০৯:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ব্যাংক আমানতে বাড়ছে কর

➤ ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কর বাড়ছে
➤আমানতকারীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ
➤অতিরিক্ত করের আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের
➤কর এড়ানোর নানা কৌশলে গ্রাহকরা

 

❖ শুধু রাজস্ব সংগ্রহে ব্যর্থতার কারণে দেশ দেউলিয়া হওয়ার পথেÑ ড. আহসান এইচ মনসুর, নির্বাহী পরিচালক, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট

প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংকে রাখা টাকার ওপর আবগারি শুল্কের স্তর ও হারে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বর্তমানে ছয়টি স্তরে শুল্ক নেয়া হলেও প্রস্তাবিত বাজেটে এ স্তর হচ্ছে আটটি। যেখানে গ্রাহকের আমানত ১০ লাখ টাকার বেশি হলেই গুনতে হবে বাড়তি কর।

বর্তমানে এক লাখ পর্যন্ত ব্যাংক হিসাবের স্থিতিতে কোনো আবগারি শুল্ক দিতে হয় না। আবার ১ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ১৫০ টাকা এবং ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৫০০ টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হয়। এই দুটি স্তরে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।

প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণ করে জানা যায়, বর্তমানে ১০ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি টাকার যে স্তর রয়েছে, সেটি ভেঙে দুটি স্তর করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ১০ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত গচ্ছিত টাকায় আগের মতোই ৩ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হবে। আর ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত আমানতে ৩ হাজার টাকার পরিবর্তে ৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক বসেছে।

এ ছাড়া ১ থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত বিদ্যমান স্তরটিও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ১ থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ১০ হাজার টাকা এবং ২ কোটি টাকা থেকে ৫ কোটি পর্যন্ত ২০ হাজার টাকা শুল্ক বসানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এত দিন ১ কোটি টাকা থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত আমানতে ১৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক বসেছে।

এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকে আমানতকারীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। যাদের গচ্ছিত টাকা ব্যাংকে জমা রাখা আছে তারা নতুন করজালে আটকা পড়ছেন। বিশেষ করে ব্যবসায়ী ও প্রবাসীরা ব্যাংকে বড় অঙ্কের টাকা জমা করে রাখেন।

এদিকে নতুন এ পদ্ধতিতে বিকল্প চিন্তা করছেন অনেকে। বড় অঙ্কের টাকা এক হিসাবে না রেখে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাংক ও ভিন্ন ভিন্ন হিসাবে টাকা রাখার কথা ভাবছেন অনেকে। এতে যদি মুক্তি মেলে।

তবে ব্যাংকে টাকা রাখার খরচের বিষয়ে সরকারের নতুন এই সিদ্ধান্তে ছোট আমানতকারীদের ওপর প্রভাব ফেলবে না। প্রভাব পড়বে বড় আমানতকারীদের ওপর।
বর্তমানে এক লাখ পর্যন্ত ব্যাংক হিসাবের স্থিতিতে কোনো আবগারি শুল্ক দিতে হয় না। আবার এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ১৫০ টাকা এবং পাঁচ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৫০০ টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হয়। এই দুটি স্তরে কোনো পরিবর্তন আসছে না। ব্যাংক হিসাবের টাকা বছরে অন্তত একবার এসব স্তর স্পর্শ করলে আবগারি শুল্ক দিতে হয়।

কোনো আমানতকারীর ব্যাংক হিসাবে বছরে একবার যদি স্থিতি ৫ কোটি টাকা অতিক্রম করে, তাহলে সেই আমানতের ওপর আবগারি শুল্কের পরিমাণ ৪০ হাজার টাকা অর্থাৎ অপরিবর্তিত থাকছে।

প্রতিবছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে কোনো ব্যাংক হিসাবে আমানতের পরিমাণ যদি একবার এক লাখ টাকা বা তার ওপরের স্তরগুলোর সীমা স্পর্শ করে, তাহলে নির্দিষ্ট হারে আবগারি শুল্ক দিতে হয়। একাধিকবার স্পর্শ করলেও একবারই আবগারি শুল্ক কাটা হয়। কোনো হিসাবে এক লাখ টাকার কম থাকলে কোনো আবগারি শুল্ক কাটা হয় না।

এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বশেষবার ব্যাংকে থাকা টাকার ওপর আবগারি শুল্কের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছিল। সংশ্লিষ্টরা জানান, অপেক্ষাকৃত কম টাকার হিসাবধারীদের কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার পাশাপাশি বেশি টাকার হিসাবধারীদের কাছ থেকে বেশি আবগারি শুল্ক আদায় করতে চায় সরকার।

এদিকে অফসোর ব্যাংকিং আইন, ২০২৪-এর অধীনে পরিচালিত অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের আওতাধীন আমানতকারী বা বৈদেশিক ঋণদাতাদের হিসাবের ওপর আরোপিত আবগারি শুল্ক অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট মীর নাসির হোসেন এবিষয়ে বলেন, আসলে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানো গেলে পরোক্ষ করের ওপর চাপটা কম পড়ত। পরোক্ষ করের চাপ ভোক্তার ওপর পড়ে। যেহেতু প্রত্যক্ষ কর বাড়ানো যাচ্ছে না, পরোক্ষ কর বাড়ানোর ফলে তা জিনিসপত্রের দামে গিয়ে পড়বে, যার ভুক্তভোগী ভোক্তা।
গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, শুধু রাজস্ব সংগ্রহে ব্যর্থতার কারণে দেশ দেউলিয়া হওয়ার পথে। ব্যাংক খাত ধ্বংস করা হয়েছে। কেন এ অবস্থা হলো, তার শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।

তিনি বলেন, এবারের বাজেটে ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে বছরে যদি ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার আমানত বাড়ে, তাহলে বেসরকারি খাত ঋণ নেবে কীভাবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ব্যাংক আমানতে বাড়ছে কর

আপডেট সময় : ০৭:৫৩:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন ২০২৪

➤ ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কর বাড়ছে
➤আমানতকারীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ
➤অতিরিক্ত করের আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের
➤কর এড়ানোর নানা কৌশলে গ্রাহকরা

 

❖ শুধু রাজস্ব সংগ্রহে ব্যর্থতার কারণে দেশ দেউলিয়া হওয়ার পথেÑ ড. আহসান এইচ মনসুর, নির্বাহী পরিচালক, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট

প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংকে রাখা টাকার ওপর আবগারি শুল্কের স্তর ও হারে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বর্তমানে ছয়টি স্তরে শুল্ক নেয়া হলেও প্রস্তাবিত বাজেটে এ স্তর হচ্ছে আটটি। যেখানে গ্রাহকের আমানত ১০ লাখ টাকার বেশি হলেই গুনতে হবে বাড়তি কর।

বর্তমানে এক লাখ পর্যন্ত ব্যাংক হিসাবের স্থিতিতে কোনো আবগারি শুল্ক দিতে হয় না। আবার ১ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ১৫০ টাকা এবং ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৫০০ টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হয়। এই দুটি স্তরে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।

প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণ করে জানা যায়, বর্তমানে ১০ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি টাকার যে স্তর রয়েছে, সেটি ভেঙে দুটি স্তর করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ১০ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত গচ্ছিত টাকায় আগের মতোই ৩ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হবে। আর ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত আমানতে ৩ হাজার টাকার পরিবর্তে ৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক বসেছে।

এ ছাড়া ১ থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত বিদ্যমান স্তরটিও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ১ থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ১০ হাজার টাকা এবং ২ কোটি টাকা থেকে ৫ কোটি পর্যন্ত ২০ হাজার টাকা শুল্ক বসানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এত দিন ১ কোটি টাকা থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত আমানতে ১৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক বসেছে।

এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকে আমানতকারীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। যাদের গচ্ছিত টাকা ব্যাংকে জমা রাখা আছে তারা নতুন করজালে আটকা পড়ছেন। বিশেষ করে ব্যবসায়ী ও প্রবাসীরা ব্যাংকে বড় অঙ্কের টাকা জমা করে রাখেন।

এদিকে নতুন এ পদ্ধতিতে বিকল্প চিন্তা করছেন অনেকে। বড় অঙ্কের টাকা এক হিসাবে না রেখে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাংক ও ভিন্ন ভিন্ন হিসাবে টাকা রাখার কথা ভাবছেন অনেকে। এতে যদি মুক্তি মেলে।

তবে ব্যাংকে টাকা রাখার খরচের বিষয়ে সরকারের নতুন এই সিদ্ধান্তে ছোট আমানতকারীদের ওপর প্রভাব ফেলবে না। প্রভাব পড়বে বড় আমানতকারীদের ওপর।
বর্তমানে এক লাখ পর্যন্ত ব্যাংক হিসাবের স্থিতিতে কোনো আবগারি শুল্ক দিতে হয় না। আবার এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ১৫০ টাকা এবং পাঁচ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৫০০ টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হয়। এই দুটি স্তরে কোনো পরিবর্তন আসছে না। ব্যাংক হিসাবের টাকা বছরে অন্তত একবার এসব স্তর স্পর্শ করলে আবগারি শুল্ক দিতে হয়।

কোনো আমানতকারীর ব্যাংক হিসাবে বছরে একবার যদি স্থিতি ৫ কোটি টাকা অতিক্রম করে, তাহলে সেই আমানতের ওপর আবগারি শুল্কের পরিমাণ ৪০ হাজার টাকা অর্থাৎ অপরিবর্তিত থাকছে।

প্রতিবছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে কোনো ব্যাংক হিসাবে আমানতের পরিমাণ যদি একবার এক লাখ টাকা বা তার ওপরের স্তরগুলোর সীমা স্পর্শ করে, তাহলে নির্দিষ্ট হারে আবগারি শুল্ক দিতে হয়। একাধিকবার স্পর্শ করলেও একবারই আবগারি শুল্ক কাটা হয়। কোনো হিসাবে এক লাখ টাকার কম থাকলে কোনো আবগারি শুল্ক কাটা হয় না।

এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বশেষবার ব্যাংকে থাকা টাকার ওপর আবগারি শুল্কের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছিল। সংশ্লিষ্টরা জানান, অপেক্ষাকৃত কম টাকার হিসাবধারীদের কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার পাশাপাশি বেশি টাকার হিসাবধারীদের কাছ থেকে বেশি আবগারি শুল্ক আদায় করতে চায় সরকার।

এদিকে অফসোর ব্যাংকিং আইন, ২০২৪-এর অধীনে পরিচালিত অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের আওতাধীন আমানতকারী বা বৈদেশিক ঋণদাতাদের হিসাবের ওপর আরোপিত আবগারি শুল্ক অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট মীর নাসির হোসেন এবিষয়ে বলেন, আসলে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানো গেলে পরোক্ষ করের ওপর চাপটা কম পড়ত। পরোক্ষ করের চাপ ভোক্তার ওপর পড়ে। যেহেতু প্রত্যক্ষ কর বাড়ানো যাচ্ছে না, পরোক্ষ কর বাড়ানোর ফলে তা জিনিসপত্রের দামে গিয়ে পড়বে, যার ভুক্তভোগী ভোক্তা।
গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, শুধু রাজস্ব সংগ্রহে ব্যর্থতার কারণে দেশ দেউলিয়া হওয়ার পথে। ব্যাংক খাত ধ্বংস করা হয়েছে। কেন এ অবস্থা হলো, তার শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।

তিনি বলেন, এবারের বাজেটে ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে বছরে যদি ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার আমানত বাড়ে, তাহলে বেসরকারি খাত ঋণ নেবে কীভাবে।