারের নিচে, ময়লার ডাম্পিং স্টেশনের সামনে আবর্জনা জমে প্রতিদিনই। কোনো কোনো স্থান থেকে ময়লা পরিষ্কার করা হলেও অবশিষ্ট পড়ে থাকে আরও অনেক আবর্জনা। সিটি করপোরেশনের এমন খামখেয়ালিপনায় বসবাসকারী বা চলাচলকারী মানুষদের জন্য এটি নিত্যদিনের ভোগান্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারাদিন বর্জ্য জমে থাকার কারণে পুরো এলাকাজুড়ে ছড়াতে থাকে দুর্গন্ধ। যানবাহনে থাকা যাত্রীদের বাধ্য হয়েই বসে থাকতে হয় দুর্গন্ধের মধ্যে।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, দুই সিটির ১২৯টি ওয়ার্ডে প্রতিদিন প্রায় ৬৮০০ মে. টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। যার অধিকাংশই দুই সিটি করপোরেশনের ল্যান্ডফিলে পাঠানো হয়। পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য সংগ্রহ করে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ল্যান্ডফিলে নিয়ে যাচ্ছে। বাকি বর্জ্য রাস্তাঘাট, খালবিল ও নদীতে পড়ে থাকছে। এমনকি পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে তা বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে বেসরকারি বর্জ্য সংগ্রহ করা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে। বিগত ৭ বছরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় তাদের ব্যয় হয়েছে ৩,৩২৩ কোটি টাকা। তবুও শহরজুড়ে প্রায় ২৫০টি অনিয়ন্ত্রিত খোলা আবর্জনার ভাগাড় রয়েছে, যা মারাত্মক দূষণ ঝুঁকি তৈরির পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের ওপরেও ফেলছে বিরূপ প্রভাব।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিবেশ দূষণের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় এক লাখ মানুষ মারা যায়। এর মধ্যে শুধু রাজধানী ঢাকাতেই মারা যায় ১৮ হাজার মানুষ।
২০২১ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশে আরবান ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট : অ্যান ওভারভিউ উইথ আ ফোকাস অন ঢাকা’ শীর্ষক ওই গবেষণায় গত তিন দশকের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে বলা হয়, শহরাঞ্চলে গড়ে ৫৫ শতাংশ কঠিন বর্জ্য সংগ্রহই করা হয় না।
জানা যায়, এক সময় এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠন বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করত। এরপর সিটি করপোরেশন একটি চুক্তির আওতায় পিসিএসপির মাধ্যমে বর্জ্য সংগ্রহ করছে। পিসিএসপির কর্মীরা বর্জ্য সিটি করপোরেশন নির্ধারিত স্থানে রেখে যায়। সেখান থেকে ময়লার গাড়ি এসে তা ল্যান্ডফিলে নিয়ে যায়। এর মধ্যে বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে নাগরিকদের নানা অভিযোগ রয়েছে। অনেক এলাকার একটি বাসা থেকে প্রতি মাসে ১০০ থেকে শুরু করে ৩০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন বাণিজ্যিক স্থাপনা থেকে দুই থেকে তিন হাজার টাকা আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে। প্রাথমিক বর্জ্য সংগ্রহে শৃঙ্খলা আনতে এরই মধ্যে দুই সিটি করপোরেশনই মাসিক ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে পিসিএসপির কর্মীরা তা মানছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১০ হাজার কর্মী এ ব্যবস্থাপনায় কাজ করছেন। তবে সিটি করপোরেশন কর্তৃক অনুমোদিত হলেও তারা করপোরেশনের কর্মী নন। বর্জ্য সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনায় তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণও নেই।
নগর পরিকল্পনাবিদ সৈয়দ শাহারিয়ার আমিন বলেন, প্রতিদিনই ময়লা উৎপাদন হচ্ছে ঢাকাতে। সিটি করপোরেশন সেগুলো অপসারণও করছে। কিন্তু আবর্জনা ব্যবস্থাপনায় উন্নতির সুযোগ আছে। বিশেষ করে পিকআওয়ারে বাইরে ময়লা অপসারণের কাজগুলো করা যেতে পারে। তবে পুরো ব্যবস্থাটাকে নিয়মের মধ্যে আনতে সিটি করপোরেশন ছাড়াও নগরবাসীকেও সচেতন হতে হবে। কারণ সিটি করপোরেশন চাইলেও এসটিএসগুলো পরিকল্পিত জায়গায় করতে পারছে না। এটা নগরবাসীই বাধা দেয়। এছাড়া ময়লা ব্যবস্থাপনা ঘিরেই কোটি টাকার বাণিজ্য হচ্ছে। শৃঙ্খলা আনতে বড় কর্মপরিকল্পনা জরুরি। আবর্জনা অপসারণের থেকে পুনর্ব্যবহারে জোর দিতে হবে। সেখানেও এই বাণিজ্য মূল প্রতিবন্ধকতা। ফলে সুশৃঙ্খলভাবে কাজ করা কঠিন। যদি শৃঙ্খলা আনতে হয় তাহলে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।























