কুড়িগ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই অনুমতি ছাড়াই বিদেশ ভ্রমণে আবার কেউ স্কুল না করেই কোচিং ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত দিন পার করছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবার আশ্বাস কর্তৃপক্ষের।
সদর উপজেলার শিক্ষা অফিস সূত্রে জানাযায়,কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের কালির আলগা চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোখলেছা বেগম রিতা চিকিৎসা জনিত ছুটিতে রয়েছেন। তিনি গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিনা বেতনে এই ছুটি নেন। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখাযায়,্ওই শিক্ষক বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি না নিয়েই আমেরিকা প্রবাসী তার স্বামীর নিকট অবস্থান করছেন। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানাযায়, পুলিশ ভেরিফিকেশন করে তিনি গত বছরের ৬নভেম্বর আমেরিকা গিয়েছেন।
একই চিত্র ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দক্ষিণ তিলাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মাহফুজা খাতুননেরও। তিনি ২০১৯সাল থেকে তার স্বামী সন্তান নিয়ে মরক্কোতে অবস্থান করছেন। তিনি ২০১৯সালের ১৫জুন থেকে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে। এছাড়াও উলিপুর উপজেলার জানজায়গীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শারমিন আক্তার ২০১৯সালের ৪মে থেকে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। তার বেতন বন্ধ থাকলেও এই শিক্ষকের কোন হদিস নেই বলে জানান বিদ্যালয়ের বাকি শিক্ষকরা। একই উপজেলার রুপার খামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আছয়াদুর রহমান আপেল ২০২০সাল ডিপিএড প্রশিক্ষণ নিতে এসে আর বিদ্যালয়ে উপস্থিত হননি। তখন থেকে তিনিও বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত বেতন পাচ্ছেন। কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পার্বতিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আবু তালেব রংপুরের গোল্ডেন ফিউচার কোর্চিং সেন্টারের পরিচালক। এই কোচিং সেন্টারে বিসিএস এবং প্রাইমারী শিক্ষক নিয়োগ কোচিং করানো হয়। তিনি বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিত না হয়ে কোচিং ব্যবসা করে মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পদ ধরে রেখে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক অনুপস্থিত থাকায় চাপে পড়ছেন বাকি সহকমর্ীরা। নিজেদের পাঠদান এবং অনুপস্থিত শিক্ষকেরও কাজ করায় হিমশীম খেতে হচ্ছে তাদের। আর এতে করে জেলার প্রাথমিক পর্যায় শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ছে বলে দাবী স্থানীয় অভিভাবক মহলের।
একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,সদর উপজেলার মৈদিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আবু তালেব। তার বাড়ি সংলগ্ন এই বিদ্যালয় রেখে তিনি গত বছরের আগষ্টের ১৪তারিখ ডেপুটেশন নিয়ে প্রায় ২০কি:মি: দূরে যাত্রাপুর ইউনিয়নের নদী বিচ্ছিন্ন পার্বতিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। নদীর ওপারে বিদ্যালয়ে পোষ্টিং নেন শুধুমাত্র স্কুল ফাঁকি দিয়ে তার কোচিং ব্যবসা করার জন্য। তিনি মাসে এক থেকে দু’বার স্কুল গিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে আসেন। কখনও স্কুল করেন না।
কালির আলগা চর গ্রামের বাসিন্দা বিলকিছ বেগম বলেন,শুনেছি আমাদের স্কুলের এক ম্যাডাম আমেরিকায় থাকেন। সেখান থেকে আমাদের সন্তানদের লেখাপড়া করান। হামার চরের মানুষের ভাগ্যের ব্যাপার আমেরিকার ম্যাডাম পেয়েছি।
পার্বতিপুর চরের বাসিন্দা আলম মিয়া বলেন,আবু তালেব শিক্ষক সে রংপুরে কোচিং ব্যবসা করে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। আবার স্কুলে না এসেও বেতন ভাতা তুলছেন। অফিসারদের ম্যানেজ করেই এভাবে চলছে এখানকার স্কুল।
দক্ষিণ তিলাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি পল্লী চিকিৎসক আব্দুস সামাদ প্রামাণিক বলেন, আমার বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক পাঁচ বছর যাবৎ অনুপস্থিত। কর্তৃপক্ষকে অসংখ্য বার বলার পরেও কোন কাজ হয়নি। পদ ধরে রাখার জন্য অন্য কোন শিক্ষকও সেখানে বদলি হয়ে আসতে পারে না। শিক্ষক সংকটের কারণে পাঠদান ভেঙ্গে পড়ছে।
দক্ষিণ তিলাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন,সহকারি শিক্ষক মাহফুজা খাতুন ২০১৯সালে মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়েছিল। এরপর একই বছর বিদেশ গমনের জন্য ৪৫দিনের ছুটি নেয়। সেই থেকে তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত।তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। তবে সে বেতন পাচ্ছে না কিনা এবং তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা আমি অফিসয়াল ভাবে জানিনা?
জানজায়গীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শামীম সরকার বলেন,আমাদের বিদ্যালয়টি ০৯ পদের। এরমধ্যে সহকারি শিক্ষক শারমিন আক্তার সে ২০১৯সালের ৪মে থেকে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। সে কোথায় আছে আমরা কিছু জানি না। অফিস থেকে তার বেতন বন্ধ রয়েছে।
রুপার খামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজেদা বেগম বলেন,এই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আছয়াদুর রহমান ২০২০সালে ডিপিএড প্রশিক্ষণ নিতে যায়। এরপর থেকে তিনি আর বিদ্যালয় আসেনি। কোন ছুটিও নেননি। লোক মুখে শুনেছি তিনি মানুষের কাছে টাকা লেনদেনের ঝামেলায় পড়েছেন। এজন্য স্থানীয় পাওনাদারের ভয়ে তিনি পলাতক রয়েছেন। তার বেতন বন্ধ হয়নি বলে শুনেছি।
কোচিং এর পরিচালক হবার কথা স্বীকার করলেও বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিত থাকার দাবী করেন শিক্ষক আবু তালেব। তিনি আরও বলেন ছুটি নিয়ে এবং সাপ্তাহিক ও সরকারি বন্ধের দিন গুলোতে এসে কোচিং করার দাবী করেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নবেজ উদ্দিন সরকার বলেন,সহকারি শিক্ষক মাহফুজা খাতুনকে চাকুরিচ্যুত্ব করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধিন রয়েছে। আর মোখলেছা বেগম রিতা কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে বিদেশ গেলে তাকে বিধি মোতবেক বরখাস্ত করা হবে। স্কুল ফঁাকি দিয়ে কেউ কোচিং করালেও তদন্ত করে তার বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসব বিষয় তদন্ত করার আশ্বাস দেন তিনি


























