০৩:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অবৈধ দখলে রাজধানীর সাইকেল লেন

◉লেন উদ্ধারে তৎপরতা নেই সিটি কর্পোরেশনের
◉লেনের জায়গায় অবৈধ পার্কিং, ময়লার ভাগাড়

রাজধানীবাসীকে বাইসাইকেল চলাচলে উৎসাহিত করতে চালকদের জন্য আগারগাঁও ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে আলাদা বাইসাইকেল লেন তৈরি করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে আগারগাঁওয়ে প্রায় নয় কিলোমিটার সড়কে আলাদা লেন চালু করা হয়। আলাদা সাইকেল লেন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই। ২০২০ সালের মার্চে আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ৬০ ফিট মোড় থেকে নিউরো সায়েন্স হাসপাতাল হয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উত্তরপ্রান্ত হয়ে এলজিইডি সড়ক এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন পর্যন্ত চালু করা হয় বাইসাইকেল লেন। উন্নত দেশগুলোর আদলে রাজধানীতে এমন উদ্যোগে বেশ প্রশাংসাও কুড়ায় ডিএনসিসি। তবে তদারকরি অভাবে সাইকেল লেনের জায়গা এখন ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ পার্কিং-এর স্থান হিসেবে। লেন দখলে চলে যাওয়ায় আগের মতো ঝুঁকি নিয়ে মূল সড়কে চলাচল করতে হচ্ছে সাইকেল চালকদের।

 

সরজমিনে আগারগাঁও এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সাইকেল লেনের জায়গায় এখন অবৈধ পার্কিংয়ে আছে সরকারি যানবাহন, অ্যাম্বুলেন্সও। কোনো জায়গা ভ্রাম্যমাণ দোকানের দখলে। সিটি কর্পোরেশনই লেনের ওপর বসিয়েছে ময়লার ভাগাড়।

 

বিশেষ এই লেন উদ্বোধনের সময় ডিএনসিসি থেকে বলা হয়, সাইকেলের জন্য ছয় ফুট প্রশস্ত আলাদা লেন চালুর মধ্য দিয়ে বদলে যাবে আগারগাঁও এলাকার চিত্র। মডেল সড়ক হিসেবে সাইকেল লেন তৈরির পাশাপাশি ফুটপাত, অনস্ট্রিট পার্কিং ও সবুজায়নে আগারগাঁও হবে মডেল এলাকা। কিন্তু বদল আসেনি। বরং দখলদারিতে অংশ নিয়েছে খোদ সিটি কর্পোরেশন। আগারগাঁও ৬০ ফিট রোডের মাথা থেকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের সামনে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন পর্যন্ত চালু করা বাইসাইকেল লেন বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই। পুরোটা দখল হয়ে গেছে। সরকারি যানবাহন, ব্যক্তিগত গাড়ি, স্টাফ বাস, লেগুনা, অ্যাম্বুলেন্স, চায়ের দোকান, রিকশার গ্যারেজ, ভ্রাম্যমাণ দোকান, এমনকি ওষুধের দোকানও বসেছে সাইকেলের লেনের ওপর। পরিবেশ অধিদপ্তর, নির্বাচন কমিশন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, এলজিইডি, পাসপোর্ট অফিস, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনসহ সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি সড়কে পার্কিং করে রাখা হয়েছে। এলজিইডি ভবনের সামনের সড়কে বাইসাইকেল লেন বরাবর সিটি কর্পোরেশন তৈরি করেছে ভ্রাম্যমাণ ময়লার ভাগাড়। সেখানে সংশ্লিষ্ট এলাকার ময়লা ফেলা হচ্ছে। নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের সামনের সড়কে বাইসাইকেল লেনে বসেছে অবৈধ পার্কিং, ভ্রাম্যমাণ দোকান। লেগুনা, হাসপাতালের চিকিৎসক ও রোগীর স্বজনদের ব্যক্তিগত গাড়ি এবং অ্যাম্বুলেন্সের সারি সেখানে চোখে পড়ে।

 

ডিএনসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম বলেন, বিষয়টি আগে দেখতে হবে। দেখে শুধু উচ্ছেদ কেন, আরও যদি কিছু করতে হয় আমরা করব। আমরা যদি বাইসাইকেল লেন করে থাকি, আর সেটি যদি দখলে থাকে, উচ্ছেদের দায়ও আমাদের।

 

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বাইসাইকেল লেনের বিষয়টি আশার আলো হিসেবে দেখা হয়েছিল। বাইসাইকেল লেন যখন করা হলো আমরা তখনই বলেছিলাম স্বল্প মেয়াদ বা দূরত্বে করলে ফলপ্রসূ হবে না। সেটাই হয়েছে, জাস্ট লোক দেখানো করা বাইসাইকেল লেন প্রজেক্টটি ব্যর্থ হয়েছে। এটি টেকসই করার কোনো চেষ্টা করা হয়নি। উচিত হবে সিটি কর্পোরেশন, ট্রাফিক বিভাগসহ সবাই মিলে টেকসই ও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া। এ শহরে বাইসাইকেল লেনটা অত্যন্ত জরুরি ছিল পরিবেশের জন্য।

 

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা অনেক ভালো ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করি, কিন্তু সেসব রক্ষা করতে পারি না। ফলপ্রসূ বাস্তবায়নের অভাবে মাঝপথে সেগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ে। এটি খুবই দুঃখজনক। নতুন উদ্যোগের চেয়ে পূর্ববর্তী ভালো উদ্যোগগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন জরুরি। অবশ্যই বাইসাইকেল লেন কার্যকরের উদ্যোগ নিতে হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

সপরিবারে হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন তারেক রহমান

অবৈধ দখলে রাজধানীর সাইকেল লেন

আপডেট সময় : ০৬:০৮:৩১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ জুন ২০২৪

◉লেন উদ্ধারে তৎপরতা নেই সিটি কর্পোরেশনের
◉লেনের জায়গায় অবৈধ পার্কিং, ময়লার ভাগাড়

রাজধানীবাসীকে বাইসাইকেল চলাচলে উৎসাহিত করতে চালকদের জন্য আগারগাঁও ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে আলাদা বাইসাইকেল লেন তৈরি করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে আগারগাঁওয়ে প্রায় নয় কিলোমিটার সড়কে আলাদা লেন চালু করা হয়। আলাদা সাইকেল লেন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই। ২০২০ সালের মার্চে আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ৬০ ফিট মোড় থেকে নিউরো সায়েন্স হাসপাতাল হয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উত্তরপ্রান্ত হয়ে এলজিইডি সড়ক এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন পর্যন্ত চালু করা হয় বাইসাইকেল লেন। উন্নত দেশগুলোর আদলে রাজধানীতে এমন উদ্যোগে বেশ প্রশাংসাও কুড়ায় ডিএনসিসি। তবে তদারকরি অভাবে সাইকেল লেনের জায়গা এখন ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ পার্কিং-এর স্থান হিসেবে। লেন দখলে চলে যাওয়ায় আগের মতো ঝুঁকি নিয়ে মূল সড়কে চলাচল করতে হচ্ছে সাইকেল চালকদের।

 

সরজমিনে আগারগাঁও এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সাইকেল লেনের জায়গায় এখন অবৈধ পার্কিংয়ে আছে সরকারি যানবাহন, অ্যাম্বুলেন্সও। কোনো জায়গা ভ্রাম্যমাণ দোকানের দখলে। সিটি কর্পোরেশনই লেনের ওপর বসিয়েছে ময়লার ভাগাড়।

 

বিশেষ এই লেন উদ্বোধনের সময় ডিএনসিসি থেকে বলা হয়, সাইকেলের জন্য ছয় ফুট প্রশস্ত আলাদা লেন চালুর মধ্য দিয়ে বদলে যাবে আগারগাঁও এলাকার চিত্র। মডেল সড়ক হিসেবে সাইকেল লেন তৈরির পাশাপাশি ফুটপাত, অনস্ট্রিট পার্কিং ও সবুজায়নে আগারগাঁও হবে মডেল এলাকা। কিন্তু বদল আসেনি। বরং দখলদারিতে অংশ নিয়েছে খোদ সিটি কর্পোরেশন। আগারগাঁও ৬০ ফিট রোডের মাথা থেকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের সামনে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন পর্যন্ত চালু করা বাইসাইকেল লেন বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই। পুরোটা দখল হয়ে গেছে। সরকারি যানবাহন, ব্যক্তিগত গাড়ি, স্টাফ বাস, লেগুনা, অ্যাম্বুলেন্স, চায়ের দোকান, রিকশার গ্যারেজ, ভ্রাম্যমাণ দোকান, এমনকি ওষুধের দোকানও বসেছে সাইকেলের লেনের ওপর। পরিবেশ অধিদপ্তর, নির্বাচন কমিশন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, এলজিইডি, পাসপোর্ট অফিস, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনসহ সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি সড়কে পার্কিং করে রাখা হয়েছে। এলজিইডি ভবনের সামনের সড়কে বাইসাইকেল লেন বরাবর সিটি কর্পোরেশন তৈরি করেছে ভ্রাম্যমাণ ময়লার ভাগাড়। সেখানে সংশ্লিষ্ট এলাকার ময়লা ফেলা হচ্ছে। নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের সামনের সড়কে বাইসাইকেল লেনে বসেছে অবৈধ পার্কিং, ভ্রাম্যমাণ দোকান। লেগুনা, হাসপাতালের চিকিৎসক ও রোগীর স্বজনদের ব্যক্তিগত গাড়ি এবং অ্যাম্বুলেন্সের সারি সেখানে চোখে পড়ে।

 

ডিএনসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম বলেন, বিষয়টি আগে দেখতে হবে। দেখে শুধু উচ্ছেদ কেন, আরও যদি কিছু করতে হয় আমরা করব। আমরা যদি বাইসাইকেল লেন করে থাকি, আর সেটি যদি দখলে থাকে, উচ্ছেদের দায়ও আমাদের।

 

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বাইসাইকেল লেনের বিষয়টি আশার আলো হিসেবে দেখা হয়েছিল। বাইসাইকেল লেন যখন করা হলো আমরা তখনই বলেছিলাম স্বল্প মেয়াদ বা দূরত্বে করলে ফলপ্রসূ হবে না। সেটাই হয়েছে, জাস্ট লোক দেখানো করা বাইসাইকেল লেন প্রজেক্টটি ব্যর্থ হয়েছে। এটি টেকসই করার কোনো চেষ্টা করা হয়নি। উচিত হবে সিটি কর্পোরেশন, ট্রাফিক বিভাগসহ সবাই মিলে টেকসই ও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া। এ শহরে বাইসাইকেল লেনটা অত্যন্ত জরুরি ছিল পরিবেশের জন্য।

 

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা অনেক ভালো ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করি, কিন্তু সেসব রক্ষা করতে পারি না। ফলপ্রসূ বাস্তবায়নের অভাবে মাঝপথে সেগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ে। এটি খুবই দুঃখজনক। নতুন উদ্যোগের চেয়ে পূর্ববর্তী ভালো উদ্যোগগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন জরুরি। অবশ্যই বাইসাইকেল লেন কার্যকরের উদ্যোগ নিতে হবে।