০৬:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দাম বাড়লে লাভবান হচ্ছে না খামারিরা

➢সপ্তাহের ব্যবধানে ডজনপ্রতি ডিমের দাম বেড়েছে ৩০ টাকা, ব্রয়লার কেজিতে বেড়েছে ৩০-৪০ টাকা
➢বাজারে মুরগি ও ডিমের দাম বাড়লেও আমরা খামারিরা লাভের মুখ দেখছি না
➢মুরগি ও ডিমের মুনাফা তুলে নিচ্ছেন ফড়িয়ারা

গত রমজান থেকে ঊর্ধ্বমুখী পোল্ট্রি শিল্পের বাজার বিভিন্ন সময় নানা অযুহাতে বাজারে দাম বেড়ে যায়। মধ্যখানে কিছুদিন সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকলেও নতুন করে তাপপ্রবাহের অযুহাতে আবারও বেড়েছে ডিম ও মাংসের। এতে চাপে পড়েছে সাধারণ মানুষ। সপ্তাহের ব্যবধানে ডজনপ্রতি ডিমের দাম বেড়েছে প্রায় ৩০ টাকা, কেজিতে মুরগির দাম বেড়েছে ৩০-৫০ টাকা। সরবরাহে খুব একটা ঘাটতি না থাকলেও বেশিরভাগ পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিনিয়ত দাম বাড়লে আসলে কতটুকু লাভবান হচ্ছে প্রান্তিক ব্যবসায়ী? বর্তমান বাজারে যেকোনো সময়ের চেয়ে মুরগির দাম রেকর্ড পরিমাণ বাড়লেও স্বস্তিতে নেই খামারিরা। খাদ্যে দামের সঙ্গে তীব্র গরম যোগ হওয়ায় ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তীব্র গরমের কারণে হিট স্ট্রোকে মুরগি মরা, ডিম উৎপাদন কমা ও বাচ্চার দাম বেড়ে যাওয়ায় পোল্ট্রি শিল্পে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে বলেও মনে করেন তারা।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, সোনালি মুরগির পাশাপাশি এবার ব্রয়লার মুরগির দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। কেজিপ্রতি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। গত সপ্তাহে ৩৪০-৩৫০ টাকা ছিল। এছাড়া ব্রয়লার মুরগির দামও কেজিতে কিছুটা বেড়ে ২০০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় খুচরা বাজারে ব্রয়লার মুরগি ২২০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩৯০ থেকে ৪০০ টাকা,যা গত সপ্তাহে ৩৪০-৩৫০ টাকা ছিল, লেয়ার ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৩২০ টাকা। ডিম ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১২০ টাকা। দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা জানান আড়ত থেকে বেশি দামে ক্রয় করতে হয় যার কারণে আমাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার অধিকাংশ বিক্রেতা বলছেন দাম বাড়ার কারণে আগের তুলনায় ক্রেতা সংকট। দামের কারণে খুচরা দোকানেও বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

কারওয়ান বাজারের জননী মুরগির আড়তের স্বত্বাধিকারী আবদুল ওহাব বলেন, অনেক বছর ধরেই ব্যবসা করছি। কিন্তু এত দামে কখনো মুরগি বিক্রি করতে হয়নি। ক্রেতারা আসছেন দাম শুনে ফিরে যাচ্ছেন। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ কিনছেন না। আমাদের বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে। দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভের পরিমাণও কমেছে। এভাবে চললে খরচ ওঠানো কষ্ট হয়ে যাবে। তবে মুরগির খাবারের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার কারণে এমনটি হচ্ছে। তিন থেকে চার মাস আগে ২৫ কেজির বস্তা মুরগির খাবার ৭৫০ টাকায় কিনতাম। সেটা এখন বেড়ে ৯৫০ টাকা। যেভাবে দাম বাড়ছে এতে মুরগির দাম আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

প্রান্তিক জেলার প্রান্তিক খামারি নূরুল হক বলেন, ৩০ টাকা উৎপাদন খরচের ব্রয়লারের বাচ্চা ৭০ থেকে ৯০ টাকা ও লেয়ার মুরগির বাচ্চা ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। অথচ, প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় ব্রয়লারের বাচ্চা ৬২ টাকা ও লেয়ার মুরগির বাচ্চা ৬৭ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও আমরা সেই দামে বাচ্চা কিনতে পারি না। বাচ্চা, খাবার ও ওষুধের দাম অস্বাভাবিক বাড়ায় বাজারে মুরগি ও ডিমের দাম বাড়লেও আমরা লাভের মুখ দেখছি না। মুরগি ও ডিমের মুনাফা তুলে নিচ্ছেন ফড়িয়ারা।

রোজার শুরু থেকে বাজারে মুরগির দাম বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, খামারিরা মুরগির দাম বেশি রেখেছেন। তাতে বাজার বাড়তি। অন্যদিকে খামারিরা বলেন, বাচ্চার দাম ও উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় মুরগির দাম বেড়েছে।

কারওয়ান বাজারের ডিম বিক্রেতা আলমগীর বলেন, গরমের কারণে অনেক ডিম নষ্ট হয়েছে। মুরগি মারা যাওয়ায় ডিমের উৎপাদন কম। যার কারণে বাজারে ডিমের সরবরাহ কম। ফলে দাম বাড়ছে আমাদের বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে যার কারণে আমাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, একটি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা খামারিরা ৯০ থেকে ১০০ টাকায় কেনেন। সেখানে ২২০ টাকা দাম মোটেও বাড়তি বলা যাবে না। এখন বাজারে ডিম খুচরা মূল্য প্রতি পিস ১২ টাকা এটাও যৌক্তিক দাম। সরকারের উচিত সরকার ঘোষিত দামকে সারা বছরের জন্য বাস্তবায়ন করা। বাজারের দাম বাড়লে বাজারে তদারকি হবে। ডিম সিন্ডিকেট ডিম মজুদ করে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছে। দাম বাড়ায় খামারিরা এখন ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে। তাই সরকারের উচিত সবসময়ের জন্য প্রান্তিক খামারিদের নিশ্চিত প্রফিট দেওয়া ও প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদিত ডিম ও মুরগির ন্যায্য মূল্যের নিশ্চিত করা। এতে করে পোল্ট্রি শিল্প ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে।

এ প্রসঙ্গে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, প্রতিবছর বিভিন্ন মৌসুমে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেয়। সরকারের তদারকি বাড়ানো দরকার। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হচ্ছে কিনা বিষয়টি যাচাই করে আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এখনই পদক্ষেপ না নিলে ঈদের আগেই মূল্য ক্রেতার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

নির্বাচন আয়োজনে ‘আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত’: প্রধান উপদেষ্টা

দাম বাড়লে লাভবান হচ্ছে না খামারিরা

আপডেট সময় : ০৬:৩০:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪

➢সপ্তাহের ব্যবধানে ডজনপ্রতি ডিমের দাম বেড়েছে ৩০ টাকা, ব্রয়লার কেজিতে বেড়েছে ৩০-৪০ টাকা
➢বাজারে মুরগি ও ডিমের দাম বাড়লেও আমরা খামারিরা লাভের মুখ দেখছি না
➢মুরগি ও ডিমের মুনাফা তুলে নিচ্ছেন ফড়িয়ারা

গত রমজান থেকে ঊর্ধ্বমুখী পোল্ট্রি শিল্পের বাজার বিভিন্ন সময় নানা অযুহাতে বাজারে দাম বেড়ে যায়। মধ্যখানে কিছুদিন সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকলেও নতুন করে তাপপ্রবাহের অযুহাতে আবারও বেড়েছে ডিম ও মাংসের। এতে চাপে পড়েছে সাধারণ মানুষ। সপ্তাহের ব্যবধানে ডজনপ্রতি ডিমের দাম বেড়েছে প্রায় ৩০ টাকা, কেজিতে মুরগির দাম বেড়েছে ৩০-৫০ টাকা। সরবরাহে খুব একটা ঘাটতি না থাকলেও বেশিরভাগ পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিনিয়ত দাম বাড়লে আসলে কতটুকু লাভবান হচ্ছে প্রান্তিক ব্যবসায়ী? বর্তমান বাজারে যেকোনো সময়ের চেয়ে মুরগির দাম রেকর্ড পরিমাণ বাড়লেও স্বস্তিতে নেই খামারিরা। খাদ্যে দামের সঙ্গে তীব্র গরম যোগ হওয়ায় ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তীব্র গরমের কারণে হিট স্ট্রোকে মুরগি মরা, ডিম উৎপাদন কমা ও বাচ্চার দাম বেড়ে যাওয়ায় পোল্ট্রি শিল্পে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে বলেও মনে করেন তারা।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, সোনালি মুরগির পাশাপাশি এবার ব্রয়লার মুরগির দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। কেজিপ্রতি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। গত সপ্তাহে ৩৪০-৩৫০ টাকা ছিল। এছাড়া ব্রয়লার মুরগির দামও কেজিতে কিছুটা বেড়ে ২০০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় খুচরা বাজারে ব্রয়লার মুরগি ২২০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩৯০ থেকে ৪০০ টাকা,যা গত সপ্তাহে ৩৪০-৩৫০ টাকা ছিল, লেয়ার ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৩২০ টাকা। ডিম ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১২০ টাকা। দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা জানান আড়ত থেকে বেশি দামে ক্রয় করতে হয় যার কারণে আমাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার অধিকাংশ বিক্রেতা বলছেন দাম বাড়ার কারণে আগের তুলনায় ক্রেতা সংকট। দামের কারণে খুচরা দোকানেও বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

কারওয়ান বাজারের জননী মুরগির আড়তের স্বত্বাধিকারী আবদুল ওহাব বলেন, অনেক বছর ধরেই ব্যবসা করছি। কিন্তু এত দামে কখনো মুরগি বিক্রি করতে হয়নি। ক্রেতারা আসছেন দাম শুনে ফিরে যাচ্ছেন। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ কিনছেন না। আমাদের বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে। দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভের পরিমাণও কমেছে। এভাবে চললে খরচ ওঠানো কষ্ট হয়ে যাবে। তবে মুরগির খাবারের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার কারণে এমনটি হচ্ছে। তিন থেকে চার মাস আগে ২৫ কেজির বস্তা মুরগির খাবার ৭৫০ টাকায় কিনতাম। সেটা এখন বেড়ে ৯৫০ টাকা। যেভাবে দাম বাড়ছে এতে মুরগির দাম আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

প্রান্তিক জেলার প্রান্তিক খামারি নূরুল হক বলেন, ৩০ টাকা উৎপাদন খরচের ব্রয়লারের বাচ্চা ৭০ থেকে ৯০ টাকা ও লেয়ার মুরগির বাচ্চা ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। অথচ, প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় ব্রয়লারের বাচ্চা ৬২ টাকা ও লেয়ার মুরগির বাচ্চা ৬৭ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও আমরা সেই দামে বাচ্চা কিনতে পারি না। বাচ্চা, খাবার ও ওষুধের দাম অস্বাভাবিক বাড়ায় বাজারে মুরগি ও ডিমের দাম বাড়লেও আমরা লাভের মুখ দেখছি না। মুরগি ও ডিমের মুনাফা তুলে নিচ্ছেন ফড়িয়ারা।

রোজার শুরু থেকে বাজারে মুরগির দাম বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, খামারিরা মুরগির দাম বেশি রেখেছেন। তাতে বাজার বাড়তি। অন্যদিকে খামারিরা বলেন, বাচ্চার দাম ও উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় মুরগির দাম বেড়েছে।

কারওয়ান বাজারের ডিম বিক্রেতা আলমগীর বলেন, গরমের কারণে অনেক ডিম নষ্ট হয়েছে। মুরগি মারা যাওয়ায় ডিমের উৎপাদন কম। যার কারণে বাজারে ডিমের সরবরাহ কম। ফলে দাম বাড়ছে আমাদের বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে যার কারণে আমাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, একটি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা খামারিরা ৯০ থেকে ১০০ টাকায় কেনেন। সেখানে ২২০ টাকা দাম মোটেও বাড়তি বলা যাবে না। এখন বাজারে ডিম খুচরা মূল্য প্রতি পিস ১২ টাকা এটাও যৌক্তিক দাম। সরকারের উচিত সরকার ঘোষিত দামকে সারা বছরের জন্য বাস্তবায়ন করা। বাজারের দাম বাড়লে বাজারে তদারকি হবে। ডিম সিন্ডিকেট ডিম মজুদ করে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছে। দাম বাড়ায় খামারিরা এখন ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে। তাই সরকারের উচিত সবসময়ের জন্য প্রান্তিক খামারিদের নিশ্চিত প্রফিট দেওয়া ও প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদিত ডিম ও মুরগির ন্যায্য মূল্যের নিশ্চিত করা। এতে করে পোল্ট্রি শিল্প ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে।

এ প্রসঙ্গে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, প্রতিবছর বিভিন্ন মৌসুমে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেয়। সরকারের তদারকি বাড়ানো দরকার। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হচ্ছে কিনা বিষয়টি যাচাই করে আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এখনই পদক্ষেপ না নিলে ঈদের আগেই মূল্য ক্রেতার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।