প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের জন্য অর্থবহ কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একগুচ্ছ সেবা দিচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এ সেবাগুলোর মাধ্যমে প্রবাসীদের দেশে থাকা পরিবারের সদস্যদের সরকারি বিভিন্ন সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে সুবিধা হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রবাসে মৃত্যুবরণকারী কর্মীর পরিবারের আর্থিক সহায়তাসহ জীবনমানের উন্নয়নে সহায়তা করা, বিদেশ প্রত্যাগত কর্মীদের পুনর্বাসনে সহায়তা করা, প্রবাসী কর্মীর মেধাবী সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করে তাদেরকে শিক্ষা গ্রহণে উৎসারিত করা, প্রবাসী কর্মীদের বিমার আওতায় আনার কাজ করছে মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয় প্রবাসীদের জন্য যেসব সুবিধা দেয় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক থেকে যেসব সুবিধা দেয় এর মধ্যে নাগরিক সেবার আওতায় বিদেশগামী ও প্রত্যাগত কর্মীদের বিদেশ গমন ও প্রত্যাবর্তনকালে সহায়তা প্রদান, এক্ষেত্রে বিদেশগামী ও প্রত্যাগত কর্মীদের বিদেশ গমন ও প্রত্যাবর্তনকালে তথ্যসংগ্রহ, ইমিগ্রেশন, কাস্টমস এয়ারলাইন্স ও বোর্ডিং সংক্রান্ত তথ্য প্রদান ও চাহিদা মোতাবেক আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদনে সহায়তা করা, মৃতদেহ পরিবহন ও খরচ বাবদ বিদেশ থেকে প্রবাসী কর্মীর মরদেহ আনার পর তাৎক্ষণিকভাবে পরিবারের সদস্যের হাতে ৩৫ হাজার টাকার চেক প্রদান করা, বিদেশ ফেরত অসহায় কর্মীদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি বিবেচনায় মানবিক কারণে বাড়ি গমনের জন্য বিশেষ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়, প্রবাসী কর্মীদের বিদেশ গমনকালে বা প্রত্যাবর্তনকালে সাময়িক অবস্থানের জন্য অনলাইনে বা সরাসরি আবেদন করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের কাছে বঙ্গবন্ধু ওয়েস আর্নার্স সেন্টারে অবস্থান করতে পারে।
সূত্র জানায়, শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় মন্ত্রণালয় যেসব সুবিধা দেয় এর মধ্যে রয়েছে, প্রবাসী কর্মীদের মেধাবী সন্তানদের এসএসসি বা সমমান ও এইচএসসি বা সমমান ক্যাটাগরিতে শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের জন্য প্রতিবছর বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে মন্ত্রণালয়। বিজ্ঞাপন প্রকাশের পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। প্রবাসী কর্মী বা তার সন্তান কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে চাইলে তাকে প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করে মন্ত্রণালয়।
বীমা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রবাসী কর্মী বা তার পরিবারকে বিমার মেয়াদ উত্তীর্ণের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রবাসী কর্মী দেশে বা বিদেশে মৃত্যুবরণ করলে বা চাকরিচ্যুত হয়ে ছয় মাসের মধ্যে দেশে ফেরত আসলে কর্মীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিমা প্রাপ্তিতে সহায়তা প্রদান করা হয়। প্রবাসী কর্মীর প্রতিবন্ধী সন্তানদের মাসিক ভাতা প্রদানের লক্ষ্যে বছরের শুরুতে জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি মাসে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞাপনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাপ্ত আবেদনপত্র যাচাই বাছাই শেষে প্রতিমাসে এক হাজার টাকা করে বছরে এক কিস্তিতে বার হাজার টাকা ভাতা প্রদান করা হয়।
আহত ও অসুস্থ কর্মীদের সহায়তার ক্ষেত্রে প্রবাসী কর্মী বা তার পরিবারের সদস্যদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রবাসে আহত বা অসুস্থ কর্মীকে দেশে ফেরত আনা এবং বিশেষ ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তিতে সহায়তা প্রদান করে মন্ত্রণালয়। আহত ও অসুস্থ কর্মী বোর্ডের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করলে যাচাই বাছাই সাপেক্ষে ভিডিও কলের মাধ্যমে সরাসরি কথা বলে বোর্ডের অনুমোদনক্রমে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।
প্রবাসে মৃত ব্যক্তির পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রবাসী কর্মীর লাশ দেশে আনার পর প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক থেকে বোর্ডের ইআরপি সফটওয়্যারে অথবা সরাসরি আবেদনের ক্ষেত্রে ডেসপাস হতে এন্ট্রির পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি চেয়ে মৃতের পরিবার বরাবর পত্র ইস্যু করা হয়। উক্ত চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি প্রাপ্তির পর প্রবাসে মৃত কর্মীর পরিবারের ব্যাংক হিসাব নম্বরে বিইএফটিএনের মাধ্যমে সরাসরি তিন লাখ টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয় এবং মৃতের পরিবারকে আর্থিক অনুদান প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে অবহিত করা হয়।
দূতাবাস বা হাইকমিশন থেকে মৃত কর্মীর মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সম্ভাবনার বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট দেশে মামলা পরিচালনার জন্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নীসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি দাখিলের জন্য মৃতের পরিবার বরাবর পত্র প্রেরণ করা হয়। মৃতের পরিবারের কাছে চাওয়া কাগজপত্র তারা দপ্তরে জমা দিলে সেগুলো দূতাবাসে বা হাই কমিশনে প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলা পরিচালনা ও অর্থ আদায়ের বিষয়ে দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়। এক্ষেত্রে মৃতের পরিবার প্রয়োজনে পাওয়ার অব অ্যাটর্নীসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি প্রস্তুতের জন্য বোর্ডের লিগ্যাল এইড সেল হতে সহায়তা নিতে পারে।
মৃতদেহ দেশে আনার ক্ষেত্রে প্রবাসে মৃত কর্মীর দেহ সংশ্লিষ্ট দেশে দাফনের বিষয়ে মৃতের পরিবারের সাথে যোগাযোগপূর্বক মৃতদেহ দাফনের মতামত সংশ্লিষ্ট দূতাবাস বা হাইকমিশনে প্রেরণ করা হয়। অ্যাম্বুলেন্স সেবার ক্ষেত্রে প্রবাসী কর্মী বা তার পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আহত, অসুস্থ ও মৃতকর্মী পরিবহনের জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস প্রদান করা হয়। আগত প্রবাসী কর্মী ও তার পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণসহ চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়।
প্রবাসী কর্মী ও তার পরিবারকে দেশে আইনগত সহায়তার প্রয়োজন হলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রবাসী কল্যাণ শাখা বা ডিইএমও এর মাধ্যমে অথবা সরাসরি ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস বা স্থানীয় প্রশাসন বরাবর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পত্র প্রেরণ করা হয় এবং আবেদনকারীকে অবহিত করা হয়। এছাড়া নানাবিধ অসুবিধা দূরীকরণের জন্য প্রবাসী কল্যাণের ২৯টি উইংয়ের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করা হয়। সেইফ হাউস ব্যবস্থাপনার আওতায় সৌদিআরব (রিয়াদ, জেদ্দা, মদিনা, ওমান, জর্ডান, লিবিয়া ও লেবাননে) ব্যবস্থা করা হয়। প্রবাসী কর্মীরা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ফরম অনলাইনে পূরণ করে সদস্যপদ গ্রহণ করতে পারে। প্রবাসী কল বন্ধু সেন্টারের ১৬১৩৫, ০৯৬১০১০২০৩০, ০৮০০০১০২০৩০ নম্বরগুলোতে যোগাযোগ করে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলাপ করতে পারে।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে প্রবাসীদের জন্য সরকার প্রদেয় স্বল্পসুদে ঋণ ও অন্যান্য সুবিধাদি যেন তারা সঠিকভাবে পায় এর জন্য প্রচার বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সুপারিশ করেছে। এসময় কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অন্যদিকে, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপি এক বক্তৃতায় বলেছেন, প্রবাসীরা আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধা। তাই প্রবাসীদের কল্যাণেই কাজ করাকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের জনশক্তিকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলে কম খরচে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে নিজের দায়িত্ব পালন করতে চাই।























